somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফরিদ আলম
সুন্দর জীবন সকলে পায় না, তবে কিছু লোক জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলেন। আর সুন্দর জীবনের জন্য চাই সুন্দর জীবন ব্যবস্থা। নিঃসন্দেহে ইসলাম হল শ্রেষ্ঠ সুন্দর জীবন ব্যবস্থা।

বাঙালী কারা? শুধু হিন্দুরাই নাকি মুসলিমরাও !!

১৩ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালী সত্ত্বার অধিকারি কারা? এরকম একটা বিষয়ের উপরে প্রবন্ধ দেখে হয়ত অনেকেই চমকে যাবেন। কিন্তু বিষেশ করে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্য এরকম একটা প্রবন্ধের খুবই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এই ব্যাপারটি আলোচনা করার আগে বাংলাভাষা সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলি পৃথিবীতে প্রায় তিন হাজার ভাষা আছে তারা আবার অনেক ভাষা গোষ্টিতে বিভক্ত। এই নিরিখে বাংলা ভাষার স্থান পৃথিবীতে পঞ্চম কিংবা ষষ্ট। এই ভাষা ভাষীর লোক গোটা বাংলাদেশ, গোটা পশ্চমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আন্দামান ও নিকোবর, আসম, মিজোরাম সহ গোটা ভারত এবং পৃথিবী জুড়ে অনেক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই ভাষায় যারা কথা বলেন তারাই বাঙালী। এটা আমরা সবাই জানি। তারপরেও বাঙালী কারা? এরকম একটা প্রশ্নের কি মানে হতে পারে। এরকম প্রশ্ন উঠছেই বা কেন?
পাঠক ভায়েরা দয়া করে বিরক্ত না হয়ে এই প্রবন্ধটি পড়ুন। এরকম প্রশ্ন উঠছে কারণ বেশীর ভাগ হিন্দু ‘বাঙালী’ বলতে নিজেদেরই বোঝেন। আর অনেক অশিক্ষিত মুসলমান নিজেদের বাঙালী মনে করেননা। তারা মনে করেন যারা হিন্দু তারাই বাঙালী। একারণেই মুসলমানদের পাশে বসবাসকারী হিন্দু পাড়ার নাম বাঙালী পাড়া হয়ে যায়।
এবিষয়ে আরো কিছু বলার আগে আমার জীবনের একটি সত্যি ঘটনা শুনুন। যখন আমি একাদশ শ্রেনীতে পড়ি আমার m.c.a সাব্জেক্ট থাকায় একজন স্যারের কাছে কম্পিউটার শিখতে যেতাম। সেখানে আরো বেশ কয়েকজন ছেলে ও মেয়ে পড়ত। কয়েকদিন যাওয়ার পর একদিন একটা মেয়ে বলল তোমার নাম কি? আমি বললাম ফরিদ। সে একেবারে চমকে গিয়ে বলল তুমি মুসলমান? আমি ভেবেছি তুমি বাঙালী! তোমার কথা শুনে একেবারেই বাঙালী মনে হয়। আমি দ্বিগুন চমকে গিয়ে বললাম আমি বাঙালীই তো! তখন সে বলল তবে তোমার নামটা যে মুসলমানদের মতো। সেবারেই জীবনের প্রথম এরকম একটা প্রশ্নের স্মমুখিন হয়েছিলাম। আমি সেই মেয়েটি বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম যে আমি মুসলমান আবার বাঙালীও। কিন্তু সে মানেনি আমার কথা শুনে হেসেছে শুধু।

যাইহোক এই প্রেক্ষিতে দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বাঙালী সংস্কৃতির উত্ত্রাধিকার’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ জ্ঞানপীঠ পুরুস্কার প্রাপ্ত বিখ্যাত সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন; ‘যুক্ত বাংলায় এতকাল হিন্দু মুসলমান পাশাপাশি থাকলেও কিছুতেই যেন সাংস্কৃতিক মেল বন্ধন ঘটেনি। তার জন্য অনেকটাই দায়ি ফাঁকা হিন্দু উন্নাসিকতা। বাঙালী হিন্দুরা বহু দিন ধরে গোপনে বলে এসেছে- আরে ঐ লোকটা তো মুসলমান ও আবার বাঙালী নাকি? যেন মুসলমানরা বাঙালী হতে পারে না। অধিকাংশ হিন্দুরাই জানে না কিংবা খেয়াল করে না যে বাংলা ভাষার সন্মান রক্ষার জন্য যাবতীয় লড়াই বাঙালী মুসলমানরাই করেছে। একটু আগে থেকে শিক্ষা পাবার সুযোগে হিন্দুদের মধ্যে অনেক বড় বড় লেখক জন্মে যেত বটে, কিন্তু সম্মিলিত ভাবে বাঙালী হিন্দুরা বাংলা ভাষার জন্য কিছুই করেননি। মুসলমানরা যেটা ভাবতে শুরু করেছে পাকিস্তানী আমলেরও অনেক আগে, সেই উনিশ শ সাইত্রিশ সাল থেকে। (দেশ; ১৪.০৪.১৯৮৯)

যারা একুশে ফেব্রুয়ারীর কথা জানেন না তারা হয়ত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা শুনে আশ্চর্য হবেন। ভাব্বেন মুসলমানরা আ্বার বাংলা ভাষার জন্য কবে লড়াই করল? ভাই, শুধু লড়াই নয় নিজের মুখের বুলি যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে সেই জন্য প্রানও দিয়েছে মুসলমানরাই। বাংলা ভাষা আন্তর্জাতীক ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে মুসলমানদের জন্যই। ‘মোদের গরব-মোদের আশা –আ মরি বাংলা ভাষা’ একথার মানও মুসলমানরাই রেখেছে। পৃথিবীতে সব চেয়ে বেশি বাংলা ভাষায় কথা বলে মুসলমানরাই। যে সব পাঠক পাঠিকারা একুশে ফেব্রুয়ারীর কথা জানেন না বা যাদের স্মৃতির আড়ালে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে এই ঘটনা তাদের জন্য জেনে নেওয়া যাক ঐ ঐতিহাসিক দিনের কথা। সালটা ১৯৫২। বাংলাদেশ তখনও স্বাধীন হয়নি। পুর্ব পাকিস্তান নামেই তার পরিচিতি। পশ্চিম পাকিস্তানের আত্মগর্বি নেতারা ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল বাংলা মায়ের মুখের ভাষা। তারা চেয়েছিল উর্দুকে রাষ্ট্রিয় ভাষা করতে।অফিস আদালত স্কুল কলেজ সব জায়গায় উর্দু। কিন্তু বাংলাদেশের বাঙালীরা সেটা মেনে নিতে পারেনি। বাংলাদেশের পথে পথে শুরু হয়েছিল উত্তাল বিদ্রোহ। মুখে মুখে শোনা যাচ্ছিল বিদ্রোহবাণী- বন্দুকের নলে প্রাণ দেবো তবুও মুখের ভাষা কেড়ে নিতে দেব না’।সেদিন পাকিস্তানের সেনা দলের সামনে প্রাণ দিয়ে ছিল জাব্বার, সালাম, বর্কত, রফিক ও আরো অনেকে। তাঁদের আত্মদলে পরাস্ত হয়েছিল পাকিস্তানি সেনা দল। ধীরে ধীরে ১৯৭২ সালে য়াত্মপ্রকাশ করল ভাষাভিত্তিক একটি দেশ- বাংলাদেশ। সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে ১০০% লোক বাংলা ভাষাই কথা বলে।
একটু চিন্তা করুন দেশের জন্য, অধিকারের জন্য, অবিচারের জন্য পৃথিবীতে কত লড়াই হয়েছে। প্রান দিয়েছে হাজার-লক্ষ লোক। কিন্তু পৃথিবীতে এমন দেশ কি পাওয়া যাবে যেখানে ভাষার জন্য লোক বন্ধুক উঠিয়েছে, লড়াই করেছে, প্রান দিয়েছে? নাহ এমন উদাহরন সম্ভবত নেই। অনেক খারাপ লাগে যখন কেউ বাংলা ভাষা-ভাষী মুসলমানদের বাঙ্গালী বলেন না। যারা এধরনের কথা বলেন তাদের আমি কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই—
১. পৃথিবীতে প্রায় ছাব্বিশ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলেন। তার মধ্যে কমপক্ষে ১৭ কোটি লোক মুসলমান। তারপরেও কি বলবেন মুসলমানরা বাঙালী না?
২. বাংলা ভাষার সন্মান রাখতে মুসলমানরাই তো রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, তারপরেও মুসলমানরাই বাঙালী নয়?
৩. পশ্চিম বঙ্গে কোলকাতা ছাড়া অন্য কোন জেলায় তেমন ভাবে ভাষা দিবস পালন করা হয় না। তবে পুরো বাংলাদেশ জুড়ে এই দিনটি পালন করা হয়। বাংলা ভাষার উপর এতটাই তাদের ভালোবাসা। তার পরেও মুসলমানরাই বাঙালী নয়?
এরকম আরো প্রশ্ন করা যেতে পারে। তবে এইটুকুই যথেষ্ট এটা বোঝানোর জন্য যে, বাংলা ভাষার উত্তোরোধিকার নিয়ে যদি প্রশ্ন উঠে তবে মুসলমানরাই এর অধিক দাবিদার। প্রসঙ্গত আরেকটি কথা বলতে চাই, স্কুল কলেজে পড়ানও হয় বাঙালীর উতসব দূর্গাপুজো। এটা একেবারেই অযৌক্তিক, হাস্যকর। যেখানে ১৭ কোটি বাঙালী মুসলমান আর ৭-৮ কোটি হিন্দু সেখানে কিভাবে বাঙালীর উতসব দূর্গাপূজা হতে পারে। হ্যাঁ পশ্চিমবঙ্গের প্রধান উতসব দূর্গাপূজা এতে কারো কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাঙলীর উতসব কোন মতেই নয়। এব্যাপারে বাংলা দেশের বাঙালীরা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে কারণ ওখানে বাঙালীর উতসব ঈদ নয় ২১ ফেব্রুয়ারী।


@ বাংলাদেশী ব্লগাররা এই লেখা পড়ে চমকে উঠবেন জানি। কিন্তু যারা ভারতে এসেছেন বা ভারতে যাদের আত্মীয় আছে তারা এই ব্যাপারটির সাথে নিশ্চয় ওয়াকিবহাল। আমার জীবনে যত লেখা লেখেছি তার মধ্যে সব চেয়ে প্রশংসা পেয়েছি এই লেখার জন্য। আমাদের পত্রিকায় (ইসলামের আলো) যত লেখা ছেপেছে তার মধ্যেও এই লেখা নিয়েই সবচেয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। আপনাদের কাছেও এই প্রসঙ্গে মতামত আশা করছি।
____________________________

ভালো থাকুন। সাথে থাকুন।
শুভ ব্লগিং।
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×