somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিপ্রার শহরে কয়েকজন এজেন্ট (গল্প)

২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবকাশযাপনের কথা ছিল, কথা ছিল নিসর্গ পর্যটনের। এদেশে মানালি-উটি-খাণ্ডালা-দেরাদুন নেই বলে আমরা আপে করি -- সেই ঘুরেফিরে ইতোমধ্যে-দেখা কক্সবাজার-রাঙামাটি-শ্রীমঙ্গল, ছোঃ -- আর ভ্রমণের সেই পরিকল্পনা ক্রমশ পিছিয়ে দিই। অবশ্য আমরা প্রত্যেকেই জানতাম, ভারতবর্ষের মতো অফুরন্ত পর্যটন-সম্ভার নেই বলে, আপে করার মাধ্যমে, নিজেদের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের দৈন্য নিয়ে লজ্জিত হবার ব্যাপারটি আসল কথা নয় -- সবুজ পাহাড় ঘেরা রাঙামাটির শান্ত হ্রদ কিংবা সেন্ট মার্টিনসের নীল সমুদ্র কি আমাদের উদাস মুহূর্তে চুম্বকের মতো টানে না, এর আগে ওসব জায়গায় একাধিকবার যাবার পরও? আসলে আমরা কয়েকজন বন্ধু বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নিজেদের অবকাশযাপনের জন্য প্রস্তুত করে উঠতে পারছিলাম না। সবারই কাজের চাপ ছিলো, ছুটি-ছাটা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল।

কিন্তু এবার আমরা পেরেছি। প্রকৃতির কোলে নিজেদের সঁপে দেদার ফুর্তি করছি -- আমাদের আড্ডায় বসে নির্মাণ করা এরকম চিত্রকল্পকে ইউটোপিয়ায় পর্যবেশিত হয়ে যাবার হাত থেকে রা করতে পেরে আমরা তৃপ্ত হই -- চট্টগ্রামগামী ট্রেনে ওঠার পর থেকেই হুল্লোড়ে মেতেছি। পিংক ফয়েড, রবীন্দ্রনাথ, সুমন, জেমস্, রুনা লায়লা, লালন -- কাউকেই ছাড় দিইনি। আমাদের চিৎকারে অন্যান্য যাত্রীরা -- যারা অফিসের কাজে, আত্মীয়ের বাসায়, ব্যবসার ফেরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলো -- আমাদের এই ছোকরাসুলভ হৈ-চৈ তাদের নিশ্চয় বিরক্তির কারণ হয়েছে। আমাদের চেঁচামেচি যতোই বাড়ছিল, অন্যান্য যাত্রীর মুখ ততোই গোমড়া হচ্ছিলো।

আমরা কয়েক বন্ধু, তিরিশাতিক্রান্ত সবাই, কম-বেশি প্রতিষ্ঠিত। আমাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক, একজন ব্যাংকার, একজন এনজিওকর্মকর্তা, এবং একজন বেকার। বেকার যে, তার কিন্তু একটি বেশ ঈর্ষণীয় পেশা আছে -- চলচ্চিত্রকার, পরিষ্কার করে বললে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রকার। কিন্তু সে নিজেকে বেকার বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বছরের বেশিরভাগ সময় তার হাতে কোনো কাজ থাকে না, কিন্তু কোনো কাজ পেয়ে গেলে অবশ্য বেশ কয়েক মাস চলে যায়। বছরের বাকি সময়ের বেকারত্বকে সে উপভোগ করে। তার ছন্নছাড়া জীবনের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সমর্থন দেবার জন্য আমাদের মতো আরও বেশ কয়েকটি বন্ধু-সমবায় তার আছে। এবারের রাঙামাটি যাত্রায় এই প্রামাণ্যকার পরিমল সেনকে স্পন্সর করছে আমাদের মধ্যে ব্যাংকার-বন্ধু মোহাম্মদ মোহসীন। মোহসীন একটি বিদেশী ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট, ইতোমধ্যেই সে যথেষ্ট টাকার মালিক হয়েছে। আমাদের মধ্যে প্রথম নিজের টাকায় গাড়ি কিনেছে সে। সেগুনবাগিচায় ফ্যাট কিনেছে। তাকে অবশ্য ‘ভালোই তো কামাচ্ছিস’-জাতীয় ঈর্ষামিশ্রিত কম্পি­মেন্ট দিলে সে বলে যে, হ্যাঁ প্রচুর টাকা আছে বলেই তো সরকারী চাকরি ছেড়ে ব্যাংকে এলাম, কিন্তু এখানে এসে দেখি সব টাকাই অন্যের -- আমার কাজ কেবল তার ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট রেডি করা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক সাকিব আহসান পত্রিকায় কলাম লিখে, আর সাহিত্যের পাতায় প্রবন্ধ লিখে আমাদের মধ্যে সত্যিকারের বিখ্যাত একজন ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে। ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট থেকে রাঙামাটিগামী বাসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবার কথা। শাহেদ আহমেদ সর্বোচ্চ সার্কুলেশনের পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার, আদালত ও পরিবেশ বিষয়ে তার চাইতে ভালো রিপোর্টার এদেশে নেই। আর আমি মশিউর রহমান, একসময়ের বামপন্থী ছাত্রনেতা, এনজিওতে মানবাধিকার নিয়ে কাজ শুরু করার মধ্য দিয়ে বিপ্লবের স্বপ্ন আপাতত দেখা বন্ধ রেখেছি। অবশ্য আমার এই রাজনীতি-অভিজ্ঞতা ট্রেনিং-ওয়ার্কশপে খুব কাজে দেয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা এনজিওর আগে বামপন্থীরাই বলতো। আজকাল অবশ্য এসব এনজিওর একক অধিকারে চলে গেছে। এনজিওতে এজন্য বামদের আলাদা কদর আছে।

চট্টগ্রাম থেকে সাকিবের জন্য একটা সিট রেখে আমরা রাঙামাটিগামী বাসে উঠি। তিন ঘণ্টার বাসজার্নি কিন্তু রাঙামাটি পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে। সাকিব যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেট থেকে উঠলো তখনই সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সাকিব ছিল আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ছাত্র, সমাজতত্ত্বের শিক এখন। আমরা সবাই ঢাকায়, সেই কেবল চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে পড়ে রয়েছে। আমাদের মধ্যে সেই আবার একমাত্র বিবাহিত। বৌ ছাড়াই সাকিব একাই চলেছে আমাদের সঙ্গে, কারণ তাদের কন্যা সন্তানটি এতো ছোট যে তার বৌয়ের উপায় নেই আমাদের সঙ্গে যোগ দেবার। আমরা অবশ্য মনে মনে চাইওনি এক নারী এসে জুটুক আমাদের মাঝে, আমাদের এই ভ্রমণটি হবে বান্ধবসর্বস্ব, পুরুষতান্ত্রিক।

মাস্টার বাসে উঠেই জানতে চাইলো, কীরে তোদের প্ল্যান কী?
ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট: লেকে ভ্রমণ।
বেকার (চলচ্চিত্রকার): রাজবাড়ি, মন্দির পরিদর্শন।
এনজিও কর্মকর্তা (সাবেক বামপন্থী ছাত্রনেতা): আদিবাসী মদ্য পান।
সাংবাদিক: ফ্রেশ রুই-কাতলা ভণ।

প্ল্যানগুলো শুনে সাকিব বলে, রাঙামাটিতে সবাই লেকে ভ্রমণ করতে যায় শুনেছি, লেকের মাছ খেতে যায় বলে তো শুনিনি। শেরাটন সোনারগাঁয়ে স্পন্সর্ড লাঞ্চ খেতে খেতে সাংবাদিকের জিব কত লম্বা হয়েছে তোরা দেখেছিস।
সবাই হে হে করে বিদ্রƒপের হাসি হাসে।
--আর বিপ্লবীর করুণ দশা দেখ, সে যাচ্ছে মদ খেতে।
সবাই হে হে করে বিদ্রƒপের হাসি হাসে।
আমার এই এক সমস্যা। একসময় বিপ্লবী রাজনীতি করতাম বলে তার লিগ্যাসি টেনে বেড়াতে হচ্ছে। এমনিতেই পার্টি থেকে দূরে দূরে থাকি, স্বপ্নও অনেকখানি ফিকে হয়ে এসেছে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদের দোসরদের মিশনারি কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে অন্নসংস্থান করি -- এর একটা মর্মপীড়া তো রয়েছেই -- তার ওপর লোকজনের এসব বিদ্রƒপের মুখোমুখি প্রায়ই হতে হয়। অবশ্য বন্ধুদের বিদ্রƒপগুলো গা-সওয়া হয়ে গেছে, কিছু মনেও করি না আমি। তবে শাহেদ মনে হয় কিছুটা সিরিয়াসলি সাকিবের কথাটা নিলো।
--আমরা তো আর বাসা পাবার জন্য রঙের রাজনীতি করি না।
শাহেদের তীরে মাস্টার খানিকটা কাবু হয়। সে গোলাপী না নীল কী একটা রাজনীতি সত্যিই করে। সাকিব নিশ্চুপ হয়ে যায়। তার সঙ্গে সঙ্গে সবাই যেন একটু নিরবতায় আচ্ছন্ন হয়।

ফিন্যান্সিয়াল এনালিস্ট মোহসীনের কথায় আমরা আবার মুখর হয়ে উঠি।
--আমার আরেকটা প্ল্যান আছে। চাকমা নারীকে নিয়ে শয্যাগমন করতে চাই। বহু নারীতেই তো গিয়েছি, আদিবাসী নারীতে গমন করা হয় নি। আর শুনেছি তারা প্রেটি এভেইলএবল।
পরিমল রে রে করে ওঠে: আমি যে কই এমবিএ কখনও মানুষ হইতে পারে না। ও যেদিন ফিজিক্স শেষ কইরা এমবিএতে এডমিশন নিছিলো সেদিনই আমি কইছিলাম, সে অমানুষ হইয়া গেল। শালা আমিও মাইনোরিটি, আমি এইডা কিছুতেই হইতে দিমু না।
মোহসীন আত্মপ সমর্থন করে: শালা ফিল্মমেকার, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ দেখো নাই? চার বন্ধু অরণ্যে গেল। হরি নামের সদ্য-ছাঁকা-খাওয়া যুবকটি এক আদিবাসী নারীকে টাকার লোভ দেখিয়ে ধরাশায়ী করলো। অরণ্যে গেলে সব মেজরিটির তলপেটই আদিবাসী নারীর জন্য টাটায়।
--তুই ছবিটার পরের অংশটা ভুইলা গেছোস। আদিবাসী আরেক যুবক হরির মাথা ফাটিয়ে দেয়। আমি তোর মাথা ফাটাবো।
--এই থাম, এডিটরের ফোন!
মোহসীন আর পরিমলের উত্তেজিত কণ্ঠ শাহেদের চিৎকারে থেমে যায়।
--হ্যাঁ বলেন ... শোনা যাচ্ছে না ... নেটওয়ার্ক খুব খারাপ ... কার ইন্টারভিউ ... কিন্তু আমি তো একটু রিল্যাক্সড থাকতে চাইছিলাম ... আপনি রিকোয়েস্ট করলে আর ফেলি কীভাবে ... কয়টা মাথা আমার ... কিন্তু দিস ইজ নট ফেয়ার ...।
‘ধুস্শালা’ বলে সেলফোনের পাওয়ার বন্ধ করে শাহেদ।
--কী, এসাইনমেন্ট জুড়ে দিল?
--আর কী! এর আগে একবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছি। ঈদের দিনে ফোন করছে -- তোমাদের পঞ্চগড়ে তো সমতলে চায়ের চাষ হচ্ছে। ভালো একটা পজিটিভ রিপোর্ট নিয়ে আসো। সেবারও বলেছিলাম, দিস ইজ নট ফেয়ার। ছুটিতে আসছি, এসব কী? কে শোনে কার কথা! শালার মোবাইল ফোন!
--তুই ফোনটা একটু আগে বন্ধ করলেই পারতি। তোকে আর ধরতেই পারতো না। রাঙামাটিতে মোবাইল ফোন কাজ করে না। সাকিব বলে।
--কাজ করে না মানে? মোহসীনের প্রশ্ন।
--তিন পার্বত্য জেলায় মোবাইল ফোন কাভারেজ নেই।
--সমস্যা কী?
--আহা দুধের শিশু, কিচ্ছু জানো না। এমবিএরা কি রাজনীতি একেবারেই বোঝে না বলছিস?
--ও এবার বুঝেছি।
--শাহেদ, কার ইন্টারভিউ করতে হবে রে?
--সন্তু লারমার।

আমরা যখন সন্তু লারমার শহরে পৌঁছলাম তখন রাত সাড়ে নটা বাজে। হোটেল সুফিয়া কি সুলেখায় আমরা উঠলাম।

ডিনার সেরে, পান করে আমরা হাঁটতে বেরুলাম। রাত্রি দ্বিপ্রহর তখন। অসংলগ্ন উদ্দেশ্যবিহীন হাঁটাহাঁটিÑ সম্ভবত রিজার্ভ বাজারের দিকে। দোচোয়ানি পেটে পড়ায় আমাদের পা টলছিলো, কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছিলো। হ্রদের হাওয়া আমাদের ঘোরকে কেটে কেটে দিচ্ছিলো, যেকারণে আমাদের আচরণগুলো সঙ্গতি ও অসঙ্গতির সীমানায় আসাযাওয়া করছিলো। পেছন থেকে ক্রমশ এগিয়ে আসা একটি গানের সুর আমাদের সচকিত করে তোলে। আমরা ধীরে ধীরে টলোমলো হাঁটছিলাম, কিন্তু গায়ক হাঁটছিলো দ্রুতলয়ে।
দুর্গইত্যা ফ্রেম ন খরিও, লাম্বা চুলোর বিশ্বাসো নাই ...
গায়ক আমাদের কাছকাছি এসে তার গান থামায়। লুঙি পরা, ছেঁড়া শার্ট গায়ে দেয়া চিমসানো চেহারার লোকটি আমাদের ডাক দেয়।
--ভাইজানরা কী ঢাকা থাইকা?
--নাম কী?
--হজরত।
--বাড়ি কই?
--কোম্পানিগঞ্জ?
--চাকমাগো শহরে তুমি কী করো?
--কী কন ভাইজান। নাক বোঁচারা ভাগছে। এই শহর এহন বাঙালিগো, সেটেলারগো।
--কী কাম করো?
--গাছ কাটতাম। সরকার কড়াকড়ি করছে, গাছ কাটতে পারি না। খাইতেও পারি না।
--গাছ কাটো ক্যান? গাছ কেটে তো পাহাড়গুলারে বিরান বানিয়ে ফেলছো। তোমাদের জ্বালায় তো বাংলাদেশে বন বলে কিছু থাকছে না।
--কী কন? এই রাঙামাটিতে আছেডা কী? গাছ, মাছ আর বাঁশ। এই তিনটার ওপরেই এখানকার মানুষেরা বাইচা থাকে। ভাইজান কডা ট্যাকা দ্যান, ভাত খামু।
--ট্যাকা দিলো তো তুমি ভাত খাইবা না, খাইবা মদ।
--ছি ছি ভাইজান, যেকয়ডা ট্যাকা ছিলো তা দিয়া ভাত খাওয়া যায়না, তাই একটু মদ খাইছি। এখন আপনারা ট্যাকা দিলে ভাত খামু।
--যা ভাগ ব্যাটা! আমরা তোরে টাকা দিবো না।
--ভাইজানরা কি বেড়াতে আইছেন? ঢাকা থাইকা?
--তা জেনে তোর কী?
--না এমনি জিগাইলাম আর কি। ... ভাইজানরা সাবধানে চইলেন। দিনকাল ভালো না।
লোকটা আবার গান গাইতে গাইতে চলে যায়।
--শালা ডিবির লোক!
পরিমলের কথায় আমরা সচকিত হয়ে উঠি। মধ্যরাত তখন। ইলেক্ট্রিসিটি চলে যাওয়ায় মেঘে-ঢাকা চাঁদটা ভুতুড়ে আলো দিচ্ছিলো। নির্জন রাস্তার দুপাশের লেকের ওপারে পাহাড়ের আবছা অস্তিত্বে মরাটে জোছনা ঘনীভূত হয়ে সবকিছু ঘোলাটে ও অনিরাপদ করে তুলেছে। আমাদের অসংলগ্ন পা হোটেলের দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছে যায়।

পরদিন শাহেদের পত্রিকার রাঙামাটি প্রতিনিধি দরজায় টোকা দিলে আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। প্রদ্যুৎ চাকমা অন্য চাকমা ছেলেদের মতোই যথারীতি বিনয়ী, স্বল্পভাষী। সকাল দশটায় সন্তু লারমা ইন্টারভিউয়ের জন্য এপয়েন্টমেন্ট দিয়েছেন। শাহেদ বললো, তোরা আর কী করবি এখন, চল আঞ্চলিক পরিষদের অফিসে। আমরা ছয়জন মিলে একজনের ইন্টারভিউ করতে চললাম।

সন্তু লারমা বাংলার ছাত্র, ভালো বাংলা বলেন। স্পর্শকাতর রাজনৈতিক প্রসঙ্গগুলো চাতুর্যতার সঙ্গে উত্তর দেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রশাসনিক ভিন্নতা, ভূমিব্যবস্থার ভিন্নতা, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতার বিষয়গুলো ঐতিহাসিক প্রোপটে বললেন। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারকে দোষারোপ করলেন। সেনাবাহিনী তুলে নেবার কথা থাকলেও কীভাবে নানা ছুতোয় সৈন্যবৃদ্ধি এখনও চলছে তার কাহিনী শোনালেন। সেনাবাহিনী সেটেলার বাঙালিদের স্বার্থই কেবল দেখে বলে অভিযোগ করলেন। ইউপিডিএফের প্রসঙ্গ তুলতেই আপাত নিরুত্তাপ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান খানিকটা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। সরকারের মদদপুষ্ট অল্প কজন কমবয়েসী বিপথগামী তরুণ বলে তাদের বাতিল করে দিতে চাইলেন। শাহেদ প্রশ্ন করলো, আপনারাও তো একসময় শান্তিবাহিনীর মাধ্যমে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করেছেন। ইউপিডিএফ তো এখন একই কথা বলছে, তাহলে তাদের আপনি বাতিল করতে চাইছেন কেন? সন্তু লারমা এদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেন এবং এরা রাজনৈতিকভাবে সৎ নয় বলে আখ্যা দিলেন।

দীর্ঘ সাাৎকারের পরে প্রদ্যুৎ বিদায় নেয়। তার কী একটা কাজ আছে। আমরা আঞ্চলিক পরিষদ ভবনের বাইরের চত্বরে সাাৎকারের রেশ ধরে আলাপ করতে থাকি।
--লোকটা চাপের মধ্যে আছে। শান্তিচুক্তির কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি, কমিউনিটির লোকজন েেপ আছে।
--এদিকে প্রতিদিনই সেটেলাররা আসছে।
--পৌরসভা থেকে শুরু স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পর্যায়েই তারা আর নেতৃত্বে নেই।
--ইউপিডিএফকে না মানলেও তারা এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। আজকাল তো জেএসএস আর ইউপিডিএফ সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।
--নিজেদের দুই গ্র“পের সংঘাত, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাত, পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক, সেটেলারদের সঙ্গে সংঘর্ষ ... খুবই নাজুক পরিস্থিতি ...
--মেজরিটির হাতে মাইনরিটি নাজেহাল ... এতো চিরকালীন গল্প ... ভূমিদখল, নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ, আদিবাসীদের পিছু হটা, জঙ্গলে আশ্রয় নেয়া, চলাফেরা সীমিত হয়ে পড়া ... আমেরিকায় হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় হয়েছে, সব জায়গায় হয় ... ওদের ভবিতব্য ...
--মেজরিটি হিসেবে আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত ...
--দ্যাখ, বেড়াইতে আসছি, কঠিন কঠিন কথা বলিস নাতো। বেড়ানোর মুডটাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

মোহসীনের মুড ফেরাতে আমরা আজ কী কী করা যায় সেবিষয়ে আলাপ করতে করতে সদর রাস্তায় উঠে আসি।

কিন্তু রাস্তায় উঠতেই ওয়াকিটকি হাতে-ধরা তিনজন আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়।
--উনি কী বললেন?
--সচারচর যা বলেন, তাই বললেন।
--পুলিশের নামে কিছু বললেন?
--না।
--আর্মির নামে?
--না।
--সরকারের নামে?
--হ্যাঁ, শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না, অভিযোগ করলেন।
--আর কী বললেন?
--এইসবই, ঢাকায় উনার বক্তৃতা আমরা আগেও শুনেছি। একই কথা বললেন।
--আপনারা কি সাংবাদিক?
--হ্যাঁ।
--কোন পত্রিকা ...

টিকটিকিরা চলে গেলে শাহেদ বলে, আশ্চর্য! লোকটা তো সরকারেরই পার্ট নাকি! এমনভাবে জেরা করলো যেন একজন আউট ল।
--এইটা হইলো সিএইচটি, বুঝলা। মাছ খাও, মদ খাও, লেকের বাতাস খাও ঠিক আছে -- কিন্তু ইস্যু নিয়া নাড়াচাড়া করবা তো খবর আছে। পরিমল বলে।
--সিএইচটি বিশেষজ্ঞ মনে হচ্ছে! মোহসীনের বক্রোক্তি।
--তোদের তুলনায় তো বিশেষজ্ঞই। ছয় মাস আগে এইখানে ডকুমেন্টারির শুটিং করে গেছি না!
--না, পরিস্থিতি তো আসলেই সুবিধার না। ফিরে গিয়ে কলাম লিখতে হবে। সাকিব বলে।
--নাহ্, ইন্টারভিউ আর ইন্টারোগেশনের পরে তো পাল্টা গোয়েন্দাগিরি করতে ইচ্ছে করছে। আমি বলি।
--এই তোরা তো আবার সিরিয়াস হয়ে গেলি। চল চল লেকে চল, শুভলঙ যাবো, পেদাটিঙটিঙে লাঞ্চ করবো। ইস্যু নিয়ে আর ঘাঁটাঘাঁটি চলবে না। শাহেদ, যা হইছে এর ওপরেই রিপোর্ট লিখে ফ্যাল। আর কোনো টিকিটিকি, কোনো এজেন্ট দেখতে চাই না। মোহসীনের কণ্ঠে অসহিষ্ণুতা ঝরে পড়ে।

‘এই পরিমলদা’! একটা আদিবাসী মেয়ে হাত নেড়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
--আরে শিপ্রা, আসো আসো ... কেমন আছো ... স্কুল থেকে?
শিপ্রা নামের মেয়েটি রাস্তার ওপার থেকে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। মেয়েটি একটু খাটো, কিন্তু সুশ্রী। পরনে লাল-হলুদের উজ্জ্বল থামি-পিনন।
--আসো সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। এরা সবাই আমার বন্ধু, বেড়াতে এসেছি।
পরিচয়পর্বে জানা যায় শিপ্রা তালুকদার স্কুলশিক, আদিবাসীদের স্কুলিং-এর ওপরে ডকুমেন্টারি বানানোর সময়ে পরিমলের সঙ্গে ওর পরিচয় হয়েছিলো।
--কোথায় কোথায় বেড়ালেন আপনারা?
--বেড়াইনি, বেড়াতো যাবো, লেকে। তবে বেড়ানোর মুডটা নষ্ট হয়ে গেছে।
--কেন কী হয়েছে?
--কিছু হয়নি, নাথিং এলস। আপনি ফ্রি থাকলে চলেন না আমাদের সঙ্গে। আপনার মতো একজন গাইড থাকলে মন্দ হতো না। মোহসীনকে বেশ সপ্রতিভ আর উৎসাহী দেখায়।
--উম, হ্যাঁ, যাওয়া যায়। আজ স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেলো, বাসায় তেমন কাজ নেই ...

আমরা একটা যন্ত্রচালিত নৌকা ভাড়া করে লেক দেখতে বের হই।

নৌকার সামনের দিকটায় পরিমল আর শিপ্রা মুখোমুখি বসে। মোহসীন শিপ্রার পাশে বসেছে, প্রায় গা-ঘেঁষে। তারা তিনজন কী নিয়ে যেন আলোচনা করছে, ইঞ্জিনের শব্দে শোনা যাচ্ছে না। মোহসীনকে মনে হচ্ছে সবচেয়ে আগ্রহী আলোচক, হাত-পা নেড়ে কী যেন বলছে। আমি, সাকিব আর শাহেদ নৌকার এপাশটায়, যেন নৌকায় দুটো সাব-গ্র“প তৈরী হয়েছে।
আমি (মশিউর): মোহসীনকে দেখ, তার টার্গেট ফুলফিল করার জন্য মাঠে নেমেছে।
সাকিব: মানে?
আমি: মনে নাই, চাকমা নারীকে নিয়ে শয্যাগমন ...
সাকিব: মেয়েটা কিন্তু সুইট আছে ...
শাহেদ: সন্তু লারমার এজেন্ট।
আমি: কী বলিস?
শাহেদ: দেখলি না, মোহসীন অফার করার সঙ্গে সঙ্গে কেমন আমাদের সঙ্গে ভিড়ে গেল!
সাকিব: পরিমলের পূর্বপরিচিত তো ...
শাহেদ: শালার ইন্টারভিউয়ের পরপরই টিকটিকি ধরলো, তার পরপরই এজেন্ট ভিড়ে গেল। চল একটু বাজিয়ে নিই।

আমরা মোহসীনদের কাছে গিয়ে বসি।
--আচ্ছা শিপ্রা, এই যে শান্তিচুক্তি হলো, এটা কি আপনাদের জন্য ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে বলেন তো? শাহেদ শুরু করে।
শিপ্রা একটু ভাবে।
--দেখেন ভাই, আমি স্কুল, বাবা-মা নিয়ে আছি। এইসব রাজনীতি আমি বুঝি না, আগ্রহও নাই।
--কিন্তু আপনার শহরে আগে তো অনেক চাকমা ছিলো, তারা এখন সংখ্যায় কমে গেছে। সেটেলাররা আপনাদের জমি দখল করে নিচ্ছে। আর্মিরাও নাকি আপনাদের অত্যাচার করে, আদিবাসী মেয়েদের হ্যারাস করে। এসবকিছুর পরও আপনার জানার কোনো আগ্রহ তৈরী হয়নি?
--না ভাই, সরকার যা ভালো মনে করে করছে। জনসংহতি সমিতি আমাদের অধিকারের জন্য কাজ করছে, এটুকু তো জানিই। এর বেশি কিছু জানি না।
--কিন্তু আমার রিপোর্টের জন্য আপনার কিছু কমেন্টস পেলে ভালো হতো।
--আহা, একজন কথা বলতে চাচ্ছে না, আর তুই এরকম খোঁচাচ্ছিস কেন? আর আমি বললাম না, ইস্যু নিয়ে কোনো নাড়াচাড়া করবি না। মোহসীন আবার অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে।

শাহেদ নিশ্চুপ হয়ে যায়। কিন্তু মোহসীন মুখর হয়ে ওঠে।
--জানেন শিপ্রা, আমি সুইজারল্যান্ড যাই নি, কিন্তু উটিতে গিয়েছি। উটির লেকের তুলনায় আমাদের দেশের এই লেকটা কম কিছু নয়।
মোহসীনের উচ্ছ্বাস শিপ্রাকে স্পর্শ করে না। সে খানিকটা উদাস। উজ্জ্বলমুখে ঔদাসীন্যও বিভা আনে।
খানিক পরে শিপ্রা বলে, এইখানটায় আমাদের রাজা ত্রিদিব রায়ের রাজবাড়িটা ছিলো, এখন পানির নিচে।
আমরা সবাই নিচে তাকাই, যেন তাকালেই রাজবাড়িটা দেখা যাবে।
--কী টলটলে জল! মোহসীন তখনও সপ্রতিভ।
--জল নয়, রক্ত!
--রক্ত?
--ঢালী আল মামুন তার প্রদর্শনীতে দেখিয়েছেন, কর্ণফুলি ড্যাম থেকে জল নয়, রক্ত গড়িয়ে আসছে! আদিবাসীদের রক্ত!
শাহেদ আমার জানুতে হাত দিয়ে চাপ দেয়। যার মানে দাঁড়ায়: দেখো, মেয়েটা ভাব দেখালো কিছুই বোঝে না, কিন্তু কী গভীরভাবে তাদের ইস্যুটাকে সে জানে।
লেকের পানিতে বেরিয়ে থাকা একটা বল্কলহীন গাছের গুঁড়ি দেখিয়ে শিপ্রা বলে, সবগুলো গাছ মরে গেলেও এই গাছটা মরে নি। হিরোশিমা নগরীর বিধ্বস্ত ভবনটার মতো। আমরা বলি, ঐখানটায় অলৌকিক কিছু আছে।
--আচ্ছা শিপ্রা, আমাদের ডকুমেন্টারিটা কি টিভিতে দেখেছিলে? পরিমল জিজ্ঞেস করে।
--না, আমার স্টুডেন্টরা বললো যে তাদের টিভিতে দেখিয়েছে। আপনাকে দেখতে পেলে আমার স্টুডেন্টরা মাথায় তুলে নাচতো।
--না, এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যেতো।
--না না, চাকমারা অল্পতেই খুশি হয়।
--কিন্তু পরিস্থিতি তো আপনাদের খুশি কেড়ে নিয়েছে। সাকিব বলে।
--হ্যাঁ, সম্ভবত। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে চাচ্ছি, কিন্তু সরকার তাও করতে দিচ্ছে না।
শাহেদ আবার আমার জানুতে চাপ দেয়।
--এই আবার সিরিয়াস আলোচনা শুরু হলো।
মোহসীনের আপত্তি কেউ কানে তোলে না। আলোচনা চলতে থাকে। শাহেদ একটু আড়াল থেকে শিপ্রার কথাগুলো নোট নিতে থাকে।
আমরা পেদাটিঙটিঙে পৌঁছাই। দুপুরের খাবার সেখানেই আমাদের খাওয়ার কথা।

খাবারের বিরতিই ছিলো সেটা। নয়তো ফেরার পথে আবার ঘুরেফিরে সেই সিএইচটি ইস্যু নিয়েই আলোচনা চলতে থাকলো, মোহসীনের নিষেধাজ্ঞা কোনো কাজে এলো না। শিপ্রা তার হাসি হাসি মুখ নিয়ে ইস্যু নিয়ে ছোট ছোট মন্তব্য চালিয়ে যেতে থাকলো। পরিহাস, ব্যঙ্গ, বিদ্রƒপ মিলে তার কথাগুলোকে বিুব্ধ ও বঞ্চিতের বয়ান বলে মনে হয়।

শিপ্রাকে আকর্ষণ করার মোহসীনের যাবতীয় সদর্থক উদ্যোগ মাঠে মারা যাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ সে শিপ্রাকে যেন আক্রমণ করে বসলো: এখানে আর্মির উপস্থিতির দরকার আছে। শান্তিবাহিনী তো কম বাঙালি মারে নাই। আর একই দেশের নাগরিক হয়ে আপনারা স্বায়ত্তশাসন চান কোন সাহসে? আর দাবি করলেই তো হবে না, কোনো সার্বভৌম সরকার তো সেটা মেনে নেবে না। ইন্ডিয়া উলফা-নাগাদের দাবি মানছে? শ্রীলঙ্কা তামিলদের দাবি মানছে? আর্মি ডিপ্লয়মেন্ট ছাড়া আর কোনো উপায় আছে কি? এখন আর্মি সরিয়ে নিলেই জেএসএস আর বাঙালিরা মারামরি করবে। ইউপিডএফ আর জেএসএস খুনাখুনি করবে।
সাকিব হঠাৎ বলে ওঠে, এই ব্যাটা তুই হঠাৎ ইস্যু নিয়ে আলোচনা শুরু করলি, ব্যাপার কী? আর এসব কী কস, তুই কি আর্মির এজেন্ট নাকি?
সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।
--কিন্তু শান্তিচুক্তিতে তো আর্মি-ক্যাম্প উঠিয়ে নেবার কথা আছে। আর্মি তো কখনো বাঙালি মারে নাই, মারছে সব পাহাড়ীদের। সে তো নিরপে নয়, সে তো বাঙালিদের স্বার্থে কাজ করে। যে নিরপে নয় তার কাছে ন্যায়বিচার পাহাড়ীরা আশা করে না। শান্ত কিন্তু দৃঢ়ভাবে শিপ্রা মোহসীনের কথার জবাব দেয়।
--আসলে জনসংহতি সমিতির চুক্তি করাই ঠিক হয়নি। এতে পাহাড়ীদের স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। অবশ্য জেএসএস-এর নেতারা নিশ্চয় কিছু হালুয়ারুটির ভাগ পেয়েছে। মাইনোরিটি হয়ে স্বায়ত্তশাসন চাই, পৃথক জাতিসত্তার স্বীকৃতি চাই মেজরিটির কাছেÑ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কি এ হয়? বিপ্লব কি খালি হাতে হয় নাকি? শান্তিবাহিনী একসময় যা করছে, ইউপিডিএফ বর্তমানে যা করছে, এটাই আসল তরিকা।
পরিমল অনেকণ পরে কথা বলে। তার কথা বক্তৃতার মতো শোনায়।
--না পরিমলদা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এতদূর এসে আবার রক্তপাতের পথে পাহাড়ীরা যেতে চায় না। শিপ্রা বলে।
--তুমি জানো না শিপ্রা, খবর রাখো না। ইউপিডিএফের শক্তি ক্রমশ বাড়ছে। আর কদিন যাক না, সরকার চেঞ্জ হয় কিনা দেখো। দুয়েক বছরের মধ্যেই সবাই আবার ইউপিডিএফের লাইন ধরবে।
শাহেদ আমাকে ফিসফিস করে বলে, পরিমল আবার ইউপিডিএফ বিশেষজ্ঞ হলো কবে। তলে তলে আবার সে ইউপিডিএফের এজেন্ট নাতো!
--তোরা কী শুরু করলি বলতো? মাতাল গায়ক ডিবির এজেন্ট, শিপ্রা সন্তুর এজেন্ট, মোহসীন আর্মির এজেন্ট, পরিমল ইউপিডিএফের এজেন্ট ... আমরা সবাই এজেন্ট? তুই তাহলে কার এজেন্ট, সাকিব কার, আমি কার?
--ধর সাকিব এনএসআই-এর, আমি আমেরিকার, তুই ভারতের ...

আমরা পরদিন সকালেই ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেই। হয়তো আমাদের আর দেখার কিছু ছিলো না, কিংবা দেখার ইচ্ছেটা মরে গিয়েছিলো। যদিও আমাদের অনেক কিছুই করার কথা ছিলোÑ শাহেদের রুই-কাতলা খাবার কথা ছিলো, মোহসীনের চাকমা মেয়েকে বিছানায় নেবার কথা ছিলো, আমার প্রচুর মদ্য পান করার কথা ছিলো, পরিমলের মন্দির পরিদর্শনের কথা ছিলো ...।

রাঙামাটির পাহাড় থেকে নেমে বাসটা রাউজানের সমভূমি স্পর্শ করে। হঠাৎ সাকিবের সেলফোনটা বেজে ওঠে। সে বৌয়ের সঙ্গে কথা বলতে থাকে, “হ্যাঁ একদিন আগেই চলে আসছি ... আমার সুকন্যা কেমন আছে? এইতো আর ঘণ্টাখানেক লাগবে ইউনিভার্সিটিতে ফিরতে।”

আমাদের মনে হলো শিপ্রার শহর থেকে আমরা, কয়েকজন এজেন্ট, অনেক দূরে চলে এসেছি। মুক্তির আনন্দ আমাদের স্পর্শ করে অথবা করে না।

...

রচনাকাল: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০০৫
৫০৫ ইন্টারন্যাশনাল হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রথম প্রকাশ: প্রথম আলো সাময়িকী, প্রকাশকাল অনুসন্ধানসাপেক্ষ

ছবির লিঙ্ক: Click This Link




সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০০৮ রাত ১০:০৩
২২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×