somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিশপ্ত সেই বৃস্টির দিন- ২৬ শে জুন ২০০৩.......

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ রাত ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের দিন রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছিল। রাস্তায় পানি জমতে শুরু করেছে। সকালের দিকে বৃষ্টিটা মাঝে মাঝে একটু ধরে আসছিলো। রানার ইউনিভার্সিটিতে যাবার খুব একটা তাড়া ছিল না। কিন্তু কম্পিউটারে মাউসের একটা সমস্যা হচ্ছিলো। একজন স্টুডেন্ট ভাল উইন্ডোজ ২০০০ সিডি আনার কথা। ওটার কথা ভেবেই রেডি হলো। ভাইয়া গাড়িতে করে দিয়ে আসলো। আসার সময় পানির অবস্থা দেখে মনে মনে প্রমাদ গনলেন। আজকে মনে হয় আর গাড়ি বের করার মতো অবস্থা থাকবেনা। পানি হাটুর উপরে চলে যাচ্ছে অনেক জায়গায়। ইউনিতেও ঢিলেঢালা ক্লাশ। মাঝখানে রানার কলিগরা জোর করে টেনে নিয়ে গেলো ছাদে। চারদিকের পানির বন্দীদশা দেখার জন্য। সাধারণত খুব গম্ভীর থাকে বলে কেউ সহজে ঘাটায় না। কিন্তু আজকে কেন জানি কলিগদের সাথে একটু হাসি ঠাট্টাও করলো। ছাদে হালকা ভিজলও। ১২ টার দিকে নেমে আসলো নীচে। ভাইয়াকে বল্লো- গাড়ি আনা সম্ভব নয়- সে সিএনজি বা রিকশায় চলে আসবে। অনেকক্ষণ দাড়িয়েও সি এনজি পেল না। পানির তোড় অসম্ভব বেড়ে গেছে- পাহাড়ী ঢল নামা শুরু করেছে বড় বড় নালা উপচে। তীব্র পানির স্রোত। বিরক্ত হয়ে রানা রিকশা নিল একটা। সে বেটাও যাবে অলংকারের মোড় পর্যণ্ত। তারপর আবার বদলে নিতে হবে। পানির স্রোত ঠেলে যখন অলংকারের মোড় পৌঁছালো তখন বৃস্টি আবার শুরু হয়েছে অঝোরে। রিকশার ভাড়া চুকিয়ে ফুটপাতের পাশের হোটেলে ঢুকলো। ফুটপাতের পাশেই বড় চওড়া নালা, যার কিছু কিছু অংশ স্লাব দিয়ে ঢাকা। কিন্তু পানি জমে এমন হয়েছে কোনটা নালা কোনটা পথ চলার কালভার্ট বোঝার কোন উপায় ছিলনা। হোটেলের ভেতর স্বর্ণার সাথে কথা বল্ল। কিছুটা বাদানুবাদ বোধকরি হয়ে থাকবে। রিকশার খোঁজে হোটেল থেকে দ্রুত বের হতে চাইলো রানা।
পরের ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে বলছি। পানিতে ডোবা ফুটপাত পার হতে গিয়ে কালভার্টের মরণ ফাদে পিছলে যায় রানার পা। পানিতে ডুবে যায় সম্পুর্ণ। প্রত্যক্ষদর্শী যারা ছিল তারা বললো, পানি থেকে উঠার চেষ্টা করার সময় কালভার্টের নীচে সম্ভবত মাথা ঠুকে যায়। তারপরেও হাত উঁচু করে রাখায় লোকজন ধরাধরি করে টেনে তুলে। উঠার পর চেয়ারে বসে ও বলছিলো আমি ভাল আছি- এর পর পরই একবার বমি করে নিস্তেজ হয়ে পরতে থাকে। ওখানকার কয়েকজন তরুন মিলে তাকে প্রথমে পাশের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়- ওরা চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে- তারা রিকশা করে তাকে নিয়ে যেতে থাকে ইউ এস টি সি হসপিটালের দিকে( যেই ভার্সিটিতে ও শিক্ষক ছিল) সঙ্গে থাকা লোকজনের কথায় বুঝা যায় পথিমধ্যেই সে চলে যায় চিরতরে।

(সবার ছোট ছিল তাই খুব নিরাপদ গন্ডির ভেতরেই বড় হয়েছিল আমার ভাইটা। কখনো তাকে একলা ছাড়তে চাইতেন না বাবা-মা। বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স থেকে বের হয়ে ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসাবে ঢুকার পরও! মাঝে মাঝে একটু রাগ ও করতাম এটা নিয়ে। ভাইয়ার আহাজারী সারা জীবন যাবে না- কেন ওকে ঐদিন নিয়ে আসতে গেলোনা! বাবা মা এর কাছে কখনো এই প্রসঙ্গ তুলিনি ভয়ে, জানতে চাইনি ওকে হারিয়ে তোমরা কি ভাবছো, কেমন আছো! কখনো জানতে চাওয়া যায়না। ১০ই অক্টোবর রানার জন্মদিন- ওর ৩২ হবার কথা ছিল। ভেবেছিলাম লেখাটা সেদিন দিব। কিন্তু কালকে আবার আমি ফিরে যাচ্ছি অচিন যান্ত্রিক শহরে। ভাবলাম ওনাদের কাছে থাকা সময়েই লেখাটা দিয়ে দেই। আম্মা জানেন আমি রানার কিছু কিছু লেখা অনুবাদ করছি, নেট এ দিচ্ছি সেটাও জানেন, কিন্তু ব্লগ বা নেট ব্যাপারটা উনি ওভাবে অভ্যস্ত নন। আমিও দেখাইনি কোন লেখা। উনি মাঝে মাঝে রুমে আসেন- দেখেন আমি লিখছি বা টাইপ করছি- একটু বসে থেকে আবার চলে যান। হয়তো কখনো লেখাগুলি দেখবেন- হয়তো ভাইয়া দেখাবে। যদিও সেও ব্লগে আসেনা কখনো। তারপরেও আমি জানি- আমরা সবাই এক কষ্টের অনুভবেই বাস করছি)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০০৮ সকাল ১১:৪৭
২৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×