মুক্তিযুদ্ধে হানাদার বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার জেনারেল নিয়াজী তা বই ''The Betrayal of East Pakistan" এ ৭১ এ জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করেছেন। নিয়াজী স্বীকার করেছেন যে - জামায়াত ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধাদের নির্মূল করার বিষয়ে পাকিস্তানী আর্মিকে পূর্ন সমর্থন দিয়েছে
নিয়াজীর বই এ সুস্পষ্টভাবে বল হয়েছে যে - মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে পাকিস্তানী সরকার রাজাকার বাহিনী গঠন করেছে। নিয়াজীর বক্তব্য অনুসারে জানা যায় যে - রাজাকারবাহিনীর গঠন, অস্ত্র এবং অন্যান্য সরবরাহ নির্ধারন করা হয় প্যারামিলিটারী ফোর্স হিসাবে।
সেই বই এ নিয়াজী বলেছে - জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী পার্টি, এবং মুসলিমলীগের বিভক্ত অংশগুলোসহ সেই সময়ের ডানপন্থী দলগুলো থেকে রাজাকার বাহিনীর সদস্য সংগ্রহ করা হয়। রাজাকার বাহিনীর ট্রেনিং এর জন্যে আলাদা ট্রেনিং স্কুল স্থাপনকরা সহ আলাদা ডাইরেক্টরেট সৃস্টি করা হয়। রাজাকারদের মেশিনগান, স্টেনগান এবং মুক্তিবাহিনী, তাদের সমর্থক ও সহমর্মীদের সম্পর্কে গোয়েন্দা সহায় তা দেওয়া হয়েছে।
নিয়াজী আরো বলছেন - "৫০,০০০ রাজাকার সদস্যের বাহিনী তৈরীর ক্ষেত্রে ৭০% সাফল্য লাভ সম্ভব হয়। রাজাকার সদস্যদের প্রদেশের সকল জেলা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। রাজাকার সদস্য, কমান্ডারদের ট্রেনিং এর জন্যে স্কুলগুলো কাজ করতে থাকে। কার্যকর কমান্ড স্ট্রাকচার তৈরী লক্ষ্যে ৬০ জন তরুন অফিসার নির্বাচন করে তাদের রাজাকার গ্রুপ কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ করা হয়।"
বই এর এক পর্যায়ে বলা হয়েছে - রাজাকার বাহিনীতে জামায়াতের আধিপত্যের কারনে অন্য দলগুলো বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো।
এই প্রসংগে পাকবাহিনীর ৭১ এর ইস্টার্ন কমান্ডের পাবলিক রিলেশনস অফিসার মেজর সিদ্দিক সালিক "Witness to Surrender" এ বলছেন - "১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের এক প্রতিনিধিদল নিয়াজীর সাথে দেখা করে এই মর্মে অভিযোগ করেছিলে যে - নিয়াজী শুধু জামায়াত কর্মীদের নিয়ে একটা বাহিনী (রাজাকার) তৈরী করেছেন।"
সিদ্দিক সালিক বলচেন - "এরপর নিয়াজী আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছেন যে এখন থেকে রাজাকার, আল-বদর এবং আল শামস বাহিনীকে এমনভাবে দেখাতে হবে যাতে এরা যে একটি পার্টির থেকে সংখ্যাগরিষ্ট সদস্য নিয়ে গঠিত তা বুঝা না যায়।"
সিদ্দিক সালিক জানাচ্ছেন - যারা রাজাকার বাহিনী তৈরী করতে এগিয়ে এসেছিলো তাদের মধ্যে খাজা খয়েরউদ্দিন (কাউন্সিল মুসলিমলীগ), ফজলুল কাদের চৌধুরী (কনভেনশন মুসলীমলীগ) , খান সবুর এ খান (মুসলীমলীগ কাইউম), গোলাম আজম (জামায়াতে ইসলামী) এবং মৌলবী ফরিদ আহমেদ (নেজামে ইসলামী) অন্যতম।
রাজাকার বাহিনী গঠনে জামায়াতে অতিউৎসাহের বিষয়ে মেজর সালিকের মন্তব্য -" তারা যে শুধু পাকিস্তানের ইসলামী আর্দশে বিশ্বাস করে এই বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো তা নয় - এরা এই সুযোগে তাদের ভিন্নমতের মানুষদের নির্মুলের সুযোগ নিচ্ছিলো।"
এই বিষয়ে জামাত নেতাদের সক্রিয়তা সম্পর্কে সিদ্দিক সালিক বলেন - জামায়াত নেতা গোলাম আজম, আবাস আলী খান, মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মোহম্মদ মুজাহিদ প্রদেশদেশব্যাপী এক ক্যাম্পেনইন শুরু করেন এবং যুবকদের রাজাকার, আলবদর এবং আলশামস বাহিনীতে যোগ দিতে উদ্ভুদ করেন।
(২)
সৃষ্টির পর থেকেই রাজাকার, আলবদর ও আশশামস বাহিনী মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের উপর শুরু করে তাদের বাঙ্গালী নির্ধন যা ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবি হত্যার মাধ্যমে পরিনতি লাভ করে। হত্যা, খুন, ধর্ষন, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনার তথ্য ইতোমধ্যে সংগৃহিত হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় এই সকল ঘটনাবলী জনসমক্ষে উঠে আসবে। সেই ক্ষেত্রে মুজাহিদের মতো অপরাধীদের নামে সরাসরি কাউকে হত্যার অভিযোগ আনা যাবে না এইটা নিশ্চিত। যা লাইবেরিয়ার চার্লস টেলর বা বসনিয়ান রাদোভান কারাদজিকের বিরুদ্ধেও আনা যাবে না। কিন্তু একটা নিদিষ্ট মত বা পথ বা বিশ্বাসের মানুষদের হত্যা বা নির্মূলের জন্যে বাহিনী গঠন করে এবং হত্যাকান্ডসহ সকল মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে উৎসাহীত করার অভিযোগে যেমন যুদ্ধাপরাধীর বিচার হচ্ছে - ঠিক তেমনি ৭৪ এর আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের আওতায় সহজেই এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা করা হচ্ছে
যতই খোঁড়া যুক্তি দেখাক আর যত ষড়যন্ত্রই হউক - যুদ্ধাপরাধী বিচারের যে কার্যক্রম বাংলাদেশে শুরু হয়েছে - তা সফল হবেই। বিচার প্রার্থী মানুষদের আকাংখা কখনই ব্যর্থ হবে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




