বিশ্ব ক্রিকেটের ফিক্সিং কান্ডের অন্যতম ঘটনাটি ছিল দক্ষিন আফ্রিকান হ্যন্সি ক্রুনিয়ের। এই ঘটনা পুরো বিশ্বে আলোড়ন তুলে। ক্রিকেট বিশ্ব হয়ে পরেছিল বাকরুদ্ধ!
২০০০ সালের কথা, দিল্লী পুলিশের তৎকালীন প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা দাবি করেন তাদের কাছে হ্যান্সি ক্রুনিয়ের সাথে বুকিদের কথোপকথন ট্যাপ রয়েছে! দক্ষিন আফ্রিকা বোর্ড সাথে সাথে সে দাবি প্রত্যাখান করে। হ্যান্সি ক্রুনিয়ে নিজেও তা অস্বীকার করেন। কিন্তু সত্য চাপা থাকেনি বেশিদিন। তদন্তের জন্য চাপ আসে আইসিসি'র উপর। দক্ষিন আফ্রিকা বোর্ড নিজে উদ্যোগি হয়ে তদন্তে এগিয়ে আসে। তদন্তে বেড়িয়ে আসে ক্রুনিয়ের সংশ্লিষ্টতা ম্যাচ পাতানোতে!
তার সাথে জড়িত থাকার সত্যতা আসে হার্শেল গিবস, নিকি বোয়ে এবং পিটার স্ট্রাইডম এর বিপক্ষেও! কিন্তু গিবস বুকিদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেও যে ম্যাচের জন্য টাকা নিয়েছিলেন সে ম্যাচে ৫৩ বলে ৭৪ রান করেন! কিন্তু তাকে ৬মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিকি বোয়ে এবং পিটার স্ট্রাইডম এর বিরুদ্ধে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা আসেনি! কিন্তু গিবস এর মত একই কারনে দক্ষিন আফ্রিকা হেনরি উইলিয়ামস কেও ৬মাসের নিষেধাজ্ঞা পেতে হয়েছিল।
এবার আসা যাক হ্যন্সি ক্রুনিয়ে ঘটনায়, এ ঘটনাটি থেকে শুরু করে তার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটনাটি ক্রিকেটের আড়ালের এক বিরাট কাল অঞ্চল এর অস্তিত্ব প্রকাশ করে। তদন্তে বেড়িয়ে আসার পরেই ক্রুনিয়ে নিজে সব দোষ স্বীকার করে নেন এবং নিজেকে শোধরানোর প্রতিজ্ঞা করেন এবং সকলের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। কিন্তু তদন্তে বেড়িয়ে আসার পর তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হয়। তিনি রিভিউ আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। তিনি নিষিদ্ধ হবার পর নিজে থেকেই সকলকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন, একা একা চলতে পছন্দ করতেন। এর কারন ছিল একটাই, তিনি নিজ কাজের জন্য বেশ অনুতপ্ত ছিলেন।
২০০২ সালে তিনি জোহানেসবার্গ থেকে কাছের কোন এক শহরেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু গন্তব্য স্থলের আগেই কোথাও সেই বিমান টি অবতরন করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে! সেখানেই মৃত্যুবরন করেন ক্রুনিয়ে, মাত্র ৩২ বছর বয়সে! পরবর্তিতে তদন্তে বেরিয়ে আসে এর পেছনে শক্তিশালী এক বাজিকর গোষ্ঠী জড়িত আছে, যাদের হাত আছে ২০০৭ সালে পাকিস্তানের কোচ বব উলমার এর হত্যার পেছনেও বলে ধারনা করে নেয়া হয়। কিন্তু এদের হাত এতটাই লম্বা যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে এখনো কিছু করে উঠতে পারেনি!!
২০০৪ সালে কেনিয়া দলের অন্যতম ভরষা মরিস ওদুম্বের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ সত্য প্রমানিত হয়! ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় তাকে।
মারলন স্যামুয়েলস নিষিদ্ধ ছিলেন ২০০৮-২০১০ সাল পর্যন্ত এটা অনেকেই জানেন, কারনটা ছিল বোলিং অ্যাকশান ত্রুটিপূর্ন! কিন্তু এর পেছনের কালো একটি অধ্যায় অনেকের অজানা। বোলিং অ্যাকশানে প্রশ্নবিদ্ধ হবার পরেই দিল্লী পুলিশ তার সাথে বুকিদের যোগাযোগের সত্যতা প্রমান করে। মরার উপর খাড়ার ঘা এসে পরে তার উপর। বোলিং অ্যাকশান শোধরানোর পরেও তাই ২০১০ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি।
নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটার লু ভিনসেন্ট এর বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ আসে বিপিএল চলাকালে। তাকে ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু পরবর্তিতে অধিকতর তদন্তে বেড়িয়ে আসে তিনি এই লাইনে পুরোনো লোক। আগেও তিনি বেশ কিছু কুকর্ম করেছেন। তার পাপ ও তাকে ছাড়েনি, আজীবন নিষিদ্ধ হন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে।
বিপিএল এর আরেকটি ঘটনার স্বীকার শ্রীলঙ্কান কৌশল লোকুয়ারাচ্চি! ক্রিকেট বিশ্বে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির শ্রীলঙ্কান এই ক্রিকেটার স্বীকার এই কারনেই, কারন তিনি অভিযুক্ত হয়েছিলেন বুকিদের কাছে থেকে আমন্ত্রন পেয়েও কর্তৃপক্ষ কে না জানানোর কারনে। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল কে না জানানোর কারনে তাকে ১৮ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে হয়েছিল।
ক্রিকেট বিশ্বে অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ড বরাবরই স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ধারক এবং বাহক! কিন্তু এসব দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে দুই একবার আসেনি তা না। কিন্তু শক্ত দুর্নীতি দমন কাঠামো থাকায় তারা এসমস্ত অভিযোগ যে মিথ্যা তা প্রমান করতে পেরেছে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও কাউন্টি ক্রিকেটে বেশ কয়েকবারই ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন সাসেক্সের ক্রিকেটার মেরভিন ওয়েস্টফিল্ড। ২০১০ সালে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে। পরবর্তিতে ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে হয়েছিল এই ক্রিকেটারকে।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যাণ্ড এর মত দেশগুলোর দুর্নীতি দমন বিভাগ খুবই শক্তিশালী, যার ফলে তারা ছোট কোন অভিযোগ ও বেশ গুরুত্বের সাথে নেয়! এবং শাস্তি ও দেয় তারা কোনরকম ক্ষমা ছাড়াই! যার ফলে সেসমস্ত দেশের ক্রিকেটাররা এই কালো পথে পা বাড়াতে ভয় পায়! আমাদের উপমহাদেশেও এই সংস্কৃতির চর্চা প্রয়োজন
ক্রিকেটের কুলাঙ্গার সমাজ : প্রথম পত্র(পাকিস্তান)
ক্রিকেটের কুলাঙ্গার সমাজ : দ্বিতীয় পত্র(ভারত)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:২৭