somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প: অনুভূতি

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানুষের অনুভূতি বিশ্লেষন করার জন্য একটি আধুনিক ল্যাবরেটরিতে একজন মানুষকে গিনিপিগ হিসেবে ধরে আনা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে নানারকম পরীক্ষা নিরিক্ষার পর মানুষটিকে ছোট্ট একটি ঘরে ঢোকানো হলো। ঘরের প্রায় অর্ধেকজুড়ে বড় একটা টেবিল বসানো। টেবিলের একপাশে দুটো চেয়ারে দুটি রোবট বসে আছে, যদিও তাদের বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। একটা রক্ষী রোবট মানুষটিকে টেবিলের অপরদিকে রাখা একমাত্র চেয়ারে বসিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
প্রথম রোবটটি বলল, স্বাগতম। নাম কি তোমার?
মানুষটি বিরক্তির সাথে বলল, নিরু।
- চমৎকার নাম। তাহলে শুরু করা যাক। আমরা মানুষের অনুভূতি নিয়ে গবেষণা করছি, আর তোমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে আমাদের কাজে সহযোগিতা করার জন্য। তুমি যদি আমাদের কাজে পূর্ণ সহযোগিতা কর তাহলে তোমার কোনো ক্ষতি করা হবে না বরং অনেকগুলো এয়ার বোতলের সাথে তোমার নিজ কমিউনিটিতে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করা হবে। বুঝেছো?
- হুম।
- আমি আবার বলছি...
- আবার বলতে হবে না। এই একই কথা তোমরা অনেকবার বলেছো। কিন্তু বিভিন্নভাবে আমার ওপর বিভিন্ন রকম নির্যাতন করেছো।
- তোমাকে ব্যথা বা কষ্ট দেবার জন্য কোনো কিছু করা হয়নি, যা কিছু করা হয়েছে তা গবেষণার স্বার্থে করা হয়েছে। আমরা তোমার পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করছি।
- এবার আমাকে নিয়ে কী করা হবে? আমাকে কী করতে হবে?
- তোমাকে পুরো বিষয়টা বলছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে মানুষের অনুভুতি নিয়ে গবেষণা করছি। হাসি, কান্নার মত কয়েকটা বিষয় আমাদের সফটওয়্যার ধরতে পারে তবে বিষয়গুলো অনেক জটিল। তোমরা সবসময় একরকম আচরণ কর না। যেমন, আজ যতবার তোমার নাম জানতে চাও হয়েছে ততবার তুমি একই উত্তর দিলেও শব্দের তরংগদৈর্ঘের ভিন্নতা ছিল। আমরা এই ছোটোখাট বিষয়গুলো নিয়েও কাজ করছি। আজকের গবেষণার শেষধাপে তুমি চলে এসেছো। আমরা এখন মৃত্যু নিয়ে আলোচনা করবো। আরো স্পষ্ট করে বললে, আমাদের এ সেশনের আলোচনার বিষয় মৃত্যুযন্ত্রণা।
এই পর্যন্ত বলে রোবটটি থামলো। নিরু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে রোবটটির দিকে তাকিয়ে আছে আর রোবটের বলা কথাগুলো নিয়ে দ্রুতগতিতে ভাবছে। রোবট কখনো মিথ্যা বলে না। কাজেই মৃত্যু যন্ত্রণা পরীক্ষা করার জন্য ওরা নিরুকে মেরে ফেলবে না তো! নিরু বললো, তাহলে কি মৃত্যু যন্ত্রণা গবেষণার জন্য আমাকে মেরে ফেলবে?
- তোমাকে মেরে ফেলা হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। তোমার আগে যারা এসেছিল তাদের মেরে ফেলা হয়েছিল, কিন্তু আমরা পর্যাপ্ত ফলাফল পাইনি। কাজেই তোমার ক্ষেত্রে যতখানি সম্ভব আলোচনার চেষ্টা করা হবে। কাজেই তুমিই বলো, মৃত্যু যন্ত্রণাকে তুমি কিভাবে বর্ণনা করতে চাও?
রোবটের কথায় ভরসা পাবার মতো কিছু ছিল না। তবে নিরুর মধ্যে খানিকটা আশার সঞ্চার হলো, বেঁচে থাকার জন্য চেষ্টা করতেই হবে। কাজেই ধীরেসুস্থে রোবটের সাথে কথা চালিয়ে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে হাতে কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। তবে কোনোভাবেই দূর্বলতা প্রকাশ করা যাবে না। একটু সময় নিয়ে নিরু বললো, মৃত্যু একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মৃত্যুর সঙ্গে জন্মের ঘনিষ্ঠতা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি জীবের ক্ষেত্রে জন্ম এবং মৃত্যু বাধ্যতামূলক। একদল মানুষ বিশ্বাস করে, জন্ম-মৃত্যু নির্ধারণ করে সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কিত ধারণায় নানারকম মতামত থাকলেও সকল জীবের জন্ম-মৃত্যু ধ্রুব সত্য। আমার মনে হয়, মানুষের জন্ম যেমন যন্ত্রণাহীন তেমনি মানুষের মৃত্যুও যন্ত্রণাহীন। অর্থাৎ মৃত্যুর বিশেষ কোনো যন্ত্রণা নেই।
-তোমার কথায় যুক্তি আছে।
- আমি একটা উদাহরণ দিতে পারি। যেমন ধর, তোমার পাশের রোবটটিকে কোনো একদিন তৈরি করা হয়েছে, আবার উপযোগিতা শেষ হয়ে গেলে সেটাকে একদিন ধ্বংস করে ফেলা হবে। সেটাই হবে রোবটটির মৃত্যু।
- বিষয়টা কি এতই সহজ?
- হতে পারে।
- আবার এমনও হতে পারে তুমি সত্যকথা বলছো না।
- এখানে সত্য বা মিথ্যার ব্যাপারটা আসছে না। আমি শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত ধারণার কথা বলেছি
- আমরা রোবটরা তোমাদের লেখা বই পুস্তক থেকে তোমাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করি। ডাটাবেজ অনুযায়ী তোমার কথা গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না।
- হতে পারে, কিন্তু তোমরা যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করছো, অর্থাৎ মানুষের অনুভূতি, একে কখনো কোনো সূত্র বা নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, তোমরা অনেকদূর পর্যন্ত এগিয়েছো। আর মৃত্যু যন্ত্রণা সম্পর্কে গবেষণার এপর্যায়ে এসে তোমাদের জেনে রাখা উচিত যে, মৃত্যু যন্ত্রণা বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। বরং মৃত্যু সম্পর্কে মানুষের মনে একরকম ভীতি কাজ করে। কারণ প্রতিটি মানুষই বেঁচে থাকতে চায়।আর মৃত্যু মানে শুধু যে শরীরের সাথে আত্মার সম্পর্ক ছেদ হয়ে যায় তা নয় বরং মানুষের বাস্তব জীবনেরও সমাপ্তি হয়ে যায়। মৃত্যুর পরে আত্মার অস্তিত্ব থাকে কি না তা এখনো জানা যায়নি এবং কখনো জানা সম্ভব হবে না।কাজেই যখনই মৃত্যুর প্রসঙ্গ আসে তখনি মানুষের মনে এক ধরনের ভীতিকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়, যার সঙ্গে মৃত্যু যন্ত্রণার কোনো সম্পর্ক নেই। আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো যে, একটা মানুষের মৃত্যুর সাথে সাথে এজগতের সাথে তার সকল সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, কাজেই চাইলেও মৃত ব্যক্তির সাথে কখনো যোগাযোগ করা সম্ভব হবে না এবং মৃত্যুমুহূর্তের তার অনুভূতি জানা যাবে না। কাজেই তোমরা যতজন মানুষ নিয়ে গবেষণা করেছো তাদের সকলেই মারা গেছে কিন্তু তোমরা তাদের থেকে কোনো তথ্য পাওনি, তাই তো?
- হ্যাঁ। এবার তোমার কথা কিছুটা গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে।
- আমি তোমাকে একটি সহজ বিষয় বলি। অনুভূতি বিষয়টি এতটাই জটিল যে, তোমার পাশের রোবটটির মৃত্যু হলে তার অনুভূতি একরকম হবে আবার তোমার হবে আরেক রকম।
- রোবটদের অনুভূতি নেই।
- আমি জানি অনুভূতি নেই। কিন্তু তবুও একথা বললাম যেন তুমি বুঝতে পারো যে, প্রত্যেকের অনুভূতি নিজেকেই উপলব্ধি করতে হয়। আমি মানছি তোমাদের অনুভূতি নেই, কিন্তু তবুও একটা চেষ্টা করা যেতে পারে। তোমার পাশের রোবটটির পাওয়ার বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে দেখতে পারো।একবার পাওয়ার কাটের জন্য বন্ধ করার কিছুক্ষণ পরে আবার চালু করে দেখো, তার স্বাভাবিক অবস্থার কী পরিবর্তন হচ্ছে। যদি দেখো বন্ধ করা আর চালু করার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়নি তাহলে আমার কথা তোমাদের মেনে নিতে হবে যে, মৃত্যু যন্ত্রণা বলে আসলে কিছু নেই।
নিরুর কথায় রোবটটি কয়েক মুহূর্ত সময় নিল। সম্ভবত সেন্ট্রাল কমিটির থেকে কোনো সিগনাল পাবার জন্য অপেক্ষা করলো। তারপর বললো, এসো তাহলে কাজটা করে দেখা যাক।
নিরু যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। মনে মনে ভাবলো, যাক রোবট তাহলে ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছে, এখন ফাঁদটাকে আরেকটু শক্ত পোক্ত করতে হবে, সম্ভব হলে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে হাতে নিতে হবে।
প্রথম রোবটটি খুব দৃঢ়তার সাথে দ্বিতীয় রোবটটিকে শাটডাউন করতে যাচ্ছে যেন কাজটা খুবই সহজ একটা বিষয়, নিরুর তখন মনে হলো, একজন মানুষ কিন্তু এত সহজভাবে আরেকজন মানুষকে শাটডাউন করতে মানে মেরে ফেলতে পারবে না। আর এখানে মানুষ আর রোবটের মধ্যে পার্থক্যটা অসীম। নিরু বললো, তুমি কি মনে করো, এই রোবটটি শাটডাউন আর রিস্টার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়কে সঠিকভাবে বুঝতে পারবে? এটাকে দেখে তো নিম্ন শ্রেণির রোবট বলেই মনে হচ্ছে।
- এটা মোটেও নিম্ন শ্রেণির রোবট নয়, বরং এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ রোবট। অনেক গবেষণা করে আমরা এধরনের রোবট তৈরি করেছি।
- এর বিশেষত্ব কী?
- সাধারণত সকল রোবটের মধ্যে অপারেটিং সিস্টেমের পাশাপাশি অনেক ইউটিলিটি সফটওয়ার ইন্সটল করা হয়, কিন্তু এই রোবটের ক্ষেত্রে এমন অনেক সফটওয়ার ব্যবহার না করে বিশেষ ধরনের কিছু সফটওয়ার ব্যবহার করা হয়েছে।যেমন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্সের ক্ষেত্রে প্রি-ইন্সটল কিছু তার মধ্যে ছিল না, বরং যা কিছু দেখে বা শোনে বা স্ক্যান করে সেসব থেকে তার আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স ডেভেলপ হয়।
- তারমানে তোমরা একটা জন লক বানিয়ে ফেলেছো!
- জন লক বলতে তুমি কি বোঝাতে চাইছো?
- একজন প্রাচীন অভিজ্ঞতাবাদী দার্শনিক ছিলেন জন লক।তাঁর দর্শন অনুযায়ী, মানুষের মন জন্মের সময় সাদা কাগজের মতো থাকে, সে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে আর অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান আহরণ করতে থাকে। তোমাদের এই রোবটও তো দেখি জন লকের মতো অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করে।
- অনেকটা তাই। শাট ডাউন করার কাজ শেষ। এবার তাহলে রিস্টার্ট করি।
- দু’মিনিট সময় দাও আমাকে, তারপর ওটাকে চালু কর।
- কেন?
- তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই, যা ঐ রোবটের না শোনাই ভাল। তোমাকে যেমনটা বললাম যে, মৃত্যু যন্ত্রণা বলে আসলে কিছু নেই কিন্তু মৃত্যু ভীতি বলে একটা ব্যাপার আছে।রোবট জন লক যখন জেগে উঠবে তখন মৃত্যু যন্ত্রণা সম্পর্কিত আমার তত্ত্ব সত্যতা যাচাই করে দেখবে।এখন তোমাকে আরেকটা কথা বলি, সেটা হলো যখন ওটাকে তুমি শাট ডাউন করতে গেলে তখন কিন্তু সে জানতো যে, কিছুক্ষণ পরে আবার তাকে চালু করা হবে। ব্যাপারটা অনেকটা ঘুমের মতো।মানুষ সারাদিন কাজকর্ম করে ক্লান্ত হয়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে বিশ্রামের জন্য ঘুমিয়ে নেয়।এইক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা সেরকমই ঘটছে।
- তাহলে মৃত্যু যন্ত্রণার মতো ঘটনা এখন ঘটছে না!
-ঠিক তাই। কাজেই আমাদের আরেকটু গভীরে যেতে হবে। চালু করার পর রোবটটিকে এবার ধ্বংস করে দিতে হবে।
-ধ্বংস করে দেবো?
-পুরোপুরি ধ্বংস না।তবে এমনভাবে কিছু ক্ষত সৃষ্টি করতে হবে যেন রোবটটা শাট ডাউন হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে যেন তাকে আবার চালু করা যায়।
-এমনটা কেন করবো?
-কারণটা খুব সহজ।এখন রোবট জন লক ঘুমিয়ে আছে,ঘুমানোর আগে সে জানতো যে তাকে জাগিয়ে তোলা হবে, কিন্তু যদি তাকে আমরা ধ্বংস করার কথা বলে আঘাত করে শাট ডাউন করি তাহলে তার কাছে মৃত্যুর মতো একটা বিষয় হতে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে তাকে মেরামত করে আবার চালু করে মৃত্যু ভীতি সম্পর্কিত তথ্য যাচাই করা যেতে পারে।এবার বলো, তোমার কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র আছে কিনা?
এপ্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে রোবটটা একটা সয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র বের করে টেবিলের ওপর রাখলো। সয়ংক্রিয়া আগ্নেয়াস্ত্র কখনো চোখে দেখেনি নিরু।তবে বিদ্রোহী কমিউনিটির মানুষগুলোর কাছে এগুলো একেবারেরই ডাল ভাত। নিরু বললো, এবার বরং চালু করা যাক জন লককে।
প্রথম রোবটটি দ্বিতীয় রোবটের কন্ট্রোল প্যানেলে কয়েকটা বোতাম চাপ দিয়ে আবার তার চেয়ারে বসে পড়লো। দ্বিতীয় রোবটটির পুরোপুরি চালু হতে খানিকটা সময় লাগলো। প্রথম রোবটটি বললো, তুমি কি জানো তোমাকে আমি শাট ডাউন করেছিলাম।
দ্বিতীয় রোবটটি প্রথমবারের মতো কথা বললো, হ্যাঁ জানি।
-কিভাবে জানো?
-আমার হিষ্ট্রি লগ বুকে এন্ট্রি আছে।
-এছাড়া আর কিছু?
-না।
নিরু বললো, দেখেছো, যা বলেছিলাম তাই ঘটলো।
প্রথম রোবট বললো, মৃত্যু যন্ত্রণা বলে তাহলে কিছু নেই।
- অবশ্যই নেই। যা আছে তা হলো মৃত্যু ভীতি। আর এই রোবট যেহেতু প্রমাণ করলো মৃত্যু যন্ত্রণা বলে কিছু নেই, তাহলে এবার আমাদের উচিত জন লককে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দেয়া।সরাসরি মৃত্যু। কি বলো?
- এছাড়া তো আর কোনো সমাধান এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই।
- তাহলে এবার তোমার অদ্ভূত অস্ত্রটা হাতে নাও আর জন লককে মেরে ফেলো।
দ্বিতীয় রোবট হঠাৎ বললো,আমাকে মারবে কেন? পরীক্ষা তো হচ্ছে মানুষের ওপর, রোবটের ওপর নয়।
দ্বিতীয় রোবটের এযুক্তিতে প্রথম রোবট খানিকটা চিন্তিত। সময় নিচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর দিচ্ছে না। হঠাৎ নিরুর মনে হলো, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, যা করার এখনি করতে হবে।নিরু বললো, তুমি খুব যৌক্তিক একটি প্রশ্ন করেছো আর এর উত্তরটিও খুব সহজ।এ পর্যন্ত তোমরা যতজন মানুষকে নিয়ে কাজ করেছো তাদের প্রত্যেকেই মারা গেছে আর তোমরা মৃত মানুষটির কাছে কোনো তথ্য পাওনি। কাজেই এখন আমাকে মেরে ফেললেও একই ঘটনা ঘটবে।আর তাছাড়া তুমি একটি বিশেষ শ্রেণির রোবট, মানুষের অনেকটা কাছাকাছি। কাজেই তোমাকে মেরে ফেলা হলে হয়তো আবার জীবিত করা যাবে না কিন্তু তোমার হার্ডওয়ার বিশ্লেষণ করে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
নিরুর অদ্ভুত যুক্তিতে দুটো রোবটই কোনো কথা বলছে না। নিরু প্রথম রোবটটির দিকে তাকিয়ে বললো, আমার কথা কি গ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে না?
- হ্যাঁ, অনেকখানি গ্রহণযোগ্য।
- তাহলে আর সময় নষ্ট করে লাভ কি? তোমার অস্ত্র তুলে নাও হাতে আর জন লককে ধ্বংস করে দাও চিরদিনের জন্য।
প্রথম রোবটটি এবার সময় নিল না। টেবিল থেকে অস্ত্র তুলে নিয়ে সরাসরি দ্বিতীয় রোবটের দিকে তাক করলো। নিরু বললো, এক মিনিট দাঁড়াও। সাধারণত মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তার হৃদপিন্ড কিংবা মস্তিস্ক বরাবর গুলি করা হয়। কাজেই আমার মনে হয়,রোবটটির মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তুমি একই সঙ্গে প্রসেসর, হার্ডডিস্ক আর পাওয়ার সাপ্লাই বরাবর গুলি করতে পারো।
প্রথম রোবট নিরুর কথায় মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো।গুলি করার পূর্ব মুহূর্তে দ্বিতীয় রোবট বললো,কাজটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না।
প্রথম রোবট তার কথা শুনলো কিনা বোঝা গেল না।মৃদু শব্দে পরপর কয়েকটা গুলি করলো সে।দ্বিতীয় রোবটটির শরীরের কয়েকটি অংশ থেকে ধোঁয়া বের হতে লাগল।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দ্বিতীয় রোবটের শরীর নিশ্চল হয়ে চেয়ারে সেঁটে রইলো।
নিরু অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে ধরে রাখছে।নিরুর মনে হলো, প্রথম রোবটটি হয়তো এখনো ভাবছে দ্বিতীয় রোবটটিকে মেরামত করে চালু করা হলে তার থেকে মৃত্যুভীতি সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যেতে পারে।হাস্যকর একটা ব্যাপার।অনুভূতি বোঝার জন্য মন থাকতে হবে আর মন থাকতে হলে তাকে মানুষ হতে হবে।যাহোক, একটা রোবট গেছে এবার আরেকটার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রথম রোবটটি বললো, ওটাকে তাহলে চালু করে তথ্য সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করি।
- অবশ্যই করবে।তার আগে আমরা আরেকটা কাজ করতে পারি।
- কি কাজ?
- মৃত্যু তো একটা হলো।তুমি নিজ হাতে গুলি করে রোবটটাকে মেরে ফেললে।এটাকে বলে,হত্যা।যদি সে রোবটটাকে তুমি গুলি না করতে বরং সে নিজেই নিজেকে গুলি করতো তাহলে ব্যাপারটাকে আমরা বলতাম আত্মহত্যা।হত্যা আর আত্মহত্যা কিন্তু এক নয়।দুটো ক্ষেত্রে অনুভূতির পার্থক্য হয়।যখন কেউ আত্মহত্যা করে তখন তার মধ্যে মৃত্যুভীতি কাজ করে না বরং অন্যান্য কিছু অনুভূতি কাজ করে যেমন,হতাশা, সম্মানহানী। কাজেই আমি বলতে চাই যে,এখানে আমরা আত্মহত্যার বিষয়টাও পরীক্ষা করে দেখতে পারি। যেহেতু জন লককে চালু করে তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং এতে খানিকটা সময় লাগবে,কাজেই এই মুহূর্তে যদি আত্মহত্যার মতো আরেকটা ঘটনা ঘটে তাহলে এই সময়ে দুটো ফলাফল পাওয়া যাবে। কি বলো?
- কিন্তু ওটাকে চালু না করা হলে তো আর আত্মহত্যা করতে পারবে না!
- আমি জন লকের কথা বলছি না,আমি তোমার কথা বলছি।মানে আমি বলছিলাম যে, চাইলে তুমি এখন আত্মহত্যা করতে পারো,সেক্ষেত্রে তোমাদের দুজনকেই একই সাথে মেরামত করে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
রোবটটি আবারো সময় নিচ্ছে।নিরু বললো,আত্মহত্যা যে করতেই হবে এমন কোনো কথা নয়,তবে কাজটা করলে তোমরা একই সময় দুটো আলাদা আলাদা বিষয়ে তথ্য পেতে পারো এই আরকি।
- ঠিক আছে।তাহলে আত্মহত্যা করতে হলে কি আমার নিজেকে গুলি করতে হবে?
- ঠিক তাই।তুমি বরং তোমার প্রসেসর বরাবর কয়েকটা গুলি করো,তাহলেই কাজ হবে।
রোবটটা তার প্রসেসর বরাবর কয়েকটা গুলি করলো।এক্ষেত্রেও মৃদু শব্দ হলো কিন্তু নিরু বিকট শব্দ করে পাগলের মতো হাসতে লাগলো।

বি.দ্র. এই লেখাটা কিছুদিন আগে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কথা: দাদার কাছে—একজন বাবার কিছু প্রশ্ন

লিখেছেন সুম১৪৩২, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৫



দাদা,
কেমন আছেন? আশা করি খুবই ভালো আছেন। দিন দিন আপনার ভাই–ব্রাদারের সংখ্যা বাড়ছে—ভালো তো থাকারই কথা।
আমি একজন খুবই সাধারণ নাগরিক। ছোটখাটো একটা চাকরি করি, আর নিজের ছেলে–মেয়ে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×