somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

মাতৃভাষা বাংলার বিকাশ ও উৎকর্ষ

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আধুনিক সময়ে বাংলা বিপননের ভাষা, ব্যাপক ভিত্তিতে সাংবাদিকতার ভাষা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাষা, খুব সীমিত কিছু পর্যায়ে কর্পোরেট ভাষা, শিক্ষার প্রাথমিক স্তর গুলোর ভাষা, শিল্পের অধুনা রূপগুলোর ভাষা, স্থানীয় প্রশাসনের ভাষা হওয়ায় এর বিকাশ, প্রসার এবং ধারণ অব্যহত ভাবেই বর্ধমান। ভাষাকে প্রানময় বলে ধরে নিলে এই ভাষা অবশ্যই জীবিত এবং সতেজ। বিশ্ব ব্যাপী প্রায় ৩০ কোটি মানুষের চলনে বলনে ছন্দ ও রুচির সাথে বাংলা মিশে আছে। বাংলা ভাষার বিকাশে একুশের ভুমিকা শুধু প্রতীকী হয়েই পড়ে থাকেনি বরং প্রায়োগিক দিক থেকে যথেষ্ট কার্যকর হয়ে আবির্ভূত হয়েছে একুশ। বাংলার প্রতি পূর্ব বাংলা বা বাংলাদেশের মানুষের এই আদি ও অক্রিত্তিম প্রানের টান এই মধু সুধাময় ভাষাটিকে চির সঞ্চালিত রাখবে তা সকল সংশয়ের আবকাশ মুক্ত বলাই চলে। বাংলা একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার ভাষা। এর সচলতার অন্যতম কারন এটাই।



নৃতাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশে একজনও ইংরেজি ও হিন্দি ভাষাভাষি না থাকলেও আমাদের এই প্রানের ভাষাকে ইংরেজি ও হিন্দির সাথে পাল্লা দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের আদালত ও সংবিধান এর প্রধান ভাষা এখনও ইংরেজি, বাংলা এর আনুবাদ সংস্করণ। আদালতের রায় লিখিত হয় ইংরেজিতেই। অন্যদিকে হিন্দি বিনোদনের ভাষা, বিকৃত কথ্য বাংলায় এর অনুপ্রবেশ লক্ষণীয়। তাই বাস্তবিক অর্থে বাংলা হিন্দির সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ব্যাপক শিকার।

অন্যদিকে বাংলা এখনও বিজ্ঞান ও ব্যবসায় উচ্চ শিক্ষার কিংবা কারিগরি জ্ঞানের ভাষা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি, আসলে বলা উচিত আমরা এখন উচ্চ শিক্ষার ভাষা হিসেবে বাংলাকে মর্যাদা দিতে পারিনি। বলা হয়ে থাকে অপরের ভাষায় শিল্প সাহিত্য বা দর্শন কিংবা ধর্মতত্ব পড়ে যেমন আধ্যাত্বিক পর্যায়ে পৌঁছানো যায়না, ঠিক তেমনি অন্য ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করেও এর উৎকর্ষে উঠা যায় না। এর জন্য চাই আগে নিজের ভাষার জ্ঞান-বিজ্ঞানের হাতেখড়ি। আমাদের বিদ্যাপীঠ সমূহ বলতে গেলে সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এখনও কিছু চৌকশ কর্পোরেট নির্বাহী কিংবা সেকেলে প্রশাসনের গতানুগতিক মানের আমলা তৈরির কাজই করে যাচ্ছে। জীবিকার খাতিরে আমাদের মেধাবীরা ইংরেজিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন বা দিতে হচ্ছে, বিস্তৃত গ্রামীণ মধ্যবিত্ত আরব বিশ্বে গিয়ে আরবিকে কর্মসংস্থানের ভাষা হিসেবে আয়ত্ব করেছেন। সমসাময়িক বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে এই প্রতিযোগিতা দিন দিন হয়ে পড়ছে অসম, এতে বাংলা পিছিয়ে পড়ছে যার প্রভাব এখনই পশ্চিম বাংলায় দৃশ্যমান, পূর্ব বাংলায় এই প্রভাব অনুমেয়।


অতি অদূরদর্শী হয়ে আমরা অগ্রসর বাঙালীরা প্রান প্রিয় ভাষাকে উচ্চ শিক্ষা এবং জীবিকা নির্বাহের ভাষা হিসেবে দূরে ঠেলে রেখে শুধু মাত্র প্রান্তিক আর অনগ্রসর কায়িক শ্রমজীবী মানুষের পেশাগত ভাষা হিসেবে রেখেই ঢের তৃপ্তি পাচ্ছি।

মাতৃভাষা বাংলার একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ এবং জ্ঞান বিজ্ঞান এর জগতে এর উতকর্ষে আমরা কতটুকু চিন্তাশীল, আন্তরিক আর দ্বায়িত্বশীল তা ভাবার কথা সময় বার বার আমাদের বিবেক নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। একুশ এই বার্তা নিয়ে ব্যক্তি ও সমাজের কাছে হাজির হয় প্রতি বছর।
জ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় ভাষা হিসেবে বাংলার সীমাবদ্ধতার বাইরেও কিছু দিক নিয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার। বাংলার ব্যাপক বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক বিকাশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এতই উত্তেজনাকর ভাবে আবির্ভূত হয়েছে যে ভাষার মান সংরক্ষণে এর অপধারার লাগাম টেনে ধরা নিতান্তই জরুরি মনে করছি ।অধুনা রাজনীতির আর বিনোদন শিল্পের বিকৃত বাংলা এর মৌলিকতাকে চ্যালেঞ্জ করছে বললে বাড়াবাড়ি হবে না বোধ হয়।এতে বাংলার শৈল্পিক আবেদন যে দিন দিন বিসৃত ও মলিন হচ্ছে তা নির্দ্বিধায় বালা যায়। আজকের বাংলা একদিকে যেমন যশোর ও নদীয়া জেলার সাধু বাংলা নয়, তেমনি কথ্য বাংলার শিল্পিত রূপটিও নয়। ভাষার প্রয়োগ উদাসীনতার এই কদর্য দিক একদিকে যেমন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক ভাষা গুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে আজ ঠিক তেমনি এটি মূল বাংলার শৈল্পিক দিকটিকেও একদিন হেয় করে বসবে।


মাতৃভাষা বাংলার বিকাশ ও উৎকর্ষ তরাত্বিত করতে ভাষাকে সমৃদ্ধ করার ব্যাপক দুরদর্শী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এর কিছু সীমিত পরিসরে আলোচনায় আনছি-

ক। বাংলায় পাঠ্যবই, শিক্ষা সহায়িকা বই, বিষয় ভিত্তিক মানসম্পন্ন বই প্রকাশের পদক্ষেপ নেয়া
১। দেশ বিদেশের হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনারত স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সবগুলো ডিসিপ্লিনে প্রথিতযশা শিক্ষকগণের প্রোফাইল তৈরি করে, উনাদেরকে নিজ নিজ বিষয়ে লভদ্ধ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ে একাধিক পুস্তক প্রণয়নের আমন্ত্রণ জানানো। এইকাজ একটা সুবিশাল কর্মযজ্ঞ যার জন্য সত্যিকারের জ্ঞানী শিক্ষকের প্রোফাইল তৈরি করতে হবে, উনাদের পুস্তক লিখে নিজেদের রিপ্রডিউস এর গুরুত্ব বুঝাতে হবে, বই লিখায় নিরস্তর উৎসাহ দিতে হবে।

২।স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সবগুলো ডিসিপ্লিনে প্রথিতযশা শিক্ষকগণের সমন্বয়ে উচ্চ মান পর্যালোচনা পরিষদ তৈরি করতে হবে, বই লিখার পর পর্যালোচনা পরিষদ কর্তিক রিভিউ তৈরি করে সেটা আবার লিখকের মাধ্যমে ঠিক করে নিয়ে চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি তৈরি করার কাজ গুলো নিবিড় তত্ববধানে যত্নসহকারে এবং অতি গুরুত্বদিয়ে করতে হবে।
৩। বই সময় মত প্রকাশ এবং দেশ-বিদেশের সকল প্রতিষ্ঠানে সার্কুলেশনের এমনকি বিপণনের উদ্যোগ নিতে হবে। বই প্রকাশের দেখভাল এবং খরচ বাংলা একাডেমি করবে। সরকার এই মৌলিক বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতার সমন্বয়কারী দল গঠন করবে এবং যথাসময়ে অর্থ বরাদ্দ দিবে।

এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাসি জ্ঞানীদের জ্ঞান রি-প্রডিউস করা হবে যাতে উনাদের অবর্তমানেও আমরা তাঁদের লভদ্ধ একাডেমিক জ্ঞান এর সঠিক ব্যবহার করতে পারি।

খ। বিদেশি ভাষার পাঠ্যবই, শিক্ষা সহায়িকা বই, বিষয় ভিত্তিক মানসম্পন্ন বই বাংলায় অনুবাদের ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া

১। দেশে এবং বিদেশে স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সবগুলো ডিসিপ্লিনে সেসকল মান্সম্পন্ন বিদেশী পাঠ্যবই পড়ানো হয়, বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নামকরা লিখকের উচ্চ মান বই পড়ানো হয় সেসবের বিশদ তালিকা তৈরি করে সর্বশেষ ভার্শনকে অনুবাদের ব্যবস্থা করা।
২। এখানে সরাসরি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টেক্সট বুক প্রকাশকের সাথে বাংলা একাডেমীর ফ্রেইমোয়ার্ক তৈরি হবে। সরকারের আনুকূল্যে একাডেমি এই খাতে অর্থায়ন করবে। বিশ্ববিদ্যালয় সহ সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টির সাথে কমিউনিকেশন স্ট্যাব্লিশ করবে।


গ। প্রচলিত বাংলা শিক্ষা দান পদ্ধতিকে পরিবর্তন করা সময়ের দাবি

আমাদের স্কুল সমূহে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ১০০ নম্বরের বাংলা, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ২০০ নম্বরের বাংলা প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্র পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এত দীর্ঘ বাংলা পাঠ্যক্রম থাকা সত্বেও সাধরনের কথোপকথন এবং লিখায় ভাষার মার্জিত কিংবা প্রমিত রুপটির চুড়ান্ত অনুপুস্থিতি অতি বিস্ময়ের ব্যাপার। এর কারন শিক্ষাদান পদ্ধতিটির চূড়ান্ত অকার্জকরিতা।

দেখা যাচ্ছে একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্জন্ত স্কুল কলেজ এবং পাবলিক পরীক্ষা মিলে মোট শুধু বাংলায় ৫৭০০ নম্বরের উপর শুধু লিখিত পরীক্ষায় অবতীর্ন হন, যা সম্পুর্ন আনুষ্ঠানিক।(১ম,২য় এবং বার্ষিক পরীক্ষা মিলে প্রাথমিকে ১০০*৩*৫=১৫০০, উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০*৩*৫=৩০০০, কলেজে ২০০*৩*২=১২০০ নম্বর)। তথাপি বাংলার লিখিত রুপে এই শিখার্থীগণ নূন্যতম পারদর্শীতা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর পার করতে পারছেন না।


সব শ্রেণীতেই বাংলা প্রথম পত্রে কিছু কবিতা এবং গল্প পড়ানো হয় যা আসলে হাস্যকর পর্যায়ের, এইসব সহায়িকা বইয়ে থাকাই শ্রেয় যা বিদ্যালয়ের পাঠাগারে উন্মুক্ত পাঠের জন্য থাকার কথা। অন্যদিকে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে সাধারণ থেকে শুরু করে অন্তত্য জটিল পর্যায়ের ব্যাকরণ শিখতে বাধ্য করা হয়, পরীক্ষা নির্ভর পাঠ্য ক্রমের বাধ্যবাধকতার কারনে।

সময়ের প্রয়োজনে ইংরেজি সহ জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত ভাষা সমূহ শিক্ষার জন্য অতি কার্জকরি পঠন, লিখন, শ্রবণ এবং বলন পদ্ধতি ডেভেলপ করেছে (উদাহরণ স্বরূপ- আই ই এল টি এস বা স্কুলের ভাষা শিক্ষার জন্য পঠন, লিখন, শ্রবণ এবং বলন ইত্যাদির পাঠ্যবই কিংবা সফটওয়্যার)। ভাষা বিজ্ঞানীদের ডিজাইন করা এই সব ভাষা পাঠ্যক্রমের কার্জকরিতা যুগ যুগ ধরে প্রমাণিত যার মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করা পরিকল্পনা সমূহ ফলপ্রসু হয়েছে। শিক্ষাদান (একাডেমিক) এবং যোগাযোগের (কমিউনিকেশনের) জন্য বিশেষ বিশেষ পাঠ্যক্রম ভিত্তিক অফলাইন কিংবা অনলাইন ভাষা শিক্ষার মডিউল ডেভেলপ না করে আমরা এখনও সেই অকার্জকর গৎবাঁধা পদ্ধতিতেই ভাষা শিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আছি।

সব শ্রেণীতেই অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে বাংলা শিক্ষার্থীকে চাপে রাখছে, সময়ের সাথে যার কোন কার্যকরিতা দেখা যাচ্ছে না। মাতৃভাষায় একাডেমিক পারদর্শিতা যেখানে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের শুধু ৪-৫টি শিক্ষা বর্ষেই আসার কথা ছিল সেখানে ১০টি শিক্ষা বর্ষে পড়ানোর পরেও আমাদের শিক্ষার্থীরা তা রপ্ত করতে পারছেনা। কারন পুঁথি নির্ভর পরীক্ষা ভিত্তিক মানহীন হাস্যকর পাঠ্যক্রম।

ঘ। মাতৃভাষার সাথে কর্মমূখী ভাষার সমন্বয় এবং ভাষা শিক্ষার প্রচলিত মডেলের কার্যকরিতা।
ইংরেজিতে শিক্ষা দিবার জন্য ইনফাস্ট্রাকচার গঠনের ভুলভাল চেষ্টা ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে চললেও সেটা তৃণ মূল পর্জায়ে ব্যাপক সাফল্য পায়নি, স্থানীয় আচার ব্যবহার এবং সংস্কৃতি, মানুষের জীবনধারা কম্ফোর্ট জোনে রেখেই নিজের শিক্ষণ ব্যবস্থা ডেভেলপ করতে হবে। অন্য কোন কপি পেস্ট মডেল যে ফল আনছে না তা দৃশ্যমান।আধুনিক শিক্ষার উৎসস্থল ইউরোপের প্রায় প্রতিটি ছোট বড় জাতি মাতৃ ভাষায় শিক্ষা লাভ করে। আপনি অবাক হবেন মাত্র ১৫ মিলিয়ন মানুষের ডাচ জাতির ভাষার গল্প শুনে, গণিত পদার্থ রসায়ন চিকিৎসা জীববিজ্ঞান আর্কিটেকচার ব্যবসা এবং শিল্প কলার হেন কোন বিভাগ নেই যার পাঠ্য বই ডাচে রচিত, অনুদিত বা প্রকাশিত হয়নি এবং যা লোকাল ভাষায় স্কুলে পড়ান হয় না। মাত্র ৫ মিলিয়নের ছোট্ট দেশ নরওয়ের শিক্ষার সবকিছু নরওয়েজিয়ান ভাষায়।একই চিত্র জাপানেরও।কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে ২য় বা ৩য় ভাষা শিক্ষার অপশনাল থাকায় এই নেশনগুলোর কোনটই আন্তর্জিক ভাষা ইংরেজিতে পিছিয়ে পড়েনি।


যে ছেলে-মেয়ে স্কুলের পাশাপাশি পিতা মাতার কৃষি কাজে এবং ঘরের কাজে সহায়তা করে, তাকে আপনি বিদেশি ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে বাধ্য করতে পারেন না, এটা একটা মনোগত বাঁধা দাঁড়া করিয়ে দেয়। তাঁর ব্রেইন বাংলা টু ইংরেজি এবং ইংরেজি টু বাংলা দ্বৈত রুপান্তরে ব্যস্ত থাকে, উপরন্তু না বুঝার ভয়ে আচ্ছন্ন থাকে। সাইকোলজিস্টগণ এর বেশি ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। প্রতিটি বাক্যই যদি কনভার্শন প্রসেসে আসে তাইলে ইন্নোভেশন আর ক্রিয়েটিভিট আশা করা যায় না বরং শিক্ষা ভীতি আসে।এই সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে, প্রচুর বিদেশী ভাষার রেফারেন্স পড়ার চর্চা আমাদের হয়ে উঠেনি একারনেই।ফলে কন্সেপচুয়াল ডেভেলপমেন্ট বড্ড দেরিতে আসে, আমরা দেখছি আন্ডার গ্যাজুয়েশনে তেমন মানসম্পন্ন গবেষণা কাজ হয়ই না। তাই হয় আপনাকে স্ট্রং ইংরেজি শিক্ষার স্ট্রাকচার ডেভেলপ করতে হবে যা ২০০ বছরের প্রচেষ্টায়ও পুরোপুরি সফল হতে পারেনি, অন্যথায় আপনাকে বাংলা ভিত্তিক বিকল্প সহ কার্যকর সমন্বয়ের কথা ভাবতে হবে। এর বাইরে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ করার তাগিদ এবং দায়বদ্ধতাও রয়েছে।

এখানে দুটি বিষয়-এক,উচ্চ স্তর পর্যন্ত মাতৃভাষাকে পরিপুর্ন ভাবে সমৃদ্ধ করে বিকল্প তৈরি করা যা পড়া, গণিত বিজ্ঞান এবং কারিগরি কন্সেপ্ট ডেভেলপ, গবেষণা এবং আবিষ্কারকে উৎসাহিত করবে। যা শিক্ষাকে সহজ, ভীতি মূক্ত এবং কোম্ফোর্ট জোনে নিয়ে আসবে।এর সাথে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্কুলে ইংরেজি শিখানোর সংঘর্ষ নেই একেবারেই যা কর্মমূখী শিক্ষার অবাশ্যকীয় উপাদান।অর্থাৎ শিক্ষাকে সহজতর, বোধগম্য এবং শিক্ষণ পদ্ধতি দ্রুত করতে মাতৃভাষার ব্যাপ্তি বিশালাকায় থাকবে, একই সাথে কর্মসংস্থানের বিকাশে বিদেশী ভাষা হিসেবে ইংরেজির সহাবস্থান থাকবে একটি কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে। ২য় বিষয় হোল- মাতৃভাষার বাইরে ২য় ভাষাতে উচ্চ শিক্ষার এন্ড টু এন্ড মডেল। বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশে এই মডেল ব্যর্থ হয়েছে গত ২০০ বছরের প্রচেষ্টার পরেও, উপরন্তু বিদেশী ভাষায় শিক্ষাদান শিক্ষার মৌলিক ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আসে না। সুতরাং এটা টেকসই ডেভেলপমেন্ট এর কন্টেক্সট এ চূড়ান্ত সমাধান হয়ে উঠবে না।

ঙ। শিক্ষার সফটওয়্যার ডিজাইন, ব্যাকরণ এর এপ্লিক্যাশন ডেভেলপ এবং শিশু শিক্ষার ক্রিয়েটিভ এপ ডেভেলপ কাজ
বাংলা একাডেমিকে শুধুমাত্র বাৎসরিক মেলা আয়োজন, কিছু নন একাডেমিক বই সম্পাদনা এবং পারিভাষিক শব্দ খোঁজার প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় কাজে বছর পার করলে চলবে না, কিভাবে বাংলা ভাষাকে ব্যবসা বিজ্ঞান ও গবেষণার জগতে উৎকর্ষময় করা যায়, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে অন্য ভাষার আধিপত্য ছাপিয়ে টিকিয়ে রাখা যায় এবং ক্রমবিকশিত করা যায় সেই দিকে মনযোগী হতে হবে।

দেশের তথ্য প্রযুক্তিবিদ আর এপ্লিক্যাশন ডেভেলপার (বিশেষ করে বাংলা শিক্ষার সফটওয়্যার ডিজাইন, ব্যাকরণ এর এপ্লিক্যাশন ডেভেলপ এবং শিশু শিক্ষার ক্রিয়েটিভ এপ ডেভেলপ কাজে), প্রোগ্রামারদের একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য বাংলা একাডেমির কাজ করতে হবে। ডেভেলপারদের কাজের স্বীকৃতি দেয়া, কিছু ক্ষেত্রে মৌলিক কাজের পারিশ্রমিক দেয়াও দরকার। মৌলিক কাজের বিপণন করা এবং এসব কাজের সমন্বয়ে বাংলা একাডেমির উদ্যোগ এবং তদারকি দরকার।

বাংলায় মান্সম্পন্ন একাডেমিক বই দুষ্প্রাপ্য। একাডেমিক বই প্রকাশে বাংলা একাডেমির কোন খেয়ালই নেই। অথচ সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্টদের দিয়ে বই লিখিয়ে উনাদের লভধ অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে পরবর্তি প্রজন্মের জন্য রি-প্রডিউস করে যাওয়া, নাগরিকের সাথে সেসব বইয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়া বাংলা একাডেমির জন্য একটা দায়বদ্ধতার বিষয় হওয়া উচিৎ।

বাংলা একাডেমী সহ দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো আর শিক্ষানুরাগী অগ্রসর নাগরিকবৃন্দ প্রানের ভাষার উতকর্ষে নিবেদিত হবে এটাই প্রত্যাশা।



বাংলায় উচ্চ শিক্ষাদান প্রস্তুতির পরিকল্পনা নেয়াই বোধ করি অমর একুশের সত্যিকারের তাগাদা।
শহীদ মিনারের ফুলেল সৌন্দর্জকে ছাপিয়ে উঠুক বাংলা শিক্ষাদানের বুদ্ধি ব্রিত্তিক সৌন্দর্জ।

বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:০১
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×