উৎসর্গ
তুমি চলে গেছো, সেই বেদনার অমৃত খনি থেকে
উঠে আসে চির-ফল্গুধারার কবিতারা একে একে
তুমি চলে গেছো, চলে-যাওয়া পথে সোনা ফোটে প্রতিদিনই
আমার সকল কবিতারা তাই তোমার কাছেই ঋণী।
১৭ অক্টোবর ২০১২
***
১
তুমি আর কোনোদিন নাম বলো নি
পাখি
তুমি আর কোনোদিন গান করো নি
নদী
তুমি আর কোনোদিন হাত ধরো নি
পথে
তুমি আর কোনোদিন চোখ রাখো নি
চোখে
আমরা দুজন এক আকাশে
উড়ি
আমরা দুজন এক ঘরেই
থাকি
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৪
২
কে
অন্ধকারে ধরেছিল সাপ
সে
খুন করে, করে না সে পাপ
১৭ মার্চ ২০১১
৩
ফাঁসির কাষ্ঠে কে ঝোলায় আসামিকে?
জল্লাদ
কে তবে খুনি, জল্লাদ, নাকি জজ?
অপরাধ
১৭ মার্চ ২০১১
৪
মাঝে মাঝে আমিও দেখেছি শাহবাগের মোড়ে
কী তুমুল ভিড়
জেগে ওঠে অদ্ভুত পদ্মার তীর
গাংচিল মাটিতে নামে কোনো কোনো নির্জন ভোরে
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৪
৫
মেয়েটা সারারাত কথা বোনে শীতল কাঁথায়। রাত ফুরিয়ে এলে অতল সংসারে ডুবে যায় রাতের কাতরতা ভুলতে চেয়ে।
৪ এপ্রিল ২০১৩
৬
মুঠি খোলো, অন্ধকারে একঝাঁক নরম অক্ষর;
পালকেরা ঝরে পড়ে।
লিখো নি; যাকে তুমি আজন্ম চেয়েছো, নীরবে
ভুলে গেছো তার নাম ও গন্ধ; সব কিছু
২৮ মে ২০১৩
৭
পাঁজর ফুঁড়ে তীব্র বেরিয়ে পড়ে জ্বলন্ত আগুন, টগবগে বাঘ। তোমার বুক খুঁড়ে হন্যে হয়ে খুঁজি, গহিন অরণ্যে গেঁথেছ কার নাম!
৫ জুলাই ২০১৩
৮
এ শহর ছেড়ে যে চলে যাবে, তার পায়ে নেই কোনো বেড়ি;
তবু সে একদিন তার কবির জন্য কেঁদেছিল, অভিমানে
তারপর পাহাড়ের রহস্য থেকে ছিঁড়ে এনে
বহুদিন লুকিয়ে রেখেছিল অজর একটি ফুল
গভীর কূয়ো খুড়ে আমিও তার জন্য একটি অক্ষয় শব্দ কুড়িয়ে পেলাম
সে হাত পাততেই খা-খা করে যে-শব্দটি জ্বলে উঠলো, তার নাম ‘শূন্য’
৯ জুলাই ২০১৩
৯
সে এক ক্ষণজন্মা পাখি, প্রতিটা গোপন সাঁঝে অরূপ পাথারে নেমে এসে
অলৌকিক সুর তোলে গানে। তারপর রাত্রি শেষে
ফিরে যায়, পেছনে রেখে যায় একগুচ্ছ পদছাপ, ও কয়েকটা পালক
মাটিতে করুণ দাগ কেটে একধ্যানে চেয়ে থাকে বিবাগী বালক
১১ জুলাই ২০১৩
১০
যতবার হেলিকপ্টারে লো-অলটিচুডে উড়েছি, উপর থেকে দেখেছি, সরুমুখ ডগা ও সবুজ পাতারা লকলকিয়ে উঠে আসছে আকাশের দিকে। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে কেবল নিম্নমুখি জীর্ণ পাতাগুলো দেখেছি - বিষণ্ণ করুণ ও শুষ্ক চোখে মাটির দিকে ঝুঁকে আছে।
২৫ জুলাই ২০১৩
১১
সাহসীরা তাকায় চোখে। আমি সাহসী নই। তোমার সামনে যতবার দাঁড়িয়েছি, দিগন্তখোলা ওষ্ঠযুগলে যেখানে রোদ আর হাসি রংধনু হয়ে ফুটে থাকে, সেখানে আমার দৃষ্টি শান্ত ফলার মতো স্থির গেঁথে থাকতো।
২৯ জুলাই ২০১৩
১২
তোমার চোখে জল ছিল না
আমার ছিল না কান্না
আমরা দুজন পুড়ছিলাম
আমরা দুজন ছাই হয়ে যাই
আমরা দুজন উদাস পথে নিথর হাওয়ায়
নাই হয়ে যাই
২০ মার্চ ২০১৩
১৩
দুর্বোধ্য বিষয়, তা যদি সারবত্তাহীনও হয়, বেশি মূল্য পেয়ে থাকে।
২৭ জুলাই ২০১৩
১৪
আমি আজ সারারাত ঘুমাবো না
আঁধার-নিগীর্ণ রাতে খুঁজিতেছি আলোকের কণা
২৮ জুলাই ২০১৩
১৫
সময় আমাকে গিলে খায়, আমি আকাশ গিলবো বলে পানিতে ডুব দিই। একঝাঁক চিত্রা হরিণ আর চিতল মাছ যখন জোনাকি হয়ে আলোয় ভরে তোলে পানির হৃদয়, আমি তখন প্রাণ ভরে শ্বাস নিই, আর মস্ত একটা আকাশ বুকের ভেতর পুষে নিয়ে পাহাড়ে ঘুমিয়ে পড়ি।
০৪ অক্টোবর ২০১৩
১৬
তোমার যে গান আমাকে পুড়িয়ে ছাই করে, নির্বীজ ধূলির ভেতর জাগিয়ে তোলে উদ্ভিন্ন প্রাণ, আমাকে সেই অপার্থিব বর দাও। ‘গানের ভেতর দিয়ে তোমায় যখন দেখি’, অজস্র রোমকূপ ভেদ করে লাখ লাখ গুল্মলতারা ডগা তুলে দোহারের সুরে সুরে দুলে ওঠে। কখনোবা হারিয়ে যেতে ভালো লাগে। হারিয়ে যেতে যেতে পথগুলো দীর্ঘতর হয়ে ওঠে, অবশেষে অচেনা- সেই অচেনা পথের প্রান্তে তন্ত্রীছেঁড়া সুরগুলো সুচের মতো ফালি ফালি করে ছিঁড়ে ফেলে হৃৎপিণ্ড। তখনই মনে হয়, যদি কাউকে ভালোবেসে হারিয়ে থাকি অমূল্য প্রেমের জন্য, সে তুমি।
৪ অক্টোবর ২০১৩
১৭
পড়ো এবং পড়ো
তাতেই আমার হিংসে হবে, তাই কি মনে করো?
তাই যদি হয়, ভাবলে তুমি ভুল-
তোমার প্রেমে তুমিই মরো,
আমি এখন ‘আমি’-তে মশগুল।
বাকি কথা আর হবে না, আর হবে না গল্প এমনতরো-
বুদ্ধদেবের মাথা খেয়ে বুদ্ধদেবেই মরো।
৬ অক্টোবর ২০১৩
১৮
পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই কবি হয়ে জন্মায়- প্রতিটা মানুষের ভেতরে বাস করে সমুদ্র। যখন উথলে ওঠে আবেগ, তখন ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যায় মরমিয়া হিয়া। আমরা তখন সত্যিকার কবির হৃদয়কে উন্মোচিত হতে দেখি।
৮ অক্টোবর ২০১৩
১৯
কবিতারা লাবণ্যময়ী নারী
অথবা নারীরা দুর্বোধ্য কবিতার মতো
এদের বোঝা যায় খুব সামান্য
পুরোটাই রহস্যাবৃত ভাবের অন্তর্গত
১৩ অক্টোবর ২০১৩
২০
আজকের পবিত্র প্রত্যূষে ঘুম ভাঙতেই কী এক আনন্দ বয়ে যাচ্ছে সমগ্র মন ও শরীরে। আজন্ম লালিত ক্ষোভ ও অভিমান, দ্বেষ ও ক্লেদ কোথায় মিলিয়ে গেছে- ঘাসের ডগায় সূর্যোদয়ের নরম তাপে সকালের শিশিরেরা যেভাবে মিশে যায় হাওয়ার হৃদয়ে। এমন নির্ভেজাল ও সজীব মন অনন্য প্রাপ্তির মতো বার বার জীবনে আসবে না।
হে মন, তুমি বিশুদ্ধ চারাগাছ, উদার অনন্তে মেলে দাও পাখা পুণ্যস্নাত সত্যের মতো।
৩ নভেম্বর ২০১৩
২১
বাইরের ভুবনে সবাই যখন তোমাকে ভুলে থাকবে, নিজের মধ্যেই ডুবে যাও- দেখো, তুমি একজন একচ্ছত্র অধিপতি, তোমার সারি সারি সৈন্যদল রয়েছে, প্রাজ্ঞ পারিষদবর্গ তোমার আদেশের অপেক্ষায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। তোমার অঙ্গুলি নির্দেশে মেঘ থেমে যাচ্ছে, পাহাড় ডুবে যাচ্ছে।
এমন অত্যাশ্চর্য একটা নিজের ভুবন তোমার আছে, তুমি জানতে না।
১৭ এপ্রিল ২০১৪
২২
সামনে একঝাঁক ফুল ছিল। ছুঁয়ে দিতেই লজ্জাবতী পাখির মত উড়ে গেলো।
৩১ অক্টোবর ২০১৪