somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল পরী (পর্ব-৬)

২৫ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিকেল হতেই কবিতা ও দূর্জয় মাধুবীকে গল্প বলার জন্য ধরে নিয়ে এল। জেঠুকেও তারা আজ মাঠে যেতে দেয়নি বরং মাঠে দাদুকে পাঠিয়ে দিল। আজ তাদের গল্পের আসর ছাদে। সেখানে একটা বৈঠক খানাও আছে। কিছু গাছপালাও আছে। সব মিলিয়ে মনোরম পরিবেশ। মাধুবী এসে দেখলো অনেক শ্রোতার সমাগম। পাড়ার অনেক ছেলেমেয়ের সাথে যোগদিয়েছেন কবিতার গল্প বলায় অভিজ্ঞ ঠাকুমা। আর রাম বাবুর না থাকার কোন সংগত কারণ ছিলনা। সবাই আসন গ্রহণ করার পর কবিতা মাধুবীকে জিজ্ঞেস করল, পিসি রাক্ষস বলতে কি আসলেই কখনো কিছু ছিল? মাধুবী বল্ল, হয়ত ছিল।
-সেগুলো এখন নেই কেন?
- থাকলে কি খুব ভাল হতো?
-না, তবেতো ঘর থেকে নামতেই ভয় হতো। আবার ঘরেও হয়তো ভয়ে ঘুম আসতোনা।
-তবেতো ওগুলো না থেকেই বরং ভাল হলো।
-সে গুলো কোথায় হারাল?
- সম্ভবত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেমন আরো অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে।
-কেমন করে বিলুপ্ত হলো?
- মানুষ খেকো বলে মানুষেরা মারতে মারতেই বিলুপ্ত হয়েছে।
-ঠিক আছে, হতেপারে, তুমি গল্প বল পিসি।

মাধুবী গল্প বলা শুরু করে-
অনেক দিন ধরে রাক্ষসটার পিছু নিয়ে অবশেষে এক দিন রাত চাঁদের আলোয় শাহ এমরান ওরফে ছাগলের রাখাল রাক্ষসটাকে বাগে পেল। সে জঙ্গলে বসে একটা বাচ্চার হাত চিবিয়ে খাচ্ছিল। সে অসতর্ক ছিল। কারণ ভয়ে কেউ তার ত্রিসীমানায় পা রাখতনা। শাহ এমরান চুপি চুপি একেবারে তার কাছে চলে এল। যখন সে টেরপেল তখন কিছু বুঝে উঠার আগেই তার মাথাটা ঘাড় থেকে নেমে গেল। তখন রক্তের ঢল নামল। সে মানিকটা মাটিতে রেখে খাচ্ছিল। সেদিকে রক্ত বইতে থাকলে শাহ এমরান মানিকটা হাতে নিল এবং সে সাত রাজার ধন হাতে পেল। তার কিছুক্ষণ পর সে রাক্ষসটার মাথার চুলের মুঠি চেপে ধরে গৃহে ফিরে এল। ঘরে এসে রাজকন্যা চন্দ্রবানকে রাক্ষসের মুন্ডু দেখিয়ে বল্ল, ফুলের মালা সংগ্রহ করুন। কাল মুন্ডু আর মানিক জমা দেওয়ার পর দশহাজার স্বর্ণ মূদ্রা নিয়ে যখন আমি ফিরব তখন আমাদের বিয়ে হবে। এক হাতে রক্তমাখা খোলা তলোয়ার, অন্যহাতে রাক্ষসের মাথা এক মহাবীরকে দেখে চন্দ্রবান ছাগলের রাখালের কথা ভুলে গেল। সে অস্ফুটে বলে ফেল্ল যথাআজ্ঞা মহাবীর। দাইমা পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখলো। তিনি বল্লেন, ভাই হাত মুখ ধুয়ে চল খেতে বস। খেয়েদেয়ে শাহ এমরান শান্তিতে দিল এক ঘুম।

সকালে ঘুম থেকে জেগে শাহ এমরান নাস্তা সেরে প্রশান্ত মনে রাক্ষসের কাটামুন্ডু নিয়ে রাজ প্রাসাদে রওনা হলো। তার নিজের ঘোড়াটা সে একজনকে ধারে দিয়েছিল। একসময় সে নিজের ঘোড়াটা নিয়ে এসে ছিল। সে এক সেট সৈনিকের পোষাকও জোগাড় করেছিল। পরিপাটি ভাবেই সে রাজ দরবারে গেল। হিন্দু রাজ্য হলেও সে রাজ্যের রাজা মুসলমান ছিলেন। তার একমাত্র কন্যার নাম ছিল নূরী। শাহ এমরান রাজ প্রসাদে ঢুকার সময় ছাদ থেকে নূরী তাকে দেখে মুগ্ধহলো। কিসুন্দর পুরুষোচিত দেহ এক সৈনিক। রাক্ষসের কাটামুন্ডু দেখে জনতার সেকি উল্লাস। একটা জনস্রোত এল শাহ এমরানের সাথে রাজ প্রসাদের সামনে। রাজা নিজেই দরবার ছেড়ে নেমে এলেন শাহ এমরানকে বরণ করতে। তার ঠাঁই হলো রাজার বুকে। নূরী সবকিছু ভুলে সৈনিক পুরুষের কাছে চলে এল। সে তার ঘামের মিষ্টি সুবাস পাচ্ছে। অবশ্য শাহ এমরান সবসময় পারস্যের সুগন্ধি ব্যবহার করেন। নূরী মনে মনে ভাবে এমন বীর যে রাক্ষস মারতে পারে সে যদি তার স্বামী হয় তবে তার জীবন ধন্য হবে। তা’ছাড়া বাবার পরতো সে রাজাও হবে তবে ক্ষতি কি!
মহারাজকে দেখে জনস্রোত থামল। তারা ধ্বনি দিল, মহান সুলতান জিন্দাবাদ, রাক্ষসমারা মহাবীর জিন্দাবাদ। কয়েকজন মান্যগন্য নাগরিক দাবী তুল্ল, একেই আমাদের সেনাপতি চাই। অকর্মন্য সেনাপতির বরখাস্ত চাই। জনগনকে শান্ত করতে সেখানেই রাজা ঘোষণা দিলেন, বর্তমান সেনাপতিকে রাক্ষস নিধন অযোগ্যতায় বরখাস্ত করা হলো। তবে বিভিন্ন যুদ্ধে তার সাফল্য বিবেচনায় তার রাজ সভাসদের পদ বহাল রাখা হলো। এখন থেকে সে রাজ কন্যার প্রহরী দলের প্রধান থাকবে। তারপর শান্তমনে রাজা বল্লেন, সেনাপতির শূণ্যপদে রাক্ষস নিধনকারী মহাবীরকে নিয়োগ প্রদান করা হলো। সে সময় শাহ এমরানকে ভিতরে নিয়ে সেনাপতির পোষাক পরিয়ে আবার জনতার সামনে হাজির করা হলো। জনতা জিন্দাবাদ বলতে বলতে যার যার ঘরে ফিরে গেল। শহরে সাত দিনের আনন্দ উৎসবের ঘোষণা প্রদান করা হলো। অবশেষে শাহ এমরানকে দরবারে নিয়ে দশহাজার স্বর্ণমূদ্রা পুরস্কার প্রদান করা হলো। তাকে একটা আরবী সাদা ঘোড়া উপহার দেওয়া হলো। রাজা পেলেন সাত রাজার ধন মানিক। তারপর মহাসমারহে সেদিনের মতো তাকে বিদায় জানানো হলো। সে ঘরে ফিরে এল। চন্দ্রবান দেখল ঘর থেকে গেল সৈনিক ফিরল সেনাপতি। শাহ এমরান বল্ল জানেন আমি কে? চন্দ্রবান বল্ল, জি জানি, আপনি সেনাপতি। আমি রাজ কন্যা আমি সেনাপতি চিনি।
-ঠিক আছে। এখন থেকে আমি এ রাজ্যের সেনাপতি। কাল আমরা সেনাপতির প্রসাদে উঠব।
- জি আচ্ছা। আমাদের তবে উন্নতি হলো।
নতুন উত্তেজনায় শাহ এমরান চন্দ্রবানের হাতে ফুলের মালা পরার কথা ভুলে গেল। মহাবীরের আদেশে সে ফুলের মালা যদিও অতি যত্ন সহকারে বানিয়ে ছিল। কিন্তু মহাবীরকে সেটা আর পরানো হলো না। এতে তার মনে অভিমান হলো।
এদিকে সন্ধা হয়ে গেল বলে মাধুবী বিদায় গ্রহণ করল। সেদিনের মতো সেখানেই গল্পের আসর ভেঙ্গেগেল এবং সবাই যার যার ঘরে ফিরে গেল।
(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:৫২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×