somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শারীরবৃত্তীয়

২৪ শে মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সুপ্তি ভালোবেসেছিল। এমন ভালোবাসা অমর কাব্যে গাঁথা থাকে। রুমন সেই ভালোবাসায় হয়েছিল সিক্ত। সেই সিক্ততা খুব বেশিই ছিল।
দুজনের মাঝখানে ঝড়ের মতো যার আবির্ভাব ঘটলো সে হলো আনান। আনান বিধ্বংসী। সর্বগ্রাসী। রুমনের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু সে। বন্ধুর প্রেমিকাকে কখনো নিজের প্রেমিকা বলে কল্পনা করে না আনান। সত্যি বলতে কী, প্রেম জিনিসটা তার অভিধানে নেই। যা আছে তা অতি ভয়ংকর। কারণে-অকারণে রুমন আর সুপ্তির অন্তরঙ্গ মুহূর্তে সে উপস্থিত হয়। দুজনের পিঠ চাপড়ে সহজাত হাসিঠাট্টা করে।

আনান একদিন হাস্যচ্ছলে আচমকা হাত বাড়িয়ে সুপ্তির বুক ছুঁয়ে দিল। মুহূর্তে কী হয়ে গেলো! সুপ্তি ঝিম মেরে বসে পড়ে, অবাক হয়। ভর্ৎসনা করে আনানকে। আনান এতে আহত বা লজ্জিত হয় না। এ খুব মামুলি ব্যাপার অধুনার ছেলেমেয়েদের। সুপ্তি এতখানি ব্যাকডেটেড কেন তা ভেবে আনান খুব আশ্চর্য হয়; হাসতে হাসতে সে কুটিকুটি। রুমনও কি ওর সাথে এসব করে না? এতে কত সুখ সুপ্তি তা জানে। সুযোগ কখনো হাতছাড়া করা ঠিক না।
কিন্তু সুপ্তি আনানের কথা মানে না। রুমনের সাথে ওর বহুদিনের প্রেম। ওরা একসাথে কত গভীর ও গোপন সময় কাটিয়েছে। রিকশায় হুড ফেলে ঘুরে বেড়িয়েছে। দুষ্টুমি করে রুমন কখনো সুপ্তির পিঠ কিংবা উরুতে চাপ দেয় নি, তা কিন্তু না। কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।

বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো রুমন আর সুপ্তির ভালোবাসা নদীর দু কূল ছাপিয়ে যায়। তারা আকাশে ওড়ে। ঘূর্ণির মতো বাতাসে পাক খায়। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ডানা মেলে। বিকেলের নরম আলোয় ঘাসের উপর শুয়ে পড়ে যুগল কণ্ঠে কবিতা পড়ে। গান গায়- ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা।’ এ এক অনির্বচনীয় প্রেম। অপার আনন্দময়। তারা ভুলে থাকে দিন ও রাত্রির বাস্তবতা।

আরেকদিন সুযোগ পেয়ে আরো আচমকা সুপ্তিকে একটু বেশি পিষ্ট করলো আনান। ওর প্রতিক্রিয়া এবার খুব দুর্বোধ্য হলো। আনানটা এতো বেপরোয়া হয়ে উঠছে কেন? রুমনকে সবকিছু খুলে বলবে কিনা ভাবতে লাগলো সে। ভাবতে ভাবতে, যেভাবে আনান ওকে জড়িয়ে ধরেছিল, পেছন হতে হঠাৎ এসে দুদিক থেকে দুহাতে খুব শক্ত ভাবে বুকের উপর হাতের মুঠি গেড়েছিল, কল্পনা করতে করতে সুপ্তি একটা অন্যরকম শিহরণ অনুভব করে। এর আগে কোনোদিন এমন অনুভূতি হয় নি। রুমন কি এভাবে পারে না? রুমনকে সে খুব ভালোবাসে। এভাবে রুমন তাকে কোনোদিন আদর করে নি। আদর? আদর কথাটা মনে আসতেই কেমন যেন লাগে। এটাই কি তাহলে প্রেম? রুমনকে সে ঠকাতে চায় না। এই শরীর এই মন সবই রুমনের জন্য সংরক্ষিত, সেখানে অন্য কারো অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ। আনানকে এ কথাটা খুব পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়া দরকার।

‘আনান শোনো। প্লিজ, তুমি আর কখনো অমন করো না। প্লিজ।’
আনান হেসে দেয়। বলে, ‘অমনটা কী জিনিস, সোনাপাখি?’ বলে সে সুপ্তির আরেকটু কাছে আসে। সুপ্তি মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকায়। বলে, ‘তুমি তো জানো আমি একজনকে ভালোবাসি।’
‘অফ কোর্স জানি। একজনকে কেন, একশ জনকে ভালোবাসলেই বা আমার কী ক্ষতি? কারোই কোনো ক্ষতি নেই। তোমারও ক্ষতি নেই। কিন্তু তোমার কী হয়েছে, সোনা?’ বলে সুপ্তির কাছ ঘেঁষে বাম কাঁধের ওপর দিয়ে একটি হাত রাখে, ডান হাতে সুপ্তির থুতনি টেনে নিজের দিকে টানে।
‘ভালোবাসা কী জিনিস তা কি তুমি জানো, আমার ঘুঘুপাখি? তুমি জানো না। তোমাকে ভালোবাসা শেখাতে চাই; আমার খুব শখ।’ বলতে বলতে আনানের শ্বাস দ্রুত ও ঘনতর হয়। সুপ্তির মধ্যেও একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। সে বুঝতে পারে না এমন লাগছে কেন। আনান আলতো করে সুপ্তিকে নিজের বুকের কাছে টানে। চুম্বকশক্তির কাছে অনায়াসে সুপ্তি হয়ে যায় সমর্পিতা।
সুপ্তি ভেবে পায় না এর চেয়ে মধুর, এর চেয়ে গভীর কোনো ভালোবাসা হয় কিনা। অপূর্ব এ ভালোবাসা। বিগত এতো বছরে রুমন তাকে যা দিতে পারে নি, তার চেয়ে ঢের ঢের বেশি, অসম্ভব, অতুলনীয় ভালোবাসার স্বাদ দিয়েছে আনান।

এরপর কমতে কমতে একদিন সুপ্তি বুঝতে পারলো রুমনের জন্য ওর মনে আর একবিন্দু ভালোবাসাও বেঁচে নেই- যা আছে তা কেবল আনানের জন্য।

১৫ অক্টোবর ২০০৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×