তুমি আরেকবার আসিয়া
যাও মোরে কান্দাইয়া
তুমি আরেকবার আসিয়া
যাও মোরে কান্দাইয়া
আমি মনের সুখে একবার কানতে চাই
পোড়া বুকে দারুণ খরা চোখের পানি চোখে নাই
অারেকবার আসিয়া
যাও মোরে কান্দাইয়া
আমি মনের সুখে একবার কানতে চাই
না পারিলাম বাঁচতে আমি
না পারিলাম মরতে
না পারিলাম পিরিতের ঐ
সোনার পাখি ধরতে
আমি এ কূল থেকে ও কূল গেলাম
ঘাটে ঘাটে চোখ রাখিলাম
আশায় আশায় ছিলাম যদি তোমার দেখা পাই
আরেকবার আসিয়া
যাও মোরে কান্দাইয়া
তুমি আরেকবার আসিয়া
যাও মোরে কন্দাইয়া
আমি মনের সুখে একবার কানতে চাই
না বাঁধিলাম ডাঙাতে ঘর
না ডুবিলাম জলে
না পাইলাম কূল কারো মনে
না ভাসলাম অকূলে
তোমায় নাইবা পেলাম এই জনমে
সঙ্গী হবো তোমার সনে
সকল বান্ধন ছিঁড়া যখন ঐ পাড়েতে যাই
আরেকবার আসিয়া
যাও মোরে কান্দাইয়া
তুমি আরেকবার আসিয়া
যাও মোরে কান্দাইয়া
আমি মনের সুখে একবার কানতে চাই
ছোটোবেলায় এ গানটা অনেক গাইতাম। স্কুলে ক্লাসের ভেতর, টিফিন পিরিয়ডে মাঠের পশ্চিম পাড়ে আমগাছের তলায়, কিংবা বিকালে খেলাশেষে মাঠের মাঝখানে বসে সন্ধ্যা থেকে অনেক রাত অব্দি দল বেঁধে গানটা গাইতাম। তখন এ গানটার অর্থ বুঝতাম না। খুব সরল অর্থে মনে হতো, কেউ একজন চলে গেছে, সে আরেকবার আসবে, কোনো একজনকে কাঁদাবে। কিন্তু সে ফিরে এসে কেন তাকে কাঁদাবে, বা সে ফিরে এলে সে কাঁদবেই বা কেন, এসব রহস্য বুঝতাম না। কখনো-বা ছেলেরা ও মেয়েরা দল বেঁধে গাইতাম।
ছেলেরাঃ
না পারিলাম বাঁচতে আমি
না পারিলাম মরতে
মেয়েরাঃ
না পারিলাম পিরিতের ঐ
সোনার পাখি ধরতে
কোরাস :
আমি এ কূল থেকে ও কূল গেলাম
ঘাটে ঘাটে চোখ রাখিলাম
আশায় আশায় ছিলাম যদি তোমার দেখা পাই
ওহ্, কী যে মজা হতো! কিন্তু মনের ভেতর খটকা লেগে থাকতো- আমি বাঁচতেও পারলাম না, মরতেও পারলাম না, আবার পিরিতের একটা সোনার পাখি আছে নাকি, কোন অপরূপ রাজ্যের সেই পাখি, কল্পনা করতাম সেই পাখির রং, উড়বার ঢং, হাতের তালুয় সে পাখিটা কি এসে বসবে? কিন্তু সেটাকেও ধরতে পারলাম না- এত জটিল কেন সবকিছু!
তারপর বেদনা আর ব্যর্থতা ঘনীভূত হতে থাকে। আমার ডাঙাতে ঘর বাঁধা হলো না, জলে ডুবেও মরা হলো না, কারো মনও পাওয়া হলো না, আমি সবার অগোচরে অকূলে ভাসতে থাকি; কিন্তু আমার আকুতি জিইয়ে থাকে মনের ভেতর-
তোমায় নাইবা পেলাম এই জনমে
সঙ্গী হবো তোমার সনে
সকল বান্ধন ছিঁড়া যখন ঐ পাড়েতে যাই
এখন সেই ছোটোবেলায় আর ফিরে যাওয়া হবে না; সেই পুকুরের পাড়, কেউ একজন খুব করে কোনো একজনকে লক্ষ করে গাইছে :
তোমায় নাইবা পেলাম এই জনমে
সঙ্গী হবো তোমার সনে
সকল বান্ধন ছিঁড়া যখন ঐ পাড়েতে যাই
আমাদের সকল বন্ধন ছিঁড়বার কত তীব্র বাসনা মনের ভেতর! কিন্তু সেই বন্ধন কে ছিঁড়িতে পারে?
শিল্পীঃ রথীন্দ্রনাথ রায়
ছবিঃ নাগর দোলা
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১:১৮