-শেষ করে ফেললি শেষ পর্যন্ত!
-হুম।
-মুক্ত মুক্ত লাগছেনা?
-বুঝতে পারছিনা… কেমন যেন লাগছে…
-তুই নিজেই তো একাডেমিক পড়ালেখা ভাল লাগেনা ভাল লাগেনা জপতে জপতে কান ঝালাপালা করে ফেলছিলি! এখন তো তোর খুশী হওয়ার কথা!
-কেমন যেন নিজেকে বুড়া বুড়া লাগছে।
-হাহাহাহাহ! আর কত ছোট থাকবি?
-কিন্তু আমার যে এখনো বৌঁচি খেলা ভাল লাগে!
-সমস্যা কোথায়? এক গন্ডা বাচ্চাকাচ্চা পয়দা কর। সবার আগে ওদেরকে বৌঁচি খেলা শিখায়ে দিবি। তারপর এমন একটা বাসা নিবি যার ড্রয়িংরুমে অনায়াসে খেলতে পারবি।
-দোস্ত, নিজের বাচ্চা হলে দেখা যাবে ওদেরকে বৌঁচি খেলা শেখানোর বদলে ম্যাথ,জুওলজি হাবিজাবি শিখাচ্ছি। ওরা খেলতে চাইলে উলটা ঝাড়ি মারবো এখন এটা করতে বস, এখন ওটা করতে বস। খেলাটাও তখন ওদের জন্যে হবে ক্যারিয়ারের একটা মাত্রা মাত্র।…… আর ড্রইংরুম? আমাদের নাগরিক জীবনে ড্রইংরুমে কেউ খেলেনা, শোপিস দিয়ে সাজিয়ে রাখে।
-ধুর! তুই কি তেমন হবি নাকি?
-কে বলতে পারে দোস্ত! দেখ, তুই আমি আর মম তো একসময় ভাবতাম আমরা কেউ বদলাবোনা। আমরা সারাজীবন ভবঘুরেই থেকে যাব। এখন মম কেমন দারুন সংসারী হয়ে গেছে……… সেদিন অভিযোগ করছিল নতুন কাপড়টা কিনতে গিয়ে দোকানদার তাকে ঠকায়ে দিছে। অথচ তোর মনে আছে? একসময় আমরা ইচ্ছা করে ঠকতে চাইতাম। যেন আমরা ঠকে গিয়ে জিততে চাইতাম।
-হুম।
-কিন্তু তুই এখনো সেই ভবঘুরেই আছিস!
-তুই নিজে কেমন গৃহস্থ হয়ে গেলি।
-ঠিক। নিজের অজান্তেই কখন বদলে গেলাম… খালি মনে হচ্ছে রঙ্গিন বইটা বন্ধ করে এখন সাদাকালো বই খোলার পালা ………আমার কেন যেন উচ্ছন্নে যেতে ইচ্ছা করছে আবার।
-তুইতো উচ্ছন্নেই গিয়েছিস।
-সেকিরে? একটু আগেইতো গৃহস্থ হয়ে গেছি বলে গালি দিচ্ছিলি!
-গৃহস্থ হওয়াটাই পৃথিবীর সবচে’ বড় উচ্ছন্নে যাওয়া।
আমরা দু’জন উদাস হয়ে আকাশ দেখতে থাকি।
-দোস্ত, আমাদের বিশ্ব দেখাটা হলনা!
-নড়বড়ে প্ল্যান ছিল ওটা।
-কিন্তু আমরাতো ঠিক করছিলাম কাউকে কিছু না বলে একদিন সকালে বের হয়ে যাব। কত প্ল্যান! কতদিন সিটিং দিলাম কীভাবে কোথায় যাব, কোন কোন জায়গায় সস্তায় থাকা যাবে…
-ইমোশন ছিল একটা।
-এখন তোর কাছে মনে হচ্ছে ইমোশন, আমরা কিন্তু তখন সিরিয়াস ছিলাম!…… আসলে হল না কেন জানিস? মায়ার জন্যে। সাজানো গুছানো জীবনের মায়া,আশেপাশের মানুষগুলোর মায়া… এখন কেমন এই মায়ার মাকড়সার জালে আটকা পড়ে ছটফট করছি!...কত বড় বড় স্বপ্ন দেখতাম আমরা!! কিন্তু সাহস করে এলকেমিস্টের মত স্বপ্নে দেখা পথে চলা হলনা।
-মন খারাপ করিসনা। সবাই এলকেমিস্ট হয়ে গেলে ব্যালেন্স নষ্ট হয়ে যাবে। তারচে স্বপ্ন দেখতে থাক………স্বপ্ন দেখাটাইতো জীবন।
আমরা আবার উদাস হয়ে যাই।
-দোস্ত, শেষ পর্যন্ত আমরা মেট্রপলিটনিক রোবট হয়ে গেলাম!
-এটা হয়তো নিয়তি ছিল।
-কিন্তু নিয়তি বদলাবো বলেইতো অত থাপ্পড় খেয়েছিলাম।
-থাপ্পড় খাওয়া খারাপ কিছুনা। হতে পারে আমাদের থাপ্পড় খাওয়াটাও নিয়তি ছিল।
-শুধু থাপ্পড়? লাথথিও কি খেয়েছি কম?! দোস্ত, তখন কিন্তু মন খারাপ করতে জানতাম না! সমাজ থেকে পরিত্যক্ত হয়ে আমরা যেন খুশী হয়ে উঠেছিলাম! একগালে থাপ্পড় খেয়েছি, তাতে কী? আরেক গালতো আছে!... সারাদিন রোদে রোদে হাঁটতাম। কেউ যখন বলত- এত সুন্দর স্কিনটা এভাবে জ্বালিয়ে ফেললে!... খুশী হয়ে যেতাম!...... যেন সবকিছু ধ্বংসতেই ছিল আমাদের আনন্দ!
-আমরা আসলে বোকা ছিলাম।
-হতে পারে। কিন্তু সেই বোকামীর জন্যেই কেমন মন কাঁদে।… চল দোস্ত,আমরা আবার বোকা হয়ে যাই!
-পারবি?
নিরবতা।
আমাদের উদাসীনতা আরো গাঢ় হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০০৮ ভোর ৬:৪৩