ঢাকা মহানগরঃ
ঢাকা মেট্রো ট্রেন
১) ঢাকায় এলেভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক ডিজাইন এবং বাস্তবায়নের আগেই ম্যসিভ কানেক্টিভিটি দিয়ে ওভারহেড মেট্রো রেল নির্মাণ এর ডিজাইন এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। এলেভেটেড এক্সপ্রেস সড়ক এর কিছু অপরিকল্পিত কাজ শুরু হয়ে গেসে ইতিমধ্যেই, আমাদের কে এটা অনুধাবন করতে হবে যে এই ধরনের প্রকল্প বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহরের অপরিকল্পিত রাস্তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না। বরং এটা সাধারনের চলার পথ কে অতি সংকুচিত করে ট্রাফিক জ্যাম বাড়াবে। অন্যদিকে উপরের এক্সপ্রেস নামধারি আরেক ন্যারো রোড কে জ্যাম মুক্ত এবং আর্থিক ভাবে লোভনীয় রাখতে ধনীর চলাচলের উপর অতিরিক্ত আর্থিক দেনার ভার চাপাবে। ধনীর সামর্থ্য আছে কি নাই সেটা রাষ্ট্রের ভাবার বিষয় হলেও, এটা আগে ভাবতে হবে যে ধনীর উপর এইধরনের অপরিকল্পিত করারোপ বা ভ্যাট আরোপ অবসেশে তার নিয়ন্ত্রিত শ্রমিকের মাসিক বেতনের উপরই চাপে।
ঢাকায় বাই ডিরেকশনাল (সেপারেট টু এন্ড ফ্রম লাইন) মেট্রো রেল নির্মাণের উপর গুরত্বারোপ করতে হবে যাতে ঘন বসতি পূর্ণ ঢাকা কে মাস কানেক্টিভিটি দেয়া যায়। এই কানেক্টিভিটিতে নিন্ম বিত্ত এবং অধিক ঘন বসতি পূর্ণ এলাকা সমুহকে বেশি গুরুত্ব পূর্ণ।
অধিক ঘনবসতি পূর্ণ হওয়ায় মনো রেল প্রকল্প ঢাকায় কম কার্যকর, অধিক রুটের এবং বেশি অর্থ বহুল হতে পারে। সেক্ষেত্রে মনো রেলের উপযোগিতা নির্ধারণ এ উচ্চ কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন হাইলি এক্সপার্ট বা কোম্পানী কে দিয়ে করতে হবে।
তেমনি ভাবে বন্যা ও ড্রেন ব্যবস্থাপনার সাথে সামঞ্জাস্য রেখে আন্ডার গ্রাউন্ড মেট্রো রেল এর উপযোগিতা সমীক্ষাও করতে হবে। অধিক রুটের মনো রেল প্রকল্প নিয়েও সমীক্ষা করা যায়, আন্ত রুট (লাইন) সংযোগ, স্পেস এভেইয়াবিলিটি এবং খরচ কে গুরুত্ব দিয়ে। অর্থাৎ ওভার হেড বাই ডিরেকশনাল মেট্রো রেলের প্রস্থাবনা করলেও আমরা বলছি ম্যাসিভ কানেক্টিভিটির মনো রেল কিংবা আন্ডারগ্রান্ড বাই ডিরেকশনাল (সেপারেট লাইন) ইত্যাদি বিকল্প লাইনকেও অত্যন্ত রিচ কারিগরি সমীক্ষার আওতায় আনতে হবে। সবগুলো প্রকল্পকে ফিউচার এক্সপানশন এর কথা মাথায় রেখে ফেইজ বাই ফেইজ ক্যাপাসিটি বাড়ানোর রোডম্যাপ বানাতে হবে। (নোটঃ ক্যাপাসিটি বাড়ানোর সাথে নগরী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও গুরুত্বপূর্ণ।)
মেট্রো রেল এর গতিপথ ডিজাইন করতে হবে মাস কানেক্টিভিটির কথা মাথায় রেখে। যাতে নগরীর প্রায় প্রত্যেকটি এলাকাকে কভার করা যায়। এবং ডাইমেনশন করতে হবে ট্রাফিক বেইজ এর সঠিক ধারনার ভিত্তিতে, সেই সাথে ৫০-৮০ বছরের ট্রাফিক গ্রোথ কে ফোরকাস্ট করতে হবে নিখুত ভাবে। এই ডিজাইন এবং ডাইমেনশন ফেইজ ই হলো টেকনলজি ইন্ট্রোডাকশন এর সবচাইতে গুরুত্ব পূর্ণ দিক, এর পরেই কেবল আসবে পরবর্তীতে আসবে অর্থায়ন । অন্যথায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের মেট্রো মুখ থুবড়ে পড়বে।
ঢাকার সড়ক ডিজাইনঃ
৬ টি ধাপ, এই ধাপ সমূহ শুধু মাত্র মেট্রো রেল ডিজাইনের পরেই আসবে। সিকোয়েন্স উলট পালট করলে পরবর্তী ট্রান্সপোর্ট টেকনোলজি ডিপ্লয়মেন্ট অনেক অনেক বেশী খরুচে এবং অতি মাত্রায় কমপ্লেক্স হয়ে যাবে। ঢাকায় অতিমাত্রার অপরিকল্পিত এবং মানহীন অবকাঠমোর কারনে এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই কমপ্লেক্স। মেট্রো রেল এবং অন্য ধাপ সমূহ ডিপ্লয়ম্নেট ভিন্ন ভিন্ন সময়ে বা ফেইজে হতে পারে, কিন্তু ডিজাইন এবং ডাইমেনশন একই সাথে করতে হবে, নতুবা একান্তই না পারলে সিকোয়েন্সিয়ালি করতে হবে। এটা একটা কার্যকর মাস্টার প্ল্যান। এখানে ভকি জকি বা ধুন ফুন বা পলিটিক্যাল হাইপ সম্পন্ন লোক দেখানো কাজ করে লুটপাট করার সুজোগ নাই। এই প্রকল্প সমূহ অতি খরুচে, একটি প্রজেক্ট দিয়ে আরেকটিকে নন টেকনিক্যালি সুপারসিড করলে এই খরচ রাষ্ট্রের সামর্থের বাইরে চলে যাবে।
সিগন্যাল ফ্রি লুপড কানেক্টিভিটি রোড,
ট্রাম লাইন,
বি আর টি (বাস রেপিড ট্রানজিট)
সাধারন রাস্তা
সাইক্লিং ট্র্যাক
ফূটপাথ
২) মেট্রো রেল ডিপ্ল্যমেন্টে ডিজাইনের পর ট্রাফিক সিগন্যাল ফ্রি লুপড ফ্লাই ওভার প্রকল্প (ইউ লুপ ফ্লাইওভার রোড প্রকল্পও হতে পারে বিকল্প হিসেবে), যেখানে মোড় পার হতে ট্রাফিক লাইট দেখতে হবে না। এর মাধ্যমে বর্তমানের অপরিকল্পিত ওভার পাস গুলোকে কানেক্টেড করা যেতে পারে। (নিন্ম মানের হলে কিছু ওভার পাস কে ভেঙ্গে রিডাইমেনশন করতে হবে ভবিষ্যৎ ঢাকার ট্রাফিক গ্রোথ অনুযায়ী)। এই পর্যায়ে "বাস রেপিড ট্রান্সিট বা বি আর টি" এর জন্য প্রয়োজনীয় রোড রিজার্ভ করে ফেলতে হবে। অবশিষ্ট রোড কে নর্মাল ওয়ে তে প্লান করতে হবে, যেখানে ফুটটপাত এবং সাইকেল চলার বন্দোবস্ত থাকবে। সাইকেল ট্র্যাক অবশ্যই মার্কড হতে হবে, মোড় সমূহে সাইকেল ট্র্যাক এর সিগন্যাল মেইন সিগন্যাল এর সাথে সমন্বয় করতে হবে।
বি আর টি রুট কে ট্রাফিক সিগন্যাল মুক্ত রাখতে হবে যথাসম্ভভ।
মনে রাখতে হবে এর উদ্দেশ্য একদিকে গনপরিবহন কে সময়ের নিশ্চয়তা দেয়া, অন্যদিকে ধনীদের রাস্তায় ব্যক্তিগত কার নিয়ে বের হওয়া কে নিরুতসাহিত করা।
৩) একটি কার্যকর মেট্রো রেল ডিজাইন, মাস্টার প্লান শেষ এবং বাস্তবায়ন শুরুর পর মাস কানেক্টিভিটির এলিভেটেড সড়ক ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করতে হবে যাতে "বাস রেপিড ট্রান্সিট বা বি আর টি" প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ গন পরিবহন সর্বত্রই প্রাধান্য পাবে।
৪) এই পর্যায়ের পর "বি আর টি" লাইনের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে কিংবা "বি আর টি" লেইনের উপর "ট্রাম" ডিজাইন করতে হবে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার ও দুঃখের যে ১৫০ এর বেশী সময় ধরে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন পরিবহন "ট্রাম" এখনও বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মেগা সিটিতে নেই।
অর্থাৎ আমরা বলছি গনপরিবহন পরিকল্পনায় প্রথমেই আসবে ব্যাপক কানেক্টিভিটি সম্পন্ন বাই ডিরেকশনাল ওভার হেড মেট্রো (কারিগরি বিবেচনায় আন্ডার গ্রাউন্ড ও আসতে পারে), তার পর ট্রাফিক সিগন্যাল ফ্রি লুপড ফ্লাই ওভার প্রকল্প (বা ইউ লুপ ফ্লাই ওভার কানেক্টেড রোড ),তার পর আসবে "বাস রেপিড ট্রান্সিট বা বি আর টি" প্রকল্প, এর পর ট্রাম। এই চার ধাপে গন পরিবহন এর জন্য উপযোগী অবকাঠামোকে ডিফাইন ও ডিজাইন করার পর আসবে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে যেখানে ধনী দের প্রাধান্য দেয়া হবে। অন্যথায় বর্তমানের ওসামাঞ্জাস্য পূর্ণ এলিভেটেড ওয়ে উচ্চ ও উচ্চ মধ্যবিত্ত ধনীদের কিছু সাময়িক উপকারে আসতে পা্রে মাত্র, এই প্রকল্প মাস কানেক্টিভিটির মেট্রো রেল বা ভবিষ্যতের গন পরিবহন প্রকল্প কে অনেক অনেক বেশি এক্সপেন্সিভ করে তুলবে। সময় সাপেক্ষ ও করবে অনেক অনেক বেশি। সবচেয়ে সমস্যা হবে ট্রাফিক ফোরকাস্ট এ। এই সুযোগে এই সব প্রকল্প সমুহকে অধিক ব্যয়ের প্রকল্প ধরে "বি ও টি" র ছুতা ধরে মধ্যবিত্ত্ব নিন্মবিত্ত্ব জনগনের টাকায় সরাসরি বেদেশী কোম্পানীকে ভাগীদার করা হবে।
চট্রগ্রাম মহানগরীঃ
চট্রগ্রাম মেট্রো ট্রেন
এখনই চট্রগ্রাম মহানগরীর জন্য গন পরিবহন হিসেবে মেট্রো ট্রেন ডিজাইন,ভবিষ্যতের ট্রাফিক ধারন ক্ষমতা ডাইমেনশন করতে হবে। মনে রাখতে হবে এখনও এটা না করলে ঢাকার মত সমস্যা তৈরি হবে। অর্থাৎ একই প্রকল্প অনেক অনেক বেশি অর্থে সম্পন্ন করতে হবে। যা সময় সাপেক্ষ ও হবে, মেইনলি সরকারি বেসরকারি অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরির ফলে। বিশেষ করে অপরিকল্পিত ফ্লাই ওভার বা তথাকথিত এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে প্লান করে তার পরে যেন চট্রগ্রামে মেট্রো প্রকল্প হাতে নেয়া না হয়। এই ইচ্ছাকৃত কিংবা জ্ঞানহীন ভুল ঢাকায় হয়েছে, এর পুনরাবৃত্তি যাতে দেশে আর না হয়।
এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে "বি ও টি" নামের তথাকথিত প্রাইভেট-পাব্লিক পার্টনারশিপ ব্যবসার অদূরদর্শী এবং শর্ট কাট ধান্ধা, এর মাধ্যমে জনবহুল দেশের অপরিকল্পিত রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম যেমন কমানো যায় না, অন্য দিকে গরীবের রাস্তায় চলার অধিকারে টোল বসানো হয়।
চট্রগ্রাম মেট্রো করার পর পরই ফোকাস করতে হবে, লুপড ফ্লাইওভার ভিত্তিক এলিভেটেড রোড প্রকল্প, যার সাথে "বাস রেপিড ট্রান্সিট বা বি আর টি" প্রকল্প এবং "ট্রাম" প্রকল্প কে সমন্বিত করতে হবে।
নগর পরিবহন ব্যবস্থাপনায় প্রাইভেট-পাব্লিক পার্টনারশিপ যত সম্ভব এভয়েড করতে হবে, এটি সাধারনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের টুটি চেপে ধরবে। তবে ফান্ডিং আলোচনা ভিন্ন প্রসঙ্গ। ভিন্ন ফোরাম এবং ভিন্ন লেভেলের এক্সপার্ট বৃন্দ এর দিকে ফোকাস করবেন।
এভাবে অন্যান্য নগরীকেও সামর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত ব্যবস্থাপনায় আনতে হবে।
আবকাঠামো নির্মাণ ব্যবহুল, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনা কমিয়ে, সময় নিয়ন্ত্রিত মানসম্পন্ন নির্মাণ করে দেশের অর্থ সাশ্রয় করতে হবে। এই নির্মাণে জিরো টলারেন্স দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহন না করলে খরচ বহন সাধ্যের বাইরে চলে যাবে, দেশী বিদেশী স্বার্থ এবং ঘুরে ফিরে প্রাইভেট-পাব্লিক ধান্ধা মানুষের পকেট কটবে।
নগর ব্যবস্থাপনা কারিগরি জ্ঞান সমৃদ্ধ, দূরদর্শী এবং ফিউচার প্রুফ হোক।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



