somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাগাও একবার----১

১৪ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
: আমার মেয়েটা পড়ালেখায় খুব ভালো ছিলো। তাই ওকে ইন্জ্ঞিনিয়ারিং পড়িয়েছি। এখন খুব ভালো চাকুরীও করে। মেয়েটা আমার খুব ভালো, কথা কম বলে। আপনাকে আর আপনার পরিবার দেখে আমার মনটা ভরে গেছে। আমার কোনো অমত নেই। আমার মেয়ের খুশীই আমার খুশী।

তিথীর বাবা অনেকটা আবেগে চোখ ভিজিয়ে ফেললেন। পাশে বসা সবার মুখেই হাসি। আদনান সাহেবের বাবা রফিক সাহেব বললেন,"শুকুরআলহামদুলিল্লাহ! তাহলে আমরা সামনের জুম্মাবার আপনাদের বাড়ি গিয়ে এঙ্গেজম্যানট করিয়ে ফেলতে পারি। কিন্তু ওর মা বলছিলো তার শরীরটা খারাপ। আমরা চাচ্ছিলাম ঐদিন যদি আক্কদ হয়ে যায়, তাহলে কি কোনো সমস্যা আছে?"

তিথীর বাবা কিছু বলতে যাবে এমন সময় কোনায় বসা এক সুদর্শন অল্প বয়সী ছেলে বলে বসলো,"আন্কেল আমার কিছু কথা আছে।"

সবাই ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থাকলো। তিথীর বাবার চোখে অবাক দৃষ্টি থাকলেও আদনানের ভ্রু কুচকে গেলো। শাহেদ বলা শুরু করলো,"জ্বী আমার নাম শাহেদ, তিথীর খালাতো ভাই। আদনান ভাই এর প্রথম স্ত্রী শুনেছি তিনি নাকি এজমায় মারা গিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে।"

রফিক সাহেব কিছু বলতে যাবে এমন সময় আদনান রফিক সাহেবের পায়ে আলতো হাতটা রেখে থামিয়ে বললেন,"সেদিন ছিলো কার্ফ্যু, তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কার্ফ্যুর দিন ওর ইনহেলার শেষ হয়ে গিয়েছিলো। পুরোটা রাত ওকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য চেষ্টা করি, কিন্তু ভোর রাতে ও ফেইন্ট হয়ে যায়।"

শাহেদ চায়ে চুমুক দিয়ে কাপটা রেখে বলতে থাকলো," আপনাদের বাসার আঙ্গিনায় দুটো ইউক্যালিপ্টাস গাছ বেশ বড় হয়ে গেছে। আপনার স্ত্রীর জন্মগত এজমা ছিলো যতদূর শুনেছি। এবং ঐ দুটো গাছ আপনার স্ত্রীই লাগিয়েছিলো। যাদের এজমার সমস্যা তাদের ইনেহলারের অনুপস্হিতিতে যদি ইউক্যালিপ্টাসের পাতা সিদ্ধ করে তার ভাব নেয় তাহলে অন্তত ৬-৮ ঘন্টা তার ইনহেলারের প্রয়োজন নেই। ইউক্যালিপ্টাস গাছ তো পরিবেশের জন্য খারাপ। তারপরও এরকম ৬-৭ বছর বয়সী গাছ! আপনার স্ত্রীকে কি ঘরে আটকিয়ে রেখেছিলেন নাকি মুখের উপর বালিশ চাপা দিয়েছিলেন ?"

সবার মুখে কোনো কথা ফিরছে না। রফিক সাহেব কাপছেন রাগে, আদনান ঘামছে দর দর করে।

২.

শুক্রবার দেরীতে ঘুম ভাঙ্গার কথা, কিন্তু গত কয়েকবছর সকাল ৮ টা বাজলেই শাহেদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। রাতে ঘুম আসছে না, কিছু একটা ওকে ঘুমাতে দেয় না। গতকাল রাতে ফাইনম্যানের ডায়াগ্রাম দিয়ে বিটা-টাউ এর ডিকে চ্যানেল ক্যালকুলেশন করলো আবার।

শাহেদের ঘরটা খুব ছোট, সকালের রোদটা যাতে মুখে পড়ে তাই পর্দা রাখেনি ও। মুখে রোদ মেখে ঘুমানোর অভ্যাস যখন ওর মা বাবা দুজনই মারা যায়। তিথীর বাবা খুব ভালো মানুষ, তাকে নিজের ছেলের মতোই বড় করেছে।

মুখ হাত ধুয়ে একটা টোস্ট মুখে দিয়ে কীচেনে দাড়িয়েছিলো। তিথী ঘুম ঘুম চোখে সোফায় বসে আছে।

: কাজটা কিন্তু ভালো করিস নি।
: কি করেছি বল? আমি জেনে শুনে আমার বোনকে একজন খুনির হাতে তুলে দিতে পারি না। বয়স বেশী হয়েছে তাই বলে তাকে তো আগুনে ফেলে দিতে পারি না!
: ইশশ.... কি আদরের ভাইরে! আচ্ছা বলতো তুই বুঝলি কেমনে ঐ খুনি? মানে খুন না করে অন্য কিছুও হতে পারতো!
: তা হতে পারতো। যদি গাছ দুটোর জায়গায় একটা থাকতো অথবা গাছ দুটোর বয়স বেশী থাকতো। তাছাড়া ঐ ছেলেটার ভয়েসটা মোটা, চোখের নীচে কালো দাগ, তার ওপর মেকাপ। এখনকার কোন অল্প বয়সী ছেলে পেলে হলে গিয়ে রেগুলার ড্রিংক করে কিন্তু এতো বাসাতেই করে। একজন সোশিওপ্যাথের সব লক্ষনই তো আছে। তারপরও কি তুই বলবি আমি ভুল?
: থাক আর বুঝাতে হবে না। আমার ভয় লাগছে। বাবার মনটা খুব খারাপ ছিলো।
: তোর কি শরীর খারাপ?
: এলার্জী। গা ভরে গেছে।
: শেষ কবে ইনজেকশন নিয়েছিলি?
: দু'মাস হলো।
: বস একটু। তোকে ঔষুধ ছাড়া তোর এলার্জী কমিয়ে দিচ্ছি।

শাহেদ একটা গ্লাসে লেবু চিপড়ালো দুটো। চিনির পাত্রটা হাতে নিয়ে তিথীকে বললো,"একটু নাকে মুখে দিয়ে রাখ। বাকীটা একটু চিনি দিয়ে গিলে ফেল। দেখবি ভালো লাগবে"

এমন সময় দরজায় নক। শাহেদ দরজা খুলেই দেখে পলাশ,"আরে পলাশ! আয় ভিতরে আয়।"

পলাশকে কেন যেনো অস্হির লাগছে,"ভাই, রতনের লাশ পড়ে আছে রাস্তায়। একটু আসবেন? অনেক পুলিশ।"

শাহেদ "চলো" বলেই বেরিয়ে গেলো। তিথীকে কিছু বলার সময়ও দিলো না।


৩.

রহমত ভাইয়ের মুদীর দোকানের বেন্ঞ্চ দুটো কখনোই খালি থাকে না। দিনে ঠিক কতো কাপ চা বিক্রি হয় এটা বোধ হয় রহমত ভাইও জানে না। শাহেদের এটা নিয়ে দু'কাপ। পাশে বসে আছে পলাশ আর শিহাব।
পলাশ শুরু করলো,"আজকে ভার্সিটি যান নাই?"
শাহেদ: গিয়েছিলাম। চলে এসেছি। রতনের বাসায় কি অবস্হা?
পলাশ: খুব খারাপ। রতনের জানাজা নিয়ে অনেক গ্যান্জ্ঞাম হয়েছে। পরে ওর বাবা আর পরিবারের কয়জন মিলে বড় হুজুরকে রাজী করায়।

শাহেদ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো। চা টা শেষ করে উঠে দাড়ালো। পলাশ বললো,"কোথায় যান শাহেদ ভাই?"

শাহেদ কিছু বললো না। হাটতে থাকলো ফুটপাথ দিয়ে। রতন ছেলেটা সবার সাথে মিশতে পারতো না।যখন বয়ঃসন্ধিতে আসলো তখনও জানতো না ও কি রকম! বছর কয়েক আগে রতনকে দেখে শাহেদের সন্দেহ জাগে। ওর কথার স্টাইল অঙ্গভঙ্গি দেখে জানতে পারে রতন সমকামী। রতন অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। পরিবারের গন্জ্ঞনা, কটূকথা সইতে না পেরে বেশ কয়েকবার পালিয়েছিলো। কিন্তু যেখানেই যায় ওকে ক্ষত বিক্ষত হতেই হয়।

পুলিশ বলেছে ও নাকি ছাদের থেকে লাফ দিয়েছে। শাহেদের কাছে মোটেও তা মনে হয় না। কারন লাশটার চোখ দুটো থেকে রক্ত ঝরছে এবং বিল্ডিং থেকে বেশ খানিক দূরে পড়েছিলো আকাশের দিকে মুখ করে। আত্মহত্যা হলে এরকম করে চিৎ হয়ে থাকতো না। সবচেয়ে বড় কথা যেই ছেলেটা নিজের সমকামিত্বের কথা মেনে নিয়ে বাচবার জন্য দু'দুবার পালাতে পারে, সে আত্মহত্যা করবে না নিশ্চয়ই!

চলবে.....
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:০৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×