somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭ই নভেম্বর ১৯৭৫ - যে দিন প্রতারিত হয়েছিলো একটা জাতি, একটা দল আর একজন মুক্তিযুদ্ধা তাহের

০৭ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদেশের ভিন্ন পত্রিকায় আজ আজ একটা খবর থাকবে - খবরটা হলো - আজ "আজ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস" বা "আজ ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর"।

এই ঐতিহাসিক দিবসটি কেন বাংলাদেশীদের জন্যে গুরু্ত্বপূর্ন বা প্রকৃত পক্ষে সেইদিন কি পেয়েছিলো বাংলাদেশ, এই প্রশ্ন করাটা কি স্বাভাবিক নয়? ৭ই নভেম্বরের আসলে কি ঘটেছিলো - তার প্রকৃত ইতিহাস জানা কঠিন। কারন যারা সেইদিন ক্ষমতা দখলে স্বক্ষম হয়েছিলো - তারা ইতিহাসটা তাদের মতো করে লেখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু যেহেতু সেই ঘটনার প্রকৃত সত্যকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ সুবিধাভোগীরা - তাই যেভাবে ইতিহাসটা লেখা হয়েছে - তা অনেকটা রূপকথার মতো শুনাবে।

রূপকথা বলা সময় যেমন হঠাৎ করে একজন রাজা আসে - এক দেশে এক রাজা ছিলো, তার ছিলো হাতি ঘোড়া ....ইত্যাদি। ৭ই নভেম্বরের ঘটনা বর্ননায় অধিকাংশ লেখককেও তেমনি বায়বীয় কিছু শব্দ ব্যবহার করতে দেখা যায়। যেখানে প্রকৃত পক্ষে ইতিহাসকে ধারন করা কঠিন।

বাংলাদেশে প্রকাশিত আজকের কয়েকটা পত্রিকার খবরগুলো একটু নজর দেওয়া যাক -

১) আজ ৭ নভেম্বর, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এইদিনে সেনাবাহিনী ও জনসাধারণ ঐক্যবদ্ধভাবে জিয়াউর রহমানকে বন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করেন। পরবর্তীতে সিপাহী জনতার মিলিত বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে বিশেষ পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। (দৈনিক আমাদের সময়)

২) আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর । জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের এইদিনে দেশপ্রেমিক সিপাহী-জনতার মিলিত বিপ্লব আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই ভূ-খণ্ডের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত করেছিল। তারা জিয়াউর রহমানকে (তৎকালীন মেজর জেনারেল) বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে এনে রাষ্ট্রীয় ৰমতায় অধিষ্ঠিত করেন। (দৈনিক ইত্তেফাক)


প্রায় সকল পত্রিকাই ইতিহাস লেখা শেষ করবে তিন লাইনে। যার সারমর্ম হলো:

১) দিনটি ঐতিহাসিক দিন।
২) সিপাহী- জনতা মিলে বিপ্লব করেছিলো।
৩) জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিলো।


এই তিন লাইনের বাইরে গেলেই প্রকৃত সত্যগুলো বেড়িয়ে আসতে থাকে। সেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অংশটা জুড়ে থাকবে জাসদ, গনবাহিনী আর কর্নেল তাহের।

মুলত ১৯৭২ সাল থেকে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে কর্নেল তাহেরে নেতৃত্বে প্রতিবিপ্লবীরা সংগঠিত হয়। এরা সেনাবাহিনীতেও একটা বিরাট প্রভাব ফেলে। তারপর ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্টের হত্যঅআন্ড, সামরিক শাসন আর ৩রা নভেম্বর জের হত্যা - সবই সংগঠিত হয় - কিন্তু জাসদ যদিও এই বিষয়গুলো সমর্থণ করেনি - কিন্তু বাঁধা দেবার মতোও কিছু করেনি। অবশেষে ৩ থেকে ৭ ই নভেম্বর দ্রুত দৃশ্যপট বদলাতে থাকে। কয়েকজন মেজর আর কর্নেলকে নিয়ে খন্দকার মুশতাক দেশে একটা অরাজকতা চালাচ্ছিলো। এই অবস্থার অবসানের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধারা খালেদ মুশাররফের নেতৃত্বে একটা প্রচেষ্টা নেয়। কিন্তু জেনারেল ওসমানীর মধ্যস্থতায় মুশতাক আহমদে বেঁচে যায় - কিন্তু জেলে নিহত হন চার নেতা। অন্যদিকে ওসমানীর মধ্যস্থতা মেনে নিয়ে জীবনের সবচেয়ে বড় মূল্যটাও পরিশোধ করেন খালেদ মোশাররফ।

অবশেষে জাসদ গনবাহিনীকে সক্রিয় করে ক্যান্টনমেন্টে একটা বিদ্রোহ করায় এবং সফলও হয়। কিন্তু কর্নেল তাহের জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে। তাহেরের নির্দেশে জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় বসানো হয়।

তারপর জিয়াউর রহমান দ্রুতই তার আসল চেহারা খোলশ থেকে বের করে ফেলে। একটা পাতানো আদালত বানিয়ে তাহেরকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়। শত শত জাসদ কর্মীকে জেলের ভেতরে হত্যা করা হয়।

একজন মুক্তিযুদ্ধ হিসাবে কর্নেল তাহের আরেকজন মুক্তিযুদ্ধা জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় বসালেও - সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় মক্তুযুদ্ধে অর্জনগুলো। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার শত্রু আর পরাজিত শক্তিকে পূর্নবাসন শুরু করে - অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের অর্জনগুলোকে বর্জণ করে। ফলে ধর্মান্ধ আর ধর্মব্যসায়ীরা চলে আসে দৃশ্যপটে। প্রতিশীলতা বিসর্জিত হয় রাষ্ট্রের মুল নীতি থেকে।

এভাবে জাসদ নামে একটা দল, একজন মুক্তিযুদ্ধা তাহের আর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া একটা দেশের জনগন আরেকজন মুক্তিযুদ্ধার হাতে প্রতারিত হয়।


(২)


আরেকটা বিষয় লক্ষ্যনীয় - ৭ই নভেম্বর পালন করে যারা, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিএনপি, জাসদ আর বাজাই( জামাত)।

বিএনপি তিন লাইনের ইতিহাসের উপরে এই দিবসটিকে পালন করে - এর যথেষ্ঠ যুক্তি আছে। প্রকৃত পক্ষে বিএনপির জন্মদিন এই ৭ই নভেম্বর। তবে যদি সৎ ভাবে এরা তিনটি পালন করে - তাহলে তাদের আলোচনায় তাহেরে প্রতি কৃতজ্ঞতার বিষয়টা উল্লেখ করা উচিত। যদি কর্নেল তাহের সেইদিন জিয়াউর রহমানকে বিশ্বাস না করতেন - তাহলে হয়তো ৭ই নভেম্বর জিয়াউর রহমান মৃত্যু বার্ষিকীর পারিবারিক মিলাদে অনেকে দাওয়াত পেতেন।

জাসদও এই দিবসটি পালন করে। ওরা বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে পালন করলেও - প্রকৃতপক্ষে প্রতারিত ও "জাসদের শেষের শুরু" দিবস হিসাবে পালন করা উচিত বলেই মনে করি। কারন আওয়ামীলীগের বিরোধী বিরাট একটা তারুন্যের দল ছিল জাসদ - বিপ্লব - গনবাহিনীর ইত্যাদি অতিবিপ্লবী কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িয়ে এরা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের আশ্রয়স্থল হিসাবে পরিগনিত হয় - পরে কর্নেল তাহেরের একটা ঐতিহাসিক ভুলে এই দিনে জিয়াউর রহমান জাসদের মৃত্যর পরোয়ানা জারি করে এইদিনেই।

তৃতীয় যে দলটা এই দিবসে পালন করে তারা হলো জামাত বাজাই। যদিও এরা বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসাবে পালন করে - প্রকৃতপক্ষে না বিপ্লব - না সংহতি - কোনটার সাথেই এদের কোন যোগাযোগ ছিলোনা। বরঞ্চ এরা এই দিনটাকে পুনর্জন্ম দিবস বা "ভাগাড় থেকে প্রত্যবর্তন" দিবস হিসাবে পালন করলে বরঞ্চ সত্যের কাছাকাছি যাবে।


(৩)


আর সাধারন মানুষ?

মুক্তিযুদ্ধের সাথে বেঈমানী করলো একজন মুক্তিযুদ্ধা, প্রতারিত হলো একটা দল আর বিশেষ করে প্রতারিত হলেন একজন মহান মুক্তিযুদ্ধ তাহের - এই বিষয়গুলো দেখার পর - দিনটি জাতীয় প্রতারনা দিবস হিসাবে পালন করতে পারেন।

(ছবি কৃতজ্ঞতাঃ জেনোসাইডবাংলাদেশ.অর্গ)
(পূর্বে প্রকাশিত)
২১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×