যদিও আইডিওলজিক্যাল কনফ্লিক্টের কারণে এবং সে কনফ্লিকশান এসে আমার নিজের রিসার্চে ইনফ্লুয়েনশিয়াল হয়ে দাঁড়াচ্ছে দেখে শেষ পর্যন্ত সুপারভাইজার চেইঞ্জ করতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু এখনো আমি সামারকে প্রচন্ড সম্মান করি। ভাংগা ভাংগা ইংলিশ বলা, ওয়েস্টের একাডেমিক জগতে সম্পূর্ণ অপরিচিত এই আমাকে না দেখেই, না চিনেই, শুধু আমার মেইল-এ একটা নির্দিষ্ট বিষয়টা আরো পড়তে চাওয়ার অদম্য ইচ্ছা’র কথা পড়ে যে কিনা স্কলারশিপ বোর্ডে তিন পৃষ্ঠার একটা চিঠি দিয়েছিল আমার পিএইচডি এডমিশানের সুপারিশ করে, যে চিঠি’র মেইন থিম ছিল ‘যে জানতে চায় তাকে জানার সুযোগ দেয়াই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈতিক দায়িত্ব’… তাকে সম্মান না করে উপায় নেই। সামান্য এই ‘নৈতিক দায়িত্ব’টুকু যেখানে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ঝানু মুসলিম ইউনি’র মানুষেরা এখনো বুঝেনা, সেখানে ওয়েস্টের একজন লেসবি যখন সে ‘নৈতিক দায়িত্ব’ পালন করতে চেষ্টা করে, তাকে সম্মান না করে আসলেই উপায় নেই।
সে যাই হোক, পিএইচডি স্টুডেন্ট হওয়ার এবং স্কুল ট্রান্সফার করে নতুন সেন্টারে জয়েন করার সুবাদেই বলা যায় অবশেষে আমার নিজেরই টীচার হওয়ার সুযোগ এসে গেলো একদম হঠাৎ করে। জীবনে কখনো দেশের স্কুলেও পড়াইনি, সে আমি কী করে ইউনি’তে পড়াবো ভেবে কুল কিনারা পাইনা! অবশ্য অনার্সে উঠার পর থেকে স্কলারশিপের টাকায় কুলাতো না বলে টিউশনী করতে হয়েছে যথারীতি। এখনো মনে আছে প্রথম যে মেয়েটাকে পড়িয়েছিলাম, খুব সম্ভব ওর নাম ছিলো মোনা। প্রথম দিন পড়িয়েই শর্ত দিয়েছিলাম, ‘এক শর্তে পড়াবো। তোমাকে প্রতিদিন সকালে উঠে বিটিভি’তে সকাল সাতটা পনের মিনিটে যে বিশ্ব সংবাদ দেয় দশ মিনিটের, সেটা দেখতে হবে!’ এমন উদ্ভট শর্তে ছাত্রীর মা বিচলিত হয়ে ছুটে এসেছিলেন। বুঝিয়ে বলেছিলাম, ‘আন্টি, ও দুনিয়াদারী সম্পর্কে কিছুই জানেনা। ওর আন্ডারস্ট্যান্ডিং তাই খুব স্বল্প পরিসরের। নিজের থেকে প্রোডাক্টিভ কোনো আন্সার দিতে পারেনা। যত দুনিয়াদারী সম্পর্কে জানবে তত একাডেমিক্যালি ও প্রোডাক্টিভ হবে’। মজার কথা হলো, মোনাকে ঘুম থেকে তুলে বিশ্ব সংবাদ দেখাতে দেখাতে আন্টি নিজেও শেষে বিশ্ব সংবাদের ভক্ত হয়ে উঠেছিলেন! এই হলো আমার প্রথম ছাত্রী পড়ানোর হিষ্ট্রী!... তবে বেশ ভালো বেতন দিতেন আন্টি। সপ্তাহে মাত্র তিনদিন দেড় ঘন্টা করে পড়িয়ে মাসে দুইহাজার টাকা! আর প্রতিদিন জোরপূর্বক নাস্তা তো আছেই!
কিন্তু দেশে ছাত্রী পড়ানো আর সিডনীতে এসে ইউনি’তে স্টুডেন্ট পড়ানো- ব্যাপক পার্থক্য! বসে বসে ভাবতে লাগলাম আমার প্রতিটা প্রিয় টীচারের কথা, কেন তাদেরকে ভাল লাগতো। কী পেয়েছি তাদের কাছ থেকে যা আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে আছে। ওনাদের ক্লাস আর পড়ানোর কথা ভাবতে ভাবতে উৎসাহিত হওয়ার পরিবর্তে উলটা আরো নার্ভাস হয়ে গেলাম! জাকির ভাই স্বান্তনা দেন, “ভাবী এমুন ডরান ক্যান? আমগো চাংকু টীচারগুলারে তো দেখেন নাই, ভালা কইরা একটা সেন্টেন্সও কইবার পারেনা। তাও হালায় ঘন্টার পর ঘন্টা ক্লাস নিতাছে! মন চায় এমুন একটা *** লাগাই! আপনে তো তাগো তুলনায় অনেক ভালা। ডরাইয়্যেন না, দেখবেন, কেমুন সুন্দর ক্লাস নিয়া আইয়্যা পড়ছেন!”
সুপারভাইজার পই পই করে গুরুত্বপূর্ণ টিপস শিখিয়ে দিলেন, ‘যখন দেখবা কোনো স্টুডেন্ট আউট অব কন্ট্রোল চলে যাচ্ছে, চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকবা। দেখবা এটা থেরাপী’র মত কাজ দিবে, একদম লাইনে চলে আসবে স্টুডেন্ট!’ জিপসী’র অফিস থেকে ভিক্টর ফোন করলো, ‘আরে অত ডরাও ক্যান?? একটা কথা খালি মনে রাখবা, ইউ আর দ্য বস!’ ঠিক বের হওয়ার মুহূর্তে চাঁদ ভাবী ডেকে বললেন, ‘বাচ্চা পোলাপাইনের মত ড্রেস পরে যেওনা। এখন তুমি টীচার, ইস্ত্রি করা কালো প্যান্ট পরো, যাও! আর এই স্কার্ফ বদলাও। টীচাররা এত রঙ চঙ্গে স্কার্ফ পড়েনা! আর হায় হায় স্যান্ডেল পড়ে যাচ্ছো?! দেখো, অজি সাজার ঢং করার মানে নেই, ব্ল্যাক সু পরো!’
ক্লাসে ঢুকার আগে এটেন্ডেন্স শীট নিতে এডমিন অফিসে গেলাম, এডমিন স্টাফ বিয়াংকা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বললো, ‘বেস্ট অব লাক মাইট! ইউ’ল ডু ফাইন’। অদ্ভূত ব্যপার, অফিস থেকে হেঁটে হেঁটে ক্লাসে যেতে যেতে অন্য কিছু না ভেবে ভাবলাম, বিয়াংকা মেয়েটার হাসিটা চরম! মনে হয় যেন অন্তর থেকে হাসছে, একদম কেমন যেন নিষ্পাপ ধরনের হাসি। ছেলে হলে হয়তো এই ধরনের হাসি ওয়ালা কোনো মেয়ের প্রেমে পড়তাম নিশ্চিত! …… এই ভেবে আবার সাথে সাথে ভাবলাম, হায় হায়, আমার এই চিন্তার কথা জিপসী জানলে সাথে সাথে বলবে, ‘এই দেখো! তুমি ছেলে হলে কী করতা তাই ভাবতেছো! তোমার আগের সুপারভাইজারের প্রভাব!’ ভাবতে ভাবতে নিজেই হেসে দিলাম। এবং তখনি টের পেলাম, কখন যেন হাঁটতে হাঁটতে আর ভাবতে ভাবতে এসে এক দংগল স্টূডেন্টদের মাঝখানে নির্দিষ্ট লেকচার রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি!!
আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না যে, এই ক্যাম্পাসে স্টুডেন্টরা টীচার না ঢুকা পর্যন্ত রুমে ঢুকেনা, বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে! নিজেই কনফিউজড হয়ে গেলাম, নাকি দরজা লক করা?! আমাকে তো বিয়াংকা কোনো চাবি টাবি দেয়নি! এখন যদি দরজা লক থাকে আর আমার কাছে চাবি নেই, শুরুতেই এমন বেকুব হওয়ার কথা ভেবে মুখ কালো হয়ে গেল। কিন্তু নাহ, থ্যাঙ্কস আল্লাহ, ঠ্যালা দিতেই দরজা খুলে গেলো। হায় হায়, এই ক্লাসে সুইচ কই তাওতো জানিনা! রুমটাতে একটা জানালাও নাই, কেমন অন্ধকার। জানালা ছাড়া রুম আমার একদম না-পছন্দ। দেয়াল হাতড়াচ্ছি দেখে, একজন স্টুডেন্ট নিজ থেকেই সুইচ বোর্ড খুঁজে লাইট জ্বালালো। সবাই বসতে বসতে টেবিলে নির্দিষ্ট বই, কাগজ পত্র আলাদা আলাদা করে গুছাচ্ছি আর মনে মনে আয়াতুল কুরসী পড়ছি, আল্লাহ প্লীজজজ, আমার গলা যেন না কাঁপে! বেইজ্জত, বেইজ্জত! প্লীজজ আল্লাহ!
সুপারভাইজারের আরেক টেকনিক ছিলো, ‘তুমি যদি বুঝো তোমার চেহারায় নার্ভাসনেস বুঝা যাচ্ছে, তাহলে বোর্ডের দিকে ঘুরে কিছু একটা লিখতে লিখতে কথা বলবা, তখন তোমার সামনে স্টুডেন্টদের বদলে বোর্ড থাকবে, নার্ভাসনেস কমে যাবে’। মাথাটা কেমন ভারী ভারী লাগছে, আচ্ছা কে যেন বলেছিলো একজন মানুষের মাথার ওজন কয়েক কেজি। কত কেজি? আশ্চর্য, আমি এখন এই অপ্রাসংগিক বিষয় ভাবছি কেন?! কিন্তু আসলে মাথার ওজন ঠিক কত কেজি জানা দরকার। এত কেজি ওজনের মাথা নিয়ে আমরা সারাক্ষন ঘুর ঘুর করছি কীভাবে! এই যে মাথাটা এখন এত্ত ভারী লাগছে! ইশ, পানি আনতে ভুলে গেছি! গলা শুকিয়ে গেছে! কয়েকবার গলা খাঁকারী দিয়েও যখন সকাল থেকে প্র্যাক্টিস করতে করতে আসা ইন্ট্রোডাকটরি স্পীচ গলা দিয়ে বের করতে পারলাম না, বুঝলাম উপায় নেই।
ঘুরে বোর্ডে তারিখ আর সাবজেক্ট নেইম লিখতে লিখতে শুরু করলাম, ‘মাই নেইম ইজ অমুক, ইউ ক্যান কল মী তমুক……’; কিন্তু একী!! গলা না কাঁপলেও এখন দেখি হাত কেঁপে যাচ্ছে!! কথা শেষ করে যখন ঘুরে সবার দিকে তাকালাম, সবাই দেখি বোর্ডে আমার লেখার দিকে তাকানো! ঘটনা কী বুঝার একটু দূরে গিয়ে ঘুরে তাকিয়ে নিজেই ফিক করে হেসে ফেললাম! এটা কী আমার হাতের লেখা?! এটাতো বাচ্চাদেরকে প্রথম হাতের লেখা শিখালে ওরা যেভাবে লিখে সেইরকম হয়ে গেছে! সবাই যেন আমার হাসি’র জন্যেই অপেক্ষায় ছিলো, পুরো ক্লাস হো হো করে হাসা শুরু করলো। থ্যাঙ্কস আল্লাহ, ভাগ্যিস এইভাবে লিখেছিলাম, হাসি দিয়ে অনেকটুকু সহজ হয়ে এলো ক্লাস। এপলজি চেয়ে বললাম, এইটা আমার প্রথম টীচিং ক্লাস। জীবনেও এর আগে কখনো বোর্ডে লিখিনি। তাই লেখা দেখতে যাই হোক না কেন, হোপ ওরা কেউ মাইন্ড করবেনা। বাই দ্য ওয়ে, কাগজে আমার হাতের লেখা এত বিশ্রী না! … পুরো ক্লাস আবার হাসি!
নার্ভাসনেসটা আবার ফিরে আসলো একটু পরেই। মেয়েটা কী যে বলছে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা! নার্ভাস, সেই সাথে মেজাযটাও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্রথমেই আমার ‘এক্সপেক্টেশান্স’ এর মধ্যে বলে দিয়েছি, ‘নো ইয়াংকি ল্যাঙ্গুয়েজ’, ফরমাল ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে হবে। এটা স্কুল না, ইউনি। …… এই রুলসটা আসলে নিজের সুবিধার জন্যেই! পোলাপাইন যখন কথা বলে, ঘুনাক্ষরেও বুঝিনা কোন ইংলিশে কথা বলে!! অনেকটা আমাদের দেশে’র পোলাপাইনের ডিফরেন্ট ভাষার মত। এইবার দেশে গিয়ে আম্মুর সামনে ডাইনিং’এ কী একটা কথায় কথায় ফারহানা বলেছিল, ‘আবার জিগ্স!’ এই আবার জিগ্স এসেছে, ‘আবার জিগায়’ থেকে। আবার জিগায় এসেছে ‘আবার বলতে!’ থেকে। আম্মু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘আবার জিগ্স’ কী জিনিষ? এর মানে কী?!’
আমি, ফারহানা আর ফয়সাল যখন কথা বলি, তখন আম্মুর যে দূরাবস্থা হয়, তারচেয়ে অনেক বেশী এলিয়ান লাগলো নিজেকে। যতই ইয়াংকী স্টাইলে কথা বলুক, অন্ততঃ একটা দুইটা শব্দ হলেও তো বুঝার কথা! নার্ভাস হলে যা হয়, নাক ঘেমে যাচ্ছে! নিজের কাছেই বিশ্রী লাগতে লাগলো পুরো অবস্থাটা, সরসররর করে একটা ফোঁটা ঘাম ঘাড় থেকে মেরুদন্ড বেয়ে নেমে গেলো… দুইবার বলেছি মেয়েটাকে রিপীট করতে, আরেকবার বললে মেয়েটাই দিশা হারিয়ে ফেলবে! রেগে গিয়ে আমাকে বাঁকা কিছু বলেও বসাও অসম্ভব না!
পুরো ক্লাস চুপ। ভিক্টরের কথা মনে পরলো, ‘যখন কিছু বুঝবানা তখন সরাসরি বলবা যে বুঝছোনা’। ওরা কেউ না বুঝে মত আস্তে করে জামার লম্বা হাতা দিয়ে নাকের ঘাম মুছে ফেললাম (যদিও আমি নিশ্চিত, ওরা টের পেয়েছে আমি নার্ভাস!), বললাম, ‘দেখো, এই ক্লাসের মেইন থিমই হচ্ছে সামাজিক সম্পর্ক’কে বুঝা। তুমি যদি সম্পর্ক বুঝতে চাও, তাহলে আগে মানুষকে বুঝতে হবে। মানুষকে বুঝতে হলে তার কথা বুঝতে হবে। তার কথা বুঝতে হলে তার সাথে কথা বলতে হবে। এখন সে মানুষ যদি তোমার কথাই না বুঝে? কেউ যখন তোমার কথা একবার বুঝবে না, তোমাকে অন্যভাবে বুঝাতে হবে। ঐ মানুষটা যেভাবে বুঝে সেভাবে বুঝাতে হবে। যেমন এখন তোমার আমার ইন্টারাকশানে আমি তোমার কথা বুঝতে পারছিনা। যেহেতু, এই মুহূর্তে এখনি আমার ল্যাংগুয়েজ ইম্প্রুভ করে তোমার স্টেজে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না; অল্টারনেটিভ একটাই উপায় আছে, তোমার ল্যাঙ্গুয়েজ আর এটিচ্যুড চেইঞ্জ করে এমন লেভেলে নিয়ে আসা যেন আমি বুঝতে পারি!’ কথা বলে শেষ করেছি মাত্র, পুরো ক্লাসের সবাই একসাথে এক্সপ্লেইন করতে উঠে পরে লেগে গেলো মেয়েটা আসলে কী বলতে চেয়েছে! ওরা আমাকে বুঝিয়েই ছাড়বে!
ক্লাসে আসার আগে ভাবছিলাম, কী করে এক ঘন্টা শেষ হবে! আর অবাক হয়ে দেখলাম, এক ঘন্টা কী করে যেন চলে গেলো! উলটো এক্সট্রা যেসব ইনফরমেশান নোটস করে এনেছিলাম, ওগুলো বলারই সময় নেই। এই ক্লাসটার বেশীরভাগই মাত্র হাই-স্কুল আউটস, ফ্রেশ ইউনি স্টুডেন্ট। তাই যেই বললাম, ‘উই আর রানিং আউট অব টাইম, ইটস থ্রী ও ক্লক নাউ’, আর কিছু বলার চান্সই পেলাম না!! হই হই করতে করতে ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে লাফাতে লাফাতে বের হয়ে গেলো সব!
সন্ধ্যার রিপীট ক্লাসটা আবার উলটো। বেশীরভাগ স্টুডেন্ট পুলিসিং এন্ড ক্রিমিনলজি’র। শুনেই মনে মনে যথেষ্ট ভড়কে গেলাম। এই পোলাপাইনগুলো ক’দিন পরে হয় পুলিশ হবে, অথবা ক্রিমিনাল স্পেশালিষ্ট টাইপ কিছু হবে। কেন যেন মনে হলো ওরা আমাকে যেভাবে দেখছে, ওদের কাছে কি আমাকে ক্রিমিনাল মনে হচ্ছে নাকি?! এদের কোর সাবজেক্টে নিশ্চয় সাইকোলজিও আছে। তারমানে অবশ্যই টের পেয়ে গেছে আমি যে নার্ভাস হয়ে আছি! এই ভেবে আরো নার্ভাস লাগছে!
তবে ক্লাস নিতে নিতে টের পেলাম, আগের ক্লাসের চেয়ে অনেক গুছিয়ে ক্লাস নিতে পারছি। এক্সট্রা ইনফরমেশানগুলো বুঝানোর জন্যে বোর্ডে এরো দিয়ে দিয়ে লিংক করে দিলাম একটার সাথে আরেকটাকে। একটু দূরে গিয়ে নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম বোর্ডের দিকে তাকিয়ে, বাহ! এটাতো একদম সেই ছোট্ট বেলার সিদ্দীক স্যার ক্লাসে যেভাবে বোর্ডে লিখতে লিখতে জগাখিঁচুড়ী পাকিয়ে ফেলতেন, হুবুহু তেমন দেখাচ্ছে, কারণ আমি নিজেই বুঝতে পারছিনা আসলে কোনটার সাথে কোনটাকে লিংক করেছি!! … কেউ একজন আমাকে বলেছিল, ‘স্টুডেন্ট যেন সব না বুঝে যায়। সব বুঝে গেলে ওরা মনে করবে তোর কোনো ভ্যালু নাই। কিছু জিনিষ রাখবি যেন ওদের চিন্তা করতে হয়, তোকে জিজ্ঞেস করতে হয়’। মনে হলো উপদেশটা ভালই কাজে লাগিয়েছি, কারণ একটু পরেই শুরু হলো, ‘এহহেম, এক্সক্যুজ মী……!’
আর পাঁচমিনিট আছে হাতে, হঠাৎ খেয়াল হলো চোখের কোণায় কিছু একটা দেখেছি! কী দেখলাম ভেবে চোখ ঘুরাতে গিয়েই দেখি, রুমের দরজার মাঝেখানের ছোট্ট এক হাত লম্বা আয়নাটায় ক্যামেরার ফ্লাশ!! একি, আমাদের ক্লাসের ছবি তুলে কে?! হতচকিয়ে কী করবো ভাবতে ভাবতেই চোখে পড়লো ফ্লাশের পিছনে জিপসীর ঝাপসা মুখ! দুপুর বেলা অনেক্ষন ও আর তৌহিদ অনুরোধ করেছে যেন ওদেরকে ক্লাসে ঢুকতে দেই, ওরা ক্লাসে ঢুকে পিছনে চুপচাপ বসে থাকবে! রাজী হইনি। সোজা বলে দিয়েছি, ক্লাসে ঢুকলে চাকরি মাকরির কোনো কেয়ারই করবোনা, সোজা আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে যাব। … জানে যে কেয়ারলেস হলে এইরকম কিছু করা আমার পক্ষে অসম্ভব না, তাই না ঢুকে এখন বাইরে থেকে ছবি তুলছে! হাসি লুকাতে মুখ ঘুরিয়ে আবার বোর্ডের দিকে!! ভাগ্যিস, প্রতিটা ক্লাসেই বোর্ড থাকে!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



