somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন অধ্যায়

২৯ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুমা ইদের শপিং করছে। ব্যস্ত শপিং মল। সময় নিয়ে একেকটা শপিং মলে যায়। মায়ের জন্য, তিন বোনের জন্য, ভাগ্নে-ভাগ্নি, ভাতিজা-ভাতিজি সবার জন্য কেনাকাটা না করে তার শান্তি নেই। ইদের মরশুমে সবাইকে গিফট করা তার পবিত্র কর্তব্য। ভাইবোনেরা তাকে সবার উপরে স্থান দিয়ে থাকে।

কেনাকাটা শেষে বাসায় ফেরার পথে উৎস বলে, মা-বাবার জন্য কিছু কেনার দরকার না? রুমা লজ্জিত হয়। মৃদু ভর্ৎসনা করে বলে, বড্ড ভুলোমনা তুমি। একটু মনে করিয়ে দিবে না?

আবার মার্কেটে ফিরে যায়। সারাদিনের ধকলে শরীর খুব ক্লান্ত। বেশি দুরে নয়, ঢাকা কলেজের উলটো দিকের মার্কেটে ঢোকে তারা। রুমার জন্য আরও কিছু লজ্জার বিষয় ছিল। টাকা প্রায় শেষের দিকে। এ টাকায় ভালো কিছু পাওয়া সম্ভব নয়। কী করা যায়, রুমা মনে মনে ভাবতে থাকে। বুড়ো মানুষ। তারা তো আর নতুন জামা পরে বাচ্চাদের মতো নাচানাচি করবে না। শরীর ঢাকতে পারলেই যথেষ্ট। তা ছাড়া, তাদের জামা তো আছেই। গত বছর শ্বশুরকে কিনে দেয়া পাঞ্জাবিটা এখনও ঝকঝকে নতুনের মতো। শুধু শাশুড়ির জন্য একটা কাপড় না কিনলেই নয়। তাকে আনেকদিন কোনো পরনের কাপড় দেয়া হয় নি।




বসুন্ধরা শপিং মল। ইদের শপিং করতে এসেছে সালেহা। একের পর এক দোকান ঘুরে জামাকাপড়, কসমেটিকস, ইত্যাদি কিনলো। তারপর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে আসরের একটু পরে সে বাসায় ফিরলো। ইফতারি বানালো, যথাসময়ে ইফতার করলো তারপর শাশুড়িকে নিয়ে কেনাকাটা দেখতে বসলো।

দেবর, ননদ, সবার পোশাক দেখানোর পর সবচেয়ে অভিজাত ও দামি শাড়িটা শাশুড়ির হাতে দিয়ে বললো, 'মা, এটা হলো আপনার। পছন্দ হয়েছে কিনা বলুন। পছন্দ না হলে পালটে আনা যাবে।'

মিসেস রুমা বেগম কাপড়টি হাতে নিয়ে বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে একটু অস্বস্তি বোধ করে।
'তোমার মায়ের জন্য কিনো নাই?' অস্ফুট স্বরে রুমা বেগম বলে। সালেহা শুনতে পায় না। সে বলে, 'কী মা, তাকিয়ে আছেন কেন? পছন্দ হয় নি?'
রুমা বেগমের গলা ধরে আসে। সে যখন কথাগুলো বলতে থাকে, তার কণ্ঠ কাঁপতে থাকে। 'তোমার মা আর বাবার কাপড় কই?' সালেহা ফিক করে হেসে দেয়। বলে, 'কী যে বলেন না মা, আমার মা আর বাবা তো আপনিই। নাকি আমাকে পরের মেয়ে মনে করেন?'
রুমা বেগম মাথা নীচু করে থাকে। সালেহা বলতে থাকে, 'আমার ভাইয়েরা আছে না? আমার চার ভাই যে কাপড়-চোপড় কিনবে, তার উপর আমার মা আর বাবা জাজিম বানিয়ে শুতে পারবে।'

রুমা বেগমের চোখ ভিজে ওঠে। সে বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু একটা বলবে সেই শক্তি খুঁজে পায় না।



গল্পের দ্বিতীয় অংশটুকু নিছক কল্পনা, যাকে উইশফুল থিঙ্কিং বলা যেতে পারে। আদতে নতুন অধ্যায়ে নিয়মানুযায়ী যা হবার কথা ছিল, হয়েছিল ঠিক তাই।

ছেলেকে বিয়ে করানোর পর রুমা বেগমের জীবনটা পালটে যেতে থাকলো। কোনোকিছুই তার নিজের ইচ্ছেতে বা নিজের ইচ্ছেমতো হয় না। নিজের ছেলে মায়ের নাম ভুলে যেতে বসেছে। স্ত্রৈণ বলতে যা বোঝায়, ছেলেটা পুরোপুরি তা হয়ে গেছে।

ইদের কাপড়চোপড় কিনে আনার পর নিজের ভাইবোনদের জন্য ভাগ-বাটোয়ারা শেষে শাশুড়ির হাতে একটা অতি সাধারণ মানের পরনের কাপড় ধরিয়ে দিয়ে বললো, 'মা, কাপড়টা কিন্তু খুব দামি। ইদের দিন পরবেন।'

রুমা বেগমের যদি সেই তেজ আর শক্তি থাকতো, তাহলে এই কাপড়খানা সালেহার মুখ বরাবর ছুঁড়ে মেরে বলতো, 'আমি কি তোর কাজের বুয়া যে, আমাকে তোর খয়রাতি কাপড় পরতে হবে?'

জীবনচক্র এমনই। এ চক্র ছিন্ন করে নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করবে এমন সদাশয়া কে আছে?

৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×