এই হাত বাড়ানোর মধ্যবর্তী সময়ে এসব নেতারা ব্যাক্তিগত ভাবে লাভের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র ব্যাবসায়ী এবং কালোবাজারীদের হাতে পড়ে যায়। ফলে সেখানে শুরু হয় অবৈধ লেন দেন থেকে ক্ষমতার লড়াইয়ের অংশীদার। দেশে স হজেই লাগিয়ে দেয়া হয় যুদ্ধ যাতে করো ক্ষমতাশীল দল আরো সময় দেশ শাসন করতে পারে, আর ওদিকে লুটেরা দল দেশের ইউরেনিয়াম একাই নিজেদের আয়ত্তে নিতে পারে।
যাই হোক পোস্টের উদ্দেশ্য রাজনীতি নয়, উদ্দেশ্য জিওলজিক্যাল সার্ভে থেকে প্রাপ্ত ইউরেনিয়ামের খনি থেকে কিভাবে ইউরেনিয়াম আহরন করে আমাদের পাওয়ার প্লান্টে কাজে লাগানো যায় সেটার উপর দৃষ্টি দেয়া। আমরা যদি নিজেরাই এটা করতে পারি তাহলে আমাদের সম্ভাব্য রুপপুর পাওয়ার প্লান্টের জ্বালানীর জন্য বিদেশীদের কাছ থেকে উচ্চমূল্যে জ্বালানী রড কিনতে হবে না এবং বিদ্যুতের মূল্য দীর্ঘমেয়াদী পর্যায়ে সাশ্রয়ী হবে।
এত টেকনিক্যাল ডিটেলসে যাবো না কারন টেকনিক্যাল ডিটেলস হ্যান্ডেল করার মতো সেরকম এক্সপার্টি আসলেই আছে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ। এখানে মূলত কিভাবে ইউরেনিয়াম মাইনিং করা যেতে পারে আর কি কি সতর্কতা নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে আলাপ করা যেতে পারে। কমেন্টে আরো ডিটেলস কথা বলা যেতে পারে।
যখন কোনো নক্ষত্র বা তারা তৈরী হয় তখন প্রকৃতিভাবে ইউরেনিয়াম তৈরী হয়। প্রকৃতিতে ইউরেনিয়ামের তিনটি আইসোটোপ পাওয়া যায় U-238, U-235, U232 যার মধ্যে ৯৯.১% হলো U-238। এর অর্ধায়ু হলো ৪.৭ বিলিয়ন বৎসর। U-235 পুরো পৃথিবীতে পাওয়া যেতে পারে .০০০০৭% এবং যেকোনো খনিতে এর পরিমান .৭% এবং এর অর্ধায়ু হলো ৭৫০ মিলিয়ন বৎসর। U232 এর পরিমান হতে পারে .২% যা খুবই সামান্য।
খনিতে বা ইউরেনিয়াম ডিপোজিটে এর বর্ন হতে পারে হলুদাভ অথবা নীলাভ সবুজাভ বর্নের যদি ইউরেনিয়াম অক্সাইডের বর্ন পুরো সিলভার বর্নের।
ইউরেনিয়াম খনি থেকে সংগ্রহ করার জন্য মূলত ওপেন পিট মাইনিং (যেটা বাংলাদেশের বড় পুকুরিয়ার কয়লা খনিতে ব্যাবহার করা হচ্ছে) এবং ইন সিটু লিচিং এর মাধ্যমে করা যেতে পারে।
ওপেন পিট হলো মাটিতে মিশে থাকা খনিজ পদার্থ উত্তোলনের জন্য মাটির উপরিভাগ থেকে মাটি কেটে ট্রাকে ভরে প্লান্টে নিয়ে যাওয়া। যদি এলাকা পাথুরে হয় অথবা মাটি যদি শক্ত হয় অথবা মাটি কাটার খরচ কমানোর জন্য ডিনামাইটের ব্যাব হার করা যায়। সমস্যা হলো ইউরেনিয়াম নিজে খুব একটা তেজস্ক্রিয় না হলেও ই্উরেনিয়ামের খনিতে রেডিয়াম স হ নানা তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকে ফলে তাদের ক্ষয়ের ফলে একধরনের নিস্ক্রিয় গ্যাসের সৃষ্ট হয় যার নাম রেডন।
আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো রেডন নিজের একটা নিষ্ক্রিয় গ্যাস অনেকটা ধোড়া সাপের মতোই নিরীহ। কিন্তু এটা সর্বদা ক্ষয়শীল এবং এর ডটার এলিমেন্ট (ডটার এলিমেন্ট হলো কোনো তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্ষয় পর্যায় স্মরনীর পরবর্তী মৌলিক পদা্র্থে রূপান্তর ) যথেষ্ট তেজস্ক্রিয় এবং কিছুক্ষনের জন্য এগুলো নিঃশ্বাসের সাথে ঢুকে গেলে (সর্বনিম্ন ১ ঘন্টা) তার ফুসফুসে ক্যান্সার দেখা দেবে এবং তার মৃত্যু অবশম্ভাবী। রেডিয়েশনের এসব ব্যাপার গুলো আরো ডিটেলসে এই পোস্টে লেখা আছে।
তাই ওপেন পীটে ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করলে এই রেডন বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে ব হু দূর দরান্তে এটি ছড়িয়ে পড়বে এবং ইতিহাসের সেরা গনহত্যার মতো কোনো ঘটে যাবে। এছাড়া এই রেডন এমনই খারাপ জিনিস যে ছাড়পোকার মতো খনির আশে পাশের ঘর গৃহ স্হালীর কোনা কান্ঞ্চিতে আশ্রয় নেয় ফলে দেখা যায় ২-৩ বছর পর বিকলাঙ্গ বাচ্চা পয়দা হয়। এব্যাপারে ডিটেলস জানতে এখানে ক্লিক করতে পারেন।
ইনসীটু মাইনিংটা সিটু লিচিং এর আপগ্রেড ভার্সন। বাংলাদেশে যমুনা এবং ব্রম্মপুত্রের সমতটে বালুকনিকার সাথে মিশ্রিত ইউরেনিয়ামের মজুতের আভাস পাওয়া গেছে সেটার জন্য এই ইনসীটু প্রেসেসটা কর্যকারী।
তবে এই প্রসেসটার জন্য টেইলিং ম্যানেজম্যান্ট আর মাইনিং ম্যানেজম্যান্ট খুবই গুরুত্বপূর্ন। যদি এটা না করা যায় তাহলে যেকোনো বড় আকারের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। প্রথমেই বলে নেই ইউরেনিয়াম অক্সাইডের ধাতব রড সাধারন লাইট ওয়াটার রিএক্টরের জন্য ব্যাব হ্রত হয় এবং ইুউরেনিয়াম হেক্সাফ্লোরাইড গ্যাস সাধারনত রকেটে ব্যাব হ্রত রিএক্টর এবং গ্যাস নিউক্লিয়ার রিএক্টরে ব্যাবহ্রত হয়। বাংলাদেশে লাইট ওয়াটার রিএক্টর বসতেছে রাশিয়ার সাথে চুক্তি অনুযায়ী। তাই আমাদের দরকার ইউরেনিয়াম অক্সাইডের ধাতব রিএক্টর রড।
ইন সীটু লিচিং
ইনসীটু লিচিং এ ইউরেনিয়াম আহরনের ফলে আশেপাশের পরিবেশে এবং মাটির তলদেশে থাকা পানির মধ্যে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা কম থাকে। যদিও এর পুরোটাই নির্ভর করছে টেইলিং ম্যানেজম্যান্ট কিভাবে করছেন তার উপর।
চিত্র: এই চিত্রে দেখানো হয়েছে ইনসীটু লিচিং প্রসেসে ইউরেনিয়াম সংগ্রহ এর পার্শবর্তী এলাকায় কিভাবে পাওয়ার প্লান্ট বসানো হয়েছে।
প্রথমে একটা পাম্পারের মাধ্যমে (নীচের ছবির মতো) মাটির ভিতর যেখানে ইউরেনিয়াম অক্সাইড (UO3) থাকার সম্ভাবনা বিদ্যমান সেখানে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড আর সালফিউরিক এসিডের মিশ্রন পাম্প করে দেয়া হয়। ইউরেনিয়াম অক্সাইডের একটা গুন গত ব্যাপার হলো এটি নাইট্রিক এসিড, ঠান্ডা পানি এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মধ্যে দ্রবীভূত হয় এবং নন-অক্সিডাইজিং এসিডের সাথে তেমন ক্রিয়া করে না। যেহেতু পরিবেশের ক্ষতির ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হয় এবং খরচের ব্যাপারটাও বিদ্যমান সেহেতু সালফিউরিক এসিডের এই দ্রবন ব্যাব হার করা হয়।
পোস্টের এই অংশটা ক্যামিস্ট্রির লোকজনদের জন্য যদিও আমি ক্যামিস্ট্রিতে এতটা পারদর্শী নই।
UO3 + 2H+ ====> UO22+ + H2O
UO22+ + 3SO42- ====> UO2(SO4)34-
এখানে দেখা যাচ্ছে UO2, UO3 তে অক্সিডাইজড হয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু খনিতে সোডিয়াম বাইকার্বোনেট, এমোনিয়াম বাই কার্বোনেট অথবা কার্বন ডাই অক্সাইড দ্রবীভুত পানি ব্যাব হার করা হয়। যখন কার্বোনটেড দ্রবন ব্যাব হার করা হয় এর সাথে ক্ষার (যেমন সোডিয়াম বা ম্যাগনেসিয়াম ডাইউরেনেট) ব্যাব হার করা হয় মাটির ph লেভেল ধরে রাখার জন্য।
যাই হোক পাম্পারের মাধ্যমে যে দ্রবন ঢুকানো হয় সেটাতে ইউরেনিয়াম দ্রবীভূত হয়ে গেলে পাম্পারের মাধ্যমে উঠিয়ে ঐ দ্রবনে রেসিন/পলিমারের দ্রবনে চালনা করা হয় করে দর্বনের মধ্যে পলিমার বা তরল সমূহ আয়ন আলাদা করা হয়। একই ভাবে দ্রবন থেকে এসিডকেও আলাদা করা হয়। এর পর ঐ দর্বনে ইউরেনিয়ামকে আলাদা করবার জন্য তাতে শক্তিশালী কোনো এসিড অথবা ক্লোরাইড দ্রবন অথবা কোনো নাইট্রেট সল্যুশন ধারাবাহিকভাবে ব্যাব হার করা হয় যাকে বলা হয় স্ট্রাইপিং সাইকেল।
এর ফলে যে যে সল্যুশন পাওয়া গেলো তার মধ্যে এমোনিয়া, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কস্টিক সোডা বা কস্টিক ম্যাগনেশিয়া যোগ করা হয়। দ্রবন থেকে দ্রাব্য পদার্থকে আলাদা করার এই ধারাবাহিক প্রক্রিয়াটিতে অগ্রানিক দ্রাবক ব্যাব হার করে ইউরেনিয়ামকে আলাদা করা হয়।
সাধারনত এই আলাদাকৃত দ্রবনে কেরোসিনের ভিতর দ্রবীভূত করে আবারো পূর্বের প্রক্রিয়া অনুসরন করা হয়।
2R3N + H2SO4 ====> (R3NH)2SO4
2 (R3NH)2SO4 + UO2(SO4)34- ====> (R3NH)4UO2(SO4)3 + 2SO42-
এখানে R হচ্ছে হাইড্রোকার্বন গ্রুপ যার মাত্র একটি কোভ্যালেন্ট বন্ড।
এখন যেই পরিশোধিত দ্রবন পাওয়া গেলো সেখান থেকে ভেজাল দূর করার পালা। দ্রবনের pH লেভেল ১.৫ ঠিক রেখে সালফিউরিক এসিড কাওলিনাইটের মতো ভেজাল দূর করা হয় এবং পরে গ্যাসিয়াস এমোনিয়া ব্যাব হার করে নেগেটিভ আয়ন সমুহ দূর করা হয়। এর পর এমোনিয়া সালফেট দিয়ে দ্রবনটিকে আরও বেশ কয়েকবার পরিশোধন করা হয়।
(R3NH)4UO2(SO4)3 + 2(NH4)2SO4 ====> 4R3N + (NH4)4UO2(SO4)3 + 2H2SO4
গ্যাসিয়াস এমোনিয়া ব্যাব হার করে পুরো দ্রবনটাকে নিউট্রালাইজ করা হলে এমোনিয়াম ডাইউরেনেটের ব্যাবহার করা হয়।
2NH3 + 2UO2(SO4)34- ====> (NH4)2U2O7 + 4SO42-
এই ডাইউরেনেটকে পানি দিয়ে সরিয়ে ফেলে নীচের ছবির মতো U3O8 আলাদা করা হয় যেটা তখন ব্যাব হার উপযোগী এবং মার্কেটে বিক্রি করার মতো উপযোগী হয়।
পারঅক্সাইড শুকানো হয় পারপার্শ্বিক তাপমাত্রায় যেখানে ৮০% U3O8 ব হাল তবিয়তে থাকে আর এমোনিয়া বা সোগিয়াম ডাইউরেনেট কে শুকানো যায় উচ্চ তাপমাত্রায় যেখানে U3O8 এর ভর গিয়ে দাড়ায় ৮৫% এ। তখন দেখতে একে হলুদ কেকের মতো দেখায় বলে এর নাম দেয়া হয় ইয়েলো কেক।
এই ইয়েলো কেককে ২০০ লিটারের স্টিল ড্রামে ভরে সীল করে দেয়া হয় অন্য জায়গায় নিয়ে যাবার জন্য। এই U3O8 খুব বেশী তেজস্ক্রিয় না। অনেকটা আপনি যখন কোনো কমার্শিয়াল ফ্লাইটে বিদেশ ভ্রমন করছেন তখন প্লেনে থাকা অবস্হায় কসমিক রে এর যে তেজস্ক্রিয়তা আপনার উপর পড়ে অনেকটা সেরকম।
টেইলিং ম্যানেজম্যান্ট এবং মাইন রিহ্যাবিলিটেশন
ইউরেনিয়াম যেখানে পাওয়া যায় তার সাথে আরও বেশী তেজস্ক্রিয় পদার্থ রেডিয়াম আর রেডন গ্যাস থাকে যেগুলো মূলত ইউরেনিয়ামের জন্মলগ্নের কয়েক মিলিয়ন বছর পর থেকেই তৈরী হওয়া শুরু করে। যদিও ইউরেনিয়াম নিজে খুব একটা তেজস্ক্রয় নয়, এসব গ্যাস এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের জন্য এখানে যারা কাজ করবে বা এর সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তাদেরকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।
প্রথমেই বলে রাখি কম খরচে রেডিয়েশনের হাত থেকে বাচবার জন্য উক্ত এলাকায় সামাজিক ঘন বনায়ন খুবই জরূরী। যেহেতু ইনসীটু লিচিং পদ্ধতি সবচেয়ে নিরাপদ সেহেতু এই বনায়নের মাধ্যমে যেকোনো রেডিয়েশনের ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ করা যায়। এছাড়া কিভাবে কতদূরে সেগুলো ব হন করা হবে এগুলোর সব বিষয় সরকারেরই দেখবার কথা এবং কড়া নজরদারীর মধ্যে করা উচিত।
ইনসীটু পদ্ধতিতে দেখা যায় বেশ ভালো পরিমানে সলিড বর্জ্য উৎপাদিত হয়। তাই মাইনিং চলা কালিন সময় যে ট্রেলে এই বালি মিশ্রিত দ্রবন মাটির নীচ থেকে উপরে নিয়ে এনে প্রসেস করা হয়েছে অথবা উপরে নিয়ে আসার সময় প্রসেস করা হয়েছে সেগুলো মাটির নীচে রেখে দিতে হবে অথবা উপরে এসে পড়লে পানিতে দ্রবীভূত করে সেগুলো বাস্পায়িত করে ফেলতে হবে পরে সেগুলো যেখানে থেকে উঠিয়ে আণা হয়েছিলো সেখানে পাথর চাপা অথবা কংক্রিট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে-
সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার "জিরো রেডিয়েশন ডিসচার্জ" পলিসি অনুসরন করা যেতে পারে যার মাধ্যমে ব্যাব হ্রত জমিকে পূর্বাবস্হায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
এই হলো ইউরেনিয়াম মাইনিং আর সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা।
সুত্র:
১) ইউরেনিয়াম উইকি
২) ইনসীটু লিচিং উইকি
বিঃদ্রঃ উল্লেখ্য আমি খনি বিদ্যা বা মেটালার্জির ছাত্র নই। নেহায়েত নিউক্লিয়া ফিজিক্সের ধারনা থেকে এই লেখাটা লেখছি। ভুল হলে দয়া করে সংশোধন করে দেবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:১২