১.
: তুমি কি জানো পাগলামী এ সময়ের জন্য ঔষুধ হতে পারে?
: কিভাবে?
: নির্দিষ্ট পরিমানের পাগলামীকে আমরা তেলের মতো মজুত করতে পারি। একটা জন গোষ্ঠীকে তাতে নেশাতুর করতে পারি। আধুনিক সমাজ মানুষকে অনেক অপশন দিয়েছে কিন্তু দিতে পারেনি তার মৌলিক অধিকারের চিরস্হায়ী নিরাপত্তা। এই চিরস্হায়ী নিরাপত্তার জন্য সে বারংবার দায়ী করে রাস্ট্রব্যাবস্হার কর্নধারকে। তাহলে কেন নয় এই পাগলামীর মজুতীকরন?
: হুমম....তেল খুব দামী। কিন্তু এতে তোমার লাভ কি?
: বন্ধুত্বের এক অনন্য সুযোগ।নিজের একাকীত্বের বহুমুখী সমাধান।
: তাহলে তো ওপাশ থেকে এক পা আগালে তোমাকে এক পা পেছাতে হবে।
: তাতে কি পাগলামীকে ছড়িয়ে দেবার পরিস্হিতিকে দেখা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না?
: মাঝে মাঝে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কীইবা করতে পারি! আসল ব্যাপার হলো তোমার হাতের নাটাইটা তুমি কিভাবে ঘুরাচ্ছ।
শাহেদ মুচকী হাসি হাসলো। তিন্নী সাইকোলজীতে পিএইচডি করছে জার্মানীর পোস্টড্যাম ইউনিভার্সিটিতে, সামারে দেশে এসেছে কিছুদিনের জন্য। দেশের আসার উদ্দেশ্য তিন্নীর নিজের কাছেই খুব একটা পরিস্কার না। ফেসবুকে শাহেদের সাথে পরিচয়, শাহেদের মতো ভালো সাবজেক্ট আর হয় না, মনে মনে সেই লোভ সামলানো যায়নি।
: আজকে উঠি। আমাকে একটু ঢাকার বাইরে যেতে হবে। ইটের ভাটার ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। ভাবছি এই তত্বটার প্রয়োগ করবো।
: পিঠ বাচিয়ে চলবেন।
শাহেদ ফ্লাট থেকে বেরিয়ে যাবার সময় বলে উঠলো,"পরশুদিন সাভার, মনে আছে তো?"
তিন্নী একটু ভেবে রহস্যহাসি দিতে চেষ্টা করলো,"ভেবে দেখবো!"
শাহেদ ১৫০০ সিসির হোন্ডাটা স্টার্ট দিলো। ঢাকা শহরে ১৫০০ সিসির হোন্ডার লাইসেন্স পাওয়া যায় না। তবু যার ক্ষমতা আছে সে চালায়। দেশটা চলে গেছে গুটিকয়েক মানুষের হাতে।
২.
আজ মাঘী পূর্নিমা। জ্যোৎস্নার আলোটা দেখে মনে হচ্ছে বরফের মধ্যে যখন চাদের আলোর প্রতিফলিত হয় ঠিক সেরকম লাগছে। বাতাসটাও চমৎকার, না ঠান্ডা না গরম। বর্ষাকালে এমন পরিস্কার আকাশ কখনো ভাবা যায়?
শাহেদ বেশ বিষন্ন। ওর বাগানবাড়িটার সামনে বিশাল জায়গা, চারিদিকে গাছে ঘেরা। এক কোনায় কাঠ পুড়িয়ে বিশাল খাসি ঝলসানো হচ্ছে। শাহেদ নিজ হাতে চামড়া ছুলে সেখানে সেট করেছে মাল মশল্লা দিয়ে। অনেকটা গ্রীল পার্টি।
: আমি বলেছিলাম জার্মানী গিয়েও ভুলতে পারবেন না এমন গ্রিল পার্টি। যত ক্যাম্পিং করেন না কেন! এই নিন শুরু করুন।
তিন্নী বিয়ারটা শেষ করে মুখে পুড়লো খাসির গোস্ত....অসাধারন। দেশের মশল্লায় একটা আলাদা ঝাজ আছে যেটা বিদেশে পাওয়া যায়।
: গ্রীল এত সুন্দর কিভাবে শিখেছেন?
: পুরান ঢাকায় রোজার সময় প্রায় সবগুলো বড় বড় হোটেলে খাসির গোস্ত এরকম প্রথমে গ্রীল করে মশল্লা মাখিয়ে। আমার এক কাস্টমার ছিলো যার পুরান ঢাকায় এমন হোটেল ছিলো। সে আমাকে প্রতি রোজায় এরকম বিশাল দাওয়াত করে খাওয়ান। সেখান থেকেই শেখা। ভালো কথা হুইস্কি আর ভোদকার বোতল আছে।
: না না.....এত ড্রিংক করতে পারবো না। আমি সামলাতে পারি না।
: জাস্ট শুরু করেন।
তিন্নী হুইস্কি আর ভোদকার দুটো পেগ মেরেই পুরো হ্যাং হয়ে গেলো। টলতে লাগলো। শাহেদ বলতে থাকলো,"তিন্নী, একটা কথা বলি। খুব গোপন কথা। আমার একটা গোপন অভ্যাস আছে। অভ্যাসটা আমি পেয়েছি আমার বাবার কাছ থেকে।"
তিন্নি ঘোরের মধ্যে একটা ফিচকি হাসি দিয়ে বললো,"আমি জানি।তুমি রক্ত খুব পছন্দ কর। তোমার বাবা শিকারী ছিলো।"
: এটা আমি তোমাকে বলেছিলাম। আমার বাবা শুধু শিকারী ছিলো না।
: সত্যি করে বলতো, তোমার মা কি তোমার বাবা মেরেছে?
: (শাহেদ হাসি দিলো একটা) না, আমি মেরেছি। আমার বাবা দারোয়ানকে রাতের আধারে গলা কেটে ফেলে তার রক্তের ফিনকি দেখছিলেন, তখন আমি সেটা দেখে ফেলি। আমার চোখের জ্বল জ্বল দেখে আমার বাবার মাথায় খুন চেপে যায়। সে চাননি আমিও তার মতো হই। সে বাড়ি ফিরে সেদিন আর কিছু বলেননি। খুব ভোরে বাড়ি থেকে চলে যান। বিকেল বেলা বাড়ি ফিরে দেখেন মায়ের গলা কাটা, ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরুচ্ছে। আর আমি পাশে দাড়িয়ে। সে অনেকটা পাগলের মতো হয়ে যায়।
: তুমি এই পর্যন্ত কতগুলো মানুষ মেরেছো?
: ২৭ টা।
: (তিন্নির হাসি বন্ধ হয়ে গেলো, অনেকটা সংজ্ঞাহীনের মতো বলতে লাগলো) শিট.. কেন এতো বড় ভুল হলো?
শাহেদ তিন্নীর নিদ্রিত দেহটা পলিথিনে ঘেরা একটা ঘরে নিয়ে গেলো। তারপর হাতের আর পায়ের রগ কেটে ফেললো। এরপর গলায় একটা সার্জিক্যাল ব্লেড দিয়ে একটা পোজ দিয়ে দিলো। ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে চারিদিকে ছিটিয়ে পড়ছে। সেই রক্তের স্রোতধারায় শাহেদ নিজেকে স্নাত করলো। ছবি তুললো ডিএসএলআরে।
শাহেদ একটু পর এই লাশটা ইটের ভাটার চুল্লীতে ফেলে দেবে। বর্ষাকালে ইটের ভাটা বন্ধ থাকে। অনেকে চুলো বন্ধ করে দেয়। শাহেদ বন্ধ করেনি, ওখানে ও লাশ জমাচ্ছে। ওর ইটের কারিগর রহমত মিয়া এক অদ্ভুত মিথের কথা বলেছিলো যে মানুষের রক্তে মাখা ইটে গড়া দালানে নাকি আত্মারা বসবার করে। ওর রক্তবিহীন আত্মাদের গোঙ্গানী শুনতে যায়, তাদের মর্ত্যের চিৎকারে নিজেকে এক শিকারী হিসেবে উথ্থীত করতে চায়। ১০ টা মানুষের দেহের লেলিহান শিখায় পোড়া ইটে নিজেকে ঈশ্বর হিসেবে ধারন করতে চায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




