somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প: ধোঁয়াটে শহরে অসহায় মানুষ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




রাস্তার পাশে জটলা জমে গেছে জনা দশেক মানুষের। তারা সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে কিছু একটা দেখছে। কয়েকজন মানুষ আবার মোবাইল ফোনে ভিডিও করছে। দু’এক জন পথচারী হেঁটে যাবার সময় থমকে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। উৎসাহিরা জটলায় যোগ দিচ্ছে, অনুৎসাহিরা যে যার মতো চলে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো তারা আসলে কি দেখছে? না, কোনো সাপুড়ে সাপের খেলা দেখাচ্ছে না, কিংবা কোনো হকার লাউড স্পীকার নিয়ে কোম্পানীর প্রচারের জন্য সত্তর শতাংশ ডিসটাউন্টে কোনো পণ্য বিক্রিও করছে না। তারা মূলতঃ দু’পক্ষের ফ্রি-হ্যান্ড মারামারি দেখছে। একপক্ষে পাঁচজন যুবক, আর অন্যপক্ষে মাত্র একজন যুবক। তারা কে এবং কেন মারামারি করছে জটলার মানুষগুলো সেসব কিছুই জানে না। টেলিভিশনের রেসলিং দেখার দর্শকের মতোই তারা এখানে কেবলি দর্শক। রাস্তার মোড়ে পাঁচজন যুবক মিলেমিশে সমবায়ের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত লম্বা ও শীর্ণকায় একজন যুবককে কেন মারছে তা নিয়ে দর্শকদের জন্য তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এখানে উল্লেখ্য যে, লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটির সঙ্গে পাঁচজনের দলটি খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না। লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটি সম্ভবত মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। পাঁচজনের সবাইকে সে কমবেশি মেরেই চলেছে, যদিও এইমাত্র পেট মোটা জাম্বু এক যুবকের বেকায়দা লাথিতে সে মাটিতে আঁছড়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে বাকী চার জন এসে ক্রমাগত লাথি মারতে থাকলো জুতো পরা পায়ে। ফলাফল হলো, সে ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকলো এবং উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে পারলো না। খানিকবাদে লাথির গতি ও পরিমাণ কমে এলো। লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটি ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে পড়লো। চারজনের মধ্যে থেকে দু’জন তাকে টেনে দাঁড় করালো, আর বাকী দু’জন দু’পাশে ব্যাকআপ সৈনিকের মতো দাঁড়াল। জটলার মানুষগুলোর দৃষ্টি এবার পঞ্চম ব্যক্তির উপর পড়লো। যদিও এতক্ষণ ফ্রি-হ্যান্ড মারামারি চলছিল, হঠাৎই এবার তার হাতে একটি ধাঁরালো চাকু দেখা গেল। কোথা থেকে কিংবা কিভাবে তার হাতে ধাঁরালো একটা চাকু এলো তা দর্শকরা বুঝতে পারলো না। যাই হোক, সে চাকু ডান হাত থেকে বাম হাতে, আবার বাম হাত থেকে ডান হাতে চালান করতে করতে লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটির দিকে এগোতে থাকলো। যুবকটি অনেক কষ্ট করে চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করছে। পুরোপুরি চোখ মেলতে পারলো কি না বোঝা গেল না। পেট মোটা জাম্বু যুবকটি দাঁত বের করে নিঃশব্দে হাসলো একবার। দর্শকদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আশা করেছিল যে, যুবকটির দাঁত নোংরা ও হলুদ হবে। কিন্তু নিয়মিত ব্রাশ করা সাদা দাঁত চকচক করে উঠেছিল মুহূর্তেই। তারপর পেট মোটা জাম্বু যুবকটি ডান হাতে ধরা চাকুটি সজোরে চালিয়ে দিল লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটির পেট বরাবর এবং প্রবল গতিতে চাকুটা চামড়া ভেদ করে ইঞ্চি চারেক ঢুকে গেল ভেতরে। একটানে চাকুটিকে বের করে আনলো পেট মোটা জাম্বু যুবকটি। তারপর দর্শকদের কারো দিকে না তাকিয়ে ওরা পাঁচজন দু’টো মোটর সাইকেলে চড়ে রওয়ানা দিল। কোথায় গেল তা দর্শকদের জানার কথা নয়। অন্যদিকে লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটি পড়ে রইলো রাস্তার ধারে। তার পেট থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে চলেছে আর সে দুর্বল হাতে রক্ত থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। জটলা ততক্ষণে হালকা হতে শুরু করেছে। তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। যেহেতু মানুষ হিসেবে জন্মেছে, সেহেতু পেট চালানোর জন্য হলেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ তো তাদের থাকবেই। আর যাদের কাজ অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ, তারা কেউ কেউ লম্বা-শীর্ণকায় যুবকটি কাছে গেল এবং মোবাইল ক্যামেরা বের করে ছবি তুললো কয়েকটি। তারপর নিজেদের কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। আর যুবকটি রক্তে মাখামাখি হয়ে পড়ে রইলো একাকি যতক্ষণ পর্যন্ত না অনেক দূর হতে সাইরেনের শব্দ ভেসে এলো। সাইরেন বাজিয়ে পুলিশও আসতে পারে, আবার এ্যাম্বুলেন্সও আসতে পারে। যুবকটি জানে না যে, সাইরেন বাজিয়ে আসা মানুষগুলো তাকে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেবে কি না, কারণ তাদেরও তো গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকতে পারে।

ছবি: গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৬
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×