১৯৮৯ সালের মার্চ-এপ্রিলে সিলেট শহর থেকে আমি প্রথম ওয়াকম্যান কিনি এবং ঐদিনই ৩টা ক্যাসেট কিনি যার মধ্যে একটা ছিল রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার অ্যালবাম (নাম মনে নাই)। ৩টা ক্যাসেটই ঘুরেফিরে শুনতে শুনতে গানগুলো মুখস্থ হয়ে গেলো। এরপর তুমুল ব্যস্ততার জন্য গান থেকে দূরে ছিলাম প্রায় বছর দুয়েক।
এরপর একবার খাগড়াছড়ি গেলাম। থাকতে শুরু করলাম। খাগড়াছড়ির প্রত্যন্ত দিঘিনালা বাজারের রতনের দোকান ছিল অত্যাধুনিক পোশাক, কসমেটিকস সহ গানের ক্যাসেট ও রেডিও/ক্যাসেট প্লেয়ার/ওয়াকনম্যানের জন্য বিখ্যাত। ততদিনে আমার প্রথম ওয়াকম্যান ভূ-মজ্জিত হয়ে ফসিলে পরিণত হয়েছে। রতনের দোকান থেকে কিছুদিন পর পর শুধু ক্যাসেটই কিনি না, বিভিন্ন মডেলের চাইনিজ ওয়াকম্যানও কিনি, কলকব্জা, নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ি, অতএব আরেকটা কিনি। হরেক রকম ক্যাসেটের মধ্যে ‘ভারতীয় আধুনিক বাংলা গানের’ ক্যাসেট, লতা, অনুরাধা পাড়োয়ান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, আইয়ুব বাচ্চু/তপন চৌধুরীর ক্যাসেট (আল্লাহ আইয়ুব বাচ্চুকে বেহেশত নসিব করুন) সহ অনেক বিখ্যাত শিল্পীর ক্যাসেট কিনি, আর এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রেজওয়ানা চৌধুরীর বন্যার ক্যাসেট। তাঁর ক্যাসেট সামনে পেলেই কিনি। গান শোনার বিভিন্ন অভ্যাসের মধ্যে আমার প্রধান অভ্যাসটা ছিল ঘুমানোর আগে খুবই মৃদু ভলিয়্যুমে ক্যাসেট প্লেয়ার অন করে কানের কাছে রেখে দেয়া, যাতে ঘুমের মধ্যে আমি সুরের মূর্ছনায় দুলতে থাকি। এবং তাই-ই হতো। ঘুমের মধ্যে একটা অভূতপূর্ব সুখ সুখ ভাব অনুভূত হতো। বন্যার গানগুলো আমি সাধারণত এভাবেই শুনতাম। ঘুম ভেঙে গেলে, কিংবা ঘুম ও জাগরণের মধ্যিখানে আমি শুনতে পেতাম, খুব করুণ সুরে ধীর লয়ে বাজছে- আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন। সকালে ঘুম থেকে উঠেও দেখতাম এটা বাজছে। অনেক সময় অ্যাডাপ্টার পুড়ে গন্ধ ছড়াতো, ঘুম ভাঙতো সেই গন্ধে
আমার পিসি ভর্তি গান, ভিডিও, ছবি, স্টিল পিকচার। ২০১৩/১৪’র দিকে ল্যাপটপ ক্র্যাশ করায় আমার গান আর ছবির ভাণ্ডার হারিয়ে যায়, উদ্ধার করতে পারি খুব কম। তারও আগে ২০১১-তে ১ টিবি হার্ড ডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলে আরো বেশি মূল্যবান সংগ্রহ হারিয়ে যায়।
ব্যস্ত জীবনে গান শোনার সময় তেমন হয় না। কিন্তু অবসরে পিসিতে থাকলেই যুগপৎ গান, টিভি, ইত্যাদি সবই চলতে থাকে একযোগে, কোনোটাই ঠিকমতো শোনা যায় না, যেহেতু মগ্ন থাকি ব্লগিং বা ফেইসবুকিঙে, কিন্তু গানের একটা আবহ চারদিকে বিরাজমান থাকে, সেটাই চিত্তকে প্রফুল্ল রাখে।
চোখের সমস্যার কারণে এ কদিন গান শুনছি বেশি। বন্যার গান টিভিতে এক-আধটু শোনা ছাড়া মনোযোগ দিয়ে এর আগে সর্বশেষ কবে শুনেছি মনে নেই। ইন ফ্যাক্ট, ব্লগ জগতে আসার পর অডিও লাইফের সমাপ্তি ঘটেছে। গত ক’দিনে নানান ধরনের গান শুনতে শুনতে কী কারণে যেন বন্যার গানও শুনতে ইচ্ছে হলো। ইউ-টিউবে শুনতে গিয়ে একটু ধাক্কা খেলাম। যেগুলো পেলাম তার বেশির ভাগই অরিজিন্যাল (অর্থাৎ প্রথম দিকের) রেকর্ড করা গান না। প্রথম দিকের রেকর্ডেড গানগুলোর মিষ্টতা ছিল বেশি। ভাগ্য ভালো যে, পিসিতেই পেয়ে গেলাম প্রথম দিকের বেশ কিছু গান।
বন্যার গানের বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁর গাওয়া গানগুলোতে তিনিই সেরা- কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী সেন, সাগর সেন, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়, সুমন চট্টোপাধ্যায়, সাদি মোহাম্মাদ, মিতা হক, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, পাপিয়া সারোয়ার, কাদেরী কিবরিয়া- এঁরা সবাই রবীন্দ্র সঙ্গীতের একেকটা নক্ষত্র, কিন্তু, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বন্যার গাওয়া গানগুলোই সবচাইতে নিখুঁত শ্রুতিমধুর। এরই মধ্যে আরেক যে শিল্পীর গান বন্যার গানের মতো ভালো লেগেছে, তাঁর নাম অদিতি মহসিন। এ পোস্টটা মূলত বন্যার গানের সমাহার, কিন্তু অদিতি মহসিনের কিছু গানও যোগ করলাম। এগুলো কোনো গানের ভিডিও না, অডিও মিউজিক হিসাবেই এগুলো শুনতে হবে। পুরোনো রেকর্ড হওয়ায় কিছু গানের সাউন্ড ত্রুটিপূর্ণ আছে।
১
এই যে তোমার প্রেম ওগো হৃদয়-হরণ
২
ও আমার দেশের মাটি
৩
আমার সকল দুঃখের প্রদীপ
৪
গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙা মাটির পথ
৫
ও আমার দেশের মাটি
৬
গহন কুসুম কুঞ্জ মাঝে
৭
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন
৮
বধূ কোন আলো লাগলো চোখে
৯
ঐ মালতীলতা দোলে
১০
রোদনভরা এ বসন্ত
১১
জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ
১২
আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে
১৩
যে ছিল আমার স্বপনচারিণী
১৪
শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা
১৫
আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায়
১৬
ভেঙে মোর ঘরের চাবি
১৭
মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো
১৮
সে কোন বনের হরিণ ছিল আমার মনে
১৯
এসো শ্যামল সুন্দর
২০
ভুবনেশ্বর হে
২১
এই কথাটি মনে রেখো
এবার অদিতি মহসিনের কয়েকটা গান
২২
ডাকবো না ডাকবো না
২৩
আমি কান পেতে রই
২৪
হৃদয়ের এ কূল ও কূল দু কূল ভেসে যায়
আমি বন্যার গাওয়া এ গানটির অরিজিন্যাল রেকর্ডটা খুঁজছি
২৫
জগতে আনন্দ যজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ
২৬
আমার ভাঙা পথের রাঙা ধুলায় পড়েছে কার পায়ের চিহ্ন
২৭
বোনাস
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে
শ্রেয়া ঘোষাল
আরেকটা গানের পোস্টঃ সে কোন সে কোন বনের হরিণ ছিল আমার মনে
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:৫১