somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটা রহস্যগল্প

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোলাপ শাহ’র মাজার থেকে বাসে উঠলাম। দেশের বাড়ি বেড়াতে যাবো। ঢাকা-মাওয়া সড়ক ধরে শ্রীনগরের ভিতর দিয়ে দোহার উপজেলায় ঢুকবো।

সকাল সাড়ে আটটার বাস কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে আটটায় ছাড়লো। ৪০ সিটের বাসে জনা দশেক প্যাসেঞ্জার। এর আগে এত অল্প মানুষ নিয়ে গাড়ি ছাড়তে দেখি নি।

বাবুবাজার ব্রিজের গোড়ায় গিয়ে বাস থামলো। একজন দুজন করে উঠতে উঠতে প্রায় সবগুলো সিট ভরে গেলো। আমার পাশের সিটটা তখনও খালি পড়ে আছে দেখে আমি অবাক হচ্ছিলাম।

বাস ছেড়ে দিল। ব্রিজ পার হবার পর যেখানে গাড়িটি থামলো সেখানেই মেয়েটি দাঁড়িয়ে ছিল। মেয়েটি তরতর করে বাসে উঠে পড়লো, আর আমার মনে আনন্দ ঝিলিক দিয়ে উঠলো। ভিতরে একটি মাত্র সিটই খালি রয়েছে, অতএব সম্রাজ্ঞী এই সিটে না বসে কোথায় বসবেন?
‘এক্সকিউজ মি!’ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখি মেয়েটি খুব মিষ্টি হেসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে। ‘আপনার পাশে কি বসতে পারি?’ আমি গলে গেলাম। ‘অবশ্যই। অবশ্যই।’ বলতে বলতে বসা থেকে প্রায় দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম।
‘অনেক অনেক ধন্যবাদ।’ আরেকবার মিষ্টি হেসে আমার দিকে সে তাকালো, আর আমার বুক কাঁপতে থাকলো।
‘দেশে যাচ্ছেন বুঝি!’
‘জি! আপনি?’
‘আমিও। কোথায় নামবেন?’
‘হলের বাজার।’
‘বাহ, দারুণ তো! আমিও ওখানে নামবো।’
মেয়েরা এত সহজে ছেলেদের আপন করে নিতে পারে তা আমি এ জীবনে বিশ্বাস করি নি। সে আমার সেল নাম্বার নিল, তার সেল নাম্বার আমাকে দিল। তারপর আমাদের মধ্যে অনর্গল কথা চলতে থাকলো। সে যখন হাসে, মনে হয় তার হাসির সাথে আমি মিশে থাকি। সে যখন গাঢ় চোখে আমার দিকে তাকায়, আমি কোথায় যেন হারিয়ে যাই। সে খিলখিল করে হাসে, খলখল করে তার সর্বাঙ্গে আলো ঝরে।

একটা বিদ্‌ঘুটে ব্যাপার ঘটতে থাকলো। মেয়েটার বামপাশে উলটো সাইডে বসা একটা লোক বার বার আমার দিকে ক্রূর চোখে তাকাচ্ছিল। হিংসা! পরশ্রীকাতরতা! পুরুষ মানুষ এমনই। একটা সুন্দরী মেয়ে আমার পাশে বসেছে, আর অমনি তার গতর জ্বলতে শুরু করেছে। তবে, মেয়েটিও এ বিষয়টি খেয়াল করেছে। সেও মাঝে মাঝে লোকটার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে ইশারায় জবাব দিয়ে দিচ্ছে- বামন হয়ে চাঁদের পানে হাত বাড়িয়ো না। খবরদার!

হলের বাজারে বাস থামলে আমরা নেমে পড়ি। মেয়েটি কোন দিকে যাবে আমি জানি না। সে একটা রিকশার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

‘আসুন না!’ আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে সে আমাকে তার রিকশার সঙ্গী হতে আহ্বান জানালো। আমি একবার জোরে মাটিতে পা ঠুকলাম- নাহ, স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই এসব ঘটছে।... এটুকু আমি কল্পনা করছিলাম।

এরপর যা দেখলাম তার জন্য আমি আদৌ প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়েটি রিকশায় উঠলো, আর তার পাশে গিয়ে চেপে বসলো ঐ লোকটা, বাসের ভিতরে যে-লোকটা তার উলটো সাইডে বসে ছিল।

যেতে যেতে দুজনেই আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকলো। আমি তাদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকলাম। কিছু দূরে গিয়ে মেয়েটা ঘাড় উঁচু করে একবার পেছনে তাকালো, তারপর হাত নাড়িয়ে টা-টা জানালো আর শেষবারের মতো সুন্দর করে হাসলো।

৭ আগস্ট ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:২৪
৩১টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×