somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুখুমিয়া নামের এক বিপ্লবী কবি এবং তাঁর একগুচ্ছ কবিতা ও গান

২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুখুমিয়া

দুখুমিয়া (মে ২৪, ১৮৯৯ – আগস্ট ২৯, ১৯৭৬), (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ - ভাদ্র ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ), অগ্রণী বাঙালি কবি, বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, সঙ্গীতজ্ঞ, সংগীতস্রষ্টা, দার্শনিক, যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকার সঙ্গে সঙ্গে প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে দুখুমিয়ার মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে দুখুমিয়া সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে। তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।

দুখুমিয়া এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতা, নাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মতো কবিতা; ধূমকেতুর মতো সাময়িকী। জেলে বন্দি হলে পর লিখেন রাজবন্দির জবানবন্দি। এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তাঁর সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালোবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোটোগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হলো ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল। এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। দুখুমিয়া প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন বিশেষ জনপ্রিয়। মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স রোগে আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাঁকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪মে (১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ই জ্যৈষ্ঠ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন দুখুমিয়া। চুরুলিয়া গ্রামটি আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকে অবস্থিত। পিতামহ কাজী আমিনউল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয়া পত্নী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম। তাঁরা ছিলেন তিন ভাই এবং বোন। তাঁর সহোদর তিন ভাই ও দুই বোনের নাম হলো: সবার বড়ো কাজী সাহেবজান, কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন, বোন উম্মে কুলসুম। তাঁর নাম দুখুমিয়া। তিনি স্থানীয় মক্তবে (মসজিদ পরিচালিত মুসলিমদের ধর্মীয় স্কুল) কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে যখন তাঁর পিতার মৃত্যু হয়, তখন তাঁর বয়স মাত্র নয় বছর। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তাঁর শিক্ষাজীবন বাঁধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁকে নেমে যেতে হয় জীবিকা অর্জনে। এসময় তিনি মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উক্ত মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। একই সাথে হাজী পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াজ্জিন (আযান দাতা) হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইসব কাজের মাধ্যমে তিনি অল্প বয়সেই ইসলাম ধর্মের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান যা পরবর্তীকালে তাঁর সাহিত্যকর্মকে বিপুলভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনিই বাংলা সাহিত্যে ইসলামী চেতনার চর্চা শুরু করেছেন বলা যায়।

মক্তব, মসজিদ ও মাজারের কাজে দুখুমিয়া বেশিদিন ছিলেন না। বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমান নাট্যদল) দলে যোগ দেন। তাঁর চাচা কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন এবং আরবি, ফারসি ও উর্দূ ভাষায় তাঁর দখল ছিল। এছাড়া বজলে করিম মিশ্র ভাষায় গান রচনা করতেন। ধারণা করা হয়, বজলে করিমের প্রভাবেই দুখুমিয়া লেটো দলে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া ঐ অঞ্চলের জনপ্রিয় লেটো কবি শেখ চকোর (গোদা কবি) এবং কবিয়া বাসুদেবের লেটো ও কবিগানের আসরে দুখুমিয়া নিয়মিত অংশ নিতেন। লেটো দলেই সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। এই দলের সাথে তিনি বিভিন্ন স্থানে যেতেন, তাঁদের সাথে অভিনয় শিখতেন এবং তাঁদের নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখতেন। নিজ কর্ম এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন। একইসাথে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ পুরাণসমূহ অধ্যয়ন করতে থাকেন। সেই অল্প বয়সেই তাঁর নাট্যদলের জন্য বেশকিছু লোকসঙ্গীত রচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে চাষার সঙ, শকুনীবধ, রাজা যুধিষ্ঠিরের সঙ, দাতা কর্ণ, আকবর বাদশাহ, কবি কালিদাস, বিদ্যাভূতুম, রাজপুত্রের গান, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ এবং মেঘনাদ বধ। একদিকে মসজিদ, মাজার ও মক্তব জীবন, অপর দিকে লেটো দলের বিচিত্র অভিজ্ঞতা দুখুমিয়ার সাহিত্যিক জীবনের অনেক উপাদান সরবরাহ করেছে। দুখুমিয়া কালীদেবীকে নিয়ে প্রচুর শ্যামা সঙ্গীতও রচনা করেন, দুখুমিয়া তাঁর শেষ ভাষণে উল্লেখ করেন - 'কেউ বলেন আমার বাণী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনোটাই না। আমি শুধু হিন্দু-মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।'

১৯১০ সালে দুখুমিয়া লেটো দল ছেড়ে ছাত্রজীবনে ফিরে আসেন। লেটো দলে তাঁর প্রতিভায় সকলেই যে মুগ্ধ হয়েছিল তার প্রমাণ দুখুমিয়া লেটো ছেড়ে আসার পর তাঁকে নিয়ে অন্য শিষ্যদের রচিত গান: 'আমরা এই অধীন, হয়েছি ওস্তাদহীন/ ভাবি তাই নিশিদিন, বিষাদ মনে/ নামেতে দুখুমিয়া, কী দিব গুণের প্রমাণ।' এই নতুন ছাত্রজীবনে তাঁর প্রথম স্কুল ছিল রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল। এরপর ভর্তি হন মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে যা পরবর্তীতে নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন নামে পরিচিতি লাভ করে। মাথরুন স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন কুমুদরঞ্জন মল্লিক যিনি সেকালের বিখ্যাত কবি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর সান্নিধ্য দুখুমিয়ার অনুপ্রেরণার একটি উৎস। কুমুদরঞ্জন স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে দুখুমিয়া সম্বন্ধে লিখেছেন, 'ছোটো সুন্দর ছনমনে ছেলেটি, আমি ক্লাশ পরিদর্শন করিতে গেলে সে আগেই প্রণাম করিত। আমি হাসিয়া তাহাকে আদর করিতাম। সে বড় লাজুক ছিল।'

যা হোক, আর্থিক সমস্যা তাঁকে বেশিদিন এখানে পড়াশোনা করতে দেয় নি। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তাঁকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়। প্রথমে যোগ দেন বাসুদেবের কবিদলে। এরপর একজন খ্রিস্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং সবশেষে আসানসোলের চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ নেন। এভাবে বেশ কষ্টের মাঝেই তাঁর বাল্যজীবন অতিবাহিত হতে থাকে। এই দোকানে কাজ করার সময় আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহ'র' সাথে তাঁর পরিচয় হয়। দোকানে একা একা বসে দুখুমিয়া যেসব কবিতা ও ছড়া রচনা করতেন তা দেখে রফিজউল্লাহ তাঁর প্রতিভার পরিচয় পান। তিনিই দুখুমিয়াকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ফিরে যান এবং সেখানে অষ্টম শ্রেণি থেকে পড়াশুনা শুরু করেন। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত এখানেই পড়াশুনা করেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষার না দিয়ে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। এই স্কুলে অধ্যয়নকালে দুখুমিয়া এখানকার চারজন শিক্ষক দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এঁরা হলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল, বিপ্লবী চেতনা বিশিষ্ট নিবারণচন্দ্র ঘটক, ফারসি সাহিত্যের হাফিজ নুরুন্নবী এবং সাহিত্য চর্চার নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

- উইকিপিডিয়া-

এই দুখুমিয়াই এককালে কাজী নজরুল ইসলাম হয়ে উঠেছিলেন। আজ তাঁর ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী। কবির বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। নীচে তাঁর কয়েকটা কবিতা ও গান সংযুক্ত করা হলো।


শায়ক-বেঁধা পাখি

রে নীড়-হারা, কচি বুকে শায়ক-বেঁধা পাখি!
কেমন করে কোথায় তোরে আড়াল দিয়ে রাখি?
কোথায় রে তোর কোথায় ব্যথা বাজে?
চোখের জলে অন্ধ আঁখি কিছুই দেখি না যে?
ওরে মানিক! এ অভিমান আমায় নাহি সাজে-
তোর জুড়াই ব্যথা আমার ভাঙা বক্ষপুটে ঢাকি’।
ওরে আমার কোমল-বুকে-কাঁটা-বেঁধা পাখি,
কেমন করে কোথায় তোরে আড়াল দিয়ে রাখি?

বক্ষে বিঁধে বিষমাখানো শর,
পথভোলা রে! লুটিয়ে প’লি এ কার বুকের 'পর!
কে চিনালে পথ তোরে হায় এই দুখিনীর ঘর?
তোর ব্যথার শানি লুকিয়ে আছে আমার ঘরে নাকি?
ওরে আমার কোমল-বুকে-কাঁটা-বেঁধা পাখি!
কেমন করে কোথায় তোরে আড়াল দিয়ে রাখি?

হায়, এ কোথায় শানি খুঁজিস তোর?
ডাকছে দেয়া. হাঁকছে হাওয়া, কাঁপছে কুটীর মোর!
ঝঞ্ঝাবাতে নিবেছে দীপ, ভেঙেছে সব দোর,
দোলে দুঃখরাতের অসীম রোদন বক্ষে থাকি’ থাকি’!
ওরে আমার কোমল-বুকে-কাঁটা-বেঁধা পাখি!
এমন দিনে কোথায় তোরে আড়াল দিয়ে রাখি?

মরণ যে বাপ বরণ করে তারে,
‘মা’ ‘মা’ ডেকে যে দাঁড়ায় এই শক্তিহীনার দ্বারে!
মাণিক আমি পেয়ে শুধু হারাই বারে বারে,
ওরে তাই তো ভয়ে বক্ষ কাঁপে কখন দিবি ফাঁকি!
ওরে আমার হারামণি! ওরে আমার পাখি!
কেমন করে কোথায় তোরে আড়াল দিয়ে রাখি?

হারিয়ে পাওয়া ওরে আমার মাণিক!
দেখেই তোরে চিনেছি, আয়, বক্ষে ধরি খানিক!
বাণ-বেঁধা বুক দেখে তোরে কোলে কেহ না নিক,
ওরে হারার ভয়ে ফেলতে পারে চিরকালের মা কি?
ওরে আমার কোমল-বুকে-কাঁটা-বেঁধা পাখি!
কেমন করে কোথায় তোরে আড়াল দিয়ে রাখি।
এ যে রে তোর চিরচেনা স্নেহ,
তুই তো আমার নস্‌ রে অতিথ অতীত কালের কেহ,
বারে বারে নাম হারায়ে এসেছিস এই গেহ,
এই মায়ের বুকে থাক জাদু তোর য’দিন আছে বাকি!
প্রাণের আড়াল করতে পারে সৃজন দিনের মা কি?
হারিয়ে যাওয়া? ওরে পাগল, সে তো চোখের ফাঁকি!



আমার কৈফিয়ত

বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই ‘নবী’,
কবি ও অকবি যাহা বলো মোরে মুখ বুঁজে তাই সই সবি!
কেহ বলে, ‘তুমি ভবিষ্যতে যে
ঠাঁই পাবে কবি ভবীর সাথে হে!
যেমন বেরোয় রবির হাতে সে চিরকেলে-বাণী কই কবি?’
দুষিছে সবাই, আমি তবু গাই শুধু প্রভাতের ভৈরবী!

কবি-বন্ধুরা হতাশ হইয়া মোর লেখা পড়ে শ্বাস ফেলে!
বলে, কেজো ক্রমে হচ্ছে অকেজো পলিটিক্সের পাশ ঠেলে।
পড়ে নাকো বই, বয়ে গেছে ওটা।
কেহ বলে, বৌ-এ গিলিয়াছে গোটা।
কেহ বলে, মাটি হলো হয়ে মোটা জেলে বসে শুধু তাস খেলে!
কেহ বলে, তুই জেলে ছিলি ভালো ফের যেন তুই যাস জেলে!

গুরু কন, তুই করেছিস শুরু তলোয়ার দিয়ে দাড়ি চাঁছা!
প্রতি শনিবারী চিঠিতে প্রেয়সী গালি দেন, ‘তুমি হাঁড়িচাঁচা!’
আমি বলি, ‘প্রিয়ে, হাটে ভাঙি হাঁড়ি!’
অমনি বন্ধ চিঠি তাড়াতাড়ি।
সব ছেড়ে দিয়ে করিলাম বিয়ে, হিন্দুরা কন, 'আড়ি চাচা!’
যবন না আমি কাফের ভাবিয়া খুঁজি টিকি দাড়ি, নাড়ি কাছা!

মৌ-লোভী যত মৌলবী আর ‘মোল্লা’রা কন হাত নেড়ে,
‘দেব-দেবী নাম মুখে আনে, সবে দাও পাজিটার জাত মেরে!
ফতোয়া দিলাম- কাফের কাজী ও,
যদিও শহীদ হইতে রাজি ও!
‘আমপারা-পড়া হাম-বড়া মোরা এখনো বেড়াই ভাত মেরে!
হিন্দুরা ভাবে, ‘পার্শী-শব্দে কবিতা লেখে, ও পাত-নেড়ে!’

আনকোরা যত নন্‌ভায়োলেন্ট নন্‌-কোর দলও নন্‌ খুশি।
‘ভায়োরেন্সের ভায়োলিন্‌’ নাকি আমি, বিপ্লবী-মন তুষি!
‘এটা অহিংস’, বিপ্লবী ভাবে,
‘নয় চরকার গান কেন গাবে?’
গোঁড়া-রাম ভাবে নাস্তিক আমি, পাতি-রাম ভাবে কনফুসি!
স্বরাজীরা ভাবে নারাজী, নারাজীরা ভাবে তাহাদের আঙ্কুশি!

নর ভাবে, আমি বড় নারী-ঘেঁষা! নারী ভাবে, নারী-বিদ্বেষী!
‘বিলেত ফেরো নি?’ প্রবাসী-বন্ধু কন, ‘এই তব বিদ্যে, ছি!’
ভক্তরা বলে, ‘নবযুগ-রবি!’
যুগের না হই, হজুগের কবি
বটি তো রে দাদা, আমি মনে ভাবি, আর কষে কষি হৃদ্‌-পেশি,
দু কানে চশ্‌মা আঁটিয়া ঘুমানু, দিব্যি হতেছে নিদ্‌ বেশি!

কী যে লিখি ছাই মাথা ও মুণ্ডু আমিই কি বুঝি তার কিছু?
হাত উঁচু আর হলো না তো ভাই, তাই লিখি করে ঘাড় নীচু!
বন্ধু! তোমরা দিলে নাকো দাম,
রাজ-সরকার রেখেছেন মান!
যাহা কিছু লিখি অমূল্য বলে অ-মূল্যে নেন! আর কিছু
শুনেছ কি, হুঁ হুঁ, ফিরিছে রাজার প্রহরী সদাই কার পিছু?

বন্ধু! তুমি তো দেখেছ আমায় আমার মনের মন্দিরে,
হাড় কালি হলো শাসাতে নারিনু তবু পোড়া মন-বন্দিরে!
যতবার বাঁধি ছেঁড়ে সে শিকল,
মেরে মেরে তারে করিনু বিকল,
তবু যদি কথা শোনে সে পাগল! মানিল না রবি-গান্ধীরে।
হঠাৎ জাগিয়া বাঘ খুঁজে ফেরে নিশার আঁধারে বন চিরে!

আমি বলি, ওরে কথা শোন ক্ষ্যাপা, দিব্যি আছিস খোশ-হালে!
প্রায় ‘হাফ’-নেতা হয়ে উঠেছিস, এবার এ দাঁও ফসকালে
‘ফুল’-নেতা আর হবি নে যে হায়!
বক্তৃতা দিয়া কাঁদিতে সভায়
গুঁড়ায়ে লঙ্কা পকেটেতে বোকা এই বেলা ঢোকা! সেই তালে
নিস তোর ফুটো ঘরটাও ছেয়ে, নয় পস্তাবি শেষকালে।

বোঝে নাকো যে সে চারণের বেশে ফেরে দেশে দেশে গান গেয়ে,
গান শুনে সবে ভাবে, ভাবনা কী! দিন যাবে এবে পান খেয়ে!
রবে নাকো ম্যালেরিয়া মহামারি,
স্বরাজ আসিছে চড়ে জুড়ি-গাড়ি,
চাঁদা চাই, তারা ক্ষুধার অন্ন এনে দেয়, কাঁদে ছেলে-মেয়ে।
মাতা কয়, ওরে চুপ্‌ হতভাগা, স্বরাজ আসে যে, দেখ চেয়ে!

ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় দুটো ভাত, একটু নুন,
বেলা বয়ে যায়, খায় নি কো বাছা, কচি পেটে তার জ্বলে আগুন।
কেঁদে ছুটে আসি পাগলের প্রায়,
স্বরাজের নেশা কোথা ছুটে যায়!
কেঁদে বলি, ওগো ভগবান তুমি আজিও আছো কি? কালি ও চুন
কেন ওঠে নাকো তাহাদের গালে, যারা খায় এই শিশুর খুন?

আমরা তো জানি, স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস!
কত শত কোটি ক্ষুধিত শিশুর ক্ষুধা নিঙাড়িয়া কাড়িয়া গ্রাস
এলো কোটি টাকা, এলো না স্বরাজ!
টাকা দিতে নারে ভুখারি সমাজ।
মা’র বুক হতে ছেলে কেড়ে খায়, মোরা বলি, বাঘ, খাও হে ঘাস!
হেরিনু, জননী মাগিছে ভিক্ষা ঢেকে রেখে ঘরে ছেলের লাশ!

বন্ধু গো, আর বলিতে পারি না, বড় বিষ-জ্বালা এই বুকে!
দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি, তাই যাহা আসে কই মুখে।
রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা,
তাই লিখে যাই এ রক্ত-লেখা,
বড়ো কথা বড়ো ভাব আসে নাকো মাথায়, বন্ধু, বড়ো দুখে!
অমর কাব্য তোমরা লিখিও, বন্ধু, যাহারা আছো সুখে!

পরোয়া করি না, বাঁচি বা না-বাঁচি যুগের হুজুগ কেটে গেলে,
মাথায় উপরে জ্বলিছেন রবি, রয়েছে সোনার শত ছেলে।
প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটি মুখের গ্রাস,
যেন লেখা হয় আমার রক্ত-লেখায় তাদের সর্বনাশ!



বাতায়ন-পাশে গুবাক তরুর সারি

বিদায়, হে মোর বাতায়ন-পাশে নিশীথ জাগার সাথি!
ওগো বন্ধুরা, পাণ্ডুর হয়ে এলো বিদায়ের রাতি!
আজ হতে হলো বন্ধ আমার জানালার ঝিলিমিলি,
আজ হতে হলো বন্ধ মোদের আলাপন নিরিবিলি।

অস্ত-আকাশ-অলিন্দে তার শীর্ণ কপোল রাখি
কাঁদিতেছে চাঁদ, “মুসাফির জাগো, নিশি আর নাই বাকি!”
নিশীথিনী যায় দূর বন-ছায় তন্দ্রায় ঢুলুঢুল্,
ফিরে ফিরে চায়, দু হাতে জড়ায় আঁধারের এলোচুল।

চমকিয়া জাগি, ললাটে আমার কাহার নিশাস লাগে?
কে করে ব্যজন তপ্ত ললাটে, কে মোর শিয়রে জাগে?
জেগে দেখি, মোর বাতায়ন-পাশে জাগিছে স্বপনচারী
নিশীথ রাতের বন্ধু আমার গুবাক তরুর সারি!

তোমাদের আর আমার আঁখির পল্লব-কম্পনে
সারারাত মোরা কয়েছি যে কথা, বন্ধু, পড়িছে মনে!
জাগিয়া একাকী জ্বালা করে আঁখি আসিত যখন জল,
তোমাদের পাতা মনে হতো যেন সুশীতল করতল

আমার প্রিয়ার!- তোমার শাখার পল্লবমর্মর
মনে হতো যেন তারি কণ্ঠের আবেদন সকাতর।
তোমার পাতায় দেখেছি তাহারি আঁখির কাজল-লেখা,
তোমার দেহেরই মতন দিঘল তাহার দেহের রেখা।
তব ঝিরঝির মিরমির যেন তারি কুণ্ঠিত বাণী,
তোমার শাখায় ঝুলানো তারির শাড়ির আঁচলখানি!
-তোমার পাখার হাওয়া
তারি অঙ্গুলি-পরশের মত নিবিড় আদর-ছাওয়া!

ভাবিতে ভাবিতে ঢুলিয়া পড়েছি ঘুমের শ্রান্ত কোলে,
ঘুমায়ে স্বপন দেখেছি, - তোমারি সুনীল ঝালর দোলে
তেমনি আমার শিথানের পাশে। দেখেছি স্বপনে, তুমি
গোপনে আসিয়া গিয়াছ আমার তপ্ত ললাট চুমি।
হয়ত স্বপনে বাড়ায়েছি হাত লইতে পরশখানি,
বাতায়নে ঠেকি ফিরিয়া এসেছে, লইয়াছি লাজে টানি
বন্ধু, এখন রুদ্ধ করিতে হইবে সে বাতায়ন!
ডাকে পথ, হাঁকে যাত্রিরা, ‘কর বিদায়ের আয়োজন!’
-আজি বিদায়ের আগে
আমারে জানাতে তোমারে জানিতে কত কী যে সাধ জাগে!
মর্মের বাণী শুনি তব, শুধু মুখের ভাষায় কেন
জানিতে চায় ও বুকের ভাষারে লোভাতুর মন হেন?
জানি-মুখে মুখে হবে না মোদের কোনোদিন জানাজানি,
বুকে বুকে শুধু বাজাইবে বীণা বেদনার বীণাপাণি!

হয়ত তোমারে দেখিয়াছি, তুমি যাহা নও তাই করে,
ক্ষতি কী তোমার, যদি গো আমার তাতেই হৃদয় ভরে?
সুন্দর যদি করে গো তোমারে আমার আঁখির জল,
হারা-মোম্তাজে লয়ে কারো প্রেম রচে যদি তাজ-ম’ল,
-বল তাহে কার ক্ষতি?
তোমারে লইয়া সাজাব না ঘর, সৃজিব অমরাবতী!…

হয়ত তোমার শাখায় কখনো বসে নি আসিয়া শাখী,
তোমার কুঞ্জে পত্রপুঞ্জে কোকিল ওঠে নি ডাকি।
শূন্যের পানে তুলিয়া ধরিয়া পল্লব-আবেদন
জেগেছ নিশীথে জাগেনি কো সাথে খুলি কেহ বাতায়ন।
-সব আগে আমি আসি
তোমারে চাহিয়া জেগেছি নিশীথ, গিয়াছি গো ভালোবাসি!
তোমার পাতায় লিখিলাম আমি প্রথম প্রণয়-লেখা
এইটুকু হোক সান্ত্বনা মোর, হোক বা না হোক দেখা

তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না।
কোলাহল করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।
নিশ্চল নিশ্চুপ
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধুর ধূপ।…

শুধাইতে নাই, তবুও শুধাই আজিকে যাবার আগে-
ঐ পল্লব-জাফরি খুলিয়া তুমিও কি অনুরাগে
দেখেছ আমারে - দেখিয়াছি যবে আমি বাতায়ন খুলি?
হাওয়ায় না মোর অনুরাগে তব পাতা উঠিয়াছে দুলি?

তোমার পাতার হরিৎ আঁচলে চাঁদনি ঘুমাবে যবে,
মূর্ছিতা হবে সুখের আবেশে, - সে আলোর উৎসবে,
মনে কি পড়িবে এই ক্ষণিকের অতিথির কথা আর?
তোমার নিরাশ শূন্য এ ঘরে করিবে কি হাহাকার?
চাঁদের আলোক বিস্বাদ কি গো লাগিবে সেদিন চোখে?
খড়খড়ি খুলি চেয়ে রবে দূর অস্ত অলখ-লোকে?
-অথবা এমনি করি
দাঁড়ায়ে রহিবে আপন ধেয়ানে সারা দিনমান ভরি?
মলিন মাটির বন্ধনে বাঁধা হায় অসহায় তরু,
পদতলে ধূলি, উর্ধ্বে তোমার শূন্য গগন-মরু।
দিবসে পুড়িছ রৌদ্রের দাহে, নিশীথে ভিজিছ হিমে,
কাঁদিবারও নাই শকতি, মৃত্যু-আফিমে পড়িছ ঝিমে!
তোমার দুঃখ তোমারেই যদি, বন্ধু, ব্যথা না হানে,
কী হবে রিক্ত চিত্ত ভরিয়া আমার ব্যথার দানে!…

ভুল করে কভু আসিলে স্মরণে অমনি তা যেয়ো ভুলি।
যদি ভুল করে কখনো এ মোর বাতায়ন যায় খুলি,
বন্ধ করিয়া দিও পুনঃ তায়! তোমার জাফরি-ফাঁকে
খুঁজো না তাহারে গগন-আঁধারে-মাটিতে পেলে না যাকে।



অভিশাপ

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি
সাগর আকাশ বাতাশ চিরি
সেদিন আমায় খুঁজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে-
জাগবে হঠাৎ ছমকে,
ভাববে বুঝি আমিই এসে
বসনু বুকের কোলটি ঘেঁষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শূন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে

গাইতে গিয়ে কণ্ঠ ছিঁড়ে আসবে যখন কান্না
বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?-
আসবে ভেঙ্গে কান্না,
পড়বে মন আমার সোহাগ
কণ্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ
পড়বে মনে আমার ফাঁকি
অশ্রুহারা কঠিন আঁখি
ঘন ঘন মুছবে,
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আবার যেদিন শিউলি ফুলে ভরবে তোমার অঙ্গন
তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা, কাঁপবে তোমার কঙ্কণ
কাঁদবে কুটির অঙ্গন,
শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
পড়বে মনে উঠবে কাঁদি
বুকের জ্বালা করবে মালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আসবে আবার আশিন হাওয়া, শিশির ছেঁচা রাত্রি
থাকবে সবাই- থাকবে না এই মরণ পথের যাত্রীই
আসবে শিশির রাত্রি,
থাকবে পাশে বন্ধু সুজন
থাকবে রাত বাহুর বাঁধন
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে
বিষিয়ে ও বুক উঠবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আসবে তোমার শীতের রাতি, আসবে নাকো আর সে
তোমার সুখে পড়তো বাধা থাকলে যে জন পার্শ্বে
আসবে নাকো আর সে,
পড়বে মন মোর বাহুতে
মাথা থুয়ে যেদিন শুতে
মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়
সেই স্মৃতি তো ঐ বিছানায়
কাঁটা হয়ে ফুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আবার গাঙ্গে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে
সেই তরীতে হয়তো কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে
দুলবে তরী রঙ্গে,
পড়বে মনে সে কোন রাতে
এক তরীতে ছিলে সাথে
এমনি গাঙে ছিল জোয়ার
নদীর দু ধার এমনি আঁধার
তেমনি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা বন্ধ
আমার মত কেঁদে কেঁদে হয়তো হবে অন্ধ
সখার কারা বন্ধ,
বন্ধু তোমার হানবে হেলা
ভাঙ্গবে তোমার সুখের খেলা
দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর
বইতে প্রাণ শ্রান্ত এ ভার
মরণ-সনে যুঝবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

ফুটবে আবার দোলন চাপা, চৈতি রাতের চাঁদনি
আকাশ ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাঁদনি
চৈতি রাতের চাঁদনি
ঋতুর পরে ফিরবে ঋতু
সেদিন হে-মোর সোহাগ ভীতু
চাইবে কেদে নীল নভোগায়
আমার মত চোখ ভরে চায়
যে তারা, তায় খুঁজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আসবে ঝড়ি, নাচবে তুফান টুটবে সকল বন্ধন
কাপবে কুটির সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন
টুটবে যবে বন্ধন,
পড়বে মনে নেই সে সাথে
বাঁধতে বুকে দুঃখ রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা
চাইবে আদর মাগবে ছোঁওয়া
আপনি যেচে চুমবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।

আমার বুকের যে কাঁটা ঘা, তোমায় ব্যথা হানত
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়তো হয়ে শ্রান্ত
আসব তখন পান্থ,
হয়তো তখন আমার কোলে
সোহাগ-লোভে পড়বে ঢোলে
আপনি সেদিন সেধে-কেঁদে
চাপবে বুকে বাহুয় বেঁধে
চরণ চুমে পূজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।


***

নজরুল গীতির জন্য আমার এ পোস্টে ভ্রমণ করতে পারেনঃ আমার নজরুল্গীতি সংগ্রহ

***

এবার কিছু গান এখানেই শুনুন।


আমার আপনার চেয়ে আপন যে-জন খুঁজি তারে আপনায় - অন্বেষা





তুমি শুনিতে চেয়ো না আমার মনের কথা - মাধুরী মুখোপাধ্যায়





এত জল ও কাজল চোখে পাষাণী আনলে বলো কে - মানবেন্দ্র





উচাটন মন ঘরে রয় না - অজয় চক্রবর্তী





অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে - অনুরাধা পাড়োয়াল





হারানো হিয়ার নিকুঞ্জ পথে - অনুরাধা পাড়োয়াল





সাত ভাই চম্পা জাগো রে - রুনা লায়লা (এটা ছবির গান নয়)




মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম - ফিরোজা বেগম




নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল - শ্যামল মিত্র




আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন - মোহাম্মদ রফি




সুরেয় বাণীর মালা দিয়ে তুমি আমারে ছুঁইয়াছিলে - ফিরোজা বেগম





সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×