somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: আয়না (প্রথম খন্ড)

১২ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক
কোনোরকম টলতে টলতে মাজেদ মিয়া সিঁড়ি বেয়ে আট তলার ছাদে উঠলো। তারপর কয়েকবার চেষ্টার পর সঠিক চাবিটা বাছাই করে চিলেকোঠার দরজার তালাটা খুললো। বাতি জ্বালিয়ে সোজা চলে গেলো বাথরুমের দিকে। বাথরুমে ঢুকেই হরহর করে বমি করলো এক পেট। নিমিষেই বেসিনটা ভরে গেলো দুর্গন্ধময় রঙ্গিন পঁচা বস্তুতে। চোখ তুলে আয়নায় নিজেকে একবার দেখলো মাজেদ। আজ মদটা একটু বেশিই টেনেছে, দেশি মদ। চোখ দু’টো লাল হয়ে গেছে। বেসিনের কলটা ছেড়ে দিলো। চোখে মুখে একটু পানি দেয়া খুবই জরুরি। ইতিমধ্যে বেসিনে জমে থাকা ময়লাগুলো চলে যেতে শুরু করেছে। কল থেকে ঝরতে থাকা পানির ধারা থেকে দু’হাতে পানি ধরার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। বারবার হাতের ফাঁকা অংশ দিয়ে পানি পড়ে যাচ্ছে। মাজেদ ভাবছে, আজ এত বেশি মদ খাওয়াটা ঠিক হয়নি। কিন্তু মনটা খুব খারাপ ছিল। বেশি কম ভাবার সময় ছিল না।

মাজেদ মিয়া একটা কনস্ট্রাকশন সাইটে মেকানিকাল কাজ করে। পড়াশোনা খুব একটা করা হয়নি। স্টার মার্ক নিয়ে হায়ার ফার্স্ট ডিভিশনে ম্যাট্রিক পাশের পর ডিপ্লোমা ভর্তি হয়েছিল কিন্তু শেষ করতে পারেনি। ছোটবেলায় বাবা-মা হারানো মাজেদ বড় হয়েছে মামার বাড়িতে। মামার টানাটানির সংসারে ম্যাট্রিক পাশ করাটাই বড় ব্যাপার ছিল। ডিপ্লোমা ফার্স্ট ইয়ার শেষ করার আগেই নেশার জগতে ঢুকে গিয়েছিল, এরপর আর পড়াশোনা এগোয়নি। আরো অনেকদিন পরে এক ইঞ্জিনিয়ারের সাথে তার পরিচয় হয়, আর তিনিই তাকে নেশার জগত থেকে বের করে আনার মহৎ উদ্দ্যোগ নেন। তবে এখনো মাঝে মাঝে মন উচাটন হলে একটু আকটু নেশা করে মাজেদ।

চোখে মুখে পানি দিতে দিতে হঠাৎ মাজেদের মনে হলো আয়নায় তার প্রতিবিম্বটা যেন একটু নড়ে উঠলো। ব্যাপারটাকে সবিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে কুলকুচি করতে থাকলো। খানিকপরে আবারো তার মনে হলো আয়নায় তার প্রতিবিম্বটা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ওর মনে হলো, মদের মাত্রা খুব বেশি হয়ে গেছে আজ, তাই উল্টো পাল্টা দেখছে। আয়নার ভেতরে তো অন্য কোনো মানুষ থাকার কোনো কারণ নেই। আয়নায় তো তারই প্রতিবিম্ব।

কিন্তু আয়নার প্রতিবিম্বটা তার দিকে চেয়ে হাসতেই থাকলো। মাজেদ নিজেই নিজেকে বললো, আমি ভুল দেখছি, আমি ভুল দেখছি। এতো বেশি নেশা করা ঠিক হয়নি।
হঠাৎ আয়নার প্রতিবিম্বটা বলে উঠলো, না মাজেদ, তুমি ভুল দেখছো না। তুমি আমাকে দেখছো।
প্রতিবিম্বের পাল্টা উত্তরে মাজেদ খুব মজা পেলো। এটা যে স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়, হয়তো মাতাল থাকার কারণে মাজেদ সেটা বুঝতে পারলো না। সে খানিকটা উত্তেজিত হয়ে উঠলো। বললো, আমি যদি ভুল না দেখি তাহলে তুমি কে?
- আমিও মাজেদ।
- হা হা হা। আমার প্রতিবিম্ব আমার সাথে কথা বলে! মাতলামির আর জায়গা পাও না, তাই না?
- তুমি মদ গিলেছো মাজেদ, আমি না। আমি খুব সুস্থ স্বাভাবিক মস্তিস্কের তোমার প্রতিবিম্ব।
- ও তাই নাকি? তাহলে বলো তো আমি আজ সকালে কি খেয়েছি।
- তুমি আজ সকালে কিছু খাওনি। ঘুম থেকে দেরি করে ওঠার কারণে তুমি সকালে কিছু খাবার সময় পাওনি, সরাসরি কাজে চলে গেছো।
- হয়েছে হয়েছে।
- এখন তুমি আমাকে বলো, তুমি কেনো এত বেশি মদ খেয়েছো?
হঠাৎ মাজেদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এই প্রশ্নটার উত্তর সে দিতে চায় না। আজ ঘরে ফেরার আগে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে মদ খাবে। তাই মদের বোতলও একটা কিনে ফিরছিল। কিন্তু একটু আগে একটা খুবই খারাপ ঘটনা দেখেছে সে। তারপর আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি। পুরো বোতল মদ গলাধঃকরণ করে ঘরে ফিরেছে।
মাজেদ কোনো কথা বলছে না দেখে প্রতিবিম্ব বললো, আমি জানি কেনো তোমার মন খারাপ। কিন্তু তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই।
- আমি পারবো না।
- তোমাকে বলতেই হবে।
- না, আমি বলতে পারবো না।
- কেনো পারবে না? তুমি কি চাইলে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারতে না?
- আমি জানি না।
- তুমি জানো। তোমার সামনে একটা মেয়েকে জোড় করে ধরে নিয়ে গেলো ওরা, আর তুমি কিছুই বললে না। কাপুরুষের মতো পালিয়ে এসে মদ গিললে!
- ওরা অনেকজন ছিল।
- মোটেও অনেকজন ছিল না। মাত্র চারটা পুচকে ছেলে ছিল। মেয়েটার চিৎকার তোমার কানে আসেনি?
- না।
- মিথ্যে বলবে না, মেয়েটা সাহায্য চেয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে ক্রমাগত চিৎকার করছিল। বলছিল, টাকা পয়সা মোবাইল নিয়ে যান, আমাকে ছেড়ে দেন। আমার জীবনটা নষ্ট করবেন না। আর তুমি শুনতে পেয়েও মাথা নিচু করে ছিলে।
- কিন্তু মেয়েটাকে তো আমি চিনি না।
- তাতে সমস্যাটা কোথায়? অচেনা কোনো মেয়েকে তোমার সামনে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করলে, ধর্ষণ করলে তুমি কি সাহায্য করতে পারো না? আর তাছাড়া মেয়েটা তোমার পুরোপুরি অপরিচিত নয়। তুমি মেয়েটাকে আগেও দেখেছো। কি দেখোনি?
- হু দেখেছি। শপিং মলে সেলসগার্লের কাজ করে।
- তাহলে তুমি পালিয়ে এলে কেনো?
- আমি জানি না।
- মেয়েটা যদি তোমার নিকট আত্মীয় হতো, তাহলে তুমি কি পালিয়ে আসতে পারতে?
মাজেদ কোনো কথা বললো না। সে জানে কাজটা মোটেও ঠিক হয়নি। পুচকে ছেলেগুলোকে দু’টো ধমক দিলেই কাজ হতো। ছেলেগুলোকে সে চেনে। পাড়ার মোড়ে নিয়মিত আড্ডা দেয় আর গাঁজা টানে। ওরা মাজেদকে দেখেনি, দেখলে হয়তো নিজেরাই পালিয়ে যেতো।
- কি, কথা বলছো না কেনো?
- কি বলবো? তোমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে না আর। তুমি যাও।
- যাও বললেই তো আর আমি চলে যেতে পারি না। আমি তো তোমারই প্রতিবিম্ব। আমাকে তুমি কখনোই তাড়িয়ে দিতে পারবে না। তবে আমি বলছি, এখনো সময় আছে, তুমি চাইলে মেয়েটাকে বাঁচাতে পারো।
- না এখন আর সময় নেই।
- অবশ্যই সময় আছে। ছেলেগুলো মেয়েটাকে কোথায় ধরে নিয়ে গেছে তা কি বুঝতে পারছো?
- হুম। পশ্চিমদিকের পরিত্যক্ত দোতলা বাড়িটার দিকে গেছে ওরা।
- তাহলে এখনি দৌড় দাও। বাঁচাও তোমার বিবেককে, বাঁচাও মেয়েটাকে। এখনো হয়তো মেয়েটার খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। হয়তো বেঁচে যেতে পারবে মেয়েটা।
হঠাৎ মাজেদের মাথাটা খুব পরিস্কার হয়ে গেলো। নেশা কেটে যাচ্ছে। মনে হলো, এতক্ষণ একটা স্বপ্ন দেখেছে, অথবা মাতাল অবস্থায় নিজেই নিজের সাথে উল্টো পাল্টা কথা বলেছে। কিন্তু কথাগুলো উল্টো-পাল্টা হলেও বাস্তব সত্য। মেয়েটিকে বাঁচানোর একটা তাগিদ অনুভব করলো সে। ছেলেগুলো পশ্চিমের ঐ পরিত্যক্ত বাড়িটার দিকে গেছে।

আর দেরি না করে এক দৌড়ে আটতলা নামলো মাজেদ। দ্রুতগতিতে পা চালিয়ে পাড়ার মোড়ের দিকে আসতেই একটা নাইট গার্ডকে দেখতে পেলো। কাছে যেতেই দু’এক কথায় ঘটনার গুরুত্ব বুঝিয়ে তাকে নিয়ে চললো পশ্চিমের দিকে।

পরিত্যক্ত বাড়িটার কাছে যেতেই দোতলা থেকে ছেলেগুলোর গোলমালের আওয়াজ পেলো। ওরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে কিছু একটা নিয়ে। নাইট গার্ড তার শক্তিশালী টর্চ লাইট জ্বেলে ধরলো দোতলা বাড়িটার দিকে। চিৎকার করে বললো, কারা ঐখানে? কি করেন?
ছেলেগুলো ‘পালা পালা’ চিৎকার করতে করতে পালিয়ে গেলো। মাজেদরা তাদের ধরার চেষ্টা করলো না। ভাঙ্গা সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উঠে গেলো দোতলায়। পরিত্যক্ত বাড়িটায় প্রচুর ময়লা আবর্জনা জমে গেছে। দরজা-জানালা ভাঙ্গা অথবা শক্তভাবে সেঁটে বসেছে দেয়ালে। শক্তিশালী টর্চ লাইটের আলো পড়লো মেয়েটার ওপর। সাথে সাথে লাইটের আলো নিভিয়ে দিল নাইট গার্ড। এরকম দৃশ্য বেশিক্ষণ কিংবা বার বার দেখা যায় না। মেয়েটা জ্ঞান হারিয়েছে অনেক আগেই। কাপড় চোপড় এলোমেলো, ছেঁড়া। মাথার সামনের দিকে আঘাতের ফলে ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল লাল হয়ে গেছে। কামিজের ছেঁড়া অংশে কাত হয়ে লেগে থাকা একটা নেইমপ্লেটে নাম দেখা যাচ্ছে ‘রেবা’।

মেয়েটিকে হাসপাতালে নেবার তীব্র একটা তাগিদ অনুভব করলো মাজেদ, যদিও তার পা দু’টো বরফের মতো ভারি হয়ে গেছে।


দুই
সেই রাতে নাইট গার্ডের সহযোগিতায় রেবাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয় মাজেদ। যদিও পুলিশ কেস হবার কথা ছিল কিন্তু ইমার্জেন্সি বিভাগের মহিলা ডাক্তারের সহায়তায় দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পেরেছিল। এরপর তিনদিন মাজেদ রেবার কোন খোঁজ নিতে যায়নি। চতুর্থদিন যখন সে হাসপাতালে যায়, ততদিনে রেবার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে খানিকটা। টুকটাক কথাবার্তা বলেছে তবে মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত ছিল। হঠাৎ করেই কাঁদতে শুরু করতো, মানুষ দেখলেই ভয় পেতো, দু’হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ঘরের কোণে জড়সড় হয়ে বসে থাকতো। ডাক্তারের ভাষ্য মতে, শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি যে মানসিক নির্যাতন হয়েছে তা থেকে বের হতে আরো সময় লাগবে। দূর থেকে তাকে দেখেই চলে এসেছিল মাজেদ। রেবা যে সুপারমলে চাকরি করতো সেখানে খোঁজ নিয়ে তার পরিবারের সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। কয়েকজন মেয়ের সাথে সে একটি মেসে থাকতো। তাদের সাথে যোগাযোগ করে মাজেদ জানতে পারে যে, রেবার মা আর ছোট ভাই গ্রামে থাকে। তবে এই দূর্ঘটনার খবর তাদের জানাতে নিষেধ করে মেয়েগুলো।

আরো দিন পনের পরে রেবাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়। তখন একটি মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীরা রেবাকে তাদের সাথে নিয়ে যায়। তারা রেবার শারীরিক চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক চিকিৎসাও শুরু করে। এরপর ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে রেবা। মানুষ দেখে আর আগের মতো ভয় পায় না, মাঝে মাঝে হাসতে শুরু করেছে। এমনি একটা দিনে রেবার সাথে দেখা করতে যায় মাজেদ। মানবাধিকার সংগঠনটির কিছু ফর্মালিটি পূরণ করার পর রেবার দেখা পায় সে। বড় একটি স্টিলের ফ্রেমের দোলনায় চুপচাপ বসে ছিল রেবা। মাজেদ কাছে গিয়ে বললো, রেবা কেমন আছেন?
মাজেদকে রেবা চিনতে পারে না। চিনতে পারার কারণও নেই। সে শুধু জানে দূর্ঘটনার রাতে কোন দু’জন ভালো মানুষ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিল।
মাজেদ বললো, আমাকে চিনতে পারছেন না?
রেবা না সূচক মাথা নাড়ে।
- তাই তো, চিনতে পারার তো কোনো কারণ নেই। আমার নাম মাজেদ। আমিই সেই রাতে আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। আপনি কেমন আছেন?
সেই রাতের কথা মনে হতেই রেবার চোখ মুখে কালো ছায়া নেমে আসে। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। চোখের কোণে পানি জমা হয়। নিজেকে সামলে শুধু কোনোভাবে বললো, ভালো।
- আপনার মেসের বান্ধবীরা দেখতে এসেছিল আপনাকে?
রেবা না সূচক মাথা নাড়ে।
- আপনার দেশের বাড়িতে মা আর ছোট ভাই থাকে। ওদের জন্য গত মাসে কিছু টাকা পাঠিয়েছি। আপনার বান্ধবীদের কাছে ঠিকানা পেয়েছিলাম।
রেবা কিছু না বলে তাকিয়ে থাকে মানুষটার দিকে।
- চিন্তা করবেন না, আপনি খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে আবার কাজে ফিরবেন। তখন আমার টাকাটা শোধ করে দেবেন। আপনাকে ধার দিয়েছি। এখন আমি যাই। নিয়মিত অষুধ খাবেন। আমার ঠিকানা দিয়ে গেলাম অফিসে, কোনো প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করবেন। ঠিক আছে?
রেবা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।
- আমি তাহলে আসি।
রেবা এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে মাজেদের দিকে। মাজেদ উল্টা ঘুরে হাঁটতে শুরু করে। হঠাৎ পেছন থেকে রেবা ডাকে, শুনুন।
মাজেদ ফিরে আসে। মৃদু হেসে বললো, জ্বী।
- আমাকে মরতে দিলেন না কেনো?
মাজেদ বুঝতে পারে না রেবার প্রশ্ন। সে তাকিয়ে থাকে রেবার দিকে, হয়তো আরো কিছু শোনার অপেক্ষায়।
- কি কষ্ট, কি যন্ত্রণা আমার আপনি জানেন? ওরা তো আমাকে নষ্ট করে মেরেই ফেলতো। অনেক মেরেছিল আমাকে। ডাক্তার বলেছে, আর কিছুক্ষণ রক্তক্ষরণ হলে আমি মারা যেতাম। আপনি কেনো বাঁচালেন? আমি ধর্ষিতা। আমার কষ্ট কেউ বুঝবে না। কেউ আমাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবে না। এরকম একটা জীবন টেনে নিয়ে যাওয়ার থেকে মরে যাওয়াই ভালো ছিল। আপনি কেনো আমাকে বাঁচালেন?
মাজেদ এই প্রশ্নটার কোনো উত্তর দিতে পারলো না। শুধু বললো, আপনাকে বাঁচতে হবে। আপনি আর দশটা মেয়ের মতো নন, আপনার মা-ভাই আপনার দিকে চেয়ে আছে। তাদের জন্য হলেও বাঁচতে হবে। আর আমি আপনাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম, কোনো ক্ষতি করতে চাইনি আপনার। সম্ভব হলে আমাকে মাফ করে দেবেন।

এরপর কথোপকথন আর বেশিদূর এগোয়নি। তবে রাতে মাজেদ প্রচুর মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে। আজও তার মন খুব খারাপ। মেয়েটি তো ভুল কিছু বলেনি। এরকম ধর্ষিতা একটি মেয়েকে তো কেউ গ্রহণ করতে চাইবে না। সবাই মেয়েটিকে খারাপ চোখে দেখবে।
মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় ঘরে ফিরতেই শুরু হলো লোডশেডিং। হাতড়ে হাতড়ে একটা বাচ্চা মোমবাতি পেয়ে যায়। পকেট থেকে দিয়াশলাই বের করে মোমবাতি জ্বাললে ঘর সামান্য আলোকিত হয়। সেই আলোতেই কাপড় ছাড়ে মাজেদ, তারপর মোমবাতি হাতে বাথরুমে যায়। মোমবাতির আলোতে স্পষ্ট দেখতে পেলো, আয়নার প্রতিবিম্বটা তার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
মাজেদ বললো, যাও তো এখন। যন্ত্রণা করবে না। মদ খেলেই তুমি যন্ত্রণা করতে আসো।
প্রতিবিম্ব বললো, আমি তোমাকে যন্ত্রণা করতে চাই না। তবে তোমাকে ছেড়ে যেতেও তো পারি না।
- এখন কি চাও?
- রেবাকে দেখতে গিয়েছিলে। তা কি দেখলে?
- হায় রে আমার প্রতিবিম্ব! তুমি তো জানোই সব কিছু তারপরেও প্রশ্ন করো কেনো!
- তুমি কি মেয়েটার এই পরিণতির জন্য নিজেকে দোষী ভাবছো?
- আমি কেনো নিজেকে দোষী ভাববো? আমি তো তাকে বাঁচালাম। অথচ সে কি না আমারি দোষ দিল! আমার কোনো দোষ নেই। দোষ যদি কিছু থেকেও থাকে তাহলে সেটা তোমার। তুমি যদি সেদিন আমাকে উল্টো পাল্টা না বলতে তাহলে আমি কি যেতাম? সেদিন মদ খেয়ে এসেছিলাম, বমি করলাম আর তারপর তুমি ঝামেলা করলে!
- বলছো তোমার কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার আমার?
- হ্যাঁ তোমার। তুমি কেনো বারবার আমাকে এসব প্রশ্ন করো? কেনো সব সময় আমার ভুল খুঁজে বেড়াও? আমি মেয়েটিকে দেখতে যেতে চাইনি, তুমি বারবার না বললে হয়তো যেতামও না। গিয়ে হলোটা কি? নাহ, মেয়েটিকে না বাঁচালেও পারতাম। অযথাই ঝামেলা। তোমার কোনো কথা শুনবো না। তুমি যাও।
- আচ্ছা যাবো। কিন্তু একটা কথা যে তোমাকে শুনতেই হবে।
- না শুনবো না।
- হা হা হা। তোমার যত দোষই অস্বীকার করো নিজের প্রতিবিম্বকে কি তুমি অস্বীকার করতে পারবে? পারবে না।
- তুমিও বলছো মেয়েটিকে বাঁচানোয় আমার দোষ হয়েছে?
- না তোমার দোষ অন্যখানে হয়েছে। তুমি চাইলে ছেলেগুলো মেয়েটিকে ধরে নিয়ে যেতেই পারতো না। তারপর অত্যাচার কিংবা বাঁচানো তো আরো অনেক পরের কথা।
মাজেদ চুপ করে থাকে।
- কি ভুল বললাম?
মাজেদ অনেকক্ষণ কোনো কথা বললো না। আয়নার দিকেও তাকালো না। তাকালে হয়তো দেখতে পেতো তার চোখ দু’টো টকটকে লাল হয়ে আছে।

আগামি খন্ডে সমাপ্য।

ছবি: গুগলমামা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫২
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×