স্থানীয় চাহিদা অর্থাৎ বিভিন্ন আঞ্চলিক পন্য পরিবহনের প্রয়োজনীয়তার উপর ভিত্তি করে ট্রান্সপোর্ট মাধ্যম এর রকমভেদ এবং গন পরিবহন এর প্রয়োজন মাফিক মফস্বল-মফস্বল শহর (কৃষি এবং শিল্পের ব্যাকবোন) এর জন্য সাশ্রয়ী দেশীয় প্রযুক্তির উদ্ভাবনে আমাদের-প্রকৌশলীদের চরম ব্যর্থতাই মুড়ির টিন/ভটভোটি/নসিমন/(কিংবা শেলো পাম্প এর ইঞ্জিন দিয়ে তৈরি স্থানীয় মাল পরিবাহী গাড়ি ইত্যাদি) এর সৃষ্টি করেছে। এগুলো লোকাল রি-ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্ট।
আমারা প্রকৌশলীরা স্থানীয় ট্রান্সপোর্টেশন এর সাশ্রয়ী ভেহিক্যাল উদ্ভাবন করতে না পারায়, গ্রামবাসী টেকনিশিয়ান গন সেমি-টেকনিক্যাল জ্ঞানের সাথে স্থানীয় প্রয়োজনের সমন্বয় ঘটিয়ে এসব উদ্ভাবন করে নিজেদের প্রয়োজন মিটাচ্ছে এবং সেই সাথে দেশের ম্যাক্র এবং মাইক্রো ইকোনমিতে অসাধারন ভূমিকা রাখছেন।
আমাদের সেমি টেকনিশিয়ানরা রি-ইঞ্জিনিয়ারিং করে পুরানো মটর/ইঞ্জিন দিয়ে যতটুকু কারিগরি সক্ষমতা দেখিয়েছেন, তার কাছাকাছি দক্ষতা সরকার আর শিক্ষিতরা দেখাতে পারলে দেশের অনেক সমস্যার সমাধান হোত।
নিরাপদ সড়ক এর প্রস্তাবনা আসলেই, প্রথমে রিক্ষা, ভ্যান, নসিমন, করিমন, মুড়ির টিন কিংবা পাম্প ইঞ্জিন চালিত ভ্যান গুলোর কথা উঠে, এগুলো ব্যান করা দর কার বলে চারদিকে রব উঠে। বেপারোয়া গতির কথা উঠে, কিন্তু বেসিক স্ট্র্যাকচার গুলোর কথা উঠে না-
-ডিভাইডার হীন দুই লেইনের আন্ত বিভাগীয় মহা সড়ক ( সার্ভিস লেইন নাই, এক্সিট এন্ট্রির বন্দোবস্ত নাই, নাই গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকা শক্তি "হাঁট বাজার" গুলোর জন্য প্রভিশন। নেই রোড সাইড বাস স্ট্যান্ড এর প্রভিশন। নেই স্লো মুভিং লেইন, গ্রাম থেকে গ্রামের সংযোগ কারি রাস্তায় নেই পায়ে হাঁটার পথ কিংবা সাইক্লিং লেইন)
-পরিকল্পনাধীন কিংবা বাস্তবায়নাধীন চার লেইনের মহা সড়কেও সার্ভিস লেইন, বাস স্ট্যান্ড, স্লো মুভিং লেইন নেই।
-এক লেইন এর আন্ত জেলা/আন্ত উপজেলা সড়ক।
-আধা লেইন এর আন্ত উপজেলা, আন্ত ইউনিয়ন, অন্ত গ্রাম।
সড়কের বাঁক নির্মানে উচ্চতা নীতি বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে, ফলে প্রায়ই দেখা যায় এইসব বাঁকে এক্সসিডেন্ট হয় আর মানুষ প্রাণহানির শিকার হয়। সড়কের উপর খানা খন্দ, ফাটল আর উচা নিচা কার্ভ আর পীচ হীনতা তো আছেই।
মৌলিক কাঠামো নেই, নেই ভেহিক্যাল এর মান যাচাইয়ের (ফিটনেস এবং রাস্তা উপযোগীতা) নিয়মিত পদক্ষেপ। খালি আছে এখানে সেখানে ট্রাফিক পুলিশের টাকা হাতানোর মহড়া।
দেশের রোমোট জনপদে ট্রাস্পোর্টেশন সেবা পৌঁছে দেয়াই হবার কথা ছিল- বি আরটিসি র কাজ। কিন্তু তা না করে উনারা ঢাকা-কুমিল্লার মত ওয়েল স্ট্যাব্লিশড রুট গুলোতে এসি বাস সার্ভিস দিয়ে ব্যবসা করছেন, ফলে নসিমন-করিমন সহ লোকাল উদ্ভাবন গুলো হয়ে উঠেছে মানুষের পরিবহণ।
এককালের মাটি হাটা বা রিক্সার পথ তথাকথিত উন্নয়ের (চুরির) জোয়ারে আর বিশ্ব ব্যাংক, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট থেকে ঋন করা (যার ৭০-৮০% চুরিতে যায়) প্রকল্পে ৩ নম্বর ইটা আর পীচ হীন ১ লেইনের বা ২ লেইনের সড়কে উন্নীত হয়েছে, সেখানে বানিজ্যিক বাস চলাচল শুরু হয়েছে কিন্তু আগের রিক্সা-সাইকেল-ভ্যান এসবের প্রভিশন নেই। যে লোকটি পায়ে হেটে আগে বাজারে পন্য নিতেন তাঁর কথা (স্থানীয় ইকনোমি) প্ল্যানার কিংবা মন্ত্রীর মাথায় নেই!
ফলে সড়ক হয়েছে মরণ ফাঁদ। একই ২ লেইনের রাস্তায় হাঁটা, গরু চরানো, ধান ও খড় শুকানো, জ্বালানী শুকানো, ঠেলা -ভ্যান-রিক্সা চালানো, নসিমন করিমন মুড়িরটিন, টেম্পো, স্কুটার চালানো, হাঁট বাজার বসা, মাল উঠা নামা করানো কিংবা বাসে উঠা নামার কাজ সবই হচ্ছে। এমন সংকীর্ন ভাবে এই তথাকথিত পাকা রাস্তা হয়েছে যে, পীচের বাইরে একজন লোকের মাথায় বোঝা নিয়ে হাটার ব্যবস্থা নাই।
এই ধরনের সড়ক ব্যবস্থাপনা যত দিন আছে, তত দিন প্রান নিয়েই পরিবহনে উঠা লাগবে, আর এক একটি এক্সসিডেন্টের পর বলতে হবে, আহারে এত গুলান লোক মারা গেল!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮