somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুটপাত কারঃ একটি মাইক্রো ইকনোমিক বিশ্লেষণ!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হকার, নিন্ম ও মধ্য আয়ের ক্রেতা, পথচারী, চাঁদাবাজীর কর্মী ও ছিনতাই কারী, ফুটপাত দখলকারি স্থায়ী ব্যবসায়ী, মাফিয়া রাজনৈতিক চাঁদাবাজ এই ৬টি শ্রেণী শহুরে ফুটপাতের উপর অর্থনৈতিক ভাবে নির্ভরশীল।

ক। মাফিয়া রাজনৈতিক চাঁদাবাজঃ
ব্র্যাকের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে ঢাকার ফুটপাতে বছরে প্রায় ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়, যা দুই সিটি করপোরেশনের সম্মিলিত বাজেটের প্রায় সমান।

এমতাবস্থায় বরাদ্দ নবায়ন ও চাঁদা বর্ধনের নিমিত্তে সাময়িক ভাবে হকার মুক্ত করার প্রয়োজন রয়েছে।

সর্ব সময়ের ক্ষমতাসীন দলের শহুরে শীর্ষ নেতারা এক এক জন বড় চাঁদাবাজ, এদের অনেকেই মন্ত্রী পরিষদে থাকে।
গুলিস্তান এবং আশেপাশের বহু হকার্স মার্কেট যুগের পর যুগ নির্মিতব্যই থেকেছে, নির্মিত হলেও সেটা অব্যবহৃত-অবরাদ্দক্রিত থেকেছে মাফিয়াদের ইচ্ছায়।

তৈরি হওয়া স্বল্প সংখ্যক হকার্স মার্কেট কিছু রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্ট হকার নেতা কর্মী ব্যাতিরেকে সাধারণ হকার গণ পেয়েছে বা ঘুষ প্রদান ব্যতীত পেয়েছে বলে প্রমাণ নেই।

খ। চাঁদাবাজীর কর্মী ও ছিনতাই কারীঃ অতি সীমিত সংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী অতি বৃহৎ আর্থিক পরিসরের চাঁদা উত্তোলনে নিয়োজিত আছে। এত বিপুল পরিমাণ টার্ণ ওভারের এই অবৈধ চক্রে এত ক্ষুদ্র ম্যানপাওয়ার লাগার মূল রহস্য অস্ত্র নির্ভরতা।
রাতের অন্ধকারে কিংবা ভীড়ের মাঝে এরাই ছিনতাইকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়।

গ। ফুটপাত দখলকারি স্থায়ী ব্যবসায়ীঃ এদের ক্ষুদ্র অংশ হকার থেকে বিত্তবান হয়েছেন, অন্যরা রাজনৈতিক লোকেদের পশ্রয়ে ফুটপাতে স্থায়ী দোকান গেড়ে বসেছেন। মূলত এই অংশই অবৈধ ফুটপাত দখলকারী। এরা সামর্থবান ব্যবসায়ী যারা মার্কেটের দোকানে ব্যবসা করার সামর্থ রাখে।

ঘ। পথচারীঃ পথচারী বরাবরই ফুটপাথের নেগ্লেক্টেড ওউনার। উল্টো তাকে ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে সর্বস্ব খোয়াতে হয় মাঝে মাঝে উত্তম মধ্যমও তাঁর কপালে জোটে।

ঙ। নিন্ম ও মধ্য আয়ের ক্রেতাঃ ব্যাপক সংখ্যক ভাসমান ও বস্তিবাসী, বিস্তৃত গার্মেন্টস কর্মী সহ ঢাকা-চট্রগ্রাম ও অন্যান্য বড় বড় শহরের নিন্ম ও নিন্ম মধ্যবিত্ত নাগরিকের ক্রয় সক্ষমতা নির্ভর হয়ে গড়ে উঠে ফুটপাতের দোকানের সদাই ও পসরা।
যেহেতু এই বিশাল নাগরিকের বেইজ এই উচ্চ মূল্যের শহর গুলোতে বাঁচার মত মজুরি "লিভিং কষ্ট" পাননা তাই তাঁদের এই ভাসমান বাজার খুবই প্রয়োজন।
অন্যদিকে যেহেতু ভবন কেন্দ্রিক বাজারে ভাড়া-বিদ্যুত-পানি-গ্যাস-ব্যবস্থাপনা-ময়লা এবং চাঁদাবাজি সব মিলে অতিরিক্ত কষ্ট ইনভল্ড আছে তাই, ফুটপাথ বাজার একমাত্রিক চাঁদাবাজির পরেও কিছুটা কম দামে একই পণ্য বিক্রির সামর্থ্য রাখে। উল্লেখ্য উচ্চ তাপমাত্রা, রোদ বা বৃষ্টিতে পণ্যের গুনগত মান খারাপ হলেও এই সুবিশাল ক্রেতার বেইজ তা পরোয়া করার বিলাসিতা রাখেন না।

চ। হকারঃ
উপরের সকল শ্রেণীর অস্তিত্বের তাগিদ না থাকলেও শুধু এই অর্থনৈতিক প্রান্তিক শ্রেণী জীবিকার কারনে ফুটপাথের উপর নির্ভরশীল। এরা উত্তরাধিকার কিংবা বন্যা-সিডরে, নদী ভাঙ্গনে কিংবা কৃষির ফলন কিংবা ক্ষুদ্র ঋণের বিপর্যয়ে শহরে মাইগ্রেটেড হওয়া অংশ যাদের অতি সামান্য কিছু সহায় সম্বল থাকে বা নিজ আত্মীয় স্বজন থেকে কিছু ধার দেনা করে নিজের বাঁচার মত আর্থিক সামর্থ্য তৈরির জীবন সংগ্রাম করেন। ইনাদের মধ্যে যাদের পুঁজি একেবারেই কম তাঁরা কিছু সময় ফুটপাতে থাকেন, চাঁদার পরিমাণ কমাতে বাকি সময় মাথায় করে পণ্য ফেরি করেন। উল্লেখ্য, এই প্রান্তিক শ্রেণী গুলোর বাকি অংশ হয় ভিক্ষা করেন অথবা রাজনৈতিক দলের কর্মী হন বা চাঁদাবাজীর কর্মী হন। সুতরাং হকার হিসেবে ব্যর্থ হলে ইনারা পরবর্তী পথ ধরেন, এটা একটা অস্তিত্বের তাগিতও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া!

তাই কর্ম সংস্থানের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ফুটপাত হকারদের দরকার।


তবে এদের কেউ কেউ বিত্তবান হয়ে নিজেরাই দখলদার এবং নেতা হয়ে উঠেন যা আগেই আলোচনায় এসেছে।

এর বাইরেও একটি শ্রেণি ফুটপাত ব্যবহার করেন, সেটাকে আমরা বলি বড়লোকি শ্রেণী যারা খালি পাবার ভিত্তিতে ফুটপাতে, ফুটপাতের পাশের রাস্তার ১ম লেইন পুরো দখল করে তাদের গাড়ি পার্কিং করেন।


রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিক,
সে কি তেলার মাথায় তেল দিবে?
নাকি প্রান্তিক শ্রেণীর কর্ম সংস্থানে টেকসই কিছু করবে?
নাকি পথচারীর ফুটপাথ নিরাপত্তা সহ তাঁকে ফিরিয়ে দিবে?
নাকি নগরে নগরে নতুন নেতৃত্ব আসার প্রেক্ষাপটে-
বরাদ্দ নবায়ন ও চাঁদা বর্ধনের নিমিত্তে সাময়িক ভাবে হকার মুক্ত করে বৃহত্তর চাঁদাবাজির পটেনশিয়াল তৈরি করবে?



পুনশ্চ,
হকার পুনর্বাসন কঠিন কারন মানসম্মত, সম্মান জনক বিকল্প টেকসই কর্মসংস্থানের অভাব। এটা ব্যক্তির নিজস্ব কর্মসংস্থান কৌশল যাতে রাষ্ট্রের কোন সাপোর্ট নেই, বরং ক্ষমতায় থাকা দলের শোষণ আছে।

সাধারণ মার্কেট গুলোর উচ্চ ভাড়া ও ব্যবস্থাপনা ব্যয়, হকার মার্কেট গুলোর দোকানের প্যাসিভ কষ্ট গুলো (উচ্চ ভাড়া, চাঁদা) দূর করা গেলে সমস্যার কিছু সমাধান হয়। হকার মার্কেটের বরাদ্দ গুলো এমন করা যায় যাতে একটা নির্দিস্ট উচ্চমান টার্ণওভার আসলে এবং সেটা নির্দিস্ট সময় ব্যাপী থাকলে ব্যক্তি বরাদ্দপ্রাপ্তকে হকার মার্কেটের দোকান ছেড়ে দিতে হবে, ব্যক্তিগত দোকানকে বেসরকারি মার্কেটে স্থানান্তরিত হতে হবে নির্ধারিত সেইফ টাইম উইন্ডোর ভিতরে, তবে এই কাজ সঠিক মত না করতে পারলে এটা হয়রানি ও ঘুষের কারন হয়ে উঠবে। (এজন্য উচ্চ মনিটরিং, লোকাল পেমেন্ট গেইটওয়ে, ধীরে ধীরে ক্যাশ লেস লোকাল পেমেন্ট গেটওয়ে ভিত্তিক ব্যাংকিং ও মোবাইল লেনদেন এবং নির্দিস্ট বিজনেস একাউন্ট কেন্দ্রিক পেমেন্ট প্রসেস নিয়ন্ত্রন করতে হবে)।

যাদের পুনর্বাসন করার কথা ছিল অতীতে তারা প্রতারিত হয়েছেন আবার নতুন নতুন কর্মহীন মানুষ নতুন করে হকার হচ্ছেন। সুতারাং কর্মসংস্থানের টেকসই সমাধান ও জীবন মান -উপার্জনের তাৎপর্যপুর্ণ উন্নতি না আসলে হকারের মিছিল বাড়বেই।

জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, দেশীয় শিল্প উৎপাদন, নগর ও ব্যবসার বিকেন্দ্রীকরণ এবং ঢাকা কেন্দ্রিক প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ না করলে চুড়ান্ত সমাধান আসবে না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৪৬
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×