somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন মানুষ যেভাবে কবি হয়ে ওঠেন; কেন কবিতা লিখি

১৩ ই মে, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার মনে পড়ে, যখন আমাদের পেটে ভালোমতো দানাপানি পড়তো না, নিরন্তর ক্ষুধার ভেতর ঘুমও কোনো সুখ দিত না, মা-বাবার খিটখিটে মেজাজের সামনে আমাদের বয়স খুঁড়িয়ে হাঁটতো, আর আমার ধণাঢ্য বন্ধুরা মোটাতাজা দেহে তরতরিয়ে ছুটে বেড়াতো- ওদের প্রতি কারণে-অকারণে ক্ষোভ হতো; আমি তখন কবিতা লিখতে শুরু করি;

ক্লাসের সুন্দরী মেয়েরা আমার মেধার ভূয়সী প্রসংশা করতো; উচ্চনম্বরের গ্যারান্টি সমেত আমি ওদের উন্নত জাতের নোট করে দিতাম; বিনিময়ে একটা ‘শুষ্ক ধন্যবাদ’ ছাড়া আর কিছুই ওরা আমাকে দেয় নি; আমার কঙ্কালসার শরীর আর ছেঁড়া পোশাকে দারিদ্র্যের চিহ্ন সুস্পষ্ট ছিল; আমার প্রিয় বন্ধুরা প্রায়ই ওদের হাত ধরতো, ওরা খলখল করে হাসতো; ও-সময়ে আমি বোধনের কবিতা লিখেছিলাম; বান্ধবীরা ভাবতো- বড় হয়ে আমি কবিতা লিখেই খাবো; বস্তুত, কবিতা ছাড়া কবির কোনো ধন নেই; কবিতা খাওয়া যায় না;

আমার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে গেলো; কবিদের ভবিষ্যত নেই; তাঁরা টিউশনিও করতে পারেন না; তখন আমি আরও কিছু গভীর কবিতা লিখতে পেরেছিলাম বলে মনে করি;

শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শয়নকক্ষে কবিতা লিখতে বসে দেখি- এখন আমার কবিতা লেখার একদম প্রয়োজন নেই; সময়ের অপচয়, ব্রেইনের ক্ষয় ছাড়া এটা অন্য কিছু নয় একেবারেই;

মূলত হতদরিদ্র হলেই কবিতা লেখা হয়, অ-দরিদ্রগণের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে; হাতে প্রচুর অর্থকড়ি এলেও কবিতা লেখা হয়ে থাকে; স্বমস্তিষ্কপ্রসূত, অথবা কেনা কবিতা পত্রিকার পাতায় ছাপা হতে দেখা যায়;

একজন দরিদ্র কবি সারাজীবন ধনবতী রূপসীর পাণিপ্রার্থনা করে অসফল হোন; কবিতায় কিছুটা মন গললেও কবিতা খেয়ে জীবনধারণ হয় না; তাই কবিতা ধনবতী নারীকে খুব একটা আকৃষ্ট করতে পারে না- আর যাই হোক, কবিতা ফ্যাশনেবল কোনো সামগ্রী নয়; ধনবতী নারীরাও অবশ্য কখনো সখনো কবিদের ভালোবেসে ফেলেন, সেটা ঝোঁকের মাথায়; কোনো কোনো নারীর কাছে কবিদের সাথে প্রেম এক ধরনের বিলাসিতা;

আমি দেখেছি, উঠতি বালকেরা কবিরোগে আক্রান্ত হয় ব্যাপক; এটা টিন-এজ সময়ের দোষ কিংবা যুগের চাহিদা;

একটা পত্রিকার মালিক হতে পারলে, কিংবা সম্পাদক, কিংবা সাহিত্যের পাতা নিজের দখলে থাকলে কবিতা লিখতে ও ছাপতে বেজায় সুবিধা পাওয়া যায় সম্ভবত; ইন্টারনেট সুবিধা থাকলেও ওয়েব্লগে কবিতা লেখার চর্চা করা যায় দিনরাত, অফিসের কাজ বাদ দিয়ে হলেও;

বঞ্চিতরা কবিতা লিখে বিপ্লব সংগঠন করেন, কবিতা তখন স্লোগান; তখন কবিতার অপর নাম আন্দোলন; কবিতা তখন প্রতিবাদের ভাষা; সমাজ সংগঠনের জন্য, কিংবা স্বাধিকার অর্জনের জন্য কবিতা কখনো কখনো হাতিয়ারের রূপ পরিগ্রহ করে;

যাঁরা দুর্বলচিত্ত, শোষকের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে অপারগ, তাঁরাও কখনো কখনো কবিতার আশ্রয় গ্রহণ করেন; পরোক্ষভাবে শাসকের বুক বরাবর কবিতার তির ছুঁড়ে মেরে কবি তখন জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়ান; জীবনের মূল্য কবিতার চেয়ে অনেক বেশি; একটা জীবনের সাথে অনেকগুলো জীবন জড়িত থাকে;

আবেগতাড়িত না হলে কবিতা লেখা যায় না; সুখে, দুঃখে, বিজয়ে, পরাজয়ে, হর্ষ ও বিষাদে, প্রাপ্তিতে কিংবা প্রিয় কিছু হারিয়ে গেলে আবেগের জন্ম হয়, অর্থাৎ আমরা তখন কবিতার উন্মেষ ঘটতে দেখি;

সিনিয়র জর্জ বুশ, মার্গারেট থ্যাচার কি কোনোদিন কবিতা লিখেছেন? রাষ্ট্রপতিগণও মাঝেমধ্যে কবিতা লিখে থাকেন বটে; সুন্দরী নারীরা কোনোদিন কবিতা লেখেন না, যদ্যপি লেখেন, বুঝবেন তাঁদের কিছু নিদারুণ ঘা রয়েছে; প্রিন্সেস ডায়ানা কবিতা লেখেন নি; ঐশ্বরিয়া রাইকে কোনোদিন কবিতা লিখতে হবে না- বিশ্বের তাবত কবিপুরুষ তাঁর বন্দনায় মশগুল; তিনি অবশ্য কোনোদিন খোঁজও নেবেন না, পদতলে কারা রেখে গেলো এতো এতো কবিতা ও অর্ঘ্য;

সত্যিকারের দায়বদ্ধতা থেকে কবিতা লেখেন অনেকে; দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি, মানুষের প্রতি অপরিসীম মমতায় কবিতা লেখেন প্রকৃত কবি; কেউ কেউ দেশ-জাতি-শিল্প-সাহিত্যকে ‘উদ্ধার’ করার মানসে কবিতা লেখেন; লোক-দেখানো দেশপ্রেম ফুটে উঠতে পারে কারো কারো কবিতায়;

কবিতা লিখতে লিখতে কারো কারো আঙুলে দাগ পড়ে যায়, এবং হৃৎপিণ্ডে এক ধরনের ছারপোকা বাসা বাঁধে; কারো কারো অসুখ হয়, যার নিরাময় শুধু কবিতায়;

কবিতা না লিখলে কারো কারো দম বন্ধ হয়ে আসে; কবিতা না লিখে থাকা যায় না বলেই অনেকে ক্রমাগত কবিতা লেখেন; জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, পানসে, একঘেঁয়ে হয়ে যায় কবিতা না লিখলে; বেঁচে থাকবার জন্য কবিতায় নেশাগ্রস্ত হোন অনেকেই; কবিতার চেয়ে বড় নেশা খুব কম দেখা যায়;

কেউ কেউ এমনি এমনি কবি হয়ে উঠতে পারেন, কোনো কারণ ছাড়াই; মনের আনন্দে কবিতা লেখেন, কেউবা অবসর যাপনের জন্যও লেখেন কবিতা; যন্ত্রণা ও প্রবঞ্চনায়, ব্যর্থতা বা প্রতারণার ঘাতে কবিতা লেখেন অনেকে; অনেকে ঈশ্বর থেকে অলৌকিক ধী-শক্তি প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, এবং প্রভূত জ্ঞানের কবিতা লেখেন; তিনি স্বভাব-কবি, কবিতা লেখা তাঁর জন্মগত অভ্যাস; তবে কবিতা লিখবার জন্য প্রতিভা অপরিহার্য নয়- কিছুই না বুঝেও কেউ কেউ কবিতা লিখে থাকবেন, হয়তোবা;

জীবিকার জন্য কবিতা লিখতে হয় কাউকে; কবিতা লিখতে লিখতে ক্রমশ নিঃস্ব, ক্ষয় ও প্রয়াত হোন কেউ কেউ; কোনো কোনো কবি জন্মান মুখে দিয়ে সোনার চামচ, সোনার কলমে লেখেন যুগবিজয়ী, কালোত্তীর্ণ কবিতা;

ভালো না লাগলে কবিতা লিখি, ভাল লাগলেও লিখি।
প্রেমে পড়লে কবিতা লিখি, প্রেম হারিয়ে গেলেও লিখি।
সিঁথিকে কোনোদিন পাওয়া যাবে না, তাই সিঁথির জন্য কবিতা লিখি।
সোমার জন্য কবিতা লিখি- সোমা হারিয়ে গেছে।
মায়ের জন্য কবিতা লিখি; বাবার জন্য, বোনের জন্য, ভাইয়ের জন্য কবিতা লিখি।
প্রিয়তমা স্ত্রীর জন্য, সন্তানের জন্য কবিতা লিখি।
দেশের জন্য, মানুষের জন্য কবিতা লিখি।
গানের জন্য, গল্প বা কবিতার জন্য কবিতা লিখি।
অমর হবার বাসনায় কবিতা লিখি।
কবিতা না লিখলে মরে যাবো, তাই কবিতা লিখি।
অনেক সময় কোনো কারণই খুঁজে পাই না, কেন একটা কবিতা লেখা হয়ে গেলো।

আরও কতো কতো কারণে কবিতা রচিত হতে পারে; কখনো কখনো ইতিহাস হবার জন্যই একটা কবিতার জন্ম হয়; সেটা খুব অক্ষয় কবিতা; যার প্রতিটা চরণ সোনার হরফে ক্ষোদিত হয় কালের পাতায়; সেই কবিকে তখন আর দরিদ্র কবি বলা যায় না কোনোভাবেই।

১৮ এপ্রিল ২০১০ রাত ১০:৪৫
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৪ সকাল ১০:০৬
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×