somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অসমাপ্ত গল্প

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেল। কিংবা সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। ছিমছাম এবং নিরিবিলি একটি বাড়ি। বাড়িটি ঘন গাছপালায় ঢাকা বলে ঘড়ি না দেখে সময় আন্দাজ করা কঠিন। অনেকক্ষণ ধরে বারান্দায় পায়চারি করছে মহিন। প্রথমে এসে দরজায় টোকা দিলে একটা ছোটো ছেলে দরজা খুলে দাঁড়িয়েছিল। তার কাছে খবর পাঠানো হয়েছে। তখনো চারদিকে সামান্য আলো ছিল। পায়চারি করতে করতে মহিনের মনে হলো খুব দ্রুত অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, যদিও অতি শীঘ্র অন্য কেউ তার খবর নিতে আসলো না।
জোড়ন দেয়া চৌচালা টিনের ঘরের বারান্দার এককোণে একটা কেবিন। কেবিনের দরজায় তালা দেয়া। কেউ কি থাকে এর ভিতরে? আনমনে সে দরজার কাছে এগিয়ে যায়। ভিতরে কেউ থাকে না। তালার উপর জং ধরেছে, ধূলি জমেছে; বহুদিন হলো কেবিনের ভিতরে কেউ ঢোকে নি। বারান্দার অপর দিকটা খোলা। ঘরটি বেশ পুরোনো হলেও এক ধরনের আভিজাত্যের ছাপ রয়েছে।

মহিন মনে মনে ভাবে, আরেকবার কড়া নাড়লে কেমন হয়? কিছুক্ষণ ইতস্তত করে উদ্যত হলোও, কিন্তু নাড়লো না। দরজার বাইরে বামপাশে একটা হাতলঅলা চেয়ার। মহিন বসে পড়লো।

নোরা তার ক্লাসমেট, একই কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। মহিন সায়েন্স গ্রুপে, নোরা কমার্স। কলেজে ভর্তি হবার পর বিভিন্ন সময়ে ওরা পরস্পরকে দেখেছে। অনিচ্ছাকৃতভাবে মাঝে মাঝে চোখাচোখি হয়েছে বটে, কিন্তু মফস্বলের চিরকেলে রক্ষণশীলতার কারণে অধিক পরিচয়ের কোনো সুযোগ ছিল না।
পাশাপাশি গ্রাম ওদের। একই রাস্তায় কলেজে যেতে হয়, কলেজ থেকে ফিরতে হয়। নীরব রাস্তায় ওদের দেখা হতো। নোরা মাঝে মাঝে ছোটো করে হাসতো, তবে মহিন সে হাসির জবাব না দিয়ে লজ্জায় মাথা নীচু করতো।
পরশু মহিনকে রাস্তায় থামিয়ে নোরা বলেছিল, আজ বিকেলে সে যেন ওদের বাড়িতে আসে। কেন আসতে হবে তা সে বলে নি। নিরীহ প্রজার মতো মলিন বস্ত্রে সে নোরাদের বাসায় এসেছে। নোরার সাথে তার সখ্যতা নেই, বন্ধুত্বও নেই। আরেকবার দরজায় টোকা দিয়ে তার আসার কথা স্মরণ করিয়ে দেবে, এ তার ধৃষ্টতা হবে।

সহসা দরজা খুলে নোরা বাইরে এলো। তাকে দেখে মহিন দাঁড়ালো এবং যথারীতি লজ্জা পেয়ে মাথা নীচু করলো।
মহিনের মলিন বেশভূষার দিকে একবার তাকিয়ে নিয়ে নোরা ন্যূনতম কুশলাদি বিনিময় করলো। তারপর বললো, ওর একটা ছোটো ভাই আছে, ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। তাকে পড়াতে হবে। ‘তুমি পারবে না?’ বললে ‘হ্যাঁ পারবো’ বলে মহিন সম্মত হয়।
‘একটু দাঁড়াও।’ এ কথা বলে নোরা ভিতরে চলে গেলো, এবং একটু পর ফিরে এলো। তার হাতে একজোড়া চামড়ার পুরোনো স্যান্ডেল, পুরোনো একটা শার্ট, পুরোনো একটা প্যান্ট। মহিনের হাতে এগুলো দিয়ে নোরা বললো, ‘লজ্জা করবে না। চপ্পল পায়ে লুঙ্গি পরে কলেজে যাওয়া খুব বেমানান। ... এগুলো পরবে। আমার বাবার।’

এরপর নিয়ম করে মহিন পড়াতে আসে। অনেকদিন পর পর একঝলক এসে নোরা দেখা দিয়ে যায়। শুকনো বাতাসে হালকা বৃষ্টির মতো অল্প দু-একটা কথা বলেই সে নিজের কাজে চলে যায়। মহিনের মন তখন আনচান করে নোরাকে আরেকটু দেখার জন্য।

একদিন নোরা একাকী কিছু কিছু কথা বললো মহিনকে।
‘আমার বড় বোনের খবর তো তুমি জানো। আমরা পিঠাপিঠি বোন। অনেকদিন হলো ওর বিয়েটা ভেঙে গেছে। জামাই ওকে পছন্দ করতো না। ও দেখতে কালো। পড়াশুনাও তেমন করতে পারে নি। ওর মতো অভাগী নেই। ওর জীবনটা কি এম্নি করেই পার হয়ে যাবে?’ একটু দম নিয়ে নোরা কাতর স্বরে বলে, ‘তুমি কি আমাকে চাও না?’ মহিনের বুক কেঁপে ওঠে। নোরাকে চায় না এমন কে আছে? কিন্তু সামাজিক অবস্থান বিবেচনায় সে কোনোদিনই এ বাড়ির যোগ্য পাত্র হতে পারে না। কিন্তু মুখ ফুটে মহিন বলে ফেললো, ‘চাই। খুব চাই।’ নোরা প্রায় কেঁদে ফেলে বললো, ‘আমার বড় বোনকে তুমি বিয়ে করো।’

৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৬
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:০১
৪৮টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×