somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংখ্যাধিক্যের দম্ভ!

১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবাঙালী পাহাড়ি, অবাঙালী সমতলি এবং শরণার্থী (বিহারি এবং রোহিঙ্গা) এই তিন ধারার মানুষের অধিকার জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশে দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। ভূমির স্থায়ী অধিকারহীন এই মানুষ গুলোকে আমাদের রাষ্ট্র আর ভূমি গ্রাসী দুর্বৃত্তরা সবসময়ই নিগৃহীত করেছে। কাপ্তাই জল বিদ্যুৎ, ৭১ এর বাংলাদেশ বিরোধিতা, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, শান্তিবাহিনী, সেনা অপারেশন, পাহাড়ে অনুপ্রবেশ, শান্তি চুক্তি, চুক্তি ভঙ্গ- এই সব নিয়ে পার্বত্য জেলা সমূহের নৃতাত্ত্বিক উপজাতীয় দের সাথে আমাদের রাষ্ট্রের সংযোগ সেই নিশ্চয়তার বেড়াজালেই বন্দী। আমরা তাদের আদিবাসী স্বীকৃতি এবং জাতিয়তার স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছি। একই সংকটে আবর্তিত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের উপজাতিয়দের ভাগ্য । এই ধরনের সংকটে যুক্ত হয়েছে বিহারীরা। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা সম্ভভত সামনে নতুন কোন মহাসংকট নিয়ে আসছে।

৪৬ এবং পরবর্তী সময়ের হিন্দু আগ্রাসন, বিহারের দাঙ্গা, জীবন নিয়ে পালিয়ে পাকিস্তান আসা, সেই সাহায্যের কারনে আর উর্দু ভাষী হবার কারনে পাকিস্তানের অখন্ডতা চাওয়া এবং সর্বোপরি পাক হানাদারদের সহায়তা করা, প্রায় সব জায়গাতেই বিহারি শরণার্থীরা সহায় সম্বল আর জীবন হারিয়েছে, তারা সব ক্ষেত্রেই লুজার। ৫৪র আদমজী দাঙ্গা, ৭১ এর পরে চাক্তাই খালে আর কর্ণফুলীর স্রোতে অগুনিত বিহারির লাশ ভাসা, সান্তাহারের বিহারী গনকবর কিংবা ১৯৭২ সালের ১০ মার্চ খুলনার বিহারী গনহত্যা, ঢাকা স্টেডিয়ামে বিহারিদের জড়ো করে রক্ষীবাহিনীর সেই নির্বিচার হত্যা , এই সব বাংলার মানুষ বিলকুল ভুলে গেসে। একদিকে আমরা তাদের জীবনের উপর সরাসরি হামলা চালিয়েছি, অন্যদিকে সে সময়ের আশ্রয় দেয়া রাষ্ট্র পাকিস্তান তাদের সাথে বিশ্বাসঘতকতা করেছে, তাদের সরিয়ে নেবার মিথ্যা আশ্বাসই খালি দিয়েছে। লক্ষণীয় যে, বিহারীদের ধর্মীয় পরিচয় তাদের কোন উপকারে আসছে না।

সামান্য ছুতায় এদের সহায় সম্বল কেড়ে নেওয়াই দুর্বৃত্তদের টার্গেট, জেনেভা ক্যাম্পের জমি দখল যেখানে এই নৃশংস অগ্নিকান্ড আর ঘুমন্ত শিশু ও নারী হত্যার অন্তরালের কারন সেখানে পুলিশ সক্রিয় সহায়ক। ভাবতে অবাক লাগে আমাদের চিরবিবাদমান রাজনৈতিক বাঙ্গালী আর বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীরা এই ইস্যুতে আগ্রাসী স্থানীয়দের জুলুমের পক্ষে। পাহাড়ে এবং সমতলে যেখানেই বাঙ্গালী আর বাংলাদেশীর বাইরে ক্ষুদ্র কোন জনগোষ্ঠী আছে, তাদের উচ্ছদের এই একই ধারার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। খোদ রাজধানীতে এই ঘটনা ঘটেছে বলে তৎক্ষণাৎ আমরা কিছু মানবতাবাদি প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছি ভূমি দস্যু আর রাজনৈতিক গুন্ডাদের বিরুদ্ধে। কিন্ত আমাদের অগচরে উত্তর বঙ্গের (বিশেষ করে নাটরের সাঁওতাল) উপজাতি সম্প্রদায় সর্বস্বান্ত হয়েছে। পাহাড়ে আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি, আবাদী ভূমি নষ্ট করেছি, অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছি। রেশন দিয়েছি শুধু বাঙ্গালিদের, জমি হারানো উপজাতিদের করেছি বঞ্চিত করে। এখনও তাদের ভুমি সংস্কারের, ভুমির অধিকারের কার্যকর কিছু করিনি আমরা। আমাদের রাষ্ট্র তাদের জাতীয়তা কেড়ে নিয়েছে, তাদের সংস্কৃতি কড়ে নিয়েছে, তাদের ভাষা রক্ষায় আমরা খরচ করতে অনিচ্ছুক। কর্পোরেট বনায়নে আর হাউজিং ব্যবসায় তাদের ভুমি কেড়ে নেবার পরিকল্পনা হয়েছে এবং আজও হচ্ছে।

রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কৌশল ঠিক রেখেও যে অপ্রধান জাতিসত্তার আধিকার স্বীকার করা যায়, সেই যোগ্যতা আমরা দেখাতে পারিনি বরং সেখানে আমরা বার বার ইচ্ছাকৃত ব্যর্থতা দেখাচ্ছি। আমরা অপ্রধান জাতি সমূহের উপর আর্থিক আর সামাজিক আগ্রাসনই অব্যহত রাখিনি, তাদের বেচে থাকার অধিকার কে সংকুচিত করেছি, এখন তাদেরকে প্রানে মারার পরিকল্পনা করছি।

ছোট পরিসরেও কি এই সব এথনিক্যাল ক্লিঞ্জিং এর অপরাধের সম পর্যায়ে পড়ে না? পাক হানাদারদের দ্বারা ইতিহাসের এক নৃশংস গনহত্যায় যে জাতির রক্ত নদীর স্রোতের মত বয়েছে সেই জাতি নিজ রাষ্ট্রেরই অতি ক্ষুদ্রাকায় জাতির উপর হামলায় নিমিয়ত হয়ে পড়ছে, এটা লজ্জার আর গ্লানির। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, এই আমরাই আগ্রাসী ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছি আমাদের পানি অধিকার রক্ষায়, সীমান্ত অধিকার রক্ষায় আর অর্থনৈতিক আধিকার রক্ষায়!

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আতশবাজির কারনে যদি ১০ কিংবা ততোধিক শিশু, নারী কিংবা ঘুমন্ত মানুশকে মেরে ফেলা যায়, তাহলে বলব এই দেশের সাবেক এবং বর্তমানের সকল নির্বাহী থেকে শুরু করে অপরাধের সকল সাবেক ও বর্তমান হোতাদের এই শাস্তি দেয়া হোক। এইসব নির্বাহী এবং তাদের চেলারা হেন অবিচার, হেন জুলুম আর হেন পাপ নাই যেটা করে নাই বা করছে না।

অন্তঃসার শূন্য এবং নতজানু পররাষ্ট্রনীতির করনে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়া, করাচিতে আটকে পড়া লাখো বাঙ্গালীদের নিজ বাসভূমে ফেরত আনার কোন কার্যকর ভূমিকা নিতে কাউকে দেখি নাই। অথচ কথায় কথায় দেশপ্রেম আর চেতনার জিকির। বাংলাদেশের নদীর পানি আটকে দিতে, জল স্থল অন্তরীক্ষে ট্রানজিটের বন্দোবস্ত দিতে বাংলাদেশকে উদোম করে ফেলা হয়েছে, কিন্তু ভারতীয় ছিটমহল গুলোর মানুষও যে বিহারীদের মত একইরকম আগুনের ভয়ে দিনাতিপাত করে সেই খবর এই দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক জানোয়ারের দল রাখে না। করাচীর বস্তি পল্লীতে আটকে পড়া গরীব বাঙ্গালীরা যে একই মর্মান্তিক সামাজিক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দিন গুনে সেই খবর এই পশুদের কানে যায় না।

কূটনৈতিক বন্দোবস্ত করার মুরোদ লুটেরা শাসকদের নেই। সমস্যা টিকিয়ে রেখে লুটপাটের আর ভূমি গ্রাসের রাজনীতি করাটাই এদের লক্ষ্য। এই মুরোদ যে নেই তা আজ মিয়ানমার জেনে গেছে। তাই রোহিঙ্গা দের পাশাপাসি পাহাড়ি আর বাঙ্গালীরা তাদের আগ্রাসনে পড়ছে। সীমান্তের নাগরিক আবিচারের আরেক কঠিন পর্যায়ে পড়ে যাচ্ছেন।মুরোদ যে নাই তা নতুন ভারতীয় সরকার জেনে গেছে, তাই বিহার থেকে কথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী পুশব্যাক করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

লক্ষণীয় হোল, দেশের গরীব বাঙ্গালী, পাহাড়ি আদিবাসী কিংবা উপজাতি, সমতলের উপজাতি এমনকি শরণার্থী (রোহিঙ্গা, বিহারি) সবাই একদিকে ভূমি সন্ত্রাসের আরেকদিকে সামাজিক অর্থনৈতিক নিগ্রহ এবং অবিচারের একই শৃঙ্খলে বন্ধী। সার্বিক ভাবে এরা সবাই গরীব, সবার সামান্য সহায়, ভিটা, ভূমি আর জীবনের দাম দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক জানোয়ারের হাতেই নির্ধারিত। গরীবের অসহায়ত্ত্বকে পুঁজি করে তাকে পরিকল্পত বিপদে ফেলে ভুমি থেকে উচ্ছেদের সেই চেনা মহাজনী ফন্দি আজো আমাদের দেশে উপস্থিত। পরিকল্পিত কলহ বাধিয়ে লাগিয়ে দেয়া বস্তির আগুনের কালো ধোঁয়ার পেছনো লূকায়িত বহুতল ভবন করার বিলাস চিরিচেনা। একই ধারার অবিচার হলেও গরীব বাঙালী আর অবাঙালীর সীমারেখাও খুবই চেনা, অবাঙালীরা নিগৃহীত হলেও সংখ্যাধিক্যের তেমন সহানুভূতি পায় না।

দুর্বৃত্তরা ধরাছোঁয়ার বাইরে সবসময়। কারন তারাই কিংবা তাদের গডফাদাররাই দেশের নির্বাহী।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×