somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা

৩০ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কবিতা সংগ্রহ ও সম্পাদনা
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

প্রচ্ছদ : কাল্পনিক_ভালোবাসা

ছবি: যেসব ছবিতে শিল্পীর নাম লেখা নেই, সেগুলো হয় সংশ্লিষ্ট কবি কর্তৃক সংগৃহীত, অথবা আমি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করেছি; তবে বেশিরভাগ ছবিই এডিট করে এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে।

কবিতা শুরুর আগে

‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ বা ‘শ্রেষ্ঠ’ কথাগুলোয় অনেকের অপত্তি রয়েছে; কেননা, একজন কবির কাছে তাঁর কবিতামাত্রই শ্রেষ্ঠ; কোনো একটা কবিতাকে শ্রেষ্ঠ বলা হলে অপরাপর কবিতা অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু কবিদের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’র বই প্রকাশ করার ইতিহাস নতুন নয়। রবীন্দ্র-নজরুল থেকে শুরু করে হুমায়ুন আজাদ পর্যন্ত খ্যাতিমান কবিরা শ্রেষ্ঠ কবিতার বই প্রকাশ করেছেন। একজন কবি জীবনে ৫০০টি কবিতা লিখে থাকলে ৫০০টি কবিতাই গুণগতভাবে সমান মানসম্পন্ন হবে, এমনটা ভাবা মনে হয় ঠিক নয়।

একজন কবি কি নিজে জানেন না তাঁর দুর্বল কবিতা কোন্‌টি বা কোন্‌গুলো। এজন্য দিনের পর দিন, যখনই সময় পান, দুর্বল-নির্বিশেষে সব কবিতাই তিনি পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করতে থাকেন। রবীন্দ্রনাথও ক্রমাগত পরিমার্জন করতেন। দ্বিতীয় বা তদ্‌পরবর্তী সংস্করণসমূহে প্রথম প্রকাশিত কবিতায় অনেক পরিবর্তন বা পরিমার্জন লক্ষ করা যেতো। কখনো কখনো এ পরিমার্জিত কবিতাটি নতুন আঙ্গিক ও ভাবে আবির্ভূত হতো।

কবি তাঁর সাবলীল ও প্রিয় কবিতাগুলো সম্পর্কেও সম্যক অবহিত। ভালো কবিতাগুলো বার বার পড়েন, এতে প্রচুর আনন্দ ও তৃপ্তি পেয়ে থাকেন, তেমনি এসব কবিতায় কোনো খুঁত থাকলে তা তিনি দূর করতে সচেষ্ট হোন।

কবির কাছে তাঁর কোন কবিতাটি সবচেয়ে বেশি প্রিয়, কোনো কবি হয়তো এভাবে কখনো ভাবেন নি। ঠিক এ ভাবনা থেকেই ‘ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা’ সংকলন পোস্ট তৈরি করার ধারণা লাভ করি। ব্লগে নানান ধরনের সংকলন পোস্ট প্রকাশিত হতে দেখা যায়, উদাহরণ স্বরূপ মাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করা গল্প ও কবিতা সংকলন পোস্টের নাম বলা যেতে পারে। এসব সংকলন পোস্টে ব্লগারদের আবেগ, ভালোবাসা, উচ্ছ্বাস ও উদ্যম অন্য সাধারণ পোস্টের চেয়ে অনেক বেশি লক্ষ করা যায়।

আমি যতটুকু দেখতে পেয়েছি তাতে মনে হয়েছে ব্লগে কবিদের সংখ্যা প্রচুর। কোনো কোনো কবি এক দিনে গোটা পাঁচেক, বা তারও বেশি সংখ্যক কবিতা প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ, কবিরা ক্লান্তিহীন। কবিরা প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। তাঁদের জন্য আরেকটি আনন্দদায়ক কাজ করা যেতে পারে- তাঁদের শ্রেষ্ঠতম কবিতাটি বাছাই করা। কবিরা এ যাবতকাল যতগুলো কবিতা লিখেছেন, তার মধ্য থেকেই তাঁদের শ্রেষ্ঠতম কবিতাটি বাছাই করবেন। ২১ মে ২০১৪ তারিখে এ নিয়ে ফেইসবুকে প্রথম স্টেটাস ছাড়া হয়। ব্লগার বন্ধুরা তাৎক্ষণিকভাবে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং তাঁদের সানন্দ ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কথা বলেন। এতে আমিও খুব উৎসাহিত বোধ করি। ব্লগে বর্তমানে যাঁরা এ্যাক্টিভ রয়েছেন, তাঁদের সবার কাছেই সার্কুলার পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করি। যাঁরা আগে এ্যাক্টিভ ছিলেন, বা বর্তমানে যাঁরা ব্লগে খুব কম আসেন, তাঁদের কাছেও মেসেজ পৌঁছে দিয়ে তাঁদের সেরা কবিতাটি সাবমিট করতে অনুরোধ করি। পুরোনো কয়েকজন ব্লগার অনেক আগে ব্লগ ছেড়ে দিয়েছেন বলে কবিতা দিতে চান নি, তবে তাঁরা উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তার পরও, বেশ কয়েকজন পুরোনো ব্লগার এতে অংশগ্রহণের জন্য এগিয়ে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত কবি ও ব্লগার, হাংরি আন্দোলনের কবি মলয় রায়চৌধুরীর কথা উল্লেখ না করলেই নয়। ‘জখম’ তাঁর সেরা কবিতা। এ কবিতার সফট কপি পাওয়ার জন্য তাঁর সাথে আমার বেশকিছু মেসেজ আদান-প্রদান হয়; আমি ইন্টারনেটেও খুঁজি। কিন্তু পাই নি। তবে, সামহোয়্যারইন ব্লগে ‘জখম’-এর উপর আলোচনা পোস্ট রয়েছে; আগ্রহী ব্লগারগণ সেটি পড়তে পারেন।

এ ধরনের পোস্টে অনেক শ্রমের প্রয়োজন। ব্লগারদের অদম্য উৎসাহে আমি আমার ব্যক্তিগত সময় নষ্ট করে এ কাজটি করার জন্য নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। এজন্য ব্লগারদের প্রতি আমার অজস্র ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

মজার অভিজ্ঞতা

ব্লগারগণ নিজেরাই তাঁদের সবচেয়ে ভালোলাগা কবিতাটি সাবমিট করবেন - প্রিয় ব্লগারদেরকে এ বিষয়টা বোঝাতে আমি চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলাম। এবং অনেক ব্লগারই এ কনসেপ্টটা বুঝতে পেরেছেন বলে মনে হয় নি। তাঁরা মনে করেছেন - কবিতাগুলো আমার পছন্দ অনুযায়ী নিলেই তো কাজ হয়ে গেলো!

আসলে ব্যাপারটা তা ছিল না। একজন কবি সারাজীবনে অনেক কবিতা লিখেন। অনেকে সর্বশেষ লিখিত কবিতাটিতেই সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়ে থাকেন। কিন্তু কিছুকাল পরে সর্বশেষ কবিতাটিও হয়তো পানসে হয়ে যায়। কিন্তু সমগ্র কবিতাসম্ভারে কবির এমন কিছু কবিতা থাকতে পারে, যার প্রতি তাঁর সবিশেষ অন্তরিকতা থাকে। তা ছাড়াও, রচনাশৈলি, ভাব, সব মিলিয়ে কবির কাছে সবচেয়ে নিখুঁত কোনো কবিতা থাকতে পারে, যেটি পড়ে কবি নিজেই মুগ্ধ হয়ে যান। আমি কবিদের কাছে এমন কবিতাই চেয়েছিলাম। ‘শ্রেষ্ঠ’ কথাটিতে হয়তো আপত্তি থাকতে পারে- কিন্তু সবচেয়ে ভালোলাগা কবিতা থাকা সম্ভব। কবিদের সেই সবচেয়ে ভালো লাগা কবিতা নিয়েই এ পোস্ট। কিন্তু আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগা কবিতা নিয়ে এ পোস্টটি নয়- এ নিয়ে মেসেজিং করতে করতে আমাকে প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে।

পোস্ট বা সংকলন বইয়ের নাম এরকম হতে পারতো- ‘সামহোয়্যারইন ব্লগের শ্রেষ্ঠ কবিতা।’ সে ক্ষেত্রে কবি ব্লগারদের কোনো ভূমিকা নেই; তখন কবিতা নির্বাচনের সমুদয় দায়িত্ব সংকলকের। তখন বরং সংকলকের সাথে কবি মতামত বিনিময় করলে সংকলক বায়াস্‌ড হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কোনো একটা ব্লগের শ্রেষ্ঠ কবিতা নির্বাচন কোনো মুখের কথা নয়। এ কাজটা করার জন্য প্রথমত দীর্ঘ সময়ের দরকার- এক বছরও পর্যাপ্ত সময় নয় বলে আমি মনে করি। দ্বিতীয়ত, এ কাজটা একজনের পক্ষে করা সম্ভব নয়।

অনেক ব্লগারই তাঁদের ব্লগ পড়ে আমার যেটা ভালো লাগে সেটা নিয়ে নিতে বলেছিলেন, অনেকে এ নিয়ে অনেক জোরাজুরিও করেছেন। কেউ কেউ ৩-৪টা কবিতা জমা দিয়ে তা থেকে সেরাটা বেছে নিতে বলেছেন।

আমি নিজে কবিদের ব্লগ থেকে আমার ভালোলাগা কবিতাগুলো বেছে নিলে এটা ব্লগারদের স্ব-নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা হতে পারে না। আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টদায়ক, লজ্জাকর ও বিব্রতকর বিষয়টি ছিল- কোনো ব্লগারবন্ধুই বোধহয় অনুধাবন করেন নি যে, একা আমার পক্ষে শত শত ব্লগারের ব্লগ পড়া সম্ভব নয়। অনেকে আবার স্টেটাস ভালোমতো না পড়ে মেসেজে অনেক প্রশ্ন করেছেন। সময়ের অভাবে অনেককে সব প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব হয় নি। তবে, শতভাগ ক্ষেত্রে স্বয়ং কবি তাঁদের শ্রেষ্ঠতম কবিতাটি বাছাই করেছেন, যদিও ব্লগারদেরকে এ ব্যাপারে কনভিন্স করতে আমাকে প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে।

পুরোনো প্রায় সব ব্লগারের কাছেই মেসেজ পাঠানো হয়েছিল। অনেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিয়ে কবিতা দিয়েছেন, অনেকে সময়াভাবে কবিতা বাছাই করা সম্ভব নয় বলে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

খুব উন্নত মানের গ্রাফিকস আমি জানি না। যতটুকু পারি তা দিয়ে পিডিএফ করতে যেয়ে দেখি সাইজ ৩৫-৪০ এমবি হয়ে গেছে। এটাকে ভাগ ভাগ করে পোস্ট দিলে হয়তো সমস্যা একটু কমবে। এ উদ্দেশ্যে সবগুলো কবিতাকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

এর আগে ব্লগে এ ধরনের কোনো সংকলন পোস্ট প্রকাশ করা হয় নি। এবার এ পোস্টটির জন্য কাজ করতে যেয়ে কবিদের সেরা কবিতাটি পড়ার এক অভূতপূর্ব সুযোগ পেলাম আমি, যা আমার জন্য একটা অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সামহোয়্যারইন ব্লগের জন্য এটা একটা ইউনিক ডকুমেন্ট হিসাবেও চিহ্নিত হয়ে থাকবে।


সম্ভাবনার কথা

এই অভূতপূর্ব কবিতাসমষ্টি হাতে পাবার পর আমার ইচ্ছে প্রবল হচ্ছে- আগামী একুশে বইমেলায় এর একটা পুস্তক সংস্করণ বের করার। বড় আকারে সম্ভব না হলেও অন্তত এ থেকে নির্বাচিত কবিতা নিয়েও একটা বই প্রকাশ করার ইচ্ছে আমার আছে।

এই চমৎকার প্রচ্ছদটি আর কে আঁকতে পারেন? কাল্পনিক_ভালোবাসা। বই বের করা হলে তিনিই এর প্রচ্ছদ আঁকবেন- জাদিদ ভাইয়ের কাছে আমার এ দাবি থাকলো।

যাঁরা কবিতা দিয়েছেন, তাঁদের সবার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা।

***

প্রথম পর্বের পিডিএফ কপি


***||||***|||||***


রমিত
আজকের কালপুরুষ

কোটি জনতার আর্ত ওষ্ঠধর বারংবার হচ্ছে কম্পিত ,
আসুরিক শক্তির কাছে নতজানু হয়ে বড় বেশি উৎকন্ঠিত।
আমাদের চিৎকার নিরেট দেয়ালে ঠেকে,
বার বার ফিরে আসে আমাদেরই কানে,
বেদনার পংক্তিমালা দুখিনী কবিতা হয়ে,
বেজে ওঠে বিষণ্ণতায় অসন্তোষের গানে।

প্রতি বছরই একবার করে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে পৃথিবী,
আর আমরা যেখানে ছিলাম ঠিক সেখানেই থেমে থাকি।
স্থবিরতা ঘোষণা করে ভারী হয়ে থাকা গুমোট বাতাস,
মৃন্ময়ী ফাল্গুনি হাওয়ার সতেজতা পায় না, দু মুঠো আকাশ।

গোরস্থানে শুয়ে থাকা জীবন্ত মানুষগুলো সহসা শবদেহ হলো,
অস্বাভাবিক এতসব মৃত্যু কি আমাদের কাম্য ছিল?
অসহায়ত্বের গ্লানিতে, জাতি আজ লজ্জ্বিত,
নিরুপায় জনতা আর কত হবে প্রতারিত?

জনতার শেষ আশা, রুদ্র বোশেখির ঝড় হয়ে
নেমে আসবে এক স্বপ্নের কালপুরুষ,
ব্যঘ্র হুংকারে, তীব্র ঝাঁকুনিতে,
ফেরাবে জাতির হুঁশ।

তুমি নেমে এসো কালপুরুষ,
এদেশের মাটিতে মাটিতে, ক্ষেতের ফসলে কৃষক তোমাকে খোঁজে,
কলে-কারখানার যন্ত্রের খাঁজে খাঁজে শ্রমিক তোমাকে খোঁজে,
সংবাদপত্রের কলামে কলামে, পত্রিকার সাংবাদিক তোমাকে খোঁজে,
চর্যাপদের, অগ্নিবীণার মরমে মরমে কবিতার কবিরা তোমাকে খোঁজে,
উপন্যাসের কাহিনি ঘুরে, কথাশিল্পের কথক তোমাকে খোঁজে,
পথ হারিয়ে পথের মাঝে পথিক তোমাকে খোঁজে,
নাট্যশালার মঞ্চ কাঁপিয়ে, নাট্যশিল্পের নায়ক তোমাকে খোঁজে,
ব্যান্ড সঙ্গীতের আসর মাতিয়ে, কণ্ঠশিল্পের গায়ক তোমাকে খোঁজে,
মানুষ গড়ার কারিগর আদর্শ শিক্ষক তোমাকে খোঁজে,
নির্ভীক নিবিষ্ট মনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির সৈনিক তোমাকে খোঁজে,
রংতুলির আঁচড়ে কাঁটা বিচিত্র চিত্রের চিত্রকর তোমাকে খোঁজে,
কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মাত্র ক্যম্পাসে আসা ছাত্র তোমাকে খোঁজে।

তুমি ভাষাশহীদের নিথর দেহের শেষ আঁকুতির রত্ন,
তুমি শহীদ সৈনিকের জীবন্ত চোখের অনেক আশার স্বপ্ন।
তুমি নেমে এসে একটিবার বজ্রে বাজাও বাঁশি,
নেকড়েগুলোর আত্মা কাঁপিয়ে উঠুক সর্বনাশী।

তুমি নেমে এসো কালপুরুষ,
চোখধাঁধানো আলোয় তোমাকে দেখবো,
দেবদূতের পোশাকে সজ্জিত উজ্জ্বল রঙ্গণের বাহারে তোমাকে দেখবো,
যেমন দেখেছি নীলের জলে ভেসে যাওয়া সিন্দুকে নতুন আলোর ঝরনা,
যেমন শুনেছি বেথেলহামে এক অবুঝ শিশুর কান্না।

তুমি নেমে এসো কালপুরুষ,
এ দেশের এখানে-সেখানে, আনাচে-কানাচে,
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দেবশিশুদের জড়ো করো,
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে,
দাও এক নতুন মন্ত্রের প্রেরণা,
শেষ হোক সেই অসমাপ্ত গানের বেদনা।
উদগ্রীব হয়ে হয়ে দেখতে দাও এক নতুন মুগ্ধতাকে,
দুঃসময় থেকে সুসময়ে তুমি পৌঁছে দাও আমাদেরকে।

বিদ্রোহী কবির অগ্নিবীণা আরেকবার ঝংকৃত হোক,
আকাশ থেকে বজ্র হয়ে ঝরুক অগ্নিরাগ,
কথার ফুলঝুড়িতে বানিয়ে মিথ্যে বলা
ঐ জিভগুলোকে ছিঁড়ে ফেলে টেনে,
বক্তৃতা দাও সত্যবাদীর স্পষ্ট ভাষণে।

মার চোখ খুঁজে ফেরে সেই কালপুরুষের ছায়া,
যিনি চিৎকার করে বলবেন,
আমার আকাশ, আমার বাতাস,
আমার মাটি, আমার জল,
আমার দেশ, আমার জনতা,
আমি তোমাদের ভালোবাসি।

পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গিয়েছে, যখনই কোনো দেশ বা সমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে, তখনই সেখানে নেমে এসেছে ভয়াবহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা আগমন হয়েছে কোনো মহামানবের যিনি নিজগুণে সেই দেশ বা সমাজে নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছেন। আমরা ভয়াবহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ কামনা করি না, আসুক কোনো মহামানব যিনি আমাদের একটি সুন্দর সমাজ উপহার দেবেন।

***

স্নিগ্ধ শোভন
দেয়ালিকা

দেয়ালের কোণে ছড়িয়েছে মাকড়শার জাল
জমেছে আমার অযাচিত জীবনে ধুলোর স্তূপ,
খসেপড়া দেয়ালে কালের ভাসমান ছাপ
এক একটা ঝরেপড়া প্লাস্টারে আমার বিবর্ণ অতীত।

তোমার বিহনে আর কাঁদবো না বলে,
আমি আজ একটু ঘুমাবো বলে,
রাতের আঁধারে বৃষ্টির ফোঁটায় ধুয়ে নিয়েছি কিছু বিষাদী সময়।
কতরাত আমি ঘুমাই নি?
অথচ সে প্রশ্নের উত্তর নিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে আছে আমার বিছানার বালিশ!
আর আমি লিখছি বসে হাজারটা কবিতা
সময়ের ঐকতানে লিখে চলেছি আমার অযাচিত রোজনামচা।
কখনও কখনও তুমি রয়েছিলে আমার নিকট হতে
যোজন যোজন দূরে তারাদের বাগিচায়
তোমার নিষ্পলক চাহনিতে হারিয়ে ফেলছিলাম আমার রাতের আঁধার।
***

ব্ল্যাক_ডাইমণ্ড
সভ্যতা

সাত হাজার বছর ধরে
ক্রমাগত বেড়ে চলেছি
অন্ধ গুহা থেকে সুদূর মহাকাশ অবধি
ম্যারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে হিমালয়ের চূড়া
ক্রমেই বাড়িতেছে ক্ষুধা।

প্রতিদিন খেয়ে চলি পাহাড়, নদী, সাগর
টগবগে যুবক আমি
সামান্যে তাই ভরে না উদর
গোগ্রাসে গিলে চলি মাঠ, বন, নগর।

শতাব্দী শতাব্দী ধরে বদলেছি রূপ
হাজার বিপ্লবীর রক্ত মেখে
আমারই মাঝে বসে রুখতে চেয়েছে আমাকে
পারে নি দমাতে সর্বগ্রাসী স্রোত
প্রতিদিন মুখে পুরি এক একটি জনপদ

চলেছি বিশাল থেকে বিশালতার পথে
ক্রমাগত নিজের পাতা ফাঁদে
ফিরবার পথ আজ রুদ্ধ
জানি ধ্বংস অনিবার্য

অনেক দূর এসেছি আমি
খাবার বিশেষ নাই
নিজ দেহের উপর পড়েছে দৃষ্টি
এই ছিল নিজ হাতে গড়া নিয়তি
খাবো এবার নিজেকেই
সাত হাজার বছরের ক্লান্ত আমি

***

সাবরিনা সিরাজী তিতির
কবিতার মায়াজাল

এই শোনো,
টিপ পরতে ইচ্ছে করছে
তোমার পাঞ্জাবির একটা ভাঙা বোতাম দেবে?
নইলে একবিন্দু শিশির দাও
কথা দিচ্ছি আর বৃষ্টিতে ভিজবো না
এই চোখে সাঁতার কাটবে?
হবে বিরহী নদীর ঢেউ?

একটা নিশ্বাস দেবে?
কিম্বা একটা পায়ের ছাপ
একবার নীরা ডাকবে?
ভুলে যাবো সুনীলকে
তুমি চাইলে জীবনানন্দকেও খুঁজবো না

বুকের ভিতর ভীষণ অন্ধকার!
একটা দস্যি জোনাক দেবে?
ঝুম বরষায় পথভোলা এক ফড়িং হবে?
আমার আমিকে ছোঁবে?
এই শোনো,
একবার ডাকবে প্রিয় নামে?
লাবণ্য বা পরি!

***

কাল্পনিক_ভালোবাসা
প্রতিনিয়ত ভালোবাসার বিশ্ব দিবস

প্রিয় নীলা,
কখনও নীলিমা কিংবা আকাশনীলা বলেই ডেকেছি তোমায়,
যখন উত্তরের শীতল বাতাসে জুবুথুবু জনজীবন
তখন তোমার আধো খোলা ঠোঁট দেখে উপভোগ করেছি,
চৈত্রের তপ্ত দাহন।

যখন প্রবল শীতের রাতে
আমি শৈত্যযুদ্ধের সম্মুখীন
তখন তোমার দুটি হাত ছিল,
আমার উষ্ণতার প্রধান অস্ত্র শিবির।

হাত ধরে কত হেঁটেছি আমরা এই নগরের পথে পথে, ফুটপাতে,
শত রক্তচাহনি আর মানুষের হিংস্র চোখ উপেক্ষা করে।
ক্যলেন্ডারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে
প্রতিটি দিনকেই পরিণত করেছিলাম
আমরা এক একটি ভালোবাসার বিশ্ব দিবসে।

তোমার অতল কালো গভীর চোখ, যেন চির সম্মোহনের টেলিভিশন।
যেখানে প্রতিনিয়ত চলে ভালোবাসার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র
যার একমাত্র দর্শক আমি এবং আমিই করি তা দর্শন।

আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস,
ভালোবাসা কাতর মানুষগুলোর ভালোবাসা পাওয়ার বিশ্ব দিবস।
তোমার আমার পুরানো খেলা, নতুন করে খেলবার দিবস।

আজও আমার প্রভাত হয়েছে তোমার কণ্ঠরাগে
চিরচেনা সে নিরেট কপালে লাল সূর্য-টিপ দেখে।
আজও পথে তাই চলছি মোরা দুটি হাতে রেখে হাত,
ভালোবাসা দিবস...
সে যে,
তোমার আমার ভালোবাসাময়
লক্ষ দিবস রাত।

***

ইখতামিন
অপেক্ষা...

মন খারাপের পাখি
আমার নির্ঘুম রাতের সাথি
প্রত্যহ তোমাকে বিদায় জানাই। প্রভাতে
দূর গ্রামের রেল-কৃষ্ণকায়া গ্রহণ করে না তোমায়
নাকি তুমি অনেক পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত
তাই স্টেশনের দেখা পেয়েছো অনেক দেরিতে
ভোরের ট্রেন যে ছেড়ে গেছে অনেক আগেই
গন্তব্যহীন পথিকের মতো
উদ্দেশ্যহীন, পড়ন্ত বিকেলে
আমার আবাসে ফের রাত্রি যাপিতে
শূন্য গৃহের আতিথ্য মন্দ কী হে
আমার অতিথি; বিজন রাতের পাখি
প্রতিদিন আর ফিরবে না বলে চলে যাওয়া
তবুও প্রতি সন্ধ্যায় ফিরে ফিরে আসা

***

শায়মা
অমীমাংসিত ভালোবাসা

নির্মলেন্দু গুণের অমীমাংসিত রমণীর মত,
তুমিও আমার এক অমীমাংসীত পুরুষ।
সেই কবিতার খোকাভাই আর তোমার নামের মিল দেখে
চমকে উঠেছিলাম আমি।
আমিও সুনীলের কবিতার নায়িকা নই,
তবুও
কী অদ্ভুত এক উপায়ে;
আমার ডাকনামটাও মিলে গেলো
তার কবিতার মেয়েটার নামের সাথে।

সাতটা বছর!
কম সময় নয়,
তবুও, তবুও কেন আজও
আমার কবিতা মানেই তুমি?

আমার কবিতা মানেই
আমাদের সেই ছাদ,
বকুলতলা,
ফুল কুড়িয়ে মালা গাঁথা-
কেউ শুনলে বলবে বড্ড সেকেলে
কিন্তু সেটাই যে আমাদের সত্যি।

তুমি খুব চুপচাপ আর শান্ত গভীর ছেলেটা
কি করে যে চলে এলে, একবাড়ি মানুষের মাঝে,
ঠিক আমার হৃদয়েরই কাছটিতে
খুব কাছে।

সে এক চির অজানা রহস্য!
খোকাভাই,
কখনও কি মনে পড়ে তোমার?
একদিন এক পড়ন্ত বিকেলে
ইটের টুকরো কুড়িয়ে,
ছাদের দেওয়ালে এক কোণে,
লাল লাল হরফে লিখেছিলে
খোকা+নিরু?
কী ছেলেমানুষী কাণ্ড!
ভাবলে বড্ড হাসি পায় এখন।

পরদিন দুপুরে তুমি কলেজ থেকে ফিরতেই
চাচিমা কান ধরে হিরহির করে টেনে নিয়ে গেলো ছাদে,
তার আগেই আমার তলব পড়েছিল সেখানে।

তারপর অজস্র বকুনি আর ঘড়া ঘড়া জল ঢেলে
মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি
আমাদের সেই ভয়ংকর ছেলেখেলার স্মৃতি।

বিধাতা কি আড়ালে মুচকি হেসেছিলেন সেদিন?

জানো, বিয়ের পর,
তুমি তখন বিবাগী, নিরুদ্দিষ্ট,
একদিন সন্ধ্যায় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে,
আমার ভালোমানুষ স্বামী বললেন,
‘বড্ড গরম পড়েছে-
চলো, ছাদে বেড়িয়ে আসি।’

সেদিনও ছিল গোধূলিলগ্ন।
আমরা ছাদের ঠিক সেই কোণটাতেই গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমার চোখ অলখে চলে গেলো সেই দেওয়ালটাতেই।
খুব অস্পষ্ট কিন্তু তবু জ্বলজ্বলে
দেখা যাচ্ছিল অক্ষরগুলো।
যেখানে একদিন তুমি লিখেছিলে,
একটি চিহ্নের বাঁধনে
দুটি নাম।
খোকা+নিরু।

আমি ভয়ে ভয়ে আড়চোখে তাকালাম সেদিকে।
ঘড়াঘড়া জল, প্রখর রৌদ্রতাপ আর প্রবল ঝড়ঝাপ্টাও
নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে নি সেই নাম।
খুব ঝাপসা কিন্তু দেওয়ালের রুক্ষপ্রস্তর
দৃঢ় কঠিন ভাবে,
তার পাষাণ হৃদয়ে ধরে রেখেছে দুটি নাম।

***

লাবনী আক্তার
কৃষ্ণচূড়া

আমার প্রিয় একটা ফুল কৃষ্ণচূড়া
আমি তোমার নাম দিয়েছি কৃষ্ণচূড়া
কৃষ্ণচূড়া বলেই এখন তোমাকে ডাকি।

সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে কি তোমার?
আমার মনে পড়ে
জানো, সেই দিনগুলো আমার আজীবন মনে থাকবে
কষ্টের যে তীব্র যন্ত্রণা...
আমার চেয়ে আর কে ভালো জানে?

তখন আমার বুকের ভেতর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল
না, তোমার বোঝার কথা না
বুকের ভেতর যে হাহাকার
নিদারুণ কষ্ট আমি সহ্য করেছি
সত্যিই তা তোমার বোঝার কথা না।

তবে হ্যাঁ, আমি সেই দুঃখগুলো ভুলে যাই
ভুলে যাই বলেই তো ফিরে আসি তোমার কাছে
আমার অনন্ত অম্বরে শুধু তুমি- হ্যাঁ শুধুই তুমি
কিন্তু একটা সময় পার করে দেখি
আমার অম্বর পুরোটাই খালি।

সুখের স্মৃতিগুলো হাতছানি দিয়ে
বার বার কাছে টানে
কৃষ্ণচূড়া কেমন আছো, ভালো?
আমিও ভালো আছি।

না, জিজ্ঞেস করবো না কী পেয়েছো?
জিজ্ঞেস করবো কিছু কি হারিয়েছো?
একটা সময় গিয়েছে আমার যে
চোখের জল চোখেই শুকিয়েছে।
এটা যে কী কষ্টের ছিল
না না বুঝবে না।

সময়ে অসময়ে শুধু ভাবি
কাকে?
বলো তো কাকে?
কারণ আমার বাঁচার প্রেরণা দেয় আমার ভাবনা
লাভ-লোকসান হিসেব করি না।

আমি জানি তোমার বুকের মাঝেও
একরকম কষ্ট হয়
আমার ভালোবাসা তো আর মিথ্যে ছিল না
তবে কেন এই দুঃখবরণ জানি না
তুমি তো আর বললে না।

শ্রাবণ মাস
শ্রাবণের কোনো এক সময়
আমার ভালোবাসার বাগানে ফুল ফুটেছে
আর ঠিক ক’মাস পর আমার ভালোবাসার বাগান থেকে
সবচেয়ে প্রিয় পাখিটি শেকল কেটেছে।

যখন ঝর ঝর বৃষ্টি হয়
সত্যি বলছি-
তোমাকে ভীষণ মনে পড়ে
‘বৃষ্টি যাও তার অধর ভিজিয়ে দাও’
- খুব বলতে ইচ্ছে করে।

ইচ্ছে ছিল- তুমি আর আমি পাশাপাশি বসে চাঁদ দেখবো
কিন্তু দুঃখ শুধু একটাই
আমার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়ে গেলো।

সেই কণ্ঠস্বর এখনও বাজে আমার কানের কাছে
একবার কি বলবে সেই কথাটা
তিনটা শব্দ কী অসাধারণ শক্তি
তা বোঝাতে পারবো না
ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।

***

সোহরাব সুমন
শুধু তুমি কবিতা

একটা কবিতাকে আমি বহুবার আবৃত্তি করি,
আবৃত্তি করতে পারি যতোদিন বাঁচি;
তোমাকেও তেমনি... তাই তুমি কবিতা।
গদ্যগুলো যতো আছে আমি বড়জোর একবার পড়েছি
কিংবা দুবার তিনবার ...
কিন্তু কবিতার মতো বহুবার আবৃত্তি করতে
তুমি ছাড়া আর কিছুই পাই নি
কিছুই খুঁজি নি
কিছুই খুঁজি না;
তাই তুমি কবিতা
শুধু তুমি কবিতা

***

নীরব 009
মেঘ বৃষ্টি প্রেম

মেঘমালারা তথাপি মেঘ দেখে, জলের বুকে
মেঘ নিয়ে যায় জলের কণাদের, ভালোবেসে

জলে মেঘে বেশ গল্প থাকে
গল্প থাকে না এই নগরে
অষ্টপ্রহর প্রেম থাকে না
রোদ থাকে সে নগর জুড়ে

মেঘ জলের শীতল প্রেম ছুঁয়ে যায়, নগরে
মানুষ ক্রমশ আড়াল হয়, বৃষ্টি শেষ হলে।

***

রাতুল শাহ
মুক্তির জন্য আর্তনাদ...

চোখের দৃষ্টিতে অসহায়ত্বের ছায়া,
আর পথের চলনে কাঁপন,
থর থর পায়ে এগিয়ে যাওয়া,
চলনে আছে যতন।
তবে কি হায়,
আছে যে ভয়,
কেউ হয়তো এখনি বলবে,
অশালীন কিছু বচন।
পথে আটকে, পা দু’খানি,
কান শুনে কিছু অসভ্য বাণী।
ঝরে অশ্রুজল।

বুকের ভিতর লজ্জা গোপন,
যা শুনে তা বলতে বারণ।
পরিবার!
শেষ আশ্রয়স্থল,
সেখানেও তার অসহায়ত্ব বরণ।
কী করবে, যাবে সে কোথায়?
সে বড় একা, অসহায়।
চার দেওয়ালে তার বন্দি জীবন।
মুক্তির আশায় আর্তনাদ তার,
চার দেওয়ালের মাঝে দুয়ার খোঁজে বার বার,
মিলে না কোনো মুক্তির পথ।
তবে কি কেউ,
জানবে না তার ব্যথা?
বুঝবে না কেউ ধূসর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা,
বুকের ভিতর হাহাকারের ভাষা?
তবে কি তার রাগ-অভিমান,
দুঃখ সকলই বৃথা?
তাই যদি হয়,
বোনেরা তোদের বলি,
নেমে আয় রাজপথে,
ঝেড়ে ফেল সব পিছুটান,
ভেঙে ফেল সব ভয়।
অসহায়ত্বের আবরণ ছিন্ন করে
প্রতিবাদে নিয়ে আয় মুক্তির জয়।
কত দিবি আর
নিজে নিজে প্রাণ।
যুদ্ধে তোর মরণ হলেও,
একদিন শুনবি মুক্তির জয়গান।

***

বশর সিদ্দিকী
প্রিয়তমা

প্রিয়তমা
কবি নজরুল বলে গেছেন
বল বীর, চির উন্নত মম শির,
আমি তো এখনো তোমার মনের বীরই
হইতে পারলাম না শির উন্নত করমু কবে

প্রিয়তমা
ব্রাজিল সাপোর্টাররা বলে ব্রাজিল শ্রেষ্ঠ
আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা বলে আর্জেন্টিনা শ্রেষ্ঠ
তুমি শুধু আমারে একবার ভালোবাসি বলো, আমি শুধু
তোমারেই সাপোর্ট করমু, তুমিই হইবা আমার শ্রেষ্ঠ

প্রিয়তমা
পরীক্ষার আগের রাইতে প্রশ্ন ফাঁস হয় আর
সেই ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়া লাক লাক গোল্ডেন পায়
অথচ তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা দেয়ার
আগে একবারও প্রশ্নটা ফাঁস হইলো না

***

আদনান প্রীতম
এই আমি

স্বার্থপর এই পৃথিবীতে এসেই দেখেছি
বিবর্ণ শুকনো পাতার মতো
ভাঙাচোরা সম্পর্ক।

জমকালো আয়োজনের বিপরীতে
লুকিয়ে থাকা হায়েনার মতো দৃষ্টি!
নিমিষেই ভেঙে দেয় সমস্ত স্বপ্ন।

এই আমি, কত নির্ঘুম রাত জেগে
নিঃশব্দে এঁকেছি জোৎস্নাবাসর,
সবই ভেঙে যাবে কোনো এক দীর্ঘশ্বাসে।

এই পৃথিবী, এই সম্পর্ক
অর্বাচীন আনন্দে হেটে যাবে অবিরাম!
কিন্তু আমি?
সেই সব সম্পর্কের চাকায় পিষ্ট হব।

এত কোলাহলের মাঝে, নিঃসঙ্গতার অভিমানে ধ্বংস হব।

***

মশিকুর
আমার প্রেমিকারা

শহরের নিষ্পাপ প্রজাপতিরা হৃদয়ে পরশ বুলিয়ে যায়,
রেখে যায় হৃদয়ে কাঁপন ধরানো নিষ্পাপ স্নিগ্ধতা।
প্রেমিকারা কি তবে প্রজাপতির মতন?
নাকি গাছের সজীব পাতার মতন?
কেউ ঝরে পরে,
কেউ নতুন গজায়,
কেউবা টিকে রয় বহুকাল।
নাকি প্রেমিকারা রঙিন ঘুড়ির মতন?
কেটে যাওয়া পর্যন্ত উড়ে চলে নীলের বুকে,
বেখেয়ালি প্রেমিকের নাটাইয়ের টানে।

নাকি প্রেমিকারা থাকে কবিতার আড়ালে?
পাখি হয়ে গান গায়,
ফুল হয়ে গন্ধ বিলায়,
বৃষ্টি হয়ে কাঁদিয়ে বেড়ায়!

প্রেমিকারা ভালো থাকুক, যেখানেই থাকুক।

***

মামুনুর রহমান খাঁন
অনুতাপ

আজকে আমার সমাধিতে কেন ফুল হাতে তুমি বলো?
মুখখানি কেন বিরস তোমার আঁখি কেন ছলছল?
যেদিন তোমার ফুল চেয়েছি সকরুণ আঁখি মেলে,
অসহায় এই আমায় তুমি গিয়েছিলে পিছু ফেলে।
তোমার চলে যাওয়ার পথে,
চেয়ে থেকেছি সুদূর হতে,
ভেবেছি তুমি আসবে রথে,
সব অভিমান ভুলে।
তোমার ফেরার আশায় আমার দিন ফুরায়ে গেলো।
শেষ বিদায়ের যাত্রা দেখে কী সুখ পেলে বলো?

***

*কুনোব্যাঙ*
শৃঙ্খলিত শব্দাবলি

শব্দশিকারি ছুটে যায়, শিকারকে শৃঙ্খলিত করবে বলে
ছুটে চলা শব্দ পালায়, শিকারি থেকে দূরে, দূর অতলে।
শিকারি করেছে পণ আজ কবির বেশে ধরবেই তাকে
কবি ছুটে যায় দূর থেকে দূর নিরুদ্দেশে, অজানার বাঁকে।

শিকার করো, শিকারির বেশে লিপি চিত্রিত করো,
তৃষ্ণার্ত চাতকের মতো শব্দমালা খুঁজে ফেরো
শৃঙ্খলিত করো, যে শব্দ পালিয়ে যায় তাকে ধরো।

গহিন থেকে গহিনে যাও, যাও তল থেকে অতলে
যেখানে শব্দ ছুটে বেড়ায় বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো
তাকে ছন্দে সাজাও, আছে শব্দমালা যতো
শৃঙ্খলিত করো ভালোবাসা বিরহ বিদ্রোহের ছায়াতলে।

যে শব্দ হারিয়ে যায়, হারিয়েই তো যেতো
অতলের ঠিকানায় সে লেখা চিরতরে লুকাতো,
পড়ে রইল যে! পড়েই থাকতো, সে লেখা তুলবে বলে
কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে!!

============
কবিতাটি কবি জয় গোস্বামীর ‘হৃদি ভেসে যায়’ কবিতার অনুপ্রেরণায় লেখা।
কবিতার শেষ দুই লাইন উক্ত কবিতা থেকে সংগৃহীত।

***

একজন আরমান
কী নাম দেবো তোমায়?

তুমি কি রবীন্দ্রনাথের শিশির?
নাকি সুনীলের নীরা?
নাকি তুমি আমার
অসময়ের বিভ্রম!

কে তুমি?
কী তোমার পরিচয়?
কই তোমার বসত?

আমার হৃদয়?
আদৌ কি সম্ভব?
ভালোবাসি বলেছি কখনো? তবে
কী করে আমার হৃদয়ে বসবাস করছো?

কতটুকু দূরত্ব? তবে বলো
কী করে সহস্র আলোকবর্ষ চকিতে পার হয়ে
আমি তোমার সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসি?

দূর হতেই কি তবে তোমায় ভালোবাসি?
চুম্বন ও অশ্রুজলে ভেজাতে চেয়েছিলাম কখনো?
ভালোবাসার দাবী ছিল কি শরীরে আর মনে?
শরীরকে উপেক্ষা করেও কি ভালোবাসি নি?

কে তুমি?
তুমি কি রবীন্দ্রনাথের শিশির?
নাকি সুনীলের নীরা?
নাকি তুমি আমার
অসময়ের বিভ্রম!

৩১/১০/২০১৩
সকালঃ ১১: ৪৫: ২২

উৎসর্গঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

***

ডি মুন
বলতে আসি - ভালোবাসি

ভালোবাসি বলেই
ভরা নদী শুকনো এখন
আকাশচারী স্বপ্নগুলো
অবহেলায় দুঃখী এখন;
তবুও আমি মরতে আসি
আগুনলোভী কীটের মতো
জ্বলতে আসি;
বলতে আসি- ভালোবাসি


***

কাগজের নৌকা (রাসেল হোসেন)
মেঘ ও মাটির একটি বর্ষ

এক গ্রীষ্মের কালবৈশাখে আমার দেশের
তপ্ত মাটির সাথে মেঘমালতীর এক ঝলক দেখা হয়ে যায়,
প্রথম দেখায় দু’জন দু’জনকে পছন্দ করলেও
একটু পরেই যে যার পথে হারায়;

তারপর থেকে মৃত্তিকা মহাশয় মেঘমালতীকে
খুঁজে খুঁজে খুব ক্লান্ত হয়ে দ্রোহের আগুনে ফেটে পড়ে,
মেঘমালতীও মাটির আলসেমি দেখে মুখ গোমড়া করে
কালো হয়ে আকাশের গায়ে জমতে থাকে;
মেঘ তো জানতো না যে মাটি মহাশয় নড়তে পারে না
প্রেমিকের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেই ভালোবাসার কথা জানায়
ঠিক বর্ষার প্রথম দিনে।

যখন মেঘ মাটির কষ্ট বুঝতে পারে
তখন মেঘ তার এত দিনের জমে থাকা অশ্রু দিয়ে
তপ্ত মাটির ফাটলগুলো মুছে দেয় নিজ হাতে।

একসময় নীল আকাশের সাদা মেঘের সাথে
সিক্ত মাটির প্রেম চলতে থাকে কাশবনের অলিতে গলিতে;

তারপর মাটি তার ফল-ফলাদি দিয়ে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করে,
মেঘমালতীকে প্রথম বারের মত তার বাড়িতে দাওয়াত করে,
কিন্তু না, মেঘমালতীর শাশুড়ি শীতের বুড়ি একমাত্র ছেলের প্রেমিকাকে
মেনে নিতে অপারগতা পোষণ করে, পুরো পৃথিবীকে অনুরোধ করে
কুয়াশার বলয় দিয়ে মাটিকে বেষ্টন করে রাখতে।
মেঘ ও মাটির কষ্ট দেখে কুয়াশা লজ্জা পেয়ে
ক্ষমা চেয়ে নিজে সাক্ষী হয়ে ওদের বিয়ের আয়োজন করে;

অবশেষে মেঘ ও মাটি কোকিলের সাথে ফাগুনের গান গাইতে গাইতে
হারিয়ে যায় বাংলা বর্ষপঞ্জিকার পাতায়।
ঠিক এভাবেই সমাপ্তি ঘটে আমার বাংলা আমার দেশ
আমার মায়ের পুরো একটি বছর।
০৭/০৮/১৩

***

তওসীফ সাদাত
নির্বাক স্বপ্নদ্রষ্টা

দু চোখ দিয়ে দেখছি আমি অদ্ভুতুড়ে খেলা,
মন দিয়ে বুঝতে ব্যর্থ ভূতুড়ে এই মেলা।
একটু এগিয়ে অগ্নিতাপে ছাই হচ্ছে সব,
পিছিয়ে পড়ে শীতল হয়, বড্ড অবাস্তব।

সুখ খুঁজে ক্লান্ত হয়ে পথিক দাঁড়ায় থমকে,
দুঃখটার মৃদু গন্ধ নেয় সে দ্রুত শুঁকে।
এক চুমুক তৃপ্তির আশে নতুন পথে নামে,
তেঁতো স্বাদে মুখ বাকিয়ে শ্রাপ দিতে বাঁধে।
এক কদম এগিয়ে আবার উটকো ঝামেলা,
আগাছা সব কেটে ফেলে নব্য বেশভূষা।
নগ্ন মায়ায় ত্যক্ত হয়ে বিরক্ত হয় বেশ,
ঝলমলে কোন নদীর তীরে স্বপ্ন হয় শেষ।
খেলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়, ক্লান্তি করে ভর,
সহযোদ্ধা হার মেনে হয়ে যায় পর।

মগ্ন হয়ে তাকিয়ে থাকা ছোট্ট চিরকুটে,
গড়িয়ে পড়ে মিথ্যে মায়া দারুণ সংকটে।

কলুষিত দেহে বাঁধা বন্দি কোনো সত্তা,
হাজার কথায়, মুখর থেকেও নীরব সে বক্তা।

সমুদ্রে গমন বোধ হয় বড়ই নিষ্প্রয়োজন,
নুড়ি পাথর গুঁড়ো করে, নিষ্পাপ সে জীবন।
তারস্বরে চিৎকার করে ডাকে কোনো চিল,
উড়তে গিয়ে হিসেবে হয় বিরাট গড়মিল।

উদ্‌ভ্রান্ত ভাব এনে যাচ্ছে ভেঙে মাটি,
মুখ লুকিয়ে খোঁজে কারে, হীন সে জাতি।
খেয়ে খেয়ে ফুলছে কুকুর, হচ্ছে না তার বিচার,
ক্ষুধার জ্বালায় করে ছটফট যোগ্য দাবিদার।
এখানে এসেও নীরব থাকে স্বাধীনচেতা বক্তা,
কানামাছি খেলে সুখ পায় স্বাধীনতার কর্তা।
চেঁচিয়ে গলা ফুলিয়ে ফেলে স্বপ্ন দেখে দেখে,
সবাই মিলে হত্যা করে সেই স্বপ্নদ্রষ্টাকে।

***

সেলিম আনোয়ার
প্রতীক্ষার ক্রন্দন মানুষ একবারই করে

জন্ম নিয়েই কেঁদেছিলাম কারণটা আমার জানা নেই
লোকমুখে শুনেছি, শুনেছি জননীর কাছে
এও জানা হযেছে সবাই কাঁদে পৃথিবীতে এসে;
তা পৃথিবীর অমোঘ নিয়ম হয়ে গেছে
সে কান্নার ধ্বনি পরম আকাঙ্ক্ষিত অন্য সবার কাছে
বৈশাখের তপ্তবেলার শীতল বর্ষণের চেযেও অধিকতর
জীবনের শুরুতে শব্দ করে কেঁদে মানুষদের জানিয়ে দিতে হয়
যে জীবনের আগমন হলো সেটি অনর্থক কিংবা অসম্পূর্ণ নয়,
তারও আছে অধিকার— ছোট্ট সে শিশু তারও সম্ভাবনা আছে অপার;
তারপরের সবগুলো কান্নার সঙ্গে জীবনের আকুতি নিহিত, নিহিত হাহাকার!
হয়তো অনুরাগে নয়তো অনুযোগে নয়তো নিদারুণ কোনো ব্যর্থতার ভার
সইতে না পারা কান্নাগুলোতে— সুহৃদ জনে হাসির উদ্রেক হয় না আর।
পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে চলতে থাকে নিদারুণ প্রচেষ্টা সব ক্রন্দন লুকাবার
কপট হাসি হেসে প্রিয় মানুষের কাছে—
কষ্ট লাঘব করার শত যুক্তি আছে—
যে শিশু কাঁদে না ধরাধামে আগমনী ক্ষণে
তাকে ঘিরে থাকে শত আশঙ্কা মানুষের মনে।
প্রতীক্ষার ক্রন্দন মানুষ একবারই করে
পৃথিবীর সব কষ্ট প্রশমন করে
গর্ভধারিণী মাতার দশমাস দশদিনের মরণ সম কষ্ট
জনকের নিদ্রাহীন রাতগুলির প্রতীক্ষার কষ্ট
উত্তরাধিকারের সুনিশ্চিৎ আগমনবার্তা শ্রবণে সব পূর্বপুরুষের আকুলতা
সব কিছু দূরীভূত করে এমন ক্রন্দন মানুষ একবারই পারে
এমন প্রতীক্ষার ক্রন্দন মানুষ একবারই করে।

***

আবুশিথি
শিপন মোল্লা

সময় এবার হলো বুঝি দূরত্ব ঘুচাবার
পাবো না জেনেও অর্থহীন ব্যস্ততায়
আমি আর তোমাকে খুঁজবো না
হাজার বছরের ক্লান্তি নিয়ে
পরিশ্রান্ত আমি ভীষণ রকম ।

সময় এবার হলো বুঝি দূরত্ব ঘুচাবার
তুমিহীনা নিঃশব্দ প্রহরগুলো
মুখর হোক তবে
ঘুমভাঙ্গা নিশুতি রাতের
একাকিত্ব হারিয়ে যাক
তোমার মমতাময় স্পর্শে।

আলো-কালোয় মন্দ-ভালোয়
যেন হাত বাড়ালেই তোমাকে
আমার স্থায়ী ঠিকানা হোক
তোমার নিশ্বাস দূরত্বে ।

জমে থাকা অনুভূতির ডানাভাঙ্গা পাখিগুলো
মুখরিত হোক তোমার উচ্ছলতায়
তোমার চুরির রিনিঝিনি শব্দে
ভেঙ্গে দাও জনম জনমের মৌনতা।

আমি প্রাণভরে নিশ্বাস নেব
তোমার বুকে মাথা রেখে
হাত রাখবো পরম নির্ভরতায়
তোমার হলুদ মরিচের ঘ্রাণ মাখানো হাতে।

উৎসর্গ: প্রিয় ব্লগার কাল্পনিক_ভালোবাসাকে


ফালতু বালক
ঝুলে থাকি ভাগ্যের ফিতাতে

আমরা সহে যাই
সবকিছু সহজেই
তীব্র রাগটুকু
থেকে যায় মগজেই।
সুনাম আছে বীরের জাত
ভয় পায় না কিছুতে
গোলামির অভ্যাস পুরোনো
লেগে আছে পিছুতে।
আমাদের হাসিতে খুশিতে
ছুঁয়ে থাকে বেদনা
আমাদের রাজারা
বলে নাকো কেঁদো না।
হাজারো অবহেলায়
পড়ে থাকি রাস্তায়
আমাদের দিনগুলো
কেটে যায় সস্তায়।
তাহাদের পাপগুলো
চাপা পড়ে অতীতে
আমরা ঝুলে থাকি
ভাগ্যের ফিতাতে।

***

মনোয়ারা মণি
মা

মা, যেদিন তুমি মেয়ে হয়ে জন্মেছিলে
সেদিন হয়তো অনেকেই খুশি হয় নি
যেদিন তুমি ভাইকে রাখি পরিয়েছিলে
সেদিন ভাইয়েরও আতঙ্ক ছিল বোনটি সুখী হবে তো...
মা, যেদিন তুমি বরমাল্য পরিয়েছিলে
সেদিন বাবারও ছিল তোমার কাছে অন্তহীন প্রত্যাশা
যেদিন তুমি প্রচণ্ড প্রসববেদনায় মা হয়ে এনে দিলে আরেকটি মা
সেদিনও সয়েছিলে অনেক যাতনা... বাঁকা চোখ ছিল অনেকেরই
মা, যেদিন তুমি তোমার সোনামানিকটাকে তুলে দিলে অন্যের হাতে
সেদিন না জানি তোমার ক্ষত হৃদয় হতে কত রক্ত ঝরেছিল
যেদিন তুমি তোমার প্রাণের ধনকে এগিয়ে দিলে দেশ রক্ষার কাজে
সেদিনই তোমার মৃত্যুদণ্ড হলো
মা, তারপরও তুমি বেঁচে থাকলে, প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ
শুধু কর্তব্য আর মঙ্গল কামনার জন্য
তুমি এতো শক্তি কোথায় পেলে মা?
আমি তোমার কাছে একটু শক্তি ভিক্ষা চাই, একটু শক্তি

***

মামুন রশিদ
আষাঢ়ে কাব্য

চুপিসারে মাস আষাঢ়ে
হৃদয় খুলে দেখি!
সঙ্গোপনে মনের কোণে
কার ছবি দেয় উঁকি?

বর্ষা আকাশ বাউলা বাতাস
বৃষ্টিভেজা গায়,
এলোকেশে লাজুক হেসে
বিজুলি চমকায়!

রেলিং ধরে মনের ঘোরে
দাঁড়িয়ে আছি ঠাঁয়,
মিষ্টি স্পর্শ জাগায় হর্ষ
পুলক বয়ে যায়।

ভেজা চুলে আঙুল দোলে
ভেজা চোখে ওষ্ঠ,
পরিপাটি সোঁদা মাটি
জড়িয়ে শুধায় ‘দুষ্ট’!

অঝোর ধারায় হৃদয় হারায়
পলাতক প্রেম ফেরে নব্য,
বিজুলি তর্জনে মেঘের গর্জনে
ফুরায় আষাঢ়ে কাব্য।

***

ডট কম ০০৯
সংস্পর্শ

সুখী মেয়ে
তোমায় বোঝা বড় দায়, তুমি অসীম বা সসীম কোনোটাই নও
তুমি সমুদ্র নও পাখি নও আলো নও আঁধারও নও
তুমি কী!

সেদিন সন্ধ্যায় একগাল হেসে বলেছিলে- ‘হারিয়ে যাচ্ছি’
জানি, তুমি সত্যি হারিয়ে যাবে
মিথ্যের আলোছায়ায় তুমি থাকো না
কঠিন কথাগুলি তোমার কাছে সাধারণ, খুব সাধারণ
আমার মত নয়, অন্য কারো মত সাধারণ
তাহলে আমি কী!

আমার হৃদয় জুড়ে অনেক কথা, অনেক প্রশ্ন, তোমায় ঘিরে
তুমি তা জানা সত্ত্বেও নিজেকে আঁধার বানাও হরহামেশাই
তুমি অচেনা নও, অজানা নও এমনকি অসাড়ও নও
আসলেই তুমি কী!

প্রশ্নের উত্তর জানা নেই! জানা হবে না তোমায় পেলেও!
এ অপ্রাপ্তি নয়,
এ অপারগতা
এ শূন্যতা
এ স্থিরতা।

প্রস্থানে,
যে হাসিটুকু দিয়ে গেলে, তা আমি পারি নি ফেলে দিতে
জেনে রাখিস!
যেদিন তোর সব হাসিকে উহ্য করতে শিখে যাব
সেদিন আমিও হব সুখী পুরুষ!

***

রহস্যময়ী কন্যা
রোমন্থন.......

নীল আকাশে আজ কালো মেঘের আনাগোনা
ফোঁটায় ফোঁটায় জল এসে ঘোলাটে করে দিচ্ছে চশমার কাঁচ
সেটা আর মোছা হয় না তার, ঝাপসা চোখে উদাস দৃষ্টি মেলে
আনমনে চেয়ে থাকে সে দূর দিগন্তপানে
স্মৃতিগুলো হটাৎই ভীষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে যেন
সেই বৃষ্টিভেজা বিকেলে পাশাপাশি পথচলা
চঞ্চল বৃষ্টির ফোঁটাগুলোকে মুঠোবন্দি করার প্রচেষ্টা
এলোমেলো হাওয়ায় হারিয়ে যাওয়া কিছুটা সময়
বেলা অবেলার সেই গল্পগুলো।

গাড়ির ঝাঁকুনিতে স্মৃতিরোমন্থন থেকে ফিরে আসে সে,
গন্তব্য এসে গিয়েছে তার, চশমার কাঁচটা মুছে নিয়ে
সেই আধপুরোনো ছাতাটা মেলে ধরে সে
তাকে যে চলতেই হবে,
এখনো যে অনেক পথ চলা বাকি।

***

বৃষ্টি ভেজা সকাল
বৃষ্টি আর অরু

মেঘলা আকাশ,
যেন একটু পরেই বৃষ্টি হবে শুরু
তোমায় নিয়ে হৃদয়কোণে
স্বপ্ন রঙিন দিচ্ছে উঁকি, মনটা উড়ু উড়ু।
একটু পরেই বৃষ্টি হবে শুরু
ভাবছি একা জানলা ধরে, অরু
আসবে তুমি রঙিন ছাতা ধরে
সঙ্গে নিয়ে উড়াল দিবে মোরে।
একটু পরেই বৃষ্টি হবে শুরু
তোমায় নিয়ে হাঁটবো পথে
কেউ রবে না, বৃষ্টি রবে
শান্ত নীরব রাস্তা হবে।
কটু পরেই বৃষ্টি হবে শুরু
ছাতার নীচে তোমার সাথে
হাতটি ধরে নীরব হেসে
পৌঁছে যাবো স্বপ্নলোকের দেশে।
বৃষ্টি হলো শুরু
ভিজিয়ে গেলো বৃক্ষলতা-তরু
ভিজলো না মোর তৃষ্ণার্ত মন
এলে না যে কথা দিয়েও অরু।
বৃষ্টি গেলো থেমে
স্বপ্নগুলো আড়াল করে রাত্রি এলো নেমে
তখন থেকেই জীবন জুড়ে
কষ্ট আমার শুরু
সেই কথাটা জানলে না আর অরু।
***


ইমিনা
দুঃখবিলাসী হবো বলে...

যদি পারো আর একটি বার এসো,
ভালোবাসার সখাসখী হয়ে-
বিচ্ছেদের মাত্রায় একটু কোমল পরশ বুলিয়ে নিব।
তারপর না হয় ফিরে যেও আমা থেকে দূরে,
তোমার স্পষ্ট আবর্তনে আর আমার অস্পষ্টতায়।

তুমি ফিরে এলে-
লজ্জাবতীর সবগুলো পাতা ছুঁয়ে দিয়ে
জানিয়ে দিব ভালোবাসার সবটুকু আগমনী বার্তার শিহরণ,
কিশোরীর মতো দুষ্টুমাখা একগাল হাসিতে
কাঁপিয়ে দিব নির্বাক নগরীর সবকয়টা দ্বার,
তোমার অন্তর্ভেদী দৃষ্টিকে হারিয়ে দিয়ে
ছড়িয়ে দিব আমার আঙিনার সবটুকু মুগ্ধতা,
চাপল্যটুকু ভাসিয়ে দিব
অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতির সমীকরণে,
অতঃপর ক্ষণিকের তরে অভিমানী হয়ে
আদায় করে নিব তোমার সবটুকু ভালোলাগা।
ফিরে যাওয়ার সময়টুকুতে ফের
কান্নাটুকু লুকিয়ে রেখে হাসবো আমি, জানিয়ে দিব বিদায়।

তারপর-
কোনো এক বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায়
আবার আমি দুঃখবিলাসী হবো,
স্মৃতির ফ্রেমে বাঁধা ফিরে পাওয়া সবটুকু ভালোবাসাকে ছুঁয়ে
অঝোর ধারায় কাঁদবো শুধু।
সন্ধ্যার পথ মাড়িয়ে অন্ধকার নামবে দূরের কোনো গ্রামে,
ঝিঁঝি পোকাদের কণ্ঠে ক্লান্তি এসে-
থামিয়ে দিবে প্রকৃতির সবটুকু উচ্ছলতা, আমারই মতো।।

***

৮৭টি মন্তব্য ৮৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×