বাল্যবিবাহ নিয়ে এর আগে বেশ কিছু পোস্ট দিয়েছি যেগুলোর লিংক নীচেই দিয়ে দেয়া হলো। যে কেউ ইচ্ছে করলে ঐ পোস্টে গিয়ে বিষয় সংশ্লিস্ট ব্যাপার নিয়ে নির্দ্বিধায় আলোচনা করতে পারেন, জানতে পারেন, জানাতে পারেন।
১) বাল্যবিবাহ -১: ইসলামে কি সত্যি বাল্যবিবাহ জায়েজ? একটা উন্মুক্ত আলোচনা
২) বাল্যবিবাহ-২: সমাজ, রাস্ট্রের ওপর এর কি প্রভাব? বিজ্ঞান কি বলে?
৩) বাল্যবিবাহ-৩: ইসলামে এটা কি সুন্নত না শুধুই জায়েজ (অথবা স্বতঃস্ফূর্ত)?
আলোচনা করার নিয়ম সমূহ:
১) অবশ্যই তথ্যপূর্ন এবং রেফারেন্স সহ আলোচনা করতে হবে। এখানে রেফারেন্স হিসেবে ধর্মগ্রন্থ, জার্নাল, পাবলিকেশনস, পাঠ্যবই এর সূত্র নিয়ে আলোচনা করতে হবে। আলোচনার সাপেক্ষে যদি সুত্রসমূহ সন্দেহজনক মনে হয় সেটা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।
২) যখনি আপনি গালাগালি শুরু করবেন তখন ধরে নেয়া হবে আপনি হেরে গেছেন। আপনি শিশুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, পেডোফিলিজমের পক্ষে থাকলে তাহলে আপনার কাছে এসব শব্দগুলো গালি হবার কথা নয়। এই পয়েন্টেও আমরা আলোচনা করতে পারি।
৩) হতেই পারে আপনার সুত্রটি জানা নেই। তাহলে আপনি কি করবেন? অবশ্যই তা উল্লেখ করবেন, আমি তা খুজে নেবো। কোরান শরীফের ওপর হাফেজী শিক্ষা ছোটবেলা করেছি এবং এখনো কোরান হাদিস চর্চা নিয়মিত করি। তাই বিশ্বাস করতে পারেন আমি এর খুটিনাটি এবং প্রচলিত তফসীর সম্পর্কে জ্ঞাত এবং আরবী অনর্গল বলতে না পারলেও ভাষা হিসেবে কিছু জ্ঞান আমার আছে।
৪) রেফারেন্স হিসেবে আপনি জার্নালের লিংক দিতে পারেন, তার কিছু অংশ কপি করতে পারেন, যদি তাতে সমস্যা তাহলে স্ট্যান্ডার্ড রেফারেন্সিং সিস্টেম ফলো করতে পারেন।
সবাই বলতে পারেন আমরা জার্নাল লিখতে বসিনি। যদি তাই মনে করেন আলোচনায় অংশগ্রহন করার কোনো দরকার নেই। আপনার মন্তব্য পাবার জন্য আমি ব্লগ লিখছি না। আমি ব্লগ লিখি যাতে আমার লেখা যেকোনো শিক্ষার্থী বা একাডেমিক তার নিজের বোধগম্যতা এবং তথ্যের ভান্ডার হিসেবে ব্যাবহার করতে পারে। আপনি যদি চান আমার ব্লগকে সমৃদ্ধ করুন কারন জ্ঞানের যত প্রসার হবে অন্ধকার দূরীভুত হবার সম্ভাবনা তত বেশি।
যাই হোক আলোচনা শুরু করি:
প্রথম গাঞ্জা:
বিষুবীয় অঞ্চল বা গরমের দেশের মেয়েদের বয়ঃসন্ধি বা মাসিক শীত বা নাতিশীতোষ্ঞ অঞ্চলে বসবাস করা মেয়েদের আগে হয়!
উত্তর: প্রথমে বোঝার চেষ্টা করি মেয়েদের বয়ঃসন্ধি কিভাবে হয়। এর ম্যাকানিজম। একটি মেয়ে যখন তার শৈশব থেকে কৈশোর বয়সে পদার্পন করে সেই ট্রানজিশন সময়টাই বয়ঃসন্ধি বা পুবার্টি। পুবার্টি ঘটে মূলত হরমোনাল পরিবর্তনের কারনে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারনত এটা ১০ বছরেই শুরু হয়ে যায় এবং পরিপূর্ন হতে সময় লাগে ১৭ বছর পর্যন্ত। তবে এটা দৈহিক গঠনের ক্ষেত্রে। যদি মানসিক দিকটি হিসাব করি তাহলে এটা দীর্ঘায়িত হয় যেটা ১৯ এ ঠেকে।
যখন একটা মেয়ের বয়স মোটামোটি বছর ৮-১০ হয় তখন তাদের মস্তিস্কের হিপোথেলামাস অংশটি গোনাড্রোপিন বা GnRH নামের একটি হরমোন নিঃসরন করে তাদের শরীরে। যখন হরমোনটা পিটুইটারী গ্রন্থিতে (এটা আমাদের মস্তিস্কের নীচের দিকেই থাকে এবং এই গ্রন্থি শরীরের অন্যান্য হরমোন গ্রন্থিকে নিয়ন্ত্রন করে) পৌছে, তখন এই পিটুইটারী তাদের রক্তে আরো দুইটি বয়ঃসন্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত হরমোন নিঃসরন করে যার একটির নাম লুটেইনাইজিং হরমোন বা LH এবং আরেকটি ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন বা FSH। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই দুটো হরমোনের টার্গেট থাকে মেয়েদের ডিম্বাশয় বা ওভারী। সেখানে পৌছানো মাত্রই তাদের ডিম্বাশয় এস্ট্রোজেন উৎপাদন করার জন্য সক্রিয় হয় যার ফলে মেয়েদের শরীর গর্ভবতী হবার জন্য প্রস্তুত করতে থাকে। এর সাথে সাথে এড্রিনাল হরমোন আরও বেশ কিছু হরমোন নিঃসরন করে যার ফলে মেয়েদের যৌনাঙ্গ আর আর্মপিট স হ উন্মুক্ত স্থানে লোমশ করে তোলে। সূত্র ইউনিভার্সিটি অব মেরীল্যান্ড মেডিক্যাল সেন্টারের ওয়েবসাইট।
তার মানে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের মস্তিস্কের হেপোথেলামাস যতক্ষন না গোনাড্রোপিন নিঃসরন না করছে ততদিনে এই পুবার্টি বা বয়ঃসন্ধি শুরু হবার পসিবিলিটি নেই। তাহলে এই নিঃসরনটা কিসের ওপর নির্ভর করছে সেটা নিয়ে কথা আসতে পারে।
যখন একটা মেয়ের অতি অল্প বয়স মানে ৮ বছরের আগেই বয়ঃসন্ধি শুরু হয়ে যায় তাহলে সেটাকে বলা হয় প্রিকোশিয়াস পুবার্টি। এর কারন অনেক তবে একে দুই ভাবে ভাগ করা যায়। যদি কারন গুলো পিটুইটারী গ্রন্থি রিলেটেড হয় তাহলে তাকে বলে কেন্দ্রিয় কারন।
কেন্দ্রীয় কারন গুলোকে এভাবে সাজানো যায়:
ক) মস্তিষ্কের নিবারকমূলক কাজ যে অংশ সম্পাদন করে তাতে সমস্যা (ট্রমা, ইনফেকশন, রেডিয়েশনের কারনে) হলে
খ) মস্তিষ্কের নিউরন সেলে যদি হাইপোথেলামিক হামারটোমা নামক নন ক্যান্সারাস টিউমার হলে
গ) চামড়ায় ল্যাঙ্গারহ্যানস সেল হিস্টিওসাইটোসিস হলে
ঘ) চামড়ায় ম্যাকিউন- অলব্রাইট সিনড্রোম দেখা দিলে
তবে উন্নয়নশীল দেশে কেন্দ্রিয় প্রিকোশিয়াস পুবার্টি হয় বেশীরভাগ সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে যদি ইনফেকশনের কারনে (টিউবোরকিউলোসিস)।উন্নত দেশে অনেক সময় অবেসিটি এবং অতিরিক্ত অসম্পৃক্ত চর্বি এবং ডায়েটের কারনেও এটা হতে পারে। আরও অনেক কারন আছে যেগুলো লেখলাম না। প্রধান কারনের পর আরেকটা হলো পারিপার্শ্বিক। যদি অস্বাভাবিক কোনো উৎস হতে সেক্স স্টেরয়েড বেশী নিঃসরিত হয় তাইলে এইটা হইতে পারে। রক্তে কর্টিসেলের মাত্রা খুব কম থাকে আর এন্ড্রোজেনের মাত্রা থাকে।
কারন সমূহের মধ্যে:
ওভারীতে টিউমার হলে, এড্রিনালিন হরমোন গ্রন্থিতে টিউমার হইলে, ওভারীর আশেপাশে জীবানু জমে টিউমারের সৃষ্টি করলে, জীন মিউটেশনের কারনে দেহের মধ্যে থাকা এনজাইম সমূহ যদি এড্রিনালিন গ্রন্থির কারনে কোলেস্টেরল থেকে কর্টিসেলে পরিণত হয় তখন দেহে কনজেনিটাল এড্রিনাল হাইপারপ্লাশিয়া দেখা দেয় এর কারনে।
এখন কথা হলো এই প্রিকোশিয়াস পুবার্টি অনেকটা এসব রোগ আর এবনরমাল কারনে হতে পারে। আবার দেখা যায় যেসব শিশুরা ছোটবেলা থেকে নিকটাত্মিয়দের কাছে সেক্সুয়াল এবিউজের শিকার হয় তাদের সেক্স স্টেরয়েড খুব বেশী পরিমানে নিঃসরিত হয় তার ফলেও এটি ঘটে। সমস্যা হলো পুবার্টি হয়ে গেলে ওভারী, বুক, শারীরিক গঠনে এগিয়ে গেলেও তার হাড়ের গঠন বৃদ্ধি বন্ধ করে ম্যাচুরিটিতে চলে আসে। ফলে সে খর্বকায় হয়। মানসিক ভাবে অপরিপক্কতা বিরাজ করে, এবং শরীরের অন্যান্য অন্ত্র এসব পরিপক্ক গ্রন্হিদের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে শরীরে প্রজননতন্ত্র গত সমস্যা লেগেই থাকে।
ফলে যেই মেয়ে এমনেই এসব জটিলটা বহন করে তাকে যদি নিয়মিত যৌনমিলনের মাধ্যমে অন্তঃসত্বা বানিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তার কি হতে পারে সেটা নীচে বলি!
পেলভিক ফ্লোর
কোমড়ের হাড়ের বৃদ্ধি যথাযথ না হওয়ায় যখন বাচ্চাটাকে ব হন করে তখন তার কোমড়ে প্রচুর প্রভাব পড়ে। ফলে বয়স যখন ২৫-২৬ হবে তখন সে খুব স হজেই অস্টিরিওপোসিস মানে হাড় ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হবে। অনেক সময় আমরা দেখি একজন স্বাস্থ্যবতী মহিলা হাটতে হাটতে হঠাৎ পড়ে গিয়ে পায়ের হাড় ভেঙ্গে ফেললো। পরে এক্সরে করে দেখা গেলো তার পায়ের হাড় গুলো ক্ষয় ক্ষয় হতে সরু হয়ে গেছে। এমনকি গ্রামে অনেকে লাঠিতে ভর করে পুরো কুজো হয়ে হাটে। কারন তাদের কোমড়ের হাড্ডি ভেঙ্গে গেছে। অনেকে ৩০ এর পরই আজীবন পঙ্গুত্ব এবং গেটোবাতে ভুগতে থাকে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স
ফিস্টুলা।
অল্প বয়সে (ধরা যাক ৯ বছর বয়সে, কিছু স্টাডিতে ১২-১৩ বছর বয়সেও বলা আছে) গর্ভবতী হলে যখন শিশুটির ডেলিভারীর টাইম আসে তখন ভ্যাজিনা দিয়ে বের হবার সময় ভ্যাজিনার ওয়াল আর রেকটাম বা ব্লাডারের ওয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে একটা গর্তের সৃষ্টি করে। এমন সময় অনেক মেয়েই পিচকি জন্ম দেবার সময়ই মারা যায়। যারা বেচে যায় তখন দেখা যায় পিচকির মাথাটা যখন ঠেলা দেয়া হয় তখন গর্ত সৃষ্টি হলেও সেটা খুব বেশী বড় না হওয়ায় আটকে যায়। তখন ঠেলাঠেলির চাপের পিচকির মাথার কিছু অংশ আর মায়ের পেলভিক ফ্লোরের নরম টিস্যু ছিড়ে যায়।তখন মেয়েটির টয়লেটের জিনিস আর প্রস্রাব সেই গর্ত দিয়ে চলে যায় যা একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে পরে যা ভ্যাজিনা দিয়ে বের হয়ে যায় (ভাই, এই ব্যাপারটা আমার লিখতেই শরীরে গায়ের রোম খাড়া দিয়ে উঠতেছে কত ভয়াব হ একটা ব্যাপার)। এর পরেও যদি মা আর শিশু বেচে থাকে মায়েদের এই সমস্যা আর স হজে ছাড়ে না। এবং তারা মেন্টালি আর ফিজিক্যালি ধ্বংস হয়ে যায় এবং অনেকের বিয়েও ভেঙ্গে যায়।
প্রসব কালীন জটিলতা: এই জার্নাল অনুসারে দেখা যাচ্ছে যে মেয়ে সন্তানের জন্মের সময় স্বাভাবিক ওজন বা উচ্চতের চেয়ে কম হয় তখন এটাও একটা কারন।
আরও একটা বড় কারন হলো শিশুর ওপর যৌনচার। কর্নেলী ইউনির এই লিংক অনুসারে একটি জার্নালে প্রকাশিত যে শিশুদের ওপর যৌননীপিড়ন চালালে অনেক সময় তাদের মস্তিষ্ক ভুল সিগনাল পায় এবং এই কারন খুব দ্রুত এই বয়ঃসন্ধি শুরু হয়ে যায়।
ওপরের সব আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে মেয়েদের শরীরের মস্তিস্কের যে হেপোথালামাস অংশটি হয়েছে এটার সক্রিয়তা আবহাওয়ার ওপর কোনো অংশেই নির্ভর করে না। এটা একটা মিথ, ডাহা মিথ্যা কথা। পরিবেশ গরম না স্যাঁত স্যাঁতে অথবা ঠান্ডা সেটার কোনো কিছুই এই অংশের যায় আসে না। এটা একটা মিথ।
অনেকেই হয়তো এভাবে দুয়ে দুয়ে চার মিলান এভাবে যে কাঠাল স হ অন্যান্য গরম খাবার হলে শরীর গরম হয় এবং মানুষ যৌনচর্চা করার জন্য সাময়িক ট্রিগারড হয় এটাকে মনে করে। কিন্তু এটাও ভুল। কিছু কিছু ফল বা খাবারে নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমান বেশী থাকে ফলে যৌনাঙ্গ সাময়িক ভাবে ট্রিগারড হতেই পারে। তখন যদি আপনার রক্তে পরিমিত টেস্টোরন থাকে এবং অন্যান্য সমস্যা না থাকে আপনে সাবালক হিসেবে যৌনচর্চা করতেই পারেন। কিন্তু একটা শিশুর শরীর এভাবে কাজ করে না। তার মস্তিস্ক বা শরীর তখনও এতটা ডেভেলপ হয় না।
যদি বিজ্ঞানে বিশ্বাস থাকে (এখানে আবার বলবেন না যে বিজ্ঞানের সবকিছুই পরিবর্তনশীল: তাহলে বলতে হবে আপনি জানেন না বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে। তত্ব এবং প্রমানিত সত্য ও হাইপোথিসিসের মধ্যে কি পার্থক্য সেটা আগে জেনে আসতে হবে এবং এই শিক্ষাটা পাবার কথা আপনার ক্লাস সিক্সেই যেটা আমরা পেয়েছিলাম আমাদের সময়ে, আপনারা যদি না পেয়ে থাকেন তাহলে বলতে হবে এটা আপনার অজ্ঞতা), তাহলে এসব মিথ গল্প গুজবে বিশ্বাস করার কোনো ভিত্তি নেই।
দ্বিতীয় গাঞ্জা:
বয়োঃসন্ধি হলেই তাকে পোয়াতী করা যায়। বয়োঃসন্ধি মানেই সে গর্ভবতী হবার যোগ্যতা অর্জন করছে।
উত্তর: এই বিষয়ে আলাপ করবার আগে দেখে নেই একটি মেয়ের যখন বয়োঃসন্ধি শুরু হয় তখন তার শারীরিক পরিবর্তন গুলো কি কি। এই স্টেজ গুলো সাজানো হয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এই পেজ থেকে। এই পেজে ক্লিক করবার আগে অবশ্যই আপনাকে ১৮ এর উপরে হতে হবে কারন যৌনশিক্ষার কিছু ছবি আছে যা অনেক গোড়াদের কাছে ভালগার মনে হতে পারে।
**স্টেজ ওয়ান: বয়স মোটামোটি যখন ৮ থেকে ১১- মেয়েদের ডিম্বাশয় বড় হতে থাকে এবং হরমোনের নিঃসরন শুরু হতে থাকে, কিন্তু বাইরে থেকে এটা বোঝা যায় না। অন্যান্য অঙ্গ সমূহের বেড়ে ওটা দৃশ্যমান হয় না। বুকে শুধু নিপল জাগতে থাকবে। যোনিপথে ছোট ছোট চুল গজাতে থাকবে। এসব এড্রিনাল গ্রন্থি অল্প অল্প করে এন্ড্রোজেন নিঃসরন করবে যর ফলে এই চুল গজানো শুরু করবে।
**স্টেজ দুই: বয়স মোটামোটি যখন ৮ থেকে ১৪- এই সময়ে মেয়েদের বক্ষের বৃদ্ধি বেশ ভালোভাবে দৃশ্যমান হয়। প্রথমে বক্ষপিন্ড বড় হয়। নিপলটা ছোট এবং সূচালো থাকে। নিপলের পাশের ব্রাউন অংশ অরিওলি সাইজে বড় হতে থাকে। এই সময় প্রথম স্টেজেই লোম গজাতে শুরু করে উন্মুক্ত স্থানে। প্রথম দিকে হতে পারে কোকড়ানো বা ছোট অথবা সোজা। এসময় মেয়েদের শরীরের উচ্চতা এবং ওজন দুটোই বাড়তে থাকে। শরীরের গঠন গোলাকার এবং খাজ খেলতে শুরু করে। যোনিপথের ক্লিটোরিস বড় হতে থাকে আর লাবিয়া ফুটতে থাকে। মুত্রনালীর বৃদ্ধি ঘটে।
**স্টেজ তিন: বয়স যখন মোটামোটি ৯ থেকে ১৫- বক্ষের বৃদ্ধি হতে থাকে এবং উন্মুক্ত স্থানের লোম সমূহ কালো এবং ঘন হতে থাকে। এই সময়ে রজঃস্রাব শুরু হয়, এমনকি কিছু কিছু মেয়েদের মাসিকও শুরু হয়ে যায়। একনি দেখা দেয়, মুখে ছোপ ছোপ হয়।
**স্টেজ চার: বয়স মোটামোটি ১০ থেকে ১৬- কিছু মেয়ে লক্ষ করে যে তার নিপলের পাশের অরিওলি কালো হতে শুরু করে এবং সেকানে একটা পিন্ডের আকারের মতো তৈরী হয় পুরো বক্ষপিন্ডের ওপর, যেনো একটা আলাদা কিছু। লোম সমূহ ত্রিভুজাকৃতির রূপ নেয় এবং বাড়তে থাকে। যদি এটা স্টেজ তিনে না হয়, তাহলে প্রথম মাসিক শুরু হয়ে যাবার কথা। ডিম্বাশয়ের ডিম চক্রও শুরু হয়ে যাবার কথা। তবে এটা যা নিয়মিত হবে এমন কোনো কথা নেই। এমনকি ডিম্বাশয়ের ডিম চক্র প্রতি মাসে না হলেও মাসিক নিয়মিত প্রতি মাসে চলতে পারে। মেয়ের পায়ের থাই পরিপূর্ন রূপ নিতে থাকে।
**স্টেজ পাঁচ: বয়স যখন মোটামোটি ১২ থেকে ১৯- এটা মেয়েদের বয়োঃসন্ধির সর্বশেষ ধাপ। মেয়েরা তাদের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌছে যাবে এবং কিশোরী মেয়েদের নিয়মিত ডিমচক্র হতে থাকবে। লোম সমূহ সম্পূর্ন গজিয়ে যাবে যতটুকু গজাবার এবং বক্ষ তার পরিপূর্ন রূপ নেবে।
এখন যদি এই গুরুত্বপূর্ন বাড়ন্ত সময়ে একটি মেয়ে সঠিক পুস্টি না পায় তাহলে মেয়েটির এসব প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। তবে যাদের বয়োঃসন্ধি আগে শুরু হয়ে যায় তাদের হাড়ের গঠন ঠিক মতো হয় না। ফলে এসব মেয়েরা বাকী জীবন গর্ভপাতের সময় মিস ক্যারেজ, ফিস্টুলা, এমনকি পেলভিক ফ্লোরের ভয়াবহ জটিলতায় বাকী জীবন নিঃশেষ হয়ে যায়।
অনেক সময় উপযুক্ত পুস্টির অভাবে হঠাৎ একটা বয়োঃসন্ধির হরমোন নিঃসরন হবার পর তা বন্ধ হয়ে গেলে রক্তে টেস্টোস্টেরনের অভাবে হাড্ডির গঠন সঠিক ভাবে হয় না, তাতে ক্যালসিয়ামের পরিমান কম থাকে। ফলে বয়স কালে হাড় গুলো ভঙ্গুর হয়ে যায়, ফলাফল ৩০ হতে না হতেই অস্টেরিওপ্রোসিস। তাই দেখা যাচ্ছে বয়োঃসন্ধি একটা চলমান প্রক্রিয়া এবং যতক্ষন না একজন মেয়ের বয়োঃসন্ধির সকল ধাপ পুরোপুরি পরিপূর্ন না হচ্ছে তখন গর্ভবতী হওয়া মানে তার শরীরের প্রয়োজনীয় খাদ্য পুস্টির ওপর ভাগ বসানো। ফলে অনাগত শিশুর পুস্টির জন্য একটি বাড়ন্ত কিশোরীর সকল দৈহিক বৃদ্ধির ওপর গলা টিপে ধরা একই কথা। পরে যখন মেয়েটি যুবতী হবে তখন তার মধ্যে নানা জটিলতার জন্ম নিতে শুরু করবে।
তার মানে বয়োঃসন্ধি শুরু হওয়া মানেই গর্ভধারনের জন্য সে উপযুক্ত না আর মাতৃমৃত্যুর সাথে বাল্যবিবাহের এক নিবিড় সম্পর্ক আছে।
তৃতীয় গান্জ্ঞা:
অল্প বয়সে বিয়া দিলে বাচ্চা জন্ম দেয়া সুবিধা।
উত্তর: উপরের আলোচনা সমূহে প্রতীয়মান যে নির্দিস্ট সময় পর্যন্ত মেয়েদের শারীরিক বৃদ্ধি চলতেই থাকে। ফলে এই সময়ে সঠিক পুস্টি না পেলে এই বৃদ্ধি ব্যাহত হবে ফলে মেয়েদের প্রজননততন্ত্রের পরিপূর্নতা লাভ করবে না। যেখানে দেশে ভেজাল দ্রব্যে ছয়লাব সেখানে এসব পুস্টিকর খাবার পাওয়া আরো দুরূহ এবং ব্যায়বহুল। আর এই সময়ে যদি তাকে গর্ভবতী করা হয় তাহলে তার অবস্থা আরো দুরুহ হয়ে পড়ে। যেটা বাচ্চার জন্যও ক্ষতিকর, ঐ গর্ভবতী মেয়ের ভবিষ্যতের জন্যও ক্ষতিকর। অনেকে বলেন আগে তো অল্প বয়সেই বিয়ে হতো কই তাদের তো কিছু হয় নাই।
এটা আসলে নিমক হারামের মতো কথা। আপনি আপনার মা দাদীদের দিকে তাকান। তারা নিজেরা ঠিকই বলে দিবে যে তারা সন্তান জন্ম দিতে দিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অল্প বয়সে সন্তান জন্ম দেয়ার পর সেই যে তার অসুস্থতা ও শারীরিক জটিলতা শুরু হয়েছে সেটা থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিস্কৃতি পান নি। এই লিংকে গেলে দেখবেন এই সত্যের ভয়াবহতা। এখানে গেলে পাবেন ফিস্টুলার মরন থাবা। এই কথা দ্বারাই প্রমানিত হয় আপনার মায়ের সাথে আপনাদের কত দূরত্ব যেগুলো আমরা কখনোই তাদের জিজ্ঞেস করিনি।
প্রথম প্রশ্নে পেলভিক ফ্লোর নিয়ে কিছু আলোচনা করলেও পুরোটা করা হয়নি। আসুন ওগুলো নিয়ে আরেকটু আলোচনা করি যখন অল্প বয়সে একটা মেয়ে গর্ভবতী হয়।শিশু যখন কয়েক সপ্তাহ হয় মায়ের পেটে থাকে তখন সে মায়ের খাবার ভাগ বসায়। তখন দেখা যায় মায়ের প্রেসার ৫০ শতাংশ বেড়ে যায় যা হার্টের ওপর চাপ পড়ে। পিচকি তখন মায়ের ক্যালসিয়াম আর পুস্টিতে ভাগ বসাইলে যেখানে মা নিজেই শারীরিক বৃদ্ধিতে আছে সেখানে যদি এমন একটা ভাগ বসায় তাহলে মা ও শিশু দুইটাই অপুস্টিতে ভুগে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ফলিক এসিডে যার ফলে অল্প বয়সী মায়েদের পোলাপান একটু বেশী ভোদাই হয়। আর জাতী হিসেবে কেন আমরা গবেষনায় পিছিয়ে সেটা এই একটা মাত্র কারনে, আমাদের ব্রেন ঠিক মতো ডেভেলপ হতে পারে না! এছাড়া মেয়ের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমে এমন প্রেসার পড়ে যে মেয়েটা যৌবন পার হবার আগেই হার্টের নানা সমস্যায় পতিত হয়।
এছাড়া ফেলোপিয়ান টিউব যখন এমব্রায়ো বহন করে তখন এর অপরিপক্কতার কারনে এর মধ্যে থেকে একটোপিক প্রেগনেন্সি ঘটাতে পারে। এমন সময় যদি ইনফেকশন (ক্লামিডিয়া ইত্যাদি) দেখা দেয় তখন শিশুটি পরিপূর্ন হবার আগেই সর্বনাশ হইতে পারে,। আর যদি প্রেগন্যান্ট না করে নিয়মিত শুধু সহবস করা হয় কন্ডম ছাড়া, তাইলে বলতে হয় ছোট মেয়েটার শরীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় নিয়মিত সহবসের কারনে এসটিডিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রচুর থাকে। ক্লামিডিয়া তেমনি একটা প্রানঘাতি যার ফেল ফেলোপিয়ান টিউবে ইনফেকশন খুব দ্রুত ঘটতে পারে যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধ্যাত্ব মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
এতো গেলো শারীরিক সমস্যার কথা। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কি ঝড় যে বয়ে যায় সেটা নিয়ে লিখতে গেলে আরও বিস্তর ব্লগ হয়ে যাবে। যদিও আমাদের মতো মুসলিম দেশে মানসিক ব্যাপারটা ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুশাসনের যাতাকালে সেটাকেও ইগনোর করা হয়।পোসপার্টুম ডিপ্রেশন, জন্মপূর্বকালীন যত্নের অভাব প্রকট এসব নিয়ে আলোচনা কেউ করেছে কিনা সেটা নিয়েও সন্দিহান আমি, যেটা অবশ্যই দুঃখজনক।যেখানে মা ও নবজাতকের জন্য এতো ঝুঁকি সেখানে শুধু অন্ধবিশ্বাস এবং অধিক সন্তানপ্রসব তথা জনসংখ্যার অধিক বিস্তারের মতো আত্মঘাতী ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে এই বাল্যবিবাহের পক্ষে কথা বলাটা নিশ্চয়ই হঠকারীতা এবং নারীজাতির জন্য অপমান স্বরুপ।
এখানে আরো কিছু কথা না বললেই নয় যে, আমাদের দেশে যারা ডাক্তার আছেন তাদের অনেকেই সোচ্চার কিন্তু এই বিষয়ে তারা অনলাইনে খুব কম লেখালেখি করেন করলেও সেগুলো মোটেও বস্তুনিষ্ঠ না। আমি বেশীর ভাগ আর্টিকেলে দেখেছি কেউ হয়তো মানবাধিকার কর্মী অথবা উকিল বা এনজিও কর্মি। তাদের মধ্যে ডাক্তার খুজে পাওয়া যায় না। ডাক্তাররা কি সামাজিক দায়বদ্ধতার বাইরে সেটা খুব জানতে ইচ্চে করে। যেখানে এই লেখাগুলো মূলত একজন ডাক্তারের লেখার কথা সেখানে আমাকে লেখতে হচ্ছে যেটা খুব হতাশাজনক।
আসুন বাল্যবিবাহকে আমরা না জানাই, আলোকিত হই, সত্যকে জানি।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:১৬