somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাফিউর রহমান ফারাবী
ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাংলাদেশের প্রান্ত হতে আপনাকে হাজার সালাম! ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক

আরজ আলী মাতুব্বরের আখিরাত বিষয়ক যুক্তি খন্ডন

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আরজ আলী মাতুব্বর উনার সত্যের সন্ধানে নামক একটি বইয়ে মুসলমানদের পরকাল বা আখিরাত বিষয়ক কিছু প্রশ্ন করেছেন। উনি বলতে চেয়েছেন যে মানুষ মৃত্যুর পর মাটিতে মিশে যাবে, তার শরীরের কোন অস্তিত্বই থাকবে না, তাহলে কিভাবে আবার এই মানুষ কে জীবিত করে তাকে গোর আযাব/কবরের আযাব দেওয়া হবে ? আবার কিভাবেই তাকে বেহেশত বা দোযখে পাঠানো হবে ?

আসলে এই প্রশ্নগুলি শুধু বানর প্রজাতি থেকে উদ্ভুত নাস্তিক ভাই ও বোনদের নয় হযরত আদম আলাইহিস সাল্লাম থেকেই কাফেররা বিভিন্ন নবীদের কে এই প্রশ্নগুলি করত। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সময়ও এক কাফের একটি কবর থেকে কয়েকটি হাড় উঠিয়ে নিয়ে এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করেছিল, হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি যখন মৃত্যুর পরে এরকম হাড়গোড় হয়ে যাবো তখন আমি আবার কিভাবে জীবিত হব ? তখন আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ওহী নাযিল করে আল-কোরআনে বললেন- “ আমি কি একবার সৃষ্টি করেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে তোমাকে ২য়বার সৃষ্টি করতে পারবো না, বরং আমি তোমার আংগুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত মিলাতে সম্ভব।” [ সূরা কিয়ামাহ ৩-৪ ] যাই হোক এই পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কত প্রাণের উদ্ভব হচ্ছে। তাই বলা যায় আমাদের এই প্রকৃতিটা হচ্ছে একটা উত্‍পাদনশীল প্রকৃতি। মৃত্যুর পরে মানুষ জীবিত হবে কি হবে না এটা বুঝার জন্য আগে আমরা কয়েকটি জিনিস এইখানে আলোচনা করবো। আচ্ছা একটা বটগাছ আর তার একটা বীজের কথা চিন্তা করি। একটা শুকনা বীজ থেকে এতবড় একটা বটগাছ তৈরী হল। বীজ ও বটগাছের মধ্যে তো যোজন যোজন পার্থক্য রয়েছে তাদের আকার আকৃতি ও তাদের শারিরীক বৈশিষ্ট্যে। আপাতবিশ্বাসে এটা অবিশাস্য মনে হলেও এটা তো সত্য যে একটা ছোট বীজ থেকেই তার থেকে অনেক অনেক বড় ও ভিন্ন বৈশিষ্টের একটা প্রাণের উৎপত্তি অর্থ্যাৎ বটগাছের জন্ম হয়েছে। এই ব্যাপারটা কে কিন্তু আমরা মানব জাতি খুব সহজভাবে মেনে নিয়েছি। মানুষের প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে কি কখনো আমরা চিন্তা করেছি ? মানুষ তৈরী হয় জাইগোট থেকে। জাইগোট হলো পুরুষের শুক্রানো ও নারীর ডিম্বানোর সমষ্টি। এই জাইগোট থেকে অনেক রুপান্তরের মাধ্যমে মায়ের পেটে মানুষ সৃষ্টি হয়। এটাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ভ্রুণ তত্ত্ব। যাই হোক এই জাইগোট কিন্তু সামান্য কিছু পানি ছাড়া আর কিছুই না। আর মানুষের শরীর কিন্তু শুধু পানি নয়, মানুষের শরীরে হাড়গোড় অনেক কিছুই আছে। মানুষ আর জাইগোটের মাঝখানে বস্তুগত হাজার হাজার পার্থ্যক্য রয়েছে সেটা তো আর আমরা অস্বীকার করতে পারবো না। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যদি দুনিয়ার জীবনে একটা শুকনা বীজ থেকে এতবড় একটা বট গাছ তৈরী করতে পারেন, সামান্য জাইগোট রূপ পানি থেকে এতবড় একটা মানুষ বানাইতে পারেন তাইলে আখিরাতেও কোন বিশেষ প্রক্রিয়ায় আবার নতুন করে মানুষ তৈরী করা আল্লাহ সুবহানাতায়ার জন্য কোন অসম্ভব ব্যাপার না। আপনি যদি যুক্তি বিদ্যায় আসেন তাইলে এটা মানতেই হবে যে মায়ের পেটে যখন আমরা ছিলাম তখন কি আমরা কখনো ভাবতে পেরেছিলাম যে মায়ের পেট থেকে বের হয়ে আবার পৃথিবী নামক একটা ভিন্ন জগৎ এ যাবো যেটা মায়ের পেটের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাইলে এই পৃথিবীর জগৎ থেকেও আরো বৈচিত্র পূর্ণ জগৎ থাকবে যেটা হয়ত আমাদের দুনিয়ার জীবনে কল্পনাতেও আসছে না। যেমন মায়ের পেটে থাকতে এই পৃথিবীর জগত এর কথা আমাদের চিন্তাতেও আসে নি। i অর্থ্যাৎ এই দুনিয়ার জীবনে যদি একটা ভিন্ন বস্তু থেকে সম্পূর্ন আরেকটা ভিন্ন বস্তু তৈরী হতে পারে তাইলে আখিরাতেও আমাদের সামান্য হাড়গোড়ের কোন খন্ডাংশের মাধ্যমে আমাদের কে আবার নতুন করে সৃষ্টি করা আল্লাহ সুবহানাতায়ালার জন্য কোন ব্যাপারই নয়।

আরজ আলী মাতুব্বর প্রশ্ন করেছেন যে কবরের আযাব তো শুনাও যায় না আবার দেখাও যায় না। তাইলে এটা কিভাবে সম্ভব হবে ?
আচ্ছা এই পৃথিবীর সকল শব্দ কি আমরা শুনতে পাই ? না পাই না। মানুষের শ্রাব্যতার সীমা হল ২০-২০০০০ Hz. ২০ Hz এর কম বা ২০০০০ Hz এর বেশি কোন শব্দ মানুষ শুনতে পায় না। মানুষ ২০ Hz এর কম বা ২০০০০ Hz এর বেশি কোন শব্দ শুনতে না পেলেও কিন্তু অনেক পশু পাখি আছে যারা ২০ Hz এর কম বা ২০০০০ Hz এর বেশি কোন শব্দ অনায়াসেই শুনতে পায়। হাদীসে কিন্তু বলা আছে যে কবরের আযাব একমাত্র মানুষ ও জ্বীন ছাড়া আর সকল প্রাণিই শুনতে পায়। তাই কবরের আযাবের শব্দ হয়ত এত সূক্ষাতিসুক্ষ বিষয় যেটা মানুষের শ্রবণ শক্তির সীমার বাইরে। তাই মানব জাতি কখনই কবরের আযাবের শব্দ অনুধাবন করতে পারবে না।

আচ্ছা কবরের ভিতর যে আযাব হয় তা আমরা কেন দেখতে পারি না ? মানুষের দৃষ্টি শক্তির সীমা হলো ৪০০০-৮০০০ আংস্ট্রম। এর কম বা বেশী কোন তরঙ্গ দৈর্ঘ্য আমরা খালি চোখে দেখতে পারি না। যেমন অবলোহিত বিকিরন, বেতার তরঙ্গ, অতি বেগুনি রশ্মি, এক্সরে রশ্মি এইগুলি খালি চোখে দেখা যায় না। দৃশ্যমান আলো ছাড়া আর সকল তড়িৎ চৌম্বক বর্ণালী ফটোগ্রাফিক প্লেট, ফটোট্রানজিস্টর এইগুলি দ্বারা উদঘাটন করা হয়। পরমানু ভেঙ্গে ইলেকট্রন প্রোটন নিউট্রন পাওয়া যায়। এরপর পাওয়া যায় মেসন লেপ্টন নিওন। এরপর পরমানুর সর্বশেষ উপাদান কোয়ার্ক কে পাওয়া গেছে Deep inelastic Scattering এর মাধ্যমে। পরমানুর এই সর্বশেষ উপাদান গুলি কিন্তু চোখে দেখার মত কিছু নয়। ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোস্কুপের মাধ্যমে খুবই সূক্ষাতিসূক্ষ পর্যবেক্ষন ও গানিতিক পদার্থ বিজ্ঞানের সাহায্যে এই ব্যাপার গুলি অনুধাবন করা হয়। আজ থেকে ১৫০ বছর আগেও মেসন লেপ্টন নিয়ন কোয়ার্ক অবলোহিত বিকিরন এক্সরে রশ্মি এই ব্যাপার গুলি সম্পর্কে মানুষের কোন ধারন ছিল না। কিন্তু এই পদার্থ গুলি ছিল কিন্তু আমরা তা বুঝতে পারতাম না। আজ থেকে ১৫০ বছর আগে যদি কোন বিজ্ঞানী ইলেকট্রন প্রোটন নিঊট্রন কোয়ার্ক অবলোহিত বিকিরন এক্সরে রশ্মি এই কথাগুলি বলত তাইলে পৃথিবীর মানুষ তাকে পাগল বলত কিন্তু এই পৃথিবীতে এই তরঙ্গ রশ্মি গুলি এই ইলেকট্রন প্রোটন নিঊট্রন কোয়ার্ক ছিল। কিন্তু তখনকার মানুষ তা অনুধাবন করতে পারি নি। কবরের আযাব জ্বীন ফেরেশতা রুহ এই গুলি হয়ত এতই সূক্ষাতিসূক্ষ তড়িৎ চৌম্বক বর্ণালীর মাধ্যমে ঘটে যা উদ্ঘাটন করা মানব জাতির পক্ষে কোনদিনও সম্ভব হবে না।
তাই বুঝা যাচ্ছে কবরের আযাব এতই সূক্ষাতিসুক্ষ বিষয় যেটা মানুষের দৃষ্টি শক্তির ও শ্রবণ শক্তির সীমার বাইরে। কিন্তু মানুষের জ্ঞানের সীমার বাইরে হলেই কি আপনি তা অস্বীকার করতে পারবেন ? কখনই নয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবীদের কে বলেছিলেন - “আখিরাতে অনেকেই মাথার উপর ভর দিয়ে উলটো করে চলবে। ” তখন সাহাবীরা জিজ্ঞাস করলো- “ ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটা কিভাবে সম্ভব যে কিছু মানুষ আখিরাতে মাথার উপর ভর দিয়ে চলবে ? তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের কে বললেন- “আদম সন্তানের বৈশিষ্টই হল যেটা সে কখনো দেখি নি সেটা সে বিশ্বাস করবে না। মানুষ যদি দুনিয়ার জীবনে বুকের উপর ভর দিয়ে কোন প্রানীকে চলাফেরা না করতে দেখত অর্থ্যাৎ সরীসৃপ জাতীয় তাইলে সে এই প্রশ্ন করতো যে বুকের উপর ভর দিয়ে কি কোন প্রানী চলতে পারে ? (মেশকাত শরীফ)
আর মূর্খ আরজ আলী মাতুব্বরও হচ্ছেন এই শ্রেণীর লোক।

ইসলামী আক্বীদা সংশোধনের জন্য আরো পড়তে পারেন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বহু বিবাহ প্রসঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষীদের সমালোচনার জবাব
বনী কুরায়জা গোত্রের সকল পুরুষ ইহুদি হত্যা করা প্রসঙ্গে একটি পর্যালোচনা
ইসলামি শরীয়াহ কি কখনই দাস দাসী প্রথাকে সমর্থন করেছিল
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:২২
১৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×