somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামিক নারী স্বাধীনতা: বিবাহ -২

০৭ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
এ সম্পর্কিত আগের পোস্ট ইসলামিক নারী স্বাধীনতা: পর্দা প্রথা এবং শারীরিক প্রভাব - ১



মুসলমানদের দাবী অনুযায়ী ইসলামে নারীদেরকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছে। ইসলামে নারীকে যতটা সম্মান ও মর্যাদার আসনে বসিয়েছে তা অন্য কোনো ধর্মে দেয়া হয় নি। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এর বিপরীতও দাবী করা হয়। এপোলজিস্টদের ইসলামে নারীদেরকে দাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং মিস্টি মিস্টি কথা বলে তাদেরকে এমনভাবে রাখা হয় যেনো তাদের জন্মই হয়েছে স্বামীর বিছানা গরম করার জন্য, গেরস্থালী কাজ কর্ম করা এবং বছর বছর স্বামীর ইচ্ছা মাফিক বাচ্চা প্রসব করে। যদিও তারা এও বলেন যে একশ্বরবাদ ধর্মগুলো থেকে কিছু কিছু নিয়ে তাতে নতুন সংস্করন করেই ইসলামে রূপ দেয়া হয়েছে কিন্তু আধুনিক উদার সমাজব্যাবস্থায় এই রূপও অতিজঘন্য, অপমানজনক। আমার এই সিরিজ পোস্টে সেসব দিক নিয়েই আলোচনা করা হবে।

আমি এই পোস্টে প্রথমে দেখাতে চেস্টা করবো আসলেই ইসলামে কি বলা আছে। ওপরের লিংকে দেয়া আগের পোস্টে ইসলামী পর্দার ব্যাপারে বিষদ আলোচনা করার চেস্টা করেছি যদিও তা বেশ অপ্রতুল। সময় পেলে হয়তো এ বিষয়ে আরো আলোকপাত করার চেস্টা করবো। ইসলামী বিবাহ নিয়ে এ পোস্টে আলোচনা করা হবে যথাযথ ইসলামী রেফারেন্সসহ। তার সাথে আমি দেখাবো আধুনিক সমাজ ব্যাবস্থায় কি কি নিয়ম প্রচলিত আছে তার সমান্তরালে যাতে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই একটা তুলনামূলক ধারনা পেতে পারেন। সেই সাথে আপোলজিস্টদের অভিযোগ এবং তার বিপরীতে ইসলামী স্কলাররা কি সমাধান দিয়েছেন সে বিষয়গুলো যুক্ত করার চেস্টা করবো যথাযথ রেফারেন্স সহ। আমি আমার নিজের মতামত দানে পোস্টে বিরত থাকবো কারন এখানে আমি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে ইচ্ছুক।

কমেন্টে আলোচনা সাদরে গ্রহন করা হবে। যদি কোনো ভুল বক্তব্য প্রদান করে থাকি তাহলে সুনির্দিস্ট ভাবে তা তুলে ধরা অনুরোধ করা হলো। যদি রেফারেন্স দিয়ে দেন তাহলে আমার জন্য সুবিধা হয়। ভুল আমিও করতে পারি এবং শোধরাতেও ইচ্ছুক। অযাচিত ব্যাক্তিগত আক্রামন কাম্য নয়।


ইসলামিক বিবাহ:

সূরা আন নূর ৩২ নং আয়াতে ইরশাদ ,"তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।" ইসলামে সন্ন্যাস বা চিরকুমার কখনোই সমর্থন করে না। একবার উসমান ইবনে মাজউন (রাঃ) এর স্ত্রীর মলিন বেশভূষা দেখে নবী সাঃ জিজ্ঞেস করলেন,"তোমার এ অবস্থা কেন? তোমার স্বামী তো কুরাইশদের মধ্যে একজন ধনী ব্যাক্তি।’ জবাবে তিনি বললেনঃ তাঁর সাথে আমার কি সম্পর্ক। তিনি সারা রাত নামায পড়েন, দিনে রোযা রাখেন। ‘উম্মুল মুমিনীনগণ বিষয়টি আসূলুল্লাহর (সা) গোচরে আনেন। রাসূল (সা) তখনই উসমান ইবন মাজউনের বাড়ীর দিকে ছুটে যান এবং তাকে ডেকে বলেনঃ ‘উসমান, আমার নিজের জীবন কি তোমার জন্য আদর্শ নয়?’ উসমান বললেন, আমার মা-বাবা আপনার প্রতি কুরবান হোক’। রাসূল্ম (সা) বললেন ‘তুমি সারা রাত ইবাদাত কর, অধিকাংশ দিন রোযা রাখ।’ বললেন হাঁ, এমনটি করে থাকি। ইরশাদ হলো, এরূপ করবেন না। তোমার ওপর তোমার চোখের, তোমার দেহের এবং তোমার পরিবার পরিজনের হক বা অধিকার আছে। নামায পড়, আরাম কর, রোযা ও রাখ এবং ইফতার কর।’ এই হিদায়াতের পর তাঁর স্ত্রী একদিন নবী গৃহে আসলেন। তখন কিন্তু তাঁকে নব বধুর সাজে সজ্জিত দেখাচ্ছিল। তাঁর শরীর থেকে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ছিল।

হযরত খাদীজার (রা) ইন্তিকালের পর হযরত উসমান ইবন মাজউনের স্ত্রী হযরত খাওলা বিনতু হাকীম, হযরত আয়িশা ও হযরত সাওদার সাথে বিয়ের প্রস্তাবটি রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট পেশ করেছিলেন। তাঁরই মধ্যস্থতায় মূলতঃ রাসূলুল্লাহর (সা) এ দু’টি বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিল। (হায়াতুস সাহাবা-২/৬৫৩)

মুসলমানদের মধ্যে বিয়ে কয়েকপ্রকারের থাকলেও ( মুতাহ বিয়ে যা মূলত শিয়াদের মধ্যে প্রচলিত, নিকাহ মাসিঈর যেটা কিনা সৌদীর আরবে সালাফী ও কিছু সংখ্যক সুন্নীদের মধ্যে প্রচলিত, নিকাহ উরফী যা কিনা মিশরের তরুন সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়) আমরা প্রচলিত নিকাহ নিয়ে আলোচনা করবো। ইসলামে অল্প বয়সে বিবাহ অর্থাৎ বাল্যবিবাহকে উৎসাহিত করে। বাল্যবিবাহ সম্পর্কে আরো জানতে এই নীল লেখার ওপর ক্লিক করুন যেখানে আপনি জানতে পারবেন বাল্যবিবাহ কি জন্য নারীর জীবনে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভাবে মৃত্যু ডেকে আনে এবং এটা কিভাবে একটা জাতীর জন্য অভিশাপ।
ইসলামে বিবাহকে মিতকাহ মানে পবিত্র চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করে।
সূরা আন নিসার ২৪ নম্বর আয়াতে বলা আছে,"এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।"

উপরোক্ত আয়াতের তফসীর অনুযায়ী বিবাহের জন্য যেসব শর্ত প্রযোজ্য সেটা হলো:

১) উভয় পক্ষের সম্মতি থাকতে হবে। তবে কুমারী বা অধিক বয়স্ক মহিলাদের ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের পারমিশন থাকতে হবে। যদি মেয়ে কুমারী না হয় তাহলে পারমিশন বাধ্যতামূলক নয়। অথবা এতিম হলে তা আর বাধ্যতামূলক থাকে না উভয় ক্ষেত্রেই।
২) দেন মোহর সম্বন্ধে সুরা আন নিসার ৪ নম্বর আয়াতে বলা আছে,"আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।" এখানে যৌতুকের কোনো স্থান নেই। তবে কন্য যদি নিজের পছন্দ মতো গিফট শ্বশুড় বাড়িতে নিয়ে আসে তবে তার মালিকানা তারই থাকবে।
৩) বিয়ে করার ব্যাপারে ইসলামে কিছু বিধিনিষেধ আছে। কাফের মুশরিক বা পতিতালয়ের কঊকে বিয়ে করা যাবে না। ব্যাভিচারীনিদেরকে তো পুরাই হারাম করা হয়েছে। সূরা আন-নূর এর ৩ নম্বর আয়াতে বলা আছে,"ব্যভিচারী পুরুষ কেবল ব্যভিচারিণী নারী অথবা মুশরিকা নারীকেই বিয়ে করে এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক পুরুষই বিয়ে করে এবং এদেরকে মুমিনদের জন্যে হারাম করা হয়েছে।"
৪) [দুজন পুরুষ, যদি দুজন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষী জরূরি। তবে কোরানে এই বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো মত দেয়নি, এক্ষেত্রে সুরা বাকারার ২৮২ নম্বর আয়াতকে অনুসরন করা হয় যেখানে একটা অংশে বলা আছে ,"....দুজন সাক্ষী কর, তোমাদের পুরুষদের মধ্যে থেকে। যদি দুজন পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা। ঐ সাক্ষীদের মধ্য থেকে যাদেরকে তোমরা পছন্দ কর যাতে একজন যদি ভুলে যায়, তবে একজন অন্যজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। যখন ডাকা হয়, তখন সাক্ষীদের অস্বীকার করা উচিত নয়। তোমরা এটা লিখতে অলসতা করোনা, তা ছোট হোক কিংবা বড়, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। এ লিপিবদ্ধ করণ আল্লাহর কাছে সুবিচারকে অধিক কায়েম রাখে, সাক্ষ্যকে অধিক সুসংহত রাখে এবং তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার পক্ষে অধিক উপযুক্ত। কিন্তু যদি কারবার নগদ হয়, পরস্পর হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা না লিখলে তোমাদের প্রতি কোন অভিযোগ নেই। তোমরা ক্রয়-বিক্রয়ের সময় সাক্ষী রাখ। কোন লেখক ও সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো না। "

এছাড়া ওয়ালিমা বা বিয়ের রাতে সবাই মিলে অনুষ্ঠান করে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা ইসলামে বেশ ভালোভাবেই উৎসাহিত করা হয়েছে।এ তো গেলো বিবাহ। এখন আসি বহু বিবাহের বিষয়ে।

বহুবিবাহ:


ইসলামে পুরুষদের একসাথে ৪ টি বৌ রাখার অনুমতি দিলেও নারীকে কেবল মাত্র একটি স্বামী একই সময়ে রাখার অনুমতি দেয়। বহুবিবাহ মুস্তাহাব তার জন্য যার সামর্থ্য আছে, তবে অত্যাবশ্যকীয় নয়। ইবনে ক্বুবামাহ রঃ বলেন যে বিয়ের জন্য তিনভাগে মানুষজনকে বিভক্ত করা যায়। প্রথম ভাগে পড়েন তারা যারা নিজের শারীরিক চাহিদের বশে কোনো হারাম কাজ না করে ফেলেন। এক্ষেত্রে বিয়েটা ফরজ হয়ে যায়। দ্বিতীয় ভাগে যারা পড়েন তাদের জন্য মুস্তাহাব যাদের নিজেদের শারীরিক চাহিদা থাকা সত্বেও তা নিয়ন্ত্রনে রাখতে সামর্থ্য হন এবং হারাম কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। এক্ষেত্রে নবী সাঃ তাদেরকে বিয়ের জন্য উৎসাহিত করতেন এবং তাতে অনেক ফায়দাও ছিলো। তৃতীয় অংশ যাদের শারীরিক চাহিদা নেই বা এভাবেই জন্ম হয়েছেন এবং যারা বৃদ্ধবয়সে উপনীত বা রোগাক্রান্ত।
বহুবিবাহের ক্ষেত্রে অনেকে বলেন কোরানের এসব নিয়ম নীতি শুধু আরব বা সেসময়কার জন্য। এটা আসলে ভুল কথা। কোরানের এসব নিয়মসম্বলিত আয়াত সমূহ সকল মানবজাতীর জন্য এবং সকল সময়ের জন্য প্রযোজ্য।
কোরানের ৬৮:৫২ আয়াতে বলা আছে যে "অথচ এই কোরআন তো বিশ্বজগতের জন্যে উপদেশ বৈ অন্য কিছু নয়।"
এছাড়া কোরানে ওয়া আইয়ুহাল নাস (হে মানবজাতী) শব্দটি ৩০৬ বার উল্লেখ করা হয়েছে।
সুরা আল মায়েদাহ এর ৪৮ নম্বর আয়াতে আছে যে "আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে।" তো এই আয়াত দ্বারাই প্রমান হয়ে যায় কোরান কোনো নির্দিস্ট গোত্র বা নির্দিস্ট সময়ের জন্য অবতীর্ন হয়নি।

সূরা আন নিসার ৩ নম্বর আয়াতে বর্নিত,"আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।"

উক্ত আয়াতে "ন্যায় সঙ্গত আচরন" বলতে তদের খরচ, জামা কাপড়ের ব্যাবস্থা, সবার সাথে সম পরিমান রাত্রীযাপন এবং অন্যান্য বস্তুগত বিষয় যেটা তার নিজস্ব নিয়ন্ত্রানাধীন সেগুলোর সাম্যবস্থায় বন্টন। কারন একই সূরার ১২৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন যে,"তোমরা কখনও নারীদেরকে সমান রাখতে পারবে না, যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও। অতএব, সম্পূর্ণ ঝুঁকেও পড়ো না যে, একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়। যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।"

ইসলামে পুরুষের ৪ বিবাহ সম্পর্কে যেসব জাস্টিফিকেশন আছে সেগুলো হলো মুসলিম উম্মাহর সংখ্যাবৃদ্ধি (এখানে এক স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান নেয়ার চাইতে ৪ স্ত্রীর মাধ্যমে সন্তান নিলে বেশী সংখ্যক সন্তান জন্মদান করা যাবে), পরিসংখ্যান গত দিক থেকে নারীদের সংখ্যা পুরুষদের থেকে বেশী (এর ফলে সকল পুরুষ কেবল মাত্র একটি বিয়ে করলে অবশিষ্ট নারীরা বিপথে বা পতিতাবৃত্তি বা ব্যাভিচারে জড়িয়ে পড়বে), পুরুষদের বিপজ্জনক কাজের কারনে তাদের মধ্যে মৃত্যু হার বেশী (যুদ্ধে সাধারনত পুরুষদের অংশগ্রহন বেশী সেহেতু তাদের মৃত্যু হার সবচেয়ে বেশী নারীদের থেকে), কিছু কিছু পুরুষের যৌনক্ষমতা নারীদের থেকে বেশী হবার কারনে এক নারীতে তার সন্তুষ্টি হয় না, বহুবিবাহকে নিয়ন্ত্রন (আগের সময় মানুষ ২০, ৩০, ৯০ টা স্ত্রী রাখতেন, নবী সাঃ এর সময় অনেক সাহাবীর ১০-১৫ টা বিবি ছিলো), আত্মীয় স্বজনের মধ্যে অনেক বিধবা আছেন যাদের দেখার কেউ নেই যদি তাদেরকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহন করা হয় তাহলে তাদের ইজ্জত আব্রু এবং শারীরিক চাহিদা ও ঘর গৃহস্থালীর কাজে সবকিছুতেই সহায়তা হবে, অনেক নেতা আছেন যারা রাজনৈতিক স্বার্থে বিয়ে করেন যার ফলে রাজনৈতিক, বিভিন্ন গোত্রের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।

অভিযোগ-১: এক ঘরে একাধিক স্ত্রী রাখলে সংসারে অশান্তির আশংকা

উত্তর: ইসলামে প্রত্যেক স্ত্রীর জন্য আলাদা নিবাসের ব্যাবস্থার কথা বলা হয়েছে। যদি স্ত্রীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে মানিয়ে নিতে চায় যেক্ষেত্রে এক সাথে থাকতে পারে, শরীয়া সেখানে বাধা দেয় না কিন্তু একই ছাদের নীচে ইসলাম সমর্থন করে না । আর জীবনে ভালোমন্দ মিলিয়েই সবকিছু সেখানে এসব সাময়িক অশান্তি বৃহত্তর ভালোর কাছে খুব একটা অর্থব হ হয়ে ওঠে না

অভিযোগ-২: পুরুষ একাধিক স্ত্রী রাখতে পারলে মহিলারা কেন একাধিক স্বামী রাখতে পারে না?

উত্তর: আল মুফাস্সিল ফি আকাম আল মারাহ, ৫ নম্বর খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯০ তে উল্লেখ আছে যে একজন নারীর বহুস্বামী তার আত্মমর্যাদার জন্য হানিকর এবং সে জানতে পারবে না তার গর্ভে কার সন্তান। এবং কেউ যদি সত্যি জানতে না পারে তার গর্ভে কার সন্তান তাহলে সন্তানের ভবিষ্যত, পরিবারের শান্তি সব কিছুই নষ্ট হবে। যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর

প্রশ্ন: দ্বিতীয় বা তৃতীয় বা চতুর্থ বিবাহের জন্য কি পুর্ববর্তী স্ত্রীদের অনুমতি দরকার?

উত্তর: না দরকার নেই। শুধু জেনে নিতে হবে তারা সন্তুষ্ট কিনা। যদি সন্তুস্ট থাকে তাহলে সেটাই যথেষ্ট। বিয়ে করার জন্য পুর্বতন স্ত্রীর অনুমতির কোনো দরকার নেই। ফতোয়া ইসলামিয়া ৩/১০৪ অনুসারে যদিও অনুমতি নেবার কোনো প্রয়োজন নেই তবে ভদ্রতা বশত স্ত্রীকে সুন্দর ও ভদ্রোচিত ভাবে, কিছু টাকা পয়সা খরচ করে খুশী রেখে, হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে তাকা জানানো যেতে পারে।

এ্যাপোলজিস্টিক যুক্তি: কোরানের ৩৯:৬২ তে উল্লেখ "আল্লাহ সর্বকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।"

১৩:৯ এ উল্লেখ আছে যে "তিনি সকল গোপন ও প্রকাশ্য বিষয় অবগত, মহোত্তম, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।"

৩১:৩৪ এ উল্লেখ আছে যা "নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।"

উপরোক্ত আয়াত অনুসারে আল্লাহর কাছে অতীত ভবিষ্যত স হ সকল গায়েবী জ্ঞান জানা আছে বলে দাবী করা হয়েছে। এখন একজন নারীর পেটে কার বাচ্চা সেটা ডিএনএ টেস্ট করলেই জানা যায়। এবং আধুনিক টেস্ট টিউব পদ্ধতি স হ নানা উপায়ে গর্ভের বাইরে ভ্রুন নিষিক্ত করে সেটা পরে জরায়ুতে স্থাপন করলে আরো নিশ্চিত করা যায় কোন স্বামীর সন্তান সে। তাহলে সেভাবে কেনো চিন্তা করা হয়নি? এটা ঠিক যে তৎকালীন আমলে এই পদ্ধতি ছিলো না কিন্তু কোরান তো সর্বকালের সকল মানবের জন্য। তাহলে এখন সে নিয়মটা কেনো পরিবর্তন হবে না যখন সেই প্রযুক্তি বেশ সবার হাতের মুঠোয়?


প্রশ্ন: যদি একজন পুরুষ তার ৪ নম্বর স্ত্রীকে তালাক দেয় তাহলে কি সে ৫ নম্বর বিয়ে করতে হবে?

উত্তর: হ্যা। তার আগে বলে নেই হযরত আলী রাঃ সর্বোমোট ৬ টি বিয়ে করেছিলেন (ফাতিমা, উমামা, উম্মুল বানিন, লেইলা, খাওলা, আসমা), উমর রাঃ বিয়ে করেন সর্বোমোট ১০ টা। ইসলামে ৪ বিয়ের ব্যাপারটা হলো আপনি একই সময় ৪ স্ত্রী রাখতে পারেন। যদি ৪ নম্বর স্ত্রীকে তালাক দেন তাহলে নতুন বিয়ে করতে হলে তার ইদ্দত কালীন সময় পার করতে হবে। ইদ্দত কালীন সময় ৩ মাস। তবে এর মধ্যে যদি সে গর্ভবতী হবার লক্ষ্মন ধরা দেয় তাহলে শিশু জন্ম নেবার সময় পর্যন্ত তালাক সক্রিয় হবে না এবং ইদ্দত কালীন সময় বর্ধিত হবে। ইদ্দত কালীন সময় পার হলেই আপনি কেবল নতুন বিয়ে করে ৪ বিবির কোটা পূরন করতে পারবেন। সূত্র হিসেবে আল মুঘনি ৭/১০৪, আল তিরমিজী ১১২৮, স হীহ সুনান আল তিরমিজী ১/৩২৯। এছাড়া ইদ্দত কালীন সময়ে সেই মেয়েও অন্য কোথাও বিয়ে করতে পারবে না এ ব্যাপারে মতামত পাওয়া যায় ফতোয়া আল লাজনাহ আল দায়ীমাহ, আল ফাতোয়া আল জামীয়াহ লীলমারাহ আল মুসলিমার ২/৬৪১। আর এখানে তালাকের ব্যাপারে যেটা বলা হয়েছে সেটা হলো আপনি একজন স্ত্রীকে সর্বোচ্চ তিনবার তালাক দিতে পারবেন যার প্রথম দুটো তুলে নেয়া যায় এবং নতুন করে সংসার শুরু করা যায়। কিন্তু তিন নম্বর তালাকে আর সেটা সম্ভব নয়। তখন আপনাকে নতুন বিয়ে করতে হবে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত পাবেন শেইখ ইবনে বাযের লেখা কিতাবে ফতোয়া আল তালাক, ১/২৭৮।

সে হিসেবে উপরোল্লিখিত হিসাব অনুযায়ী একজন পুরুষ ইচ্ছে করলে ১০০ বিয়েও করতে পারেন তবে এক সাথে ৪ জন স্ত্রীর বেশী রাখতে পারবেন না।

এ্যাপোলজিস্ট যুক্তি: পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যে ব্যাভিচারের অভিযোগ করা হয় সেখানে নারী পুরুষ দুজনেই স্বাধীন থাকে এবং তারা উভয়ের সম্মতিতে যৌনকর্ম করছে যাকে তার ভালো লাগছে। সেভাবে লিভ টুগেদার সোসাইটি চালু হইছে। আর মুসলিম বিশ্বে দেখা যাচ্ছে যাদের টাকা আছে শুধু তারাই যত ইচ্ছে বিয়ে করে সেই একই কাজটা করছে কিন্তু যার টাকা নাই সে এটা পারছে না শারীরিক সামর্থ্য থাকা সত্বেও। তার মানে ব্যাভিচারকে বিয়ে দিয়েই অনুমোদন দেয়া হচ্ছে শুধু উচুশ্রেনীর লোকদের জন্য যেখানে পশ্চিমা সমাজে সেটা সবার জন্যই উন্মুক্ত তবে সেটা দুপক্ষের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহনে।

তালাক ও খুলা চুক্তি প্রসঙ্গে:


আবু দাউদের আল সুনানের ২১৭৭ হাদিস অনুসারে জায়েজকৃত নিয়মসমূহের মধ্যে তালাককেই আল্লাহ সবচেয়ে বেশী ঘৃনা করেন। আবার আবু দাউদের সুনানের ২১৮৯ হাদিসে আবু হুরায়রা বর্নিত রাসুল সাঃ বলেন যে তিনটি জিনিস খুবই মারাত্মক ভাবে দেখা হয়, সিরিয়াসলি ভাবে নেয়া হোক বা কৌতুক করে, সেগুলো হলো: বিয়ে, তালাক এবং স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনা প্রাথমিক তালাকের পরে।

ইসলামে তালাক দেয়াটাকে নিরূৎসাহিত করে। তবে মজার ব্যাপার হলো কেবল মুসলিম স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে কিন্তু স্ত্রী তালাক দিতে পারেন না, তাকে খোলা চু্ক্তি করতে হয়ে।কোরানের কিছু আয়াত তুলে ধরা হলো এ ব্যাপারে:

১) সুরা আল বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াতে বলা আছে,"তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম।"

এই আয়াতে "অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না" দ্বারা বুঝানো হয় যে তৎকালীন সময়ে নিজের স্ত্রীকে নির্যাতন হিসেবে তালাক দিতো এবং ইদ্দত পালনের পূর্বেই আবার ফিরিয়ে নিতো। এমনও হতো স্বামী স্ত্রীকে বলতো আমি তোমাকে রাখবোও না ছাড়বোও না। এই বলে ব হু বার তালাক দিয়ে ইদ্দতের পূর্বে ফিরিয়ে নিতো যেটা মূলত জুলুম। তখন রাসুল সাঃ নিয়ম বেধে দেন যে দুবার তালাক দিলে ফিরিয়ে নেয়া যাবে কিন্তু তৃতীয় ভাবে তালাক দিলে সেটা স্থায়ী এবং সে হিসেবে সে মহিলা উক্ত বিয়ে থেকে মুক্ত বলে গন্য হবে।

২) সূরা আননিসার ১২৮ থেকে ১৩১ পর্যন্ত আয়াতে আছে "যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে, আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন।তোমরা কখনও নারীদেরকে সমান রাখতে পারবে না, যদিও এর আকাঙ্ক্ষী হও। অতএব, সম্পূর্ণ ঝুঁকেও পড়ো না যে, একজনকে ফেলে রাখ দোদুল্যমান অবস্থায়। যদি সংশোধন কর এবং খোদাভীরু হও, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।যদি উভয়েই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে আল্লাহ স্বীয় প্রশস্ততা দ্বারা প্রত্যেককে অমুখাপেক্ষী করে দিবেন। আল্লাহ সুপ্রশস্ত, প্রজ্ঞাময়।আর যা কিছু রয়েছে আসমান সমূহে ও যমীনে সবই আল্লাহর। বস্তুতঃ আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অধিকারীদেরকে এবং তোমাদেরকে যে, তোমরা সবাই ভয় করতে থাক আল্লাহকে। যদি তোমরা তা না মান, তবে জেনো, সে সব কিছুই আল্লাহ তা’আলার যা কিছু রয়েছে আসমান সমূহে ও যমীনে। আর আল্লাহ হচ্ছেন অভাবহীন, প্রসংশিত।"

তবে যেসব কারনে স্বামী বা স্ত্রী একে অপরকে তালাক দিতে পারে সেসব ফতোয়াসমূহ নিম্নে দেয়া হলো:

১) অনৈতিক ও অনৈসলামিক ব্যাবহার: যদি স্ত্রী বা স্বামী ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় বা যৌন ফ্যান্টাসীতে আসক্ত থাকে (ইসলামে মাধহাব হারাম হাসিয়াত রাদ আল মুহতার ৬/২৭২, আল মাধখিল ২/১৯৪, ১৯৫;আ আল আদাব আল শারীয়া ১/৯৮)। যদি কেউ এতে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তবে তালাকের হতে পারে।
২) স্বামী বা স্ত্রী র মধ্যে কেউ ইসলাম ত্যাগ করলে
৩) সত্য লুকোনো: যদি কেউ সত্য লুকিয়ে বিয়ে করে তাহলে বিয়ের পর প্রকাশিত হয়ে পড়লে যেমন স্বামী মাদকাসক্ত এটা বিয়ের সময় লুকিয়েছিলো। এই অসততার কারনে তালাক দেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি তার পূর্ববর্তী বিয়ের কথা লুকিয়ে রাখে সেটার জন্যও তালাক দেয়া যেতে পারে।
৪) দুর্ব্যাবহার ও নিষ্ঠুরতা
৫) বিয়ের পর দেখা গেলো স্বামী অক্ষম
৬) স্ত্রীর ভরনপোষন দিতে না পারা
৭) স্ত্রী যদি স্বামীর সাথে কোনো শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী না হয়
৮) স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি অরুচী এবং ভালোলাগা না থাকে

সেক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে। উপরোক্ত আয়াত সমূহে তালাকের ব্যাপারগুলো বলা আছে। কিন্তু স্ত্রী তালাক দিতে পারে না। স্ত্রীকে খোলা চুক্তি করতে হবে। সূরা আল বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াত যা এর আগে পোস্টে বর্নিত হয়েছে সেখানে খোলার ব্যাপারে বলা আছে। বুখারীর ৫২৭৩ হাদিস অনুসারে স্ত্রী যদি তার স্বামীর সাথে থাকতে না চায় তাহলে বিবাহের সময় সে যে দেন মোহর পেয়েছিলো তা ফেরত দিয়ে দিতে হবে। স্বামী তা ফেরত পাবার পর তখন সে বাধ্য তাকে ফারাকতুকি বা খালাতুকি বলার। এর ফলে স্ত্রী সে বিয়ে থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।

যেহেতু স্বামীরই অধিকার আছে তালাক দেবার সেক্ষেত্রে এটা যদি প্রমানিত হয় তালাক নেবার জন্য স্ত্রী অসৎ ভাবে তার ওপর চাপ প্রয়োগ করছে তাহলে সেটা তালাক বলে গন্য হবে না (আল মুঘনী ১০/৩৫২)। তবে কোনো কারন ছাড়া কোনো স্ত্রী খোলা চুক্তির আবেদন করতে পারে না। এখন প্রশ্ন আসতে পারে যদি প্রচলিত আদালতে ডিভোর্স নিয়ে নেয় কিন্তু শরীয়া আইন অনুযায়ী সে খোলা চুক্তি করার যোগ্যতা না রাখে তাহলে কি হবে? ইসলামের দৃষ্টিতে ইদ্দত সময় পার করার পরও তার স্ত্রী হিসেবে গন্য হবে। সেক্ষেত্রে উক্ত মহিলারই দায়িত্ব হবে খোলা চুক্তি করার এবং দেন মোহরের সব ফেরত দিয়ে, যদি একান্তই অসমর্থ হয়, তাহলে আলোচনার ভিত্তিতে উভয়ের সম্মতিতে যতটুকু সম্ভব ফেরত দিয়ে খোলা কার্যকর করা। ফতোয়াটা নেয়া হয়েছে শেইখ মুহাম্মদ ইবনে উথামীনের লেখা লিকা আল বাব মাফতুন, ৫৪ খন্ড, ৩/১৭৪।

কিন্তু আধুনিক বিশ্বে স্বামী স্ত্রী উভয়েই তালাক নিতে পারে এবং মুসলিম বিশ্বে স্ত্রীকে যদি কাবিন নামায় সে ক্ষমতা দেয়া থাকে তাহলে সে তালাকের আবেদন করতে পারে এবং সেক্ষেত্রে স্ত্রীকে প্রাপ্ত দেন মোহর ফেরত দিতে হয় না উল্টো যদি দেন মোহর পুরো না দিয়ে থাকে তাহলে সেটা স্বামীকে ফেরত দিতে হবে। আর সন্তানের ভরন পোষন দাবী করলে সেটাও তাকে দিতে হবে।

অভিযোগ: স্বামীর তালাকের ক্ষমতা কিন্তু স্ত্রীর সে ক্ষমতা নেই কেন?

উত্তর: যেহেতু স্বামী স্ত্রীর ভরনপোষনের জন্য দায়ী সেহেতু তার এই অধিকার প্রাপ্য।

এ্যাপোলোজিস্টদের যুক্তি: আধুনিক বিশ্বে মেয়েরা তাদের নিজেদেরই ভরনপোষন করতে পারে শিক্ষা ও চাকুরীর মাধ্যমে। সেক্ষেত্রে তাহলে রুলিং কি? আর হয়তো এ কারনেই পর্দাপ্রথা একজন মেয়ের জন্য ঘরের বাইরে কাজ করতে যাওয়া বেশ মুস্কিল হয়ে পড়ে। ইসলামে পর্দা প্রথা জানতে এই পোস্টে ক্লিক করতে পারেন। এবং বিভিন্ন মুসলিম দেশে নারীদের নিগ্রহের মূল ঘটনা জানতে এখানে পড়তে পারেন। এছাড়া বাল্যবিবাহ সম্পর্কে আরো জানতে এখানে ক্লিক করতে পারেন।

তাই ভবিষ্যতে সম্ভাব্য অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নবী মোহাম্মদ সাঃ বিবাহের ক্ষেত্রে তার কিছু উপদেশ দিয়ে গেছেন।

অন্যান্য বিষয়:

জনসাধারন্যে একটা প্রচলিত ধারনা আছে বিয়ের আগে ইসলামে হবু বর বধু একে অপরকে দেখতে পারবে না। এটা একটা ভুল কনসেপ্ট। 2: 166. হাকিম এল মুস্তাদেরক, ২:১৬৬ তে বলা আছে মোহাম্মদ স্ঃ উম্মু সুলাঈমকে একজন নারীকে দেখতে পাঠিয়ে বললেন যে তার পায়ের ওপর থেকে দেখে আসো এবং মুখে দুর্গন্ধ আছে কিনা সেটা জেনে আসো। এ অনুসারে একজন নারীও সেটা করতে পারেন।
নেঈলুল ইভতার ৬:১১০ অনুসারে যখন তোমাদের মধ্যে কেউ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায়, তাহলে সে নারীকে দেখতে কোনো সমস্যা নেই। বিয়ের নিয়তে একে অপরকে দেখা জায়েজ। এবং এই নিয়ম একজন নারী জন্যই প্রযোজ্য। নেসেঈ এর নিকাহ, ১৭ তে আছে মুরী নিন শুবে এক নারীকে বিবাহ করতে চাইলে রাসুল মোহাম্মদ সাঃ তাকে বললেন যাও এবং দেখে আসো। চোখে দেখে আসাটা একজন মানুষের পক্ষে দুজনের সম্মিলিত মাধুর্য্যে বাস করার জন্য উপযুক্ত। আবার হাকিম আল মুস্তাদেরকের ২:১৬৫ অনুসারে মোহাম্মদ সাঃ উল্লেখ করেন যে যদি কোনো নারীকে পছন্দ হয় তাহলে সে নারীর চরিত্র এবং মুখাবয়ব দেখা উচিত যাতে সে অনুপ্রানিত হয় তাকে বিয়ে করার জন্য।
আবার নবীজী সাঃ অন্য হাদিসে বলেছেন তোমরা অধিক সন্তানেদানে সক্ষম ও স্নেহপরায়ন নারীকে বিবাহ করো। কারন আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের উপর গৌরব করবো। তিনি আরো বলেন তোমরা কুমারী মেয়েদেরকে বিয়ে করো কার তারা মিস্টভাষী, অধিক সন্তান জন্মদানকারী এবং অল্প তুষ্ট থাকে। (তাবারানি, স হী হাদিস)। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ থেকে বর্নিত রাসুল সাঃ এর যুগে এক মহিলাকে বিবাহ করলাম। অত্ঃপর আমি রাসুল সাঃ এর সাথে সাক্ষাত করালে তিনি বলেন, হে জাবির! তুমি কি বিবাহ করেছো? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, কুমারী না বিধবা? আমি বললাম, বিধবা। তিনি বললেন, কেন তুমি কুমারী মেয়ে বিবাহ করলে না, তাহলে তার সাথে তুমি রসিকতা ও কৌতুক করতে পারতে? আমি বললাম আমার কয়েকটা বোন আছে। তাই আমি আমার ও আমার বোনদের মধ্যে একটা কুমারী মেয়ের প্রবেশ করাকে সংকটজনক বোধ করলাম। তিনি বললেন, তাতো ভালো কথা। বুখারী ২০৯৭, মুসলিম: ৭১৫, তিরমিযী: ১১০০।

আবার বহু বিবাহকে উৎসাহিত করার ব্যাপারে স হীহ বোখারী, ৫০৬৯ এ সাঈন ইবনু যুবায়ের রহ বর্নিত ইবনু আব্বাস রাঃ আমাকে বলেন তুমি কি বিয়ে করেছো? আমি বললাম না। তিনি বললেন বিয়ে কর। কারন এই উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি অধিক সংখ্যক স্ত্রী ছিলো।


আধুনিক বিশ্বে বিয়ে বিষয়ক ব্যাপার গুলো:

বিশ্বের মোট ৫৮ টা দেশে বহুবিবাহের বৈধতা সরকারী ভাবে দেয়া আছে তবে ইসলামিক মতে এক সাথে ৪ বিবি রাখা বেশীরভাগ মুসলিম দেশে ব্যান করা আছে। তুরস্ক প্রথম দেশ যারা ১৯২৬ এই ৪ বিবি প্রথা রহিত করে সরকারী ভাবে। লিবিয়াতে এই প্রথা চালু থাকলেও এর ওপর অনেক বিধি নিষেধ আরোপ করা আছে। তুরস্কের পর তিউনিসিয়া এটি ব্যান করে।পাকিস্তান ও ইরানে পূর্ববর্তি স্ত্রীর সম্মতি নেয়াটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইসরাইল আমেরিকা তে এক সাথে ৪ বিবি রাখা ব্যান করা হয়েছে। অন্যান্য মুসলিম দেশে ব্যান না করলেও বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশও একটি। কিন্তু সৌদী আরব স হ আরব বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ৪ বিবি রাখার প্রচলন আছে। ইরানে মুত্তা বিবাহেরও প্রচলন আছে যার আরেক নাম হালাল পতিতাবৃত্তি। তবে বেশীরভাগ মুসলমান দেশে বাল্যবিবাহের প্রচলন বেশী কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো বাল্যবিবাহতে আফ্রিকার দেশ গুলোর পরই বাংলাদেশের অবস্থান ৪র্থ। যদিও বলাহয় সাম্প্রতিক বাল্যবিবাহের হার কমেছে কিন্তু তারপরও আমরা দক্ষিন এশিয়াতে বাল্যবিবাহতে চ্যাম্পিয়ন।

তালাকের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে স্বামী স্ত্রীর সমান অধিকার আছে এবং তালাক যেই নিক না কেন স্ত্রীর প্রাপ্য দেন মোহর ও সন্তান থাকলে তার ভরন পোষন ১৮ বছর পর্যন্ত দিতে বাধ্য থাকবে। ইসলামে যদি সন্তান দুগ্ধগ্রহন কারী শিশু থাকবে ততদিন ভরনপোষনের দাবী রাখে।

কোরানের বাংলা অর্থ আমি নিয়েছি এই ওয়েবসাইট থেকে।

বিশুদ্ধ এবং পিকথাল ইউসুফের মতো আরবী বিশারদদের করা কোরানের অর্থ জানতে এখানে ক্লিক করুন।

এ্যাপোলজিস্টদের যুক্তি হিসেবে যা লিখেছি তা বিভিন্ন ধারা বাধা বই থেকে নেয়া হয় নি। এই প্রশ্ন বা যুক্তি গুলো বিভিন্ন ফোরাম বা বিভিন্ন মানুষের মনে জাগে। আপনারা যদি কেউ এর উত্তর দিতে পারেন তাহলে সেসব উত্তর পোস্টে উল্লেখ করবো।


চলবে......।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৯ ভোর ৫:১৬
২৮টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×