somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজাকাররা কোন কালেই বাংলাদেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি এবং দেবেও না

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(ছবি সূত্র - বিডিনিউজ২৪ ডট কম)

আজ রায় হচ্ছে মীরপুরের কসাই নামের কুখ্যাত কাদের মোল্লার। আরো দশ দশটা জামাতী শীর্ষ নেতার মতো উনিও একজন রাজাকার। মুক্তিযুদ্ধে সময় পাকবাহিনীর দোসর হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের উপর জুলুম করেছেন। ঘটনাচক্র সামরিক শাসকদের করুনায় উনারা বেশ ভালই ছিলেন ৪০ বছর। কিন্তু গত বছর পর্যন্ত জামাতে দলীয় ওয়েব সাইটে উনাদের যে বায়োডাটা ছিলো - তাতে জন্ম থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যণ্ত নানান কর্মকান্ডের ফিরিস্তি দিয়ে হঠাৎ করে আবার ১৯৭৮ সাল পর্যণ্ত কোন তথ্য না দিয়েই ১৯৭৯ সাল থেকে নানান বিষয়ে উনাদের বায়োগ্রাফী ছিলো। শিবিরের কর্মীরা এমনটাই জানতে। তাদের নেতাদের জীবনে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৮ সাল ছিলো না - সেইটা ছিলো ব্লাক হোল। কিন্তু নতুন প্রজন্মকে বোকা বানানো গেলো না - ঠিকই জেনে গেলো এই নরপশুদের কুকীর্তিগুলো এবং ভোটের মাধ্যমে জানিয়ে দিলো - বিচার চাই্।

বিচার শুরু হলো - জামাতের বাঘা বাঘা আইনজীবি - তাদের বিদেশী মিলিয়ন ডলারের কনসালটেন্ট এবং বিএনপির শীর্ষনেতা কাম আইনজীবিগন সন্মিলিতভাবে কোর্টে তাদের পক্ষে কার্যক্রমে অংশ নিলো এবং অবশেষে রায়ের দিন আজ। দীর্ঘ আড়াই বছরের মামলার কার্যক্রমে রসময় জামাত শিবির ছিলো মোটামুটি ধরিমাছ না ছুই পানি নীতিতে সক্রিয়। আজ দেখলাম - এরা হরতাল ঢেকেছে এবং ইতোমধ্যে বাসে আগুন দিয়ে এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে পুড়িয়ে মেরেছে। দাবী হলো মামলার রায় প্রকাশ করা যাবে না। এই ধরনের দাবী পৃথিবীর কেউ কোন দিন শুনেছে কিনা না। শুনানীতে থাকলেন - সয়ালজবাবের থাকলেন - স্বাক্ষীদের কথা শুনলেন - তাদের জেরা করলেন - সাফাই স্বাক্ষী দিলেন - এখন বলছেন রায় শুনতে চাই না। এইটা কোন ধরনের দাবী!

এই দাবী করতে পারে একমাত্র তালগাছ আমার পার্টিরা। সব মানি - কিন্তু শাস্তি দেওয়া যাবে না - মুক্তি দিতে হবে। একদম মামার বাড়ীর আব্দার।

জামাত শিবিরের এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং জনদুর্ভোগের কর্মসূচী দেখে শ্রদ্ধেয় প্রয়াত ড. হুমায়ুন আহমেদের একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেলো। এক গ্রামে একটা ভয়ানক পাজি লোক ছিলো। সেই লোক সব সময় মানুষকে যন্ত্রনা দিতো এবং তাতে সে আনন্দ পেতো। তার কাজ ছিলো নানান ভাবে গ্রামের মানুষকে মামলায় জড়ানো। এক সময় লোকটি বৃদ্ধ হয়ে মৃত্যু শয্যা - তখন গ্রামের লোকজনকে ঢেকে একটা অনুরোধ করলো - যেন তার মৃত্যুর পর তার লাশটা গ্রামের তিনরাস্তার মোড়ে বাঁশের মাথা ঝুলিয়ে রাখে। লোকজন তার কথা মতো কাজটি করলো তার মৃত্যুর পর আর পুলিশ এসে গ্রামের সবার নামে মামলা দিয়ে দিলো।

রাজাকাররাও এই একই কাজ করছে - জীবিত অবস্থায় এরা বাংলাদেশের মানুষকে যন্ত্রনা করেছে নানান ভাবে - ৭১ সালেতো এরা ছিলো খাস ইবিলিশের এজেন্ট। এখনও সেই পথেই যাচ্ছে।


আসুন রায় ঘোষনার আগে আরেকবার দেখি - কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর সারাংশ -

প্রথম অভিযোগে বলা হয়, কাদের মোল্লার নির্দেশে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে আটক মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে একাত্তরের ৫ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করা হয়

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তাঁর মা ও দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন।

তৃতীয় অভিযোগ অনুযায়ী, ২৯ মার্চ বিকেলে আরামবাগ থেকে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসস্ট্যান্ডে গেলে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে ধরে জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৫ নভেম্বর সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত কাদের মোল্লা ও ৬০-৭০ জন রাজাকার রাজধানীর কেরানীগঞ্জ থানার খানবাড়ি ও ঘটেরচর (শহীদনগর) এলাকায় যান। সেখানে দুজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ওসমান গণি ও গোলাম মোস্তফাকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে দিনের আলোয় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগীরা ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে (শহীদনগর) হামলা চালিয়ে শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন।

পঞ্চম অভিযোগ অনুযায়ী, ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাদের একটি হেলিকপ্টার মিরপুরের আলোকদি গ্রামের পূর্ব দিকে নামে। কাদের মোল্লা অর্ধশতাধিক অবাঙালি ও রাজাকার নিয়ে গ্রামের পশ্চিম দিক থেকে ঢোকেন এবং এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে থাকেন। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি মারা যায়।

ষষ্ঠ ও শেষ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগী কয়েকজন অবাঙালি বিহারি ও পাকিস্তানি সেনা মিরপুরের ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর কালাপানি লেনের হযরত আলীর বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর স্ত্রী আমিনা এবং দুই মেয়ে খাদিজা ও তাহমিনা, দুই বছরের ছেলে বাবুকে হত্যা করা হয়। একই ঘটনায় কাদের মোল্লার ১২ সহযোগী মিলে হযরতের ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে। হযরতের আরেক মেয়ে মোমেনা ওই সময় আত্মগোপন করে সেই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন।



- প্রিয় ব্লগার,

আজ বাংলাদেশের জন্যে একটা গুরুত্পূর্ন দিন। আমারদের পূর্বপুরুষ এই রাজাকার আলবদর আর পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মরনপন লড়াই করে দেশটা স্বাধীন করেছিলো - আর আজ সেই রাজাকার আলবদরের নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের জন্মের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয় (৭১ এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেক বার - সেই হাতিয়ারতো রাজাকারের হাতিয়ার)। আমাদের জন্যে এইটা একটা কঠিন পরীক্ষা। পূর্বপুরুষের রক্তের ঋণ শোধ করার। সবাই সচেতন হউন - সবাই সোচ্চার হউন - যে যার অবস্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের এই শেষ অধ্যায়টাতে নিজেকে যুক্ত করুন এবং ৭১ এর অসমাপ্ত বিজয়কে পূর্নতা দান করার ক্ষে্ত্রের ভুমিকা রেখে গর্বিত হউন।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:৩৮
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×