বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে সরকার কর্তৃক দেশের মানুষের সামনে কিছু সত্যিকারের রেকর্ড পেশ করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। এর সাথে জড়িত এদেশের আপামর জনসাধারনের অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চাল্য আর জীবন মান উন্নয়নের ছোট বড় ব্যাপার সমূহ।
সমুদ্র ও নৌ বন্দর বিষয়ক
১) দ্রুততম সময়ের মধ্যে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ।
(বহু উন্নয়ন সহযোগী দেশ এতে কাজ করতে প্রস্তুত। ভবিষ্যৎ বাণিজ্য সম্পর্ক কে বিবেচনা করে ভারত, চীন এবং আমেরিকার বাইরে একটা মোটামুটি জোট নিরপেক্ষ দেশের মানসম্পন্ন কোম্পানী কে টেন্ডার দেয়া এবং দ্রুততার সাথে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি করা অতীব জরুরি)
নোটঃ গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পাশাপাশি সেটা প্রমোশনের উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক ব্যবহারকারী না পাওয়া গেলে বিনিয়োগ উঠে আসবে না, উল্টো তা অর্ফা্থনীতিতে গলার ফাঁস হয়ে উঠতে পারে (ডেবট ক্যারিং)। সেক্ষেত্রে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় একটি সেমি গভীর বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে করা যেতে পারে।
২) দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্তমান বন্দর ব্যবস্থাপনাকে সময় নিয়ন্ত্রিত এবং ই ব্যবস্থাপনার পুরোপুরি আওতায় আনা। (পণ্য খালাশ এবং মজুদ এর সময় আন্তর্জাতিক বন্দর সমুহের কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে যাতে এর ব্যাপ্তি ২-৪ দিনের বেশি কোনও ভাবেই না হয় )
৩) দ্রুততম সময়ের মধ্যে মংলা বন্দরের ব্যবহার উপযোগিতা, বিনিয়োগ, চট্রগ্রাম - মংলার আন্ত যোগাযোগ রুট এ পণ্য পরিবহন ভলিউম ইত্যাদির ব্যাপারে স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া। (বিভিন্ন সময়ে বিক্ষিপ্ত সিদ্ধান্তে দেশের ব্যাপক অর্থ ও সময় অপচয় হচ্ছে)
৪) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা ও চিটাগাং এর মধ্যে ব্যাপক ক্ষমতা সম্পন্ন নৌ কার্গো রুট নির্মাণ এবং এর সাথে নদী পথ শেয়ার করা অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থাপনার সাথে সমন্বয় সাধন (জাহাজ ও লঞ্চের গতি, নাব্যতা/গভীরতা, আকার)। নাব্যতা রক্ষার দীর্ঘ মেয়াদি ও বাৎসরিক রুটিন এবং কারজাদেশ ঘোষণা করা।
(কথা ছিল পানগাও এবং নাঃগঞ্জ এর মধ্যকার নতুন নির্মিত রুটে প্রতিদিন ২ টি জাহাজ কন্টেইনার পরিবহন করবে। ফলে প্রতিদিন ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটে ২৫০ ট্রাকের যাতায়াতের প্রয়োজন হবে না। এতে যানজট কমবে।
কিন্তু এই ভলিউম অত্যন্ত নগন্ন, এর আকার ব্যাপক ভাবে বাড়ানো এবং কারজকরিতা নিশ্চিত করন জরুরি)
৫) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা-চাঁদপুর-বরিশাল-পটুয়াখালী নৌ রুট সমুহের নাব্যতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান। এই রুট সমুহের লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ বা কার্গো পরিবহনে গতি ভিত্তিক, নাব্যতা ভিতিক ব্যবস্থাপনা।
(নাব্যতা সমস্যায় বিকল্প সড়ক পথে জ্যাম ও মানুষের নষ্ট কর্ম ঘণ্টা বাড়ছে)
সত্যিকারের মহসড়ক অবকাঠামো নির্মাণ
১) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা চট্রগ্রাম, ঢাকা - উত্তরবঙ্গ এর মধ্যকার কথিত হাইওয়ে কে সত্যিকারের হাইওয়ে বা মটরওয়ে তে রুপান্তর।
এর জন্য দরকার [১/২ +{১+ (২+২)+১}+১/২] লেইন মডেলের কার্যকর হাইওয়ে। নুন্যতম সাত (৭) লেইন মহাসড়ক।
ব্যাখাঃ
২+২ অর্থাৎ ফোর লেইন এর স্পীড কুন্ট্রোল্ড মটর ওয়ে। গতীসীমা ৫০ এর নিচের যানবাহন এতে ঢুকবে না। এটা মেইন হাইওয়ে।
এর চার লেইন এর বাইরে থাকবে ১+১ বা অতিরিক্ত ২ লেইন এর লো স্পীড মটর ওয়ে। এটা লোকাল বাস, স্তানীয় যানবাহন, মুড়ির টিন, টমটম ইঞ্জিন, নিন্ম ক্ষমতার ট্রাক ও বাস টেম্পু, নসিমন ইত্যাদি র জন্য। মনে রাখতে হবে এটা অন্তজেলা (আন্ত থানা ইউনিয়ন গ্রাম) যোগাযোগ এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। অর্থাৎ আমাদের কে ঢাকা চট্রগ্রাম হাইওয়ে এর বাইরে স্থানীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয় গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। এই পর্যন্ত সড়কের সাইজ হবে ৩+৩ অর্থাৎ ছয় লেইন।
এই ১+১ বা ২ লেইন এর সড়ক মূল ফোর লেইন হাইওয়ের উচ্চতা থেকে একটু নিচে হবে। স্থানে স্থানে এক্সিট এবং এন্ট্রি থাকবে। এন্ট্রি এক্সিট ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রিত হবে। যাত্রী বাহি বাসের স্টপেজ হবে মূল হাইওয়ে থেকে এক্সিট করে এই লো স্পীড ১+১ লেইন এর বাইরে।
এই ছয় লেইন {১+ (২+২)+১} এর বাইরে থাকবে ঠেলা গাড়ি, গরুর গাড়ি, সাইকেল, রিক্সা এবং পথচারীর রাস্তা। এটা হাফ লেন বা সামান্য একটু বড়, গ্রামের রিক্সা চলা রোডের মত প্রস্থের। বাংলাদেশে মাথায় করে পণ্য পরিবহন করা হয়, কাধে করে ভারে পণ্য পরিবহন করা হয়, এমনকি পণ্য দড়ি টানা হয়। তথাকথিত হাইওয়ে করে গ্রামীন অর্থনীতির ক্ষুদ্র কিন্তু পরিবেশ সহায়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা যাবে না। এই পরিবেশ সহায়ক পরিবহন ব্যবস্থা কৃষকের অর্থ সাশ্রয় ও হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে এটা এই অনাধুনিক পরিবহন সমূহ স্থানীয় পর্যায়ে উতপাদিত এবং বিক্রিত পণ্য মুল্য কম রাখতে সহায়ক। এর মাধ্যমে আমরা অপ্রয়োজনে সীমিত পণ্য উতপদন কারীকে পেট্রোল বা ডিজেল চালিত পরিবহন ব্যবহারে বাধ্য করবনা।
হাই স্পীড (২+২) লেইন কে কোন ক্রসিং, ক্রসিং সিগন্যাল রাখা যাবে না। অর্থাৎ মূল ফোর লেন এর বাইরের বাম ও ডান পাশের লো স্পীড লেইন দুটি আন্ডার অথবা ওভার পাসের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকবে। ধরুন আপনি ঢাকা থেকে চাঁদপুর বা লাকসাম গামী, কুমিল্লা বিশ্ব রোড অতিক্রম করছেন। আপনাকে (২+২) হাই স্পীড লেই নে ডানে সরাসরি ক্রস করে ডানে যেতে দেওয়া হবে না। আপনাকে হাই থেকে লো স্পীড মটর ওয়ে তে আসতে হবে। তার পর বাম পাশের লো স্পীড লেন যে আন্ডার বা ওভার পাসের মাধ্যমে ডান পাশের লো স্পীড লেন এ যুক্ত সেটা ব্যবহার করতে হবে।
তার মানে হচ্ছে নুন্যতম সাত (৭) লেইনের হাইওয়ে করতে হবে। সেখানে স্পীড কন্ট্রল্ড এক্সপ্রেস ওয়ে থাকবে, লো স্পীড মটর লেন থাকবে এর বাইরে থাকবে স্থানীয় লোকজনের সাধারণ ব্যবহার্য রাস্তা। ইহা পাগলের প্রলাপ নায়, অর্থনৈতিক উন্নতির কার্যকর দাওয়াই।
যতদিন না এই ধরনের মহাসড়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না, ততদিন বর্তমানের এই তথাকথিত মহাসড়কের উপর বাজার বসা, পণ্য মজুদ ও খালাস এইসব কর্মকাণ্ড অব্যহত থাকবে। এখনকার মহাসড়ক নিরমানে স্থানীয় যোগাযোগ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে মোটেই বিবেচনা করা হয় নি।
বর্তমানের চার লেইনের এর ধারনা যানজট নিরসনে তেমন ভুমিকা রাখবে না, উপরন্তু প্রায় এক যুগ ধরে এর পরিকল্পনা আর বাস্তবায়নে গড়িমসি, বারে বারে প্রকল্প ব্যায়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, ভুমি অধিগ্রহন জটিলটা এই সব বিবেচনায় রেখে সাত লেইন হাইওয়ে র কার্যকর আইডিয়া নিয়ে ভাবা উচিত, এটা ধাপে ধাপে নিরমানের ব্যয় কে কমিয়ে আনবে ।৭ লেইন প্রস্তাবনা বলা চলে অন্তত ৫০ বছরের ট্রাফিক কে কভার করবে। ১০০ বছর এর পরিকল্পনা করতে হলে লেইন আরো বাড়াতে হবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে মেঘনা সেতুটি প্রজেক্টেড ট্রাফিক গ্রোথ এর ৮ থেকে ১৬ গুন পরিবহনের ভারে ন্যুজ। সুতরাং আমাদের ট্রাফিক গ্রোথ ফোরকাস্ট যাতে এইধরনের অবিবেচক পর্যায়ের না হয়।
এবার আসি ৩ টি মন্তব্য নিয়েঃ
ক) আমরা সবাই ঢাকা-চট্রগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত। এটা চিটাগাং পোর্ট কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবসার জন্য একটা মৌলিক অবকাঠামো। এর বাইরে ঢাকা - উত্তরবঙ্গ (অন্তত বগুড়া পর্যন্ত, কিন্তু এটাকে দিনাজপুর পর্যন্ত পর্যায় ক্রমে পৌঁছাতে হবে) পর্যন্ত সাত (৭) লেইন ও কিন্তু কম গুরুত্তপুরন নয়। এই মহাসড়ক আমাদের কৃষির মেরুদন্ড। বরং এটাই অধিক মনোযোগের হওয়া বাঞ্ছনীয়।
খ) আমাদের দেশে লেইন এর প্রস্থ জালিয়াতি হয়, এটা আন্তর্জাতিক লেইন সাইজের চেয়ে কম।
গ) বাংলাদেশে কোনও হাইওয়ে নাই। কিছু ব্যস্ত রোড আছে। সেগুলোও আবার ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনার বাইরে।
২) দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ। ভায়া মাওয়া, ভায়া আরিচা।
(ব্যাপক আলোচিত এই সেতু দ্বয় দেশের জিডিপি তে এককভাবে ২% এর বেশি অবদান রাখবে বলে বলা হলেও দুঃখজনক ভাবে এর প্রথমটির নির্মাণ রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীর এবং তার মন্ত্রী পরিশোধের সরাসরি দুর্নীতিতে অনিশ্চয়তার ডুবে গেসে, অবকাঠামো নিরমানে লুণ্ঠন আর অবহেলার ইহা জলন্ত প্রমান)
ঢাকা-দক্ষিণ বঙ্গ হাইওয়ে তেও ঢাকার বাইরের নির্দিষ্ট জেলা পর্যন্ত পর্যায় ক্রমে সাত লেইন মহাসড়ক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
(বাঁকা কমেন্টঃ স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও এবং আওয়ামীলীগ এর ৪ টি বেশি সরকার গঠনের পরেও রাজধানী থেকে গোপালগঞ্জ যাবার প্রধান দুটি পথে ফেরি করে নদী পার হতে হয়। আরিচা ও মাওয়া)
৩) দ্রুততম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় কাচপুর ব্রিজ, দ্বিতীয় মেঘনা ব্রিজ এবং দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী ব্রিজ নির্মাণ করা। ট্রাফিক ভলিউম এন্ড ট্রাফিক ফ্রিকুয়েনসি গ্রোথ আর লেন প্রস্তাবনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন ব্রিজ এর ডিজাইন করতে হবে।
৪) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সেভেন লেন এ উন্নিতকরন।
৫) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের সেভেন লেইন লেন বাস্তবায়ন।
৬) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে যাতায়াতের বিকল্প সড়ক গুলোকে ফোর লেন এ উন্নিতকরন।
কাঁচপুর ব্রীজ (ঢাকা)-তারাবো মোড় (রূপগঞ্জ)-নরসিংদী-আশুগঞ্জ-ভৈরব-সরাইল বিশ্বরোড-ময়নামতি-চট্টগ্রাম সড়ক।
৭) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা-সিলেট রুটে যাতায়াতের বিকল্প সড়ক গুলোকে ফোর লেন এ উন্নিতকরন। কাঁচপুর ব্রীজ (ঢাকা)- ময়নামতি - সিলেট সড়ক।
৮) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা-বেলাভো, ঢাকা-সিরাজগঞ্জ-পাবনা, ঢাকা-নোয়াখালী, ঢাকা - চাঁদপুর রুটে যাতায়াতের সড়ক গুলোকে ফোর লেন এ উন্নিতকরন। কুমিল্লা বিশ্ব রোড-নোয়াখালী। কুমিল্লা বিশ্ব রোড-চাঁদপুর।
রেল সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ
ক) আন্তনগরঃ ঢাকা-চট্রগ্রাম
১) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা লাকসাম কডলাইন নির্মাণ। এতে ঢাকা চট্রগ্রাম যাত্রিবাহী রেল যোগাযোগ এবং রেল কার্গো কে অত্যন্ত সমৃদ্ধ করবে। দ্রুততম সময়ে কন্টেইনার পরিবহন দেশের অর্থনীতিতে অভাবনীয় মাত্রা যোগ করবে।
ঢাকা চট্রগ্রাম ডাবল ডেকার ইলেক্ট্রিক ট্রেন
২) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঢাকা চট্রগ্রাম ট্রিপল ট্র্যাক কডলাইন নির্মাণ।
-এক্সপ্রেস ওয়ে টু,
-এক্সপ্রেস ওয়ে ফ্রম,
-লোকাল ট্রেইন লাইন (আঞ্চলিক ট্রেন, ফুয়েল লরি, কন্টেইনার বাহি এবং মালবাহী গাড়ী)
৩) নতুন রেল ট্র্যাক সমূহ এমন ভাবে ডাইমেনশন করতে হবে যাতে ঢাকা চট্রগ্রাম এর মধ্যে অধিক ধারন সম্পন্ন ডাবল ডেকার ইলেক্ট্রিক ট্রেন চালু করা যায়।
সুতরাং এর জন্য রেল ট্র্যাক এর অভেরহেড বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ও ডিজাইন, স্পেস ডাইমেনশন করতে হবে।
এখানে আসতে পারে রেল এর জন্য সেপারেট বিদুত কেন্দ্র নির্মাণ এর উপযোগিতা, উইন্ড মিল বেইজড বিদ্যত কেন্দ্রের সাম্ভাব্যতা ইত্যাদি।
খ) অন্তঃনগরঃঃ ঢাকা মেট্রো ট্রেন
১) ঢাকায় এলেভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক ডিজাইন এবং বাস্তবায়নের আগেই ম্যসিভ কানেক্টিভিটি দিয়ে অভারহেড মেট্রো রেল নির্মাণ এর ডিজাইন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। এলেভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক এর কিছু অপরিকল্পিত কাজ শুরু হয়ে গেসে, আমাদের কে এটা অনুধাবন করতে হবে যে এই ধরনের প্রকল্প বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরের অপরিকল্পিত রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না। বরং এটা সাধারনের চলার পথ কে অতি সংকুচিত করে ট্রাফিক জ্যাম বাড়াবে। অন্যদিকে উপরের এক্সপ্রেস নামধারি রোড কে জ্যাম মুক্ত এবং আর্থিক ভাবে লোভনীয় রাখতে ধনীর চলাচলের উপর অতিরিক্ত আর্থিক দেনার ভার চাপাবে। ধনীর সামর্থ্য আছে কি নাই সেটা রাষ্ট্রের ভাবার বিষয় হলেও, এটা আগে ভাবতে হবে যে ধনীর উপর এইধরনের অপরিকল্পিত করারোপ বা ভ্যাট আরোপ অবসেশে তার নিয়ন্ত্রিত শ্রমিকের মাসিক বেতনের উপরই চাপে।
ঢাকায় বাই ডিরেকশনাল মেট্রো রেল নির্মাণের উপর গুরত্বারোপ করতে হবে যাতে ঘন বসতি পূর্ণ ঢাকা কে মাস কানেক্টিভিটি দেয়া যায়। এই কানেক্টিভিটিতে নিন্ম বিত্ত এবং অধিক ঘন বসতি পূর্ণ এলাকা সমুহকে বেশি গুরুত্ব পূর্ণ।
অধিক ঘনবসতি পূর্ণ হওয়ায় মনো রেল প্রকল্প ঢাকায় কম কার্যকর, অধিক রুটের এবং বেশি অর্থ বহুল হতে পারে। সেক্ষেত্রে মনো রেলের উপযোগিতা নির্ধারণ এ উচ্চ কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন এক্সপার্ট বা কোম্পানী কে দিয়ে করতে হবে।
তেমনি ভাবে বন্যা ও ড্রেন ব্যবস্থাপনার সাথে সামঞ্জাস্য রেখে আন্ডার গ্রাউন্ড মেট্রো রেল এর উপযোগিতা নির্ধারণ করতে হবে।
মেট্রো রেল এর গতিপথ ডিজাইন করতে হবে মাস কানেক্টিভিটির কথা মাথায় রেখে। যাতে নগরীর প্রত্যেকটি এলাকাকে কভার করা যায়। এবং ডাইমেনশন করতে হবে ট্রাফিক বেইজ এর সঠিক ধারনার ভিত্তিতে, সেই সাথে ট্রাফিক গ্রোথ কে ফোরকাস্ট করতে হবে নিখুত ভাবে। এই ডিজাইন এবং ডাইমেনশন ফেইজ ই হলো টেকনলজি ইন্ট্রোডাকশন এর সবচাইতে গুরুত্ব পূর্ণ দিক। অন্যথায় অত্যাধুনিক ভলভো ডাবল ডেকার বাস গুলোর মত ৪-৫ বছরের মাথায় মিলিয়ন/বিলিয়ন ডলারের মেট্রো মুখ থুবড়ে পড়বে।
২)তার পর ট্রাফিক সিগন্যাল ফ্রি লুপড ফ্লাই ওভার প্রকল্প (ইউ লুপ ফ্লাইওভার রোড প্রকল্প ও হতে পারে বিকল্প হিসেবে), যেখানে মোড় পার হতে ট্রাফিক লাইট দেখতে হবে না। এর মাধ্যমে বর্তমানের অপরিকল্পিত ওভার পাস গুলোকে কানেক্টেড করা যেতে পারে। (অবশ্য নিন্ম মানের হলে কিছু ওভার পাস কে ভেঙ্গে রিডাইমেনশন করতে হবে ভবিষ্যৎ ঢাকার ট্রাফিক গ্রোথ অনুযায়ী)। এই পর্যায়ে "বাস রেপিড ট্রান্সিট বা বি আর টি" এর জন্য প্রয়োজনীয় রোড রিজার্ভ করে ফেলতে হবে। অবশিষ্ট রোড কে নর্মাল ওয়ে তে প্লান করতে হবে, যেখানে ফিটপাত এবং সাইকেল চলার বন্দোবস্ত থাকবে। বি আর টি রুট কে ট্রাফিক সিগন্যাল মুক্ত রাখতে হবে যথাসম্ভভ। মনে রাখতে হবে এর উদ্দেশ্য একদিকে গনপরিবহন কে সময়ের নিশ্চয়তা দেয়া, অন্যদিকে ধনীদের রাস্তায় ব্যক্তিগত কার নিয়ে বের হওয়া কে নিরুতসাহিত করা।
৩) একটি কার্যকর মেট্রো রেল ডিজাইন, মাস্টার প্লান শেষ এবং বাস্তবায়ন শুরুর পর মাস কানেক্টিভিটির এলিভেটেড সড়ক ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে "বাস রেপিড ট্রান্সিট বা বি আর টি" প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ গন পরিবহন সর্বত্রই প্রাধান্য পাবে।
৪) এই পর্যায়ের পর "বি আর টি" লাইনের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে কিংবা "বি আর টি" লেইনের উপর "ট্রাম" ডিজাইন করতে হবে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার ও দুঃখের যে ১৫০ এর বেশী সময় ধরে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন পরিবহন "ট্রাম" এখনও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মেগা সিটিতে নেই।
অর্থাৎ আমরা বলছি গনপরিবহন পরিকল্পনায় প্রথমেই আসবে ব্যাপক কানেক্টিভিটি সম্পন্ন বাই ডিরেকশনাল ওভার হেড মেট্রো (কারিগরি বিবেচনায় আন্ডার গ্রাউন্ড ও আসতে পারে), তার পর ট্রাফিক সিগন্যাল ফ্রি লুপড ফ্লাই ওভার প্রকল্প (বা ইউ লুপ ফ্লাই ওভার কানেক্টেড রোড ),তার পর আসবে "বাস রেপিড ট্রান্সিট বা বি আর টি" প্রকল্প, এর পর ট্রাম। এই চার ধাপে গন পরিবহন এর জন্য উপযোগী অবকাঠামোকে ডিফাইন ও ডিজাইন করার পর আসবে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে যেখানে ধনী দের প্রাধান্য দেয়া হবে। অন্যথায় বর্তমানের ওসামাঞ্জাস্য পূর্ণ এলিভেটেড ওয়ে উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ধনীদের কিছু সাময়িক উপকারে আসতে পা্রে মাত্র, এই প্রকল্প মাস কানেক্টিভিটির মেট্রো রেল বা ভবিষ্যতের গন পরিবহন প্রকল্প কে অনেক অনেক বেশি এক্সপেন্সিভ করে তুলবে। সময় সাপেক্ষ ও করবে অনেক অনেক বেশি। সবচেয়ে সমস্যা হবে ট্রাফিক ফোরকাস্ট এ। এই সুযোগে এই সব প্রকল্প সমুহকে অধিক ব্যয়ের প্রকল্প ধরে "বি ও টি" র ছুতা ধরে মধ্যবিত্ত্ব নিন্মবিত্ত্ব জনগনের টাকায় সরাসরি বেদেশী কোম্পানীকে ভাগীদার করা হবে।
গ) অন্তঃনগরঃঃ চট্রগ্রাম মেট্রো ট্রেন
এখনই চট্রগ্রাম মহানগরীর জন্য গন পরিবহন হিসেবে মেট্রো ট্রেন ডিজাইন,ভবিষ্যতের ট্রাফিক ধারন ক্ষমতা ডাইমেনশন করতে হবে। মনে রাখতে হবে এখনও এটা না করলে ঢাকার মত সমস্যা তৈরি হবে। অর্থাৎ একই প্রকল্প অনেক অনেক বেশি অর্থে সম্পন্ন করতে হবে। যা সময় সাপেক্ষ ও হবে, মেইনলি সরকারি বেসরকারি অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরির ফলে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত ফ্লাই ওভার বা তথাকথিত এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে প্লান করে তার পরে যেন চট্রগ্রামে মেট্রো প্রকল্প হাতে নেয়া না হয়। এই ইচ্ছাকৃত কিংবা জ্ঞানহীন ভুল ঢাকায় হয়েছে, এর পুনরাবৃত্তি যাতে দেশে আর না হয়। এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে "বি ও টি" নামের তথাকথিত প্রাইভেট-পাব্লিক পার্টনারশিপ ব্যবসার ধান্ধা, এর মাধ্যমে জনবহুল দেশের অপরিকল্পিত রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম যেমন কমানো যায় না, অন্য দিকে গরীবের রাস্তায় চলার অধিকারে টোল বসানো হয়।
চট্রগ্রাম মেট্রো করার পর পরই ফোকাস করতে হবে, লুপড ফ্লাইওভার ভিত্তিক এলিভেটেড রোড প্রকল্প, যার সাথে "বাস রেপিড ট্রান্সিট বা বি আর টি" প্রকল্প এবং "ট্রাম" প্রকল্প কে সমন্বিত করতে হবে।
ঘ) অন্তঃনগরঃঃ মেট্রো ট্রেন
এইভাবে এখনই সকল বিভাগীয় শহরের জন্য গন পরিবহন হিসেবে মেট্রো লাইন ডিজাইন এবং ডাইমেনশন করতে হবে।
ঙ) ঢাকা নাঃগঞ্জ রেল ( যাত্রীবাহী এবং কার্গো )
এইভাবে এখনই ঢাকা নাঃগঞ্জ রুটকে ব্যাপক ভিত্তিক গন পরিবহন পথ হিসেবে যাত্রীবাহী এবং কার্গো রেল এর জন্য ডিজাইন এবং ডাইমেনশন করতে হবে।
চ) মেট্রো রেল এর পাশাপাশি বিকল্প রেল
কমলাপুর রেল স্টেশন কে টঙ্গী বা এয়ারপোর্ট এ সরিয়ে, বর্তমানের রেল রিসোর্স (ইঞ্জিন, বগি, ট্র্যাক, জমি, ম্যান পাওয়ার, কারখানা ইত্যাদি) কে কাজে লাগিয়ে ঢাকায় রিং রেল তৈরি করা যায় কিনা সেটা লোকাল এক্সপার্ট দের দিয়ে গবেষণা করানো যেতে পারে। এটা খুব কঠিন কাজ হবার কথা নয়।
এর বাইরে আছে, বর্তমান ৩০ টির অধিক লেভেল ক্রসিং নির্ভর টঙ্গী কমলাপুর রেল সড়ক এর আধুনিকায়ন। এর একটি উপায় হতে পারে টঙ্গী বা বিমান বন্দর থেকে রেল ট্র্যাক কে ওভারহেড করে নিচের প্রশস্ত ট্র্যাক কে সড়ক বা মেট্রো রেল এর আওতায় নিয়ে আসা।
ঢাকার বেদখল হয়ে যাওয়া খাল গুলো র উপরের যায়গা কে ওভারহেড মেট্রো লাইনের জন্য ব্যবহার করা যায় কিনা সেটাও ভাবা যায়। (অবশ্যই রি ক্লেইম করার পর)।
তাছাড়া আছে ঢাকার আসে পাশের প্রস্তাবিত সড়ক গুলো নির্মাণ সম্পন্ন করার তাড়া। এর মাধ্যমে আমাদের ঢাকা কে ভায়া করে অন্য শহরে যাওয়া যানবাহন ও কার্গো বাহন কে মূল ঢাকায় প্রবেশ না করিয়ে বাইপাস করার মহা পরিকল্পনা নিতে হবে। এইসব স্থানীয় জ্ঞান আর অর্থায়নেই সম্ভভ।
বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পের দিকে চেয়ে হা করে থাকলে হবে না। সাথে সাথে বিকল্প ও ভাবে তে হবে। অবকাঠামো খাতে যাই করা হোক না কেন তা অতিরিক্ত হবে না কোন দিন। এটা বিদ্যুৎ উৎপাদন এর সাথে তুলনীয়। যত বেশি উতপাদন করা যায় এর চাহিদা তত বাড়বে।
উপসংহার
অবকাঠামো উন্নয়নের সেন্স অবশ্যই অবশ্যই দেশের ইন্টেলেক্টুয়াল দের থাকতে হবে, এসব কাজে দেশের আর্কিটেক্ট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল,কন্ট্রোল সিস্টেম আর কম্পিউটার প্রকৌশলী দের যুক্ত করতে হবে। প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার দের খুঁজে বের করতে হবে যারা সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট। অন্যথায় শুধু ডিজাইন আর ডাইমেনশন বাবদ ই পুরো প্রকল্পের ব্যায়ের সিংহ ভাগ অর্থ চলে যাবে। বাস্তবায়ন তো পরের কথা। কথায় কথায় বলা হবে এত টাকা দেশের নাই, তাই "বি ও টি" দিতে হবে। দেশের মানুষের পরিবহনে ব্যয়ে বিদেশে কোম্পানী ৩০-৫০ বৎসরের অংশিদারীত্ব বসাবে। অতি উচ্চ ব্যয়ের প্রকল্প হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে "বি ও টি" হয়ত করতে হতে পারে, কিন্তু তাঁর আগে সহনশীল ফান্ডিং খুঁজে বের করতে হবে। ওয়ার্ড ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা সাথে রিলেশন ট্রান্সপারেন্ট রাখতে হবে, দুর্নীতি মুক্ত ইমেজ তৈরি করতে হবে। সাধারণত একটি দেশ যখন কোনও অতি উচ্চভিলাশী কিন্তু অতীব জরুরী প্রকল্প নিজে করার সামর্থ্য রাখে না কিংবা উন্নয়ন সহযোগী দের কাছ থেকে স্ট্রেটিজিক কারনে সহনশীল ফান্ডিং এর নিশ্চয়তা পায় না তখনই তারা "বি ও টি" নিয়ে ভাবতে পারে। অন্যথায় "বি ও টি" হয়ে উঠে জনগনের নিত্য দিনের সম্পদ লুটের নির্মম হাতিয়ার। দুর্নীতি মুক্ত ইমেজ তৈরি এবং সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে সহনশীল ফান্ডিং সহজ লভ্য হবে। অন্যথায় কেউই আমাদেরকে আস্থায় নিবে না, উল্টো ব্যবসার ফাঁদে ফেলবে।
অবকাঠামো উন্নয়নের সেন্স জাতীয় ঐক্যমত্য আর জাতীয় উন্নয়নের ভিত হয়ে উঠুক। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



