somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশ নতুন আক্রমণের পরিকল্পনা করছে: বিদেশী পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ, পর্ব ২৮

১২ ই জুন, ২০০৮ সকাল ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নরম্যান কিরহ্যাম, কূটনৈতিক প্রতিনিধি

দি ডেইলি টেলিগ্রাফ, ১২ জুন, ১৯৭১

চেকোস্লোভাকিয়া ও চীনের কাছ থেকে পাওয়া অস্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের গেরিলারা পশ্চিম-পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। লন্ডনে আসা রিপোর্ট অনুসারে বলা যায়, পরবর্তী দু-মাসে হঠাৎ-আক্রমণের কৌশল নেয়া হবে।

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে হাজার হাজার বাঙালি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এবং গেরিলারা আশা করছে গোপন অস্ত্র-ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আরও অস্ত্র আসবে। গেরিলাদের ব্যবহৃত অনেক হালকা অস্ত্র চেকোস্লোভাকিয়ার তৈরী, কিন্তু ভারতের নাগা এলাকা থেকে কিছু চীনা অস্ত্রও দেশের ভেতরে নিয়ে আসা হয়েছে যেখানে চীন একটি আন্ডারগ্রাউন্ড বাহিনীকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাকিস্তানের যুদ্ধে চীনের নীতি হলো ইয়াহিয়া খানের সরকারকে নৈতিক সমর্থন দেয়া এবং নাগা থেকে বেসরকারীভাবে অস্ত্রের সরবরাহ পিকিংকে বিব্রত অবস্থায় ফেলতে পারে।

ব্রিটিশ বন্দুক

বাংলাদেশের গেরিলারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মজুদ থেকে নিয়ে ব্রিটিশ বন্দুক এবং সেইসঙ্গে হালকা মেশিন-গান, মাইন ও হ্যান্ড গ্রেনেড ব্যবহার করছে। আর নিজেদের তৈরী বিস্ফোরক তো আছেই। তাদের তিনটি হেলিকপ্টার আছে যা এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়নি এবং একটি ফিল্ড-গান আছে; কিন্তু সঙ্গের ভারী যন্ত্রপাতি নেই। তারা বরং চেষ্টা করছে সেনাবাহিনীর সরবরাহের পথ বন্ধ করে দিতে। তারা গ্রামাঞ্চলে রেলের মালগাড়ি ও সেনা পরিবহনগুলো ধ্বংস করছে। গেরিলারা অনেক জেলা ও প্রদেশের কেন্দ্রগুলোয় নিয়ন্ত্রণ-প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে। অনেক শহরে তারা তাদের নিজস্ব কারফিউ জারি করেছে।

এখন পশ্চিম-পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা অঞ্চলে নতুন আক্রমণের আশংকা করছে। ঢাকা বিমানবন্দরের আশপাশ দিয়ে প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বাংলাদেশী অনেক সমর্থক মনে করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ১০০,০০০ হতে পারে কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অধিক সৈন্য ও সরঞ্জাম আনছে এবং নতুন আক্রমণের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত রয়েছে।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বেসামরিক শাসন-ব্যবস্থা প্রবর্তনের দীর্ঘ প্রতিক্ষীত প্রস্তাবনার গতকালের ভাষণ শুনতে ভালো লাগলেও পূর্ব-পাকিস্তানের আবেগগত প্রয়োজন মেটানোর জন্য তা যথেষ্ট নয়। গত তিনমাস ধরে প্রদেশটি সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে বেঁচে আছে, যেজন্য রাজনৈতিক সমাধানের পথ অনেক দূরে সরে গেছে। এই হতাশা ও ঘৃণার মুখে কী প্রয়োজন? অবশ্যই গতকাল দেয়া সতর্ক-প্রতিরোধের প্রতিশ্রুতির চাইতে উদারতাই বেশি প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের দ্বারা প্রণয়নকৃত একটি সংবিধানের চাইতে মহানুভবতা বেশি প্রয়োজন।

বাঙালিদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের বাইরে গিয়ে ভবিষ্যতের কোনো পরিকল্পনাই কাজে দেবে না। কেউ কেউ যদি সহযোগিতা করতে প্রস্তুতও হয় এবং তারা যদি দালাল হিসেবে প্রতিপন্ন হয়, তবে শেষ পর্যন্ত তাদের কোনো ক্ষমতাই থাকবে না। পূর্ব-পাকিস্তানে প্রেসিডেন্টের বাণীর কোনো অংশ কেউ প্রচার করতে গেলেই সে দালাল হিসেবে আখ্যা পাবে। পূর্ব-পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে এমন কোনো রাজনৈতিক সমাধানের কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। গতকাল ভাষণে এমন কিছু বলা হয়নি যা পোড় খাওয়া মানুষগুলোর মনোভাব পরিবর্তন করতে পারে।

সন্দেহ নেই, গত তিন মাসে যা ঘটেছে তার জন্য দায়ী করা যায় এমন অনেক লোকই আছে। কিন্তু হতভাগ্য বাঙালিরা অবশ্যই এই দায়ভাগ ভারতকে বা ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানকে বিভক্ত করতে চায় এমন কোনো 'দুস্কৃতিকারী'কে দিতে চাইবে না। সেনাবাহিনীর কুকর্মের পেছনে কোনো সাফাই প্রেসিডেন্টের বক্তৃতায় গাওয়া হয়নি।

সম্ভবত পাকিস্তানের রাজধানীতে যা চিন্তা করা হচ্ছে তার সঙ্গে পুর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত ঘটনার মধ্যে একটা ব্যবধান রয়েছে। যদি বেসামরিক সরকারকে পুনঃস্থাপন করতে হয় তবে সম্পর্কস্থাপন করা প্রয়োজন। কিন্ত সবেক্ষেত্রেই ঘৃণাকে বাড়িয়ে তোলা হয়েছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যে-এজেন্টদের নিয়োগ করা হয়েছে সেই বিহারিদের বাঙালিরা ততখানিই অপছন্দ করে যতখানি তারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের করে। এরপরও পূর্বের সমর্থন আদায় করতে পেরেছেন এমন কর্মকর্তারা পশ্চিমে আছে। কিন্তু তারা কি ফিরে যেতে পারেন না? তাদের পুনঃনিয়োগের মাধ্যমে এটা কি প্রমাণ করা যায় না যে দমন-পীড়নের নীতি ভুল ছিল? প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটাই ভাবনা এবং তা হলো সবকিছুর সমাধান রাজনৈতিকভাবে হতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত গত তিন মাসে পূর্ব পাকিস্তানে যা করা হয়েছে তার ফলে সমাধানের সম্ভাবনা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।

এখন যা প্রয়োজন তা হলো বাঙালি জনগণের জন্য ভালো কিছু করার ইচ্ছা যার ফলে তাদের মনে হবে গেরিলা যুদ্ধ বা অন্য যাবতীয় ভোগান্তি তাদের জন্য আরো যুদ্ধাবস্থাই কেবল আনবে, তার চেয়ে শান্তিপূর্ণ আপসই ভালো হবে। তারা এমন কোনো বিবৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে না যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং যার খসড়া সেনাবাহিনীর জেনারেলদের তৈরি করা বলে মনে হবে।

ছবির লিঙ্ক: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০০৮ সকাল ৮:৩৫
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×