somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিশ্বায়নকালে মিডিয়া: বড়ো দানবদের ছোট্ট দুনিয়া

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সারাবিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন ঘটেছে সেটা অসম্ভব ছিল বিশ্বায়িত মিডিয়া না থাকলে। বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে গণমাধ্যমের অবস্থান কেন্দ্রে। মিডিয়া হলো একইসঙ্গে বিশ্বায়নের কারণ ও ফলাফল। অবশ্য রবার্ট ডব্লিউ ম্যাকচেজনি (ম্যাকচেজনি, ১৯৯৯ক) জি-এইটের স্বার্থানকূল বিশ্বায়নকে বুঝতে ‘গ্লোবালাইজেশন’ শব্দটার চাইতে ‘নিওলিবারেলিজম’ শব্দটা বেশি পছন্দ করেন। বিশ্বায়ন শব্দটার মধ্যে একধরনের অবশ্যম্ভাবিতার বিষয় আছে যা বিভ্রান্তিকর হতে পারে। তার ভাষায়, এটি আদর্শপোরা একটা শব্দ। নিওলিবারেলিজম শব্দটার মধ্যে একটা ঐতিহাসিক ঘটনাক্রম সাক্ষী হয়ে হাজির থাকে। এই বিবেচনায় তিনি বিশ্ববাণিজ্যসংস্থা ও নাফটার কথা উল্লেখ করেছেন। আজকের যে জি-এইট প্রভাবিত বিশ্বায়ন তাতে এই দুটি সংস্থার প্রত্যক্ষ উদ্যোগ রয়েছে। আশির দশকের শেষভাগে থেকে নিওলিবারেল পরিস্থিতিতে যে পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে মিডিয়া হবে পুরোপুরি বাণিজ্যিক। যেসব দেশ ডব্লিউটিওর অন্তর্ভুক্ত আছে তাদের বলা হয়েছে তোমরা তোমাদের মিডিয়াকে ডিরেগুলেট কর, নিয়ন্ত্রণ করনা, পারলে সবকিছু বেসরকারী খাতে ছেড়ে দাও। তৃতীয় বিশ্বের প্রান্তিক পুঁজিবাদী দেশগুলো তা মেনেছে।

নিও লিবারেল পরিস্থিতির পূর্বে কী পরিস্থিতি ছিল? তখন সাংবাদিকতা ছিল রাজনৈতিক আদর্শভিত্তিক। যত সময় এগিয়েছে, বলা হয়েছে, এটা নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা নয়। আমাদের বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে হবে। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার কাল পেরিয়ে আজ আমরা বিশ্বায়নের যুগের সাংবাদিকতায় উপনীত হয়েছি। আশি ও নব্বই দশকে দশকের পূর্বে মিডিয়া ছিল জাতীয়। রেডিও ও টেলিভিশনের মালিকানা ছিল সরকারের। নিওলিবারেল পদক্ষেপের পরে ব্যাপকভাবে বেসরকারী ও বাণিজ্যিক রেডিও-টেলিভিশন-সংবাদপত্রের বা কর্পোরেট মিডিয়ার আবির্ভাব ঘটেছে।

‘পাবলিক’ আবিষ্কার করে, ‘প্রাইভেট’ ব্যবসা করে
রেডিও থেকে শুরু করে আজকের ইন্টারনেট -- কোনো মাধ্যমই কিন্তু কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা আবিষ্কার করে নি। এসবই আবিষ্কৃত হয়েছে সরকারি উদ্যোগে। পৃথিবীর সব দেশে রেডিও দীর্ঘকাল সরকারি মালিকানায় ছিল এবং এজন্য বিবিসি বা কানাডিয়ান ব্রডকাস্টিং-এর মতো গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মাধ্যমকে পাওয়া গিয়েছিল। পরে রেডিওতো বিজ্ঞাপনদাতারা প্রবেশ করেছে, ব্যক্তিমালিকানায় রেডিও যাবে কিনা তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলেছে। সরকারের অভ্যন্তরে এনিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে, চার্চ ও ট্রেড ইউনিয়ন রেডিওর ব্যক্তিমালিকানাকরণ নিয়ে বিরোধিতা করেছে। কিন্তু রেডিও একসময় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হয়েছে, যেসব দেশে এখনও সরকারি মালিকানায় রেডিও আছে, সেখানেও বিজ্ঞাপনদাতাদের দাপট রয়েছে। রেডিও নিয়ে যে বিতর্ক হয়েছিল, টেলিভিশনের ক্ষেত্রে সে-বিতর্ক হয়নি। ব্যক্তি খাত অনায়াসে নানা কিসিমের চ্যানেল খুলতে পেরেছে। সব তথ্যমাধ্যমের মতো কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আবিষ্কৃত হয়েছে। পেন্টাগন ও ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ইন্টারনেট ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করেছে। এপ্রসঙ্গে নোম চমস্কি বলেন:
কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়েছিল সরকারি খরচে এবং সরকারি উদ্যোগে। ১৯৫০-এর দশকে যখন কম্পিউটার বিকাশ লাভ করছিল তখন এর খরচের শতকরা ১০০ ভাগ ছিল সরকারের। একই ব্যাপার ছিল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে। ... ইন্টারনেট যতক্ষণ পেন্টাগন বা ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের অধীনে ছিল ততক্ষণ তা ফ্রি ব্যবহার করা যেতো। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বিল গেটসের ইন্টারনেটের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না, ইন্টারনেট বিষয়ক সম্মেলনে ডাকা হলেও তিনি যান নি; কারণ তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত এর মধ্যে লাভালাভের কোনো ব্যাপার লক্ষ করেন নি। (চমস্কি, http://www.corporatewatch.com)

টেলিযোগাযোগ খাতকে ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেবার জন্য আন্তর্জাতিক চাপের কথা আগেই বলেছি। ১৯৯৭ সালের ফেব্র“য়ারিতে বিশ্ববাণিজ্যসংস্থার সদস্য ৬৯টি দেশের সরকার তাদের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে বেসরকারি খাতের একচেটিয়া মালিকদের জন্য খুলে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে পৃথিবীর যোগাযোগ-ব্যবসার ৯০ শতাংশ এই উদারীকরণের আওতায় চলে আসে (মুখার্জি, ২০০২: ১৭)। এতে আইবিএম, মাইক্রোসফট এবং অন্যান্যদের যেকোনো দেশে অবাধে অনুপ্রবেশের সুযোগ নিশ্চিত হয়। এই কথা অন্যান্য যোগাযোগ-মাধ্যমের জন্যও সত্য। ভারতে দীর্ঘদিন ভিএসএনএল বলে সরকার-নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানই ইন্টারনেট সেবা দিত, যদিও ভিএসএনএল-এর গ্রাহকসেবা ভালো নয় এই অভিযোগ এনে, সংস্থাটির উন্নতি না ঘটিয়ে, ব্যক্তি খাতের জন্য ইন্টারনেটকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

গ্লোবাল বাণিজ্যিক মিডিয়ার আবির্ভাব হয়েছে সা¤প্রতিক সময়ে, বিশ্বায়নের সময়কালে। হার্বার্ট শিলার বলেন:
১৯৮০-র দশক পর্যন্ত গণমাধ্যমগুলো সাধারণত জাতীয় মাধ্যম হিসেবেই বিদ্যমান ছিল। ... ১৯৮০-র দশকে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং মার্কিন সরকার যোগাযোগ-মাধ্যমগুলোকে সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার জন্য এবং ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেবার জন্য চাপ দিতে থাকে এবং নতুন স্যাটেলাইট ও ডিজিটাল টেকনোলজির আবির্ভাবের কারণে বহুজাতিক মিডিয়া-দানবের উদ্ভব ঘটে (শিলার, ১৯৯৭)।

এ হলো দানবের কাল
১৯৯০ সালে সমাজতন্ত্রের পতনের পর পুঁজিবাদ প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন মুক্ত বিশ্ববাজার হাতে পেয়ে যায় এবং পুঁজি তার নিজস্ব নিয়মে বাজার স¤প্রসারণ করতে থাকে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে বিশ্বায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনেকখানিই উৎপাদন খাত থেকে সেবা খাতের দিকে ধাবিত হয় এবং এই সেবা খাতের প্রায় পুরোটাই গড়ে ওঠে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে। এই পরিবর্তন ছাপিয়ে যে বৈশিষ্ট্য বর্তমান পুঁজিবাদের ক্ষেত্রে প্রকট হয়ে ওঠে তা হলো মনোপলি, একুইজিশন ও মার্জার। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে ছোট কোম্পানিগুলো বড়ো কোম্পানির মাঝে লীন হয়ে যাচ্ছে এবং মাত্র কিছু কোম্পানির মনোপলি কায়েম হচ্ছে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশুদ্ধ পুঁজিবাদের সময় অসংখ্য কোম্পানি ছিল। কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পণ্যের মান বাড়ানোর চেষ্টা করতো এবং দাম কমানোর চেষ্টা করতো। এতে লাভ হতো ভোক্তার। কিন্তু অধিক মুনাফার জন্য ও অনিশ্চয়তা থেকে কোম্পানিগুলো একচেটিয়া কারবারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। একচেটিয়াত্ব দামকে পড়তে দেয়না। এভাবে পৃথিবীর বাজারে ৩০০টি একচেটিয়া সংস্থার দখলে পৃথিবীর মোট সম্পদের ২৫ শতাংশ; এরা নিয়ন্ত্রণ করে মোট বিনিয়োগকৃত বিদেশী পুঁজির ৭৫ শতাংশ (মুখার্জি, ২০০২: ১১)। অবশ্য ব্যাপারটাকে মনোপলি না বলে অলিগোপলি বা কয়েকটি কোম্পানির একচেটিয়াত্ব বলতে হবে। একুইজিশন ও মার্জার বর্তমান পুঁজিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ওষুধ কোম্পানি, ইন্স্যুরেন্স ও ব্যাংক, তথ্যপ্রযুক্তি ও মিডিয়া প্রভৃতি নানা কোম্পানির মধ্যে মার্জার ঘটে চলেছে। কখনও ‘বোয়াল’ কোম্পানি ‘পুঁটি’ কোম্পানিকে গিলে খাচ্ছে; কখনো দুই বোয়াল আরেক বৃহৎ বোয়াল-এ রূপান্তরিত হচ্ছে -- এও অধিক মুনাফার জন্যই।
বিশ্বয়ান কার্যকর করার দায়িত্ব নিয়ে মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিজেরাই একেকটি মেগা কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। আর তথ্য যখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন তথ্যমাধ্যমগুলোর রমরমা অবস্থাই হবার কথা। তাই বর্তমান পুঁজিবাদের সব লক্ষণই মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

বেন বাগডিকিয়ান ১৯৮৩ সালে ‘মিডিয়া মনোপলি’ নামে একটি বই লেখেন। সেখানে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে সামনের দিনগুলোতে মিডিয়া সেক্টরে মনোপলি চরম আকার ধারণ করবে। তার ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলেছিল। বাগডিকিয়ানের ভাষায়:
১৯৮২ সালে আমি যখন আমার বই ‘মিডিয়া মনোপলি’-র জন্য গবেষণা সমাপ্ত করি তখন ৫০টি কর্পোরেশন মিডিয়া ব্যবসার অর্ধেক বা তারও বেশি নিয়ন্ত্রণ করতো। ১৯৮৬ সালের ডিসেম্বরে যখন আমি বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ করছি তখন ৫০ সংখ্যাটি কমে ২৯-এ এসে দাঁড়ায়। যখন ১৯৯৩ সালে শেষ সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছে তখন এই সংখ্যাটি ২০-এ এসে দাঁড়িয়েছে (বাগডিকিয়ান, http://www.yilmazguney.com)।

আর ম্যাকচেজনি ১৯৯৯ সালে আমাদের জানাচ্ছেন মাত্র নয়টি মিডিয়া জায়ান্ট বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করছে। এগুলো হলো: টাইম ওয়ার্নার, ডিজনি, বার্টেলসম্যান, ভায়াকম, নিউজ কর্প, সনি, টিসিআই, ইউনিভার্সাল, এনবিসি। তিনি কয়েকটি কোম্পানির এই মিডিয়া-বিশ্বকে বলছেন ‘এ স্মল ওয়ার্ল্ড অব বিগ কনগ্লোমারেটস’ (ম্যাকচেজনি, ১৯৯৯খ)। তবে সা¤প্রতিককালে এই তালিকা আরও ছোট হয়ে একেবারে ছয়-এ এসে দাঁড়িয়েছে: ডিজনি, নিউজ কর্প, বার্টেলসম্যান, ভায়াকম, ভিভেন্দি-ইউনিভার্সাল, এওএল-টাইমওয়ার্নার।

এক টাইমওয়ার্নারের ১৯৯৭ সালে মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। ১৯৮৯ সালে টাইম ও ওয়ার্নার কমিউনিকেশনস্-এর এক মার্জারের ফলে টাইমওয়ার্নারের আবির্ভাব হয়। এই টাইমওয়ার্নারের সঙ্গে আবার ২০০০ সালে আমেরিকান অনলাইনের (অঙখ) আরেক মার্জার ইতিহাসের সর্ববৃহৎ মার্জারের রেকর্ড সৃষ্টি করে। কারণ এওএল ইতোমধ্যেই আমেরিকার বৃহত্তম ইন্টারনেট কোম্পানি ছিল, ইউরোপেও যার বিরাট বাজার ছিল। এদিকে বৃহৎ হার্ডওয়্যার কোম্পানি হেউলেট প্যাকার্ডের সঙ্গে মার্জার হয় কমপ্যাক-এর। এভাবে মিডিয়া ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মার্জার চলতে থাকে। ফ্রান্সের মিডিয়া-কোম্পানি ভিভেন্দি কিনে নিয়েছে আমেরিকার ইউনিভার্সালকে। ২০০৭ সালে থমসন কিনে নিয়েছে রয়টার্সকে, গুগল কিনেছে ডাবল ক্লিককে, ইয়াহু কিনেছে রাইটমিডিয়াকে। ২০০৯ সালের সর্ববৃহৎ মার্জার ছিল কমকাস্ট ও এনবিসি-ইউনিভার্সাল-এর। ১৩.৭৫ বিলিয়ন ডলারের মাধ্যমে কমকাস্ট ৫১% মালিকানা নিশ্চিত করেছে। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মার্জার ঘটেছে ২০০৭ সালে। ২০০৭ সালে ৮০৩টি মিডিয়া-মার্জার ঘটে সনাতনী ও নয়া মিডিয়া মিলে যারা আর্থিক মূল্য ছিল ১৫৪ বিলিয়ন ডলার। প্রথম শ্রেণীর মিডিয়ার মধ্যকার মার্জার মূলত আমেরিকা ও ইউরোপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু মাঝারি আকারের মিডিয়ার মধ্যেও মার্জার ঘটে চলেছে যার বিস্তৃতি আমেরিকা-ইউরোপ ছাড়িয়ে এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই ধরনের মার্জার কেন ঘটছে? বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক অস্থির প্রতিযোগিতা চলছে। আগেই বলা হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দির বিশুদ্ধ পুঁজিবাদের সময় অর্থনীতির এরকম কেন্দ্রীভবন ছিলনা। বহু কোম্পানির মধ্যে একটা সমপর্যায়ের প্রতিযোগিতা ছিল। এই প্রতিযোগিতায় লাভ হতো ভোক্তার। কিন্তু এখনকার অসম প্রতিযোগিতার সময়ে ছোট কোম্পানিগুলোর টিকে থাকাই দায়। তাই বড়োগুলো ছোটগুলোকে একুইজিশনের প্রস্তাব করলে তাদের সাড়া না দিয়ে উপায় থাকেনা। কারণ অসম প্রতিযোগিতায় তারা এমনিতেই বিলীন হয়ে যেত। আর সমপর্যায়ের মার্জারের অনেকগুলো কারণের একটি হলো স্টক মার্কেটে আকর্ষণ সৃষ্টি করা। আর বিদ্যমান সনাতন মিডিয়াগুলো, ডিজিটাল সময়ে নিজেদের গ্ল্যামার বাড়াতেও ছোট নয়া-মাধ্যমকে কিনে নিচ্ছে।
আশির দশকের শেষভাগ থেকে এবং নব্বই দশকব্যাপী মিডিয়ার মাধ্যমের ব্যাপক বেসরকারিকরণের ফল হয়েছে এই, মিডিয়ায় সংবাদের পরিমাণ কমে গেছে এবং হালকা বিনোদনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এবং এইসব বিনোদন-অনুষ্ঠান তৈরিতে খরচ কম কিন্তু আয় বেশি -- বিজ্ঞাপন এই অংশেই বেশি আসে (বাগডিকিয়ান, http://www.yilmazguney.com)। বাণিজ্যিক টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর ক্ষেত্রে তাই রাষ্ট্রীয় উন্নয়নমূলক কোনো অনুষ্ঠান দেখা যায় না। তারা কেবল মুনাফাই বোঝে, জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই।

আর বৈশ্বিক মিডিয়ার ক্রমাগত মার্জার ও কেন্দ্রীভবনের ফলে গণমাধ্যমগুলো থেকে যে-বিভিন্ন কণ্ঠস্বর শোনা যেতো -- গণমাধ্যমের সেই বৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে, গেছে। একসময় বিভিন্ন ধরনের মিডিয়ার অস্তিত্ব ছিল -- ছোট পত্রিকা-বড়ো পত্রিকা, শ্রমিকদের পত্রিকা-রাজনীতিবিদদের পত্রিকা -- তাদের পরিবেশিত বার্তা, রাজনৈতিক আদর্শ নানাধর্মী ছিল। কিন্তু এখন সেই বৈচিত্র্য আর খুঁজে পাওয়া যায়না। বৈশ্বিক মিডিয়ার ভূমিকা তাই দাঁড়িয়েছে বাজারের পক্ষে কাজ করা, কর্পোরেট কালচার সরবরাহ করা, ভোক্তাসংস্কৃতি উপহার দেয়া, হালকা বিনোদনে অডিয়েন্সকে বুঁদ করে রাখা, বিজ্ঞাপনের জোয়ারে ভাসিয়ে দেয়া, সর্বোপরি সমাজে বিদ্যমান প্রকৃত সমস্যা ও বৈষম্য থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে ভিন্ন কিছু নিয়ে ব্যস্ত রাখা। বৃহৎ দানবদের পরিবেশিত এই মাধ্যম-সংস্কৃতি প্রান্তিক দেশের মিডিয়াগুলোও অকাতরে গ্রহণ করছে। ফলে আমরা বৈচিত্র্যহীন, অগভীর, একরৈখিক এক মিডিওলজির (মিডিয়ার ইডিওলজি) মধ্যে বসবাস করছি।

তথ্যসূত্র

ম্যাকচেজনি, রবার্ট ডব্লিউ (১৯৯৯ক), Global Media, Neoliberalism, and Imperialism, http://www.monthlyreview.org/301rwm.htm
ম্যাকচেজনি, রবার্ট ডব্লিউ (১৯৯৯খ), The New Global Media, Click This Link
মুখার্জি, মানব (২০০২), ‘তথ্যপ্রযুক্তি, পুঁজিবাদ এবং ভবিষ্যৎ’, প্রসঙ্গ: তথ্যপ্রযুক্তি, মানব মুখার্জি ও অন্যান্য সম্পাদিত, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, কলকাতা।
চমস্কি, নোম, http://www.corporatewatch.com.
বাগডিকিয়ান, বেন (১৯৯৭), Click This Link
শিলার, হার্বার্ট আই (১৯৯৭), http://www.yilmazguney.com/media/writers/schiller/interview.htm

চিত্র: ছয়টি মিডিয়া দানবের বৃত্তান্তসংক্ষেপ (http://www.lovearth.net/mediamoguls.jpg )

প্রথম প্রকাশ: খালেদ মুহিউদ্দিন সম্পাদিত 'মিডিয়াওয়াচ' (Click This Link)।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ রাত ১:১৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×