"এই অনন্ত ,যাবি ??"
সকালে তাহসান মিথিলার নাটক, দুপুরে তাহসান মিথিলার টেলিফিল্ম , সন্ধায় আবার তাহসান মিথিলার নাটক । তাই মনির যখনদরজায় টোকা দিয়ে বললো শ্মশান ঘাটের অপজিটের স্কুল মাঠে যেখানে কিনাভরসন্ধায় শেয়াল আর ভুতের যৌথ সম্মেলন বসে বলে জনশ্রুতি আছে, সেখানে যেতে রাজি আছি কিনা, আমি হাপ ছেড়ে বাচলাম। ভুত আর কি বা করবে, ঘাড় মটকাবে হয়তো, তাহসানের অভিনয় দেখার চেয়ে এও ভালো।
মাঠে এসে আরাম করে বসা মাত্র পেছন থেকে কেউ ডাকলো,
বাইজান।
চমকে ঘুরতেই দেখি সাইকেল আকড়ে এক কিশোর, চেহারা বোঝার উপায় নেই অন্ধকারে।
বাইজান ইট্টু আগাইয়া দিবেন আমারে , মাঠ পাড় ওইতে ডর লাগে ।
ডর তো আমাদেরও লাগছে লেকিন পোলাপাইনের সামনে সেটা প্রকাশ করে প্রেস্টিজ ডোবাবো? আমি আর মনির সাইকেল কিশোরের পেছন পেছন হাটতে লাগলাম আর আজকালকার বালকেরা কতটা ভিতু তা নিয়ে উচ্চস্বরে হতাশা প্রকাশ করতে থাকলাম ।
হঠাৎ দেখি সাইকেলওয়ালা উধাও !
এক সেকেন্ড আগেও সামনে ছিল, ধু ধু মাঠ চারদিকে , কোথায় গেলো? মনির ভয়ে ভয়ে বললো, ব্যাপার কি রে অনন্ত ? ওই জিনিস নাকি ?
এর জবাবেই যেন মাঠের কোনা থেকে একসাথে দশ বারোটা শেয়াল ডেকে উঠলো ।
দিনের আলোয় পড়ে যে গল্পগুলো বোগাস মনে হত, সেই ভুতের গল্প গুলো মনে করেই এখন ভয়ে হাত পা পেটে ঢুকে যেতে চাইছে। একটা ভুতকে তো সাইকেলে পাড় হতে দেখলাম, পরের জন নির্ঘাত ঘাড় চেপেই পাড় হতে চাইবে। এখান থেকে পালানোর অজুহাত দরকার । তাহসানের প্যানপ্যানে প্রেমের নাটক দেখার জন্যে প্রান আইঢাই করছে ।
ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ , তবু যথাসম্ভব স্বাভাবিক ভাবে বললাম, ইয়ে মনির , চল বাসায় ফিরে যাই , আমার একটা ইম্পরটেন্ট কাজের কথা মনে পড়েছে ।
কি কাজ ?
-আমম, কম্পিউটার রিলেটেড ।
কম্পিউটার রিলেটেড কি?
-আমম, সফটওয়ার ..
কি সফটওয়ার ?
বিরক্ত হয়ে বললাম, জানিস এই জাতির কেন উন্নতি হবে না ? কারন এই জাতি কোন কাজের মধ্যে নাই , আছে খালিপ্রশ্ন করার মধ্যে ।
-আচ্ছা চল ফিরে যাই ।
স্কুলের পাশে হাইরোড, হাইরোড এর ওপারে মুচিদের শ্মশান , আর হাইরোড ধরে এগিয়ে গেলে বাজার, যার পাশে আমার বাড়ি ।
হাইরোডের কাছাকাছি আসতেই যাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখলাম, এ মহাশয় যে সদ্য শ্মশান থেকে উঠে আসা জলজ্যান্ত ভুত তাতেআর সন্দেহ নাই । দশ ফুটের বেশি উচু কালো কুচকুচে শরীর , চুপচাপ দাড়িয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। পেছনে শেয়ালের দলতারস্বরে ডাকছে , ব্যাটাদের এত আনন্দের কারন হয়ত টাটকা শবাহারের সম্ভাবনা ।
স্কুল মাঠে ভুতগুলোর এত আনাগোনার কারন কি? মরার পরে ব্যাটাদের শিহ্মানুরাগের বাণ ডেকেছে ?
চাঁদের আলোয় কিছু স্পষ্ট দেখা যায় না, তবু মনে হল কালো শরীরটা ভেসে ভেসে এগিয়ে আসতে শুরু করেছে ।
মনির ফিসফিস করে বললো, কি করবি?
আল্লাহকে ডাক ।
ইয়ে, আল্লাহ কি আমার ডাক শুনবে? আমি না , আমম, আজকে জুম্মার নামাজটা পড়ি নাই ।
আমিও তো পড়ি নাই, চিন্তিত গলায় বললাম, গত শুক্রবার পড়েছিলাম, গত শুক্রবার এখানে আসা উচিৎ ছিল ।
ভুতটাকে চুপচাপ , ভদ্র টাইপের মনে হচ্ছে । কি করতে পারে আমাদের ?
ঘাড় মটকে মারতে পারে, কিম্বা টর্চার করতে পারে। যেভাবে তাহসান টর্চার করছে অভিনয় শিল্পটাকে ।
নো ওয়ে, চল দেই দৌড়।
অকে ।
দশ মিনিট পরে আমরা আমার বাসার সামনে । হাপাতে হাপাতে মনিরকে বললাম বাসায় গিয়ে ফোন দিতে ।
ঘরে ঢুকে আব্বুকে, যিনি কিনা ওই স্কুলের প্রিন্সিপাল, পুরো ঘটনা বললাম। আব্বু বললো, মাঠের বাম দিকে একটা রাস্তা আছে, কিছু গাছের জন্য যেটাকিছুটা আড়ালে থাকে, সাইকেল ওয়ালা যদি ওই রাস্তায় গিয়ে থাকে তবে আমাদের অন্যমনস্ক চোখ মিস করতেই পারে । হাইরোডের পাশে অনেক গাছ আছে, যাদের ছায়া, কুয়াশা আর চাদের আলো মিলে দশ ফুট লম্বা ভুত তৈরি করে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই ।
যুক্তি গুলো সলিড মনে হলো । মনিরকে ফোন দিলাম ,
শোন, আজকের ভুত দর্শনের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা পেয়েছি ।
কিসের ভুত দর্শন ?
আহা ন্যাকা, একটু আগে স্কুল মাঠে কি দেখলাম তুই আর আমি, ভুলে গেছিস ?
মনির অবাক হয়ে বলল, অনন্ত, আমার দুদিন থেকে জ্বর ,আজ সারাদিন আমি ঘর থেকেই বের হই নাই ।তুই কি বলছিস এসব ? মাথা ঠিক আছে ?
ফা ফা ফাজলামী করিস ? ফাজলামী করিস আমার সাথে? মিথ্যুক কোথাকার !
মনির ওর মাকে ফোনটা দিলো। আন্টিও সাহ্মী দিলো, মনির সন্ধ্যায় ঘরেই ছিল ।
তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে বাবা ।
ফোন রেখে আমি চুপচাপ বসে রইলাম । মাঠের ঘটনার নাহয় ব্যাখ্যা পেলাম, কিন্তু যে আমাকে ডেকে নিয়ে
এসব দেখিয়ে আনলো, তার ব্যাখ্যা কি ?