somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন বাংলাদেশে জামায়াত/শিবিরকে কেন ঘৃনা করতে হবে?

০৮ ই জুন, ২০১২ সকাল ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আপাত দৃষ্টিতে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনীতি করা একটা রাজনৈতিক দল - নিজেদের ধর্মীয় লেবাসের নীচে লুকিয়ে রেখে মুরত পুঁজিবাদের রাজনীতি করে - নিজেরা যদিও বলে ইসলামী শাসন কায়েম করবে - কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে সংসদে একটা বিলও আনেনি - বরঞ্চ ব্যস্ত ছিলো বনানী আর উত্তরায় কিভাবে প্লট পাওয়া যায় তা নিয়ে। যাই হোক - বাংলাদেশের আর দশটা রাজনৈতিক দলের মতোই বারিধারার লাল দালানে দাওয়াত পেলে বর্তে যায় এই জামায়াত। ইরাক যুদ্ধের শুরুতে রাস্তায় মার্কিন বিরোধী দুই একটা মিছিলের পর লাল দালানের নির্দেশে আর একটা টু শব্দও করেনি এই ইসলামী দল। পরষ্পরবিরোধীতায় ভরা এই রাজনৈতিক দলটির নেতারা মুলত মধ্যপ্রাচ্যের অর্থে বিলালবহুল জীবনোপকরন ছাড়া কোন ভাল কাজ করতে পারেনি।

কিন্তু জামায়াতের এই নীতিহীন দেউলিত্বের কারনেই কি জামায়াতকে ঘৃনা করা যায় - নাকি অন্য কোক কারন আছে।

যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে চেতা ধারন করেন তাদের জন্যে বলার দরকার নেই যে জামায়াত হলো বাংলাদেশের জন্ম শত্রু। এরা সেই পথ থেকে সরে এসেছে বলে এদের কোন দলিল বা ঘোষনাপত্রে কোথাও বলা নেই। ২০০৬ সাল পর্যণ্ত জামায়াতের দলীয় ওয়েবসাইটে সকল নেতাদের জীবনী দেওয়া ছিলো ( এখন সবই সরিয়ে ফেলা হয়েছেছে) - সেখানে ১৯৭১ কে পুরোপুরি নাই করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে দেখলে মনে হবে ক্যালেন্ডারে ১৯৭১ বলে কোন সাল ছিলোই না। কারন কি ৭১ কে পুরোপুরি উহ্য রাখার। এর মুল কারন - তাদের দলের তরুন কর্মীদের অন্ধকারে রাখা আর গন্ডলিকা প্রবাহে নানান ধরনের অপইতিহাস প্রচার করে জনগনকে বিভ্রান্ত করে নিজেদের কুকর্মকে আড়াল করা। যদিও তা সম্ভব হয় নি।

এখানে জামায়াতের বাংলাদেশ বিরোধী কিছু কর্মকান্ডের নমুনা দেওয়া ৪) হলো -


১) জামায়াতের জনগ্রহনযোগ্যতা এই বাংলায় কখনই ছিল না। সত্তর সালের নির্বাচনে তারা মাত্র চারটি আসনে জয়লাভ করে। তাদের প্রাদেশিক আমীর গোলাম আজম আওয়ামী লীগের জহিরুদ্দীনের কাছে ৮০৬৭৭ ভোটের ব্যবধানে হেরে যায়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হবার পরে ৪ এপ্রিল গোলাম আজম জেনারেল টিক্কা খানের সাথে দেখা করে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছিল। [পূর্বদেশ, ৫ এপ্রিল, ১৯৭১]

২) ১৫ এপ্রিল গঠিত শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে গোলাম আজম যোগ দেয় এবং এই মাসেই সকল জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে গঠিত শান্তি কমিটিতে জামাতে ইসলামীর নেতা কর্মীর আধিক্য দেখা যায়। [দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ এপ্রিল, ১৯৭১] শান্তি কমিটি কর্মকান্ড সম্পর্কে তো আর নতুন করে কিছু বলার নাই।

৩) ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে আয়োজন করা এক সম্মেলনে গোলাম আজম বলে - "পাকিস্তানের হাজারো দুশমন আছে, কিন্তু বাইরের চেয়ে ঘরে সেই সময়ে সৃষ্ঠি হওয়া দুশমনরা বেশি বিপদজনক। শান্তি কমিটি যদি দুনিয়াকে না জানান দিত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দেশকে অখন্ড রাখতে চায়, তাহলে পরিস্তিতি হয়ত অন্য দিকে মোড় নিত"। [দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ আগস্ট, ১৯৭১]

৪) শান্তি কমিটিকে সহায়তা করার লক্ষ্যে মে মাসে খুলনায় জামাতের এক সময়ের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম ইউসুফ প্রথম গঠন করে রাজাকারের দল। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল কলেজের রাজাকারদের ট্রেইনিং ক্যাম্প পরিদর্শনকালে (১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১) গোলাম আজম বলে - “রাজাকার কোন দলের নয়, দেশের সম্পদ! নিহত রাজাকার রশিদ মিনহাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় এই বলে যে তার কাছ থেকে তরুণদের শেখার আছে!” [দৈনিক পাকিস্তান, ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১]

৫) জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ ( বর্তমান ছাত্র শিবির) আল বদর বাহিনীও জামাত প্রতিষ্ঠা করে। এর নেতৃত্বে ছিল মতিউর রহমান নিজামী (সমগ্র পাকিস্তান প্রধান), আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (প্রাদেশিক প্রধান/পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান), ঢাকা মহানগরের নায়েবে আমীর মীর কাশেম আলী (৩য় নেতা) ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (প্রধান সংগঠক)। গোলাম আজমের তত্ত্বাবধানে এটি পরিচালিত হতো। আল বদরের ঘৃণ্য কর্মকান্ড সম্পর্কেও আমরা সবাই অবগত আছি।

৬) মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এভাবে দেশের সাথে বেইমানি করা ছাড়াও তারা রাজনৈতিক কূটনীতিতে ব্যস্ত ছিল যাতে করে ক্ষমতা দখল করা যায়। সেই লক্ষ্যে ডানপন্থী দলগুলোর সাথে জোট বাঁধার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সেই সময়ে জাতিসংঘের অধিবেশন থাকায় ১৭ সেপ্টেম্বর একটি মন্ত্রীসভা গঠন করা হয় যাতে মন্ত্রী ছিল আব্বাস আলী খান (শিক্ষামন্ত্রী) ও মাওলানা এ কে এম ইউসুফ (রাজস্বমন্ত্রী)। আব্বাস আলী খান পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করে যাতে করে ইসলামী মূল্যবোধ আর পাকিস্তানী আদর্শে বইগুলো সাজানো যায় এবং কমিটির দেয়া সুপারিশগুলো মেনে চলার সিদ্ধান্তও নেয়। [দৈনিক ইত্তেফাক, ১০ নভেম্বর, ১৯৭১]

৭) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ব্যস্ত আওয়ামী লীগের শূন্য হওয়া জাতীয় পরিষদের আসনগুলোতে জামাত নির্বাচন করে এবং ১৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়। পাকিস্তা সরকার এই উপনির্বাচন ৬ ডিসেম্বর স্থগিত করে। এই উপ নির্বাচনে জয়ী (!) হয়ে তারা পাকিস্তানের অন্য কিছু দলের সাথে জোট বাঁধে। সেই সময় গোলাম আজম দাবী জানায় প্রধানমন্ত্রীর পদ কোন পূর্ব পাকিস্তানীকে দেবার জন্য। অবশ্য তা হয়নি। [দৈনিক পাকিস্তান, ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১]

এভাবে যে দল বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছে পদে পদে, সেই দলের প্রতি আমার কখনো কোন মায়া আসে না। তাদেরকে পায়ে পিষে ফেলাই একমাত্র শাস্তি। জামাত তাই দলগতভাবে দায়ী, এই কথাতে কোন আপোষ নাই।

সুতরাং যারা বাংলাদেশকে ভালবাসেন - যারা মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে আমাদের গর্ব হিসাবে বিবেচনা করেন - তাদের কাছে অবধারিতভাবে বাংলাদেশের শত্রু - মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তি - যাদের হাতে প্রাহ হারিয়েছে বাংলাদেশের সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবিরা - সেই জামায়াত শিবিরকে ঘৃনা করবেই - তা বলাই বাহুল্য মাত্র।

প্রশ্ন হচ্ছে শুধু ঘৃনাই কি যথেষ্ঠ - উত্তর হলো - না।

স্বাধীনতার পর সামরিক শাসক আর তাদের দলের ছত্রছায়ায় জামায়াত ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, শিক্ষা ক্ষেত্রে এরা প্রবলভাবে নিজেদের স্থান তৈরী করেছে। বিশেষ করে ইন্টারনেট জগতে জামায়াত খুবই পরিকল্পিতভাবে তাদের প্রপাগান্ডার মেশিন চালু রেখেছে।

তার উপরে আজও জামায়াতে ইসলামী বা শিবিরের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কুর্কীতিগুলো জন্যে কোন রকমের অনুশোচনা বা ক্ষমা চায়নি। যদিও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই - যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি গনহত্যা এবং মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলো - তাদের বিচার হচ্ছে - কিন্তু তাদের সংগঠন এখনও সক্রিয়।

তাই যারা মুক্তিযুদ্ধকে অস্তিত্বের যুদ্ধ বিবেচনা করি - যারা মুক্তিযুদ্ধে চেতনাকে ধারন করি - যারা স্বজন হারিয়ে চরদশক ধরে বিচারের আশায় দিনগুনেছি - যুদ্ধটা আমাদের সবার জন্যেই অনিবার্য এবং বিজয় আমাদেরই। কারন মিথ্যার পরাজয় অবশ্যম্ভাবী।

( উৎসর্গ - নাহোল - কৃতজ্ঞতা - রাশেদ)



৪৭টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×