somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু ভালো কাজ এবং দেশসেবা

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে নয়, অন্য কেউ হয়তো অনুপ্রাণিত হবেন, এ আশায় শুরুতেই আমার একটা ভালো কাজের কথা আপনাদের বলছি। আমার পরিচিত এক দরিদ্র লোকের মেয়ে এবার কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে (কমার্স) ভর্তি হয়েছে। সেই মেয়ের জন্য ১ম বর্ষের একসেট বই কিনে দিলাম। জীবনে যত বড় বড় আনন্দ লাভ করেছি, ক্ষুদ্র এ কাজটি করতে পেরে আমি তেমন বড় মাপের আনন্দ পাচ্ছি।

আমরা যে-কেউ এরকম কাজ করতে পারি। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যাঁরা বেশ সচ্ছল, এবং নিয়মিত দরিদ্রগণকে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন। তাঁদের জন্য আমি আরও কিছু উদাহরণ নীচে তুলে ধরলামঃ

১। আপনার গাঁয়ের বা মহল্লার একজন দরিদ্র লোককে একটা রিকশা কিনে দিতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন, লোকটি যেন তড়িঘড়ি রিকশাটি বিক্রি না করে দেয়। এটা নিশ্চিত করার জন্য একটা শর্ত আরোপ করে দিতে পারেন, যেমন, প্রতিদিন আপনাকে ১০ টাকা করে জমা দিতে হবে। এ টাকাটা তার জন্যই রেখে দিন। পরবর্তীতে কোনো এক সময় তার জমা-করা সমুদয় টাকা ফেরত দিন। লোকটি বিস্ময়ে হতবাক হবে, আপনি অনেক বেশি আনন্দ লাভ করবেন।

২। দরিদ্র কৃষককে একটা গাভী বা হালের গরু কিনে দিতে পারেন।

৩। দরিদ্র বিধবাকে কিছু হাঁসমুরগি বা ছাগল কিনে দিতে পারেন।

৪। একজন দরিদ্র মাঝিকে একটা নৌকা কিনে দিতে পারেন।

৫। জেলেকে জাল কিনে দিতে পারেন।

৬। যার মজা পুকুর আছে, সংস্কার করে মাছ চাষের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

৭। কিছু ফলের চারা, সবজির বীজ কিনে দিতে পারেন। আজকাল হোমবেস্‌ড চাষাবাদ করার সুফল পাওয়া যাচ্ছে। উঠোনের পাশে, ঘরের কোনায় ফলফলাদি ও সবজি চাষ করা যায়, উত্সাহিত করুন গরীব মানুষকে।

৮। কাউকে এক বান্ডিল টিন কিনে দিতে পারেন ঘরের চালার জন্য।

৯। আপনার পুরোনো কাপড়চোপড়গুলো আর বাসায় না রেখে বিলিয়ে দিতে পারেন দরিদ্রদের মাঝে।

১০। একজন দরিদ্র মেধাবী ছাত্রের সারাবছরের পড়ালেখার টাকাটা দিয়ে দিতে পারেন।

১১। আরও কতো কিছু আপনি করতে পারেন।

আপনি যদি সরল মনে এ কাজগুলো করেন, কোনোরূপ স্বার্থসিদ্ধির ধান্দা না করে, তাহলে দেখবেন, প্রকৃত আত্মসন্তুষ্টি ও নির্মল আনন্দে আপনি উদ্বেলিত হচ্ছেন। আপনি নিজের অজান্তে অপার আনন্দে গেয়ে উঠবেন : সার্থক জনম আমার.....

এই যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজগুলো আপনি করছেন, এগুলো আসলে ক্ষুদ্র নয়, খুব বড় এবং মহান। দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে সেবার মধ্যে শুধু মানবিক বোধই নয়, দেশসেবার অনুষঙ্গও বিদ্যমান। আপনাকে যে একজন মহান রাজনৈতিক নেতা কিংবা প্রাজ্ঞ বুদ্ধিজীবী হতেই হবে, দেশসেবার জন্য এটা কোনো জরুরি শর্ত নয়।

প্রকৃত দেশসেবকদের প্রতি যথাযথ ও অকৃত্রিম শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমাদের অনেকেই দেশসেবার নামে মুখে বড় বড় বুলি আওড়ে থাকেন, জনহিতার্থে তাঁদের অবদান কতখানি তা ঢাকঢোল পিটিয়ে জাহির করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমরা অনেকেই হয়তো কখনোই জানতে পারি না এর পেছনে তাঁদের কতখানি স্বার্থ জড়িত ছিল, কী ছিল না।

কেউ কেউ আছেন- তাঁরা শুধু হা-হতোস্মি করেন, দেশের জন্য কোনো কিছু করতে পারলেন না বলে, যদিও করার ছিল/আছে অনেক কিছু।

বিত্তবান না হয়েও আপনি দেশ ও সমাজসেবায় প্রকৃত অবদান রাখতে পারেন। সেজন্য আপনাকে হৃদয়বান হতে হবে, মানুষকে ভালোবাসার মতো মহৎ উদ্দেশ্য আপনার ভেতর থাকতে হবে। এ কাজটা করার জন্য আপনাকে অনেক বড় কিছু করার দরকার নেই, অনেক অর্থকড়িও হয়তো খরচ করতে হবে না। দেশসেবার মহান ব্রত মাথায় রেখে আপনাকে শুধু একটু প্রচারবিমুখ হতে হবে। প্রচারই যদি আপনার আসল উদ্দেশ্য হয়, দেশসেবা হয়তো হবে না।

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজের ভেতর দিয়েই আপনার দেশসেবার বীজ বোনা হয়। যাঁরা সচ্ছল, তাঁরা হয়তো উপরে বর্ণিত তালিকার অনুরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকবেন। আপনার সেই সামর্থ্য যদি না থাকে, তাহলে অন্তত নীচের কাজ তিনটি করুনঃ

১। সবার আগে আপনি প্রতিজ্ঞা করুন, আজ সারাদিন আপনার দ্বারা একটি লোকও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না, মর্মাহত হবেন না।

২। তারপর প্রতিজ্ঞা করুন, আজ সারাদিন আপনি একটা মিথ্যা কথাও বলবেন না।

৩। আরও প্রতিজ্ঞা করুন, আজ সারাদিনে আপনি অন্তত একটা ভালো কাজ করবেন, যার দ্বারা অন্তত একজন লোক উপকৃত হয় (এমন কাজ যেখানে আপনার অর্থকড়ি খরচ হবে না)।

উপরের তিনটা কাজ খুব মামুলি নয় কি? আপনি যে পরিবারের সদস্য, সেখানে প্রত্যেকেই যদি কাজ তিনটা অনুসরণ করেন, ভেবে দেখুন মাত্র একটা পরিবার থেকেই কতগুলো ভালো কাজ সম্পন্ন হতে পারে।

আমরা এভাবেই দরিদ্রসেবা ও দেশসেবায় অংশগ্রহণ করতে পারি। আর এ থেকে লাভ করতে পারি প্রকৃত ও প্রভূত আত্মসন্তুষ্টি।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:১৫
২৯টি মন্তব্য ২৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×