somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালকে স্থায়ী রূপ দিয়ে শেষ অপরাধী পর্যন্ত বিচার কাজ চলা নিশ্চিত করা হউক

২৯ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক জল্পনা কল্পনার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল এখন পুরোদমে কাজ করছে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় আদালতও গঠন করা হয়েছে। যেহেতু অপরাধ সংগঠিত হয়েছে ৪০ বছর আগে এবং ট্রাইবুন্যালের আইনে পরিবর্তন এনে আসামীদের সুপ্রীম কোর্টে আপিলে সুযোগ দেওয়া হয়েছে - সেহেতু বিচারের গতি স্লথ হতে বাধ্য।

বিশেষ করে আদালতের প্রসিকিউশন টিম নিজেদেরকে নতুন ধরনের বিশেষ আদালতের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সময় নিয়েছেন এবং তাদের পূর্বাভিজ্ঞতা না থাকায় তাদের পেশাধারিত্বরে কারনে ফৌজদারী আইনের প্রভাব থেকে বের হতে পারেননি - তাই আমরা আসামীর প্রথম বিচার কাজে কিছু অসামঞ্জস্যতা লক্ষ করছি। বিশেষ করে স্বাক্ষী উপরে অতি নির্ভরশীলতা মামলাকে দীর্ঘায়িত করছে। আশা করি প্রসিকিউশন টিম তাদের এই ত্রুটি থেকে বের হয়ে আসবে এবং পরবর্তী আসামীদের বিষয়ে আন্তর্জতিক অপরাধ আইন ৭৪ যথাযথ ভাবে অনুসরন করবেন।

এখানে বিশেষ একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে - দ্রুত বিচার শেষ করতে গিয়ে ভুলত্রুটির পরিমান আরো বেড়ে যাবে। তখন আসামীরা সেই ভুলের সুযোগে শাস্তির বাইরে চলে যেতে পারবে। সুতরাং ধৈর্য্যের সাথে সময় নিয়ে বিচারের কাজ সমাধা করা জরুরী। কথা আছে - জাস্টিজ হারিড জাস্টিজ বারিড"। সুতরাং ন্যায় বিচারে স্বার্থে প্রয়োজনীয় সময় নিতে হবেই।

এখন প্রশ্ন আসে আগে থেকে সময়সীমা নির্ধারন করে বিচার করা যায় কিনা? উত্তর হচ্ছে ন্যায় বিচারের স্বার্থে কোন বিষয়ই পূর্বের থেকে নির্ধারন করা যায় না। সময় সীমা নির্ধারন করা ভুল। কিন্তু কিছু মানুষের মধ্যে অস্থিরতার দেখা যাচ্ছে - এরা চাইছে - বিচার আগামী নির্বাচনের আগেই শেষ হোক। তাদের কাছে প্রশ্ন - কোন বিচার, কার বিচার শেষ করার কথা বলছেন?

শুধুমাত্র রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিচার ধীরগতি বা তড়ান্বিত করা হবে আরেকটা অপরাধ। যারা দ্রুত বিচার শেষ করতে চাইছে - তারাও যেমন বিচারের সাথে রাজনীতিকে জড়িয়ে ফেলছে - তেমনি বিচারকে প্রলম্বিত করে যারা রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইবে - তারাও অপরাধ করবে। দুইটাই ন্যায় বিচারে পরিপন্থী। বিচারকে যৌক্তিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিত।

একটা কথা পরিষ্কার করা দরকার - আওয়ামীলীগ এবং তার মিত্ররা এই জন্যেই ধন্যবাদ পেতে পারে যে তারা বিচার কাজটা শুরু করেছে। যেহেতু আরেকটা জোট সরাসরি যুদ্ধাপরাধীদের সাথে সম্পৃত্ত তাই তাদের কাছে আমাদের চাওয়া পাওয়া খুবই কম। তারপরও মনে রাখা দরকার - রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক বিচার পাওয়ার অধিকার রাখে। ১৯৭৫ সাল থেকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদের কারনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ হয়ে ছিলো - আবার তা চালু করে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালন করলো।

প্রশ্ন আসে যখন আমরা বিচারের শেষ হওয়ার সময়সীমা নিয়ে কথা বলি - তখন আসলে কি বলতে চাই? যে ছেলে তার বাবাকে বিনাদোষে হারিয়েছে - যে মা তার সম্ভ্রম হারিয়েছে - তার দাবী বাংলাদেশের সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার না হওয়া পর্যণ্ত এই বিচার কাজ চলবে। যেহেতু এই আদালত কোন রাজনৈতিক দলের না - সুতরাং সরকার পরিচালনায় রাজনৈতিক দলের পরিবর্তনের সাথে এর কোন সম্পর্ক থাকার কথা না। কিন্তু যেহেতু বিএনপি এই বিচারে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে - তাই বিচার প্রার্থীরা শংকিত এই আদালতের ভবিষ্যত নিয়ে।

ভোটরের রাজনীতিতে অবশ্যই এই আদালত একটা ইস্যু হবে। এই ইস্যুকে এড়ানোর জন্যে সরকারের উচিত এই আদালতকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তর করে শেষ অভিযুক্তের বিচার পর্দন্ত চালু রাখা। যেমনটা আমরা জার্মানে দেখি - আজও সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপরাধীদের বিচার চলছে। যেখানে তাদের ধরা হচ্ছে - সেখান থেকেই তাদের নিয়ে এসে বিচারের সন্মুখিন করা হচ্ছে। বাংলাদেশেও তাই করা উচিত। আর বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপির উচিত এই আদালত সম্পর্কে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা - যাহাতে ভোটাররা এই ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ পায়। আধো আলো আধো অন্ধকারের দিন শেষ - এখন সবাইকে সুষ্পষ্ট অবস্থান থেকে কথা বলতে হবে - নতুবা ভোটাররা হয়তো দুই দিক থেকে ভুল করে বসবে।

শেষ কথা হলো - আসামীদের সবার রাজনৈতিক পরিচয় থাকার সুবাদে এই বিচার নিয়ে অনেকেই রাজনৈতিক ভাবে পানি ঘোলা করা চেষ্টা করছেন। একটা কথা পরিষ্কার ভাবে বুঝা দরকার - রাজনৈতিক পরিচয় বা পদপদবী কোন মানুষকে বিচারের উর্ধে উঠার লাইসেন্স দেয় না। বিচার স্বচ্ছ এবং ন্যায়নুগ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে - কিন্তু বিচারকে সকল ধরনের রাজনীতি থেকে দুরে রাখা দরকার। মনে রাখা দরকার এই বিচার একদিন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গর্বিত করবে - এরা বুক ফুলিয়ে বলবে - আমরাও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি বিচারের মাধ্যমে। সুতরাং এখনই এই ট্রাইবৃন্যালকে স্থায়ী আদালত হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে শেষ ৭১ এর যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিশ্চিত করার দাবী করছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১২ সকাল ৮:১৯
১১৩টি মন্তব্য ৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×