ঢাকা থেকে ৯০ কিমি দুরে আরেকটি বিভাগ হবে বলে সর্বশেষ একনেক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। গোমতী নদীর পাড়ে একটা বিভাগ হবে, খুব সুন্দর একটি নাম তার "ময়নামতি"। এটা হলে কুমিল্লা সহ কয়েকটি জেলা নিয়ে আরেকটি নতুন বিভাগ হবে, ২-১টি থানা-উপজেলা (যেমন-লাকসাম) জেলা হবার সম্ভাবনা বাড়বে, সব দফতরের অফিস হবে। বিভাগের নাম করে ফান্ড আসবে, কিছু উন্নয়ন কাজ হবে, শহর ডেভেলপ হবে। সরকারি বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিভাগ কেন্দ্রিক সুবিধা পাওয়া যাবে।
একটি বিভাগ তার প্রশাসনিক কাজ গুলো জেলা ওয়ারি করে থাকে। তবে নতুন বিভাগ নতুন কিছু অফিস করবে, লোক বল বাড়বে, নতুন কিছু লোক আমলাতান্ত্রিক সুবিধও (পড়ুন ঘুষ খাবার বন্দোবস্ত) পাবে।
এত সব প্রাপ্তির বাইরেও আমি ভাবছি ১। প্রাইম মিনিস্টারের অফিস থেকে চূড়ান্ত ক্ষমতা না সরলে, ২। স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন না হলে, ৩। জেলা পরিষদ কার্যকর না হলে, ৪। উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ এমপিদের রাহু গ্রাস মুক্ত না হলে- নতুন বিভাগ হয়ে নতুন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সৃষ্টির কি দরকার? শুধু কিছু ফাইল আগে যা ঢাকায় বা চট্রগ্রামে নিয়ে যেতে হত সেসব কুমিল্লায় সই করানো যাবে? কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত তো ঢাকায় অফিস করা এমপি'র কিংবা প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকেই আসবে, তাই না?
অন্যদিকে এমনিতেই সংকুচিত হয়ে পড়া কৃষি জমি আরো ব্যাপক আকারে একোয়ার কিংবা ভরাট হয়ে অফিস এবং অন্যান্য অনুতপাদনশীল খাতে যাবে। এই অঞ্চলের কৃষি জমির দাম বাড়বে যা আরো বেশি সংখ্যক কৃষককে অর্থনৈতিক প্রান্তিক করে তুলবে। কৃষি ভিত্তিক উৎপাদনের জমি অনুতপাদনশীল খাতে রূপান্তরিত হবে। উল্লেখ্য বাংলদেশের শীর্ষ স্থানীয় রেমিটেন্স আনয়নকারী জেলা কুমিল্লা, এই রেমিটেন্স এই অঞ্চলের জমির দাম আকাশ চূম্বী করেছে ও অনুতপাদনশীল খাতে রূপান্তরিত করতে নিয়ত ভূমিকা রাখছে একদিকে, অন্যদিকে ভূমি থেকে বেশি থেকে বেশি প্রান্তিক কৃষি নাগরিককে উচ্ছেদ করছে এবং একটি অসম অর্থনৈতিক বিভাজন তৈরি করছে। প্রান্তিক এবং নিন্ম মধ্যবিত্তের কৃষি ও আবাসন সমস্যাকে প্রকট করে তোলা এই সমস্যা বাংলাদেশের অন্য অনেক এলাকা থেকে কিছুটা ভিন্ন।
জনসংখ্যার অনুপাতিক হিসেবে রাষ্ট্র ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা সাজাতে চাইলে বাংলাদেশকে ফেডারেল সিস্টেমে (সেন্টার এবং প্রভিন্স) যাওয়া ভালো (ছোট দেশ, অমুকে তমুকে স্বাধীনতা চাইবে ইত্যাদি জড় এবং স্থূল আলোচনা। প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা হিউম্যান বেইজ নির্ভর, ভূমির পরিমাণ নির্ভর নয়)। বিকেন্দ্রীকরন করে প্রভিন্স বেইজড করলে প্রভিন্স গুলোর নিজস্ব বাজেট থাকবে, নিজস্ব ম্যাক্র এবং মাইক্রো অর্থনীতি থাকবে, উতপাদন ও কঞ্জাম্পশনের নিজস্ব হিসেব থাকবে, থাকবে প্রভিন্স এবং তার জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন ভিত্তিক গ্রোথ টার্গেট, প্রভিন্স এবং তার জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন ভিত্তিক কর্মসংস্থানের হিসেব এবং টার্গেট সেট ইত্যাদির ইত্যাদি থাকবে, থাকবে কর্মসংস্থান তৈরির চরম চাপ। অর্থাৎ পররাষ্ট্র এবং কূটনীতি বাদে রাস্টের অন্যান্য সমূদয় ব্যবস্থাপনা সেট আঞ্চলিক পর্যায়ে আসবে, এতে স্থানীয় গভরনেন্ট পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকশিত হবার সুযোগ আসবে। ব্যবস্থাপনা জ্ঞানের দিক একেবারে আন্ধা, লুলা, কিংবা বধিরের আঞ্চলিক প্রশাসনকে ডিঙ্গিয়ে আইন প্রণেতা নাম নিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় সংসদে গিয়ে "অন্ধের হাতি দর্শন" এবং এক নির্বোধ সিস্টেমে পড়ার সুযোগ কিংবা দুর্বিত্তায়িত সম্ভাবনা কমে আসবে। অর্থাৎ বিলুপ্ত হয়ে পড়া জবাবদিহিতা এবং আঞ্চলিক চাহিদা নির্ভর আর্থনীতি প্রাণ ফিরে পাবে।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সুবিধা, শিল্প, কৃষি ও মৎস্য সহ যাবতীয় উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সহ বহুবিধ নিজস্ব টার্গেট কিংবা টার্গেট সেট এবং বাজেট থাকার সুবিধা হচ্ছে এতে করে একের সাথে অন্যের প্রতিযোগীতা তৈরি হবে। অসাড় এবং জড় কেন্দ্রীয় সংসদ অতীত মুখী কুৎসা রটনা কেন্দ্রিক আলোচনা কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে প্রভিন্স ভিত্তিক নজরদারি, খবরদারি এবং কম্পারেটিভ স্ট্যাডী করে ক্রিয়েটিভ সময় পার করার সুযোগ পাবে। এতে স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন থাকবে যা স্থানীয়দের উপর কাজের প্রেসার বাড়াবে।
প্রভিন্স সিস্টেম কর প্রণোদনা দিয়ে নিজ অঞ্চলে বিজনেজ আনতে মরিয়া থাকে, এতে করে কৃষি-শিল্প-আবাসন খাতের জমি সমন্বিত রেখে প্রভিন্স তার শহর এবং শিল্প কেন্দ্র গড়ার নিজস্ব দায় নিবে। ফলশ্রুতিতে কর্মসংস্থান তৈরি হয়। ভূমি ব্যবস্থাপনা ভালো হবে।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক সিস্টেম সহজ ঘুষ ভিত্তিক কাঠামোয় তৈরি করা হয়েছে, সব আঞ্চলিক নিয়োগ (সরকারি - আধা সরকারি - স্বায়ত্ব শাসিত অফিস, স্কুল কলেজ ইত্যাদি) ও ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রীয় মনিটরিং এর নাম করে সেন্ট্রালাইজড করে মন্ত্রীদের ঘুষ নিবার পথ সুগম করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে একক নিয়ন্ত্রণের নাম করে শুধু একক পয়েন্টে দুর্নীতির ক্ষেত্রকে উর্বরতা দেয়া হয়েছে, এতে তদবির ভিত্তিক প্রশাসনিক আমলাতন্ত্র জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। এর চূড়ান্ত বিকেন্দ্রীকরণ দরকার। যাতে দেশে সরকার এবং কেন্দ্রের বাইরে স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানিক শাসন (আইনের শাসন) কাঠামো এবং তার চর্চা গড়ে উঠে।
অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ক্ষমতা হ্রাস করে, মন্ত্রী অতিমাত্রিক ক্ষমতা লোপ করে, স্থানীয় সরকারকে সুপারসিড করে গড়ে উঠা এম্পিদের ক্ষমতার চেক এন্ড ব্যালান্স রি-ডিফাইন করে, কেন্দ্রীয় সিস্টেমের সহজ ঘুষ-তদবির-দুর্নীতি ভিত্তিক কাঠামো ভেঙে, কারিগরি অটোমেশনে ঘুষ-তদবির-দুর্নীতি প্রতিরোধী সেবা প্রদানের ও পেমেন্ট আদান-প্রদানের সিস্টেম দাঁড়া করিয়ে কার্যকর,ফলপ্রসূ ও ইফিশিয়েন্ট প্রশাসনিক ব্যবস্থা দাঁড়া করান। নতুন করে প্রশাসনিক সিস্টেম ডেভেলপ করুন। রাষ্ট্রের খরচের লাগাম এবং সীমাহীন অবারিত দুর্নীতির টুঁটি চেপে ধরুন।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং প্রতিষ্ঠান ডেভেলপ না করে, ব্যক্তি নেতার বা মন্ত্রীর বা অঞ্চলিক নেতাদের সমষ্টিগত প্রভাব কায়েমে বর্তমানের অকার্যকর মডেলে নবম কিংবা দশম বিভাগ আদতে নাগরিক সমস্যা সমাধান করবে না, করবেনা উৎপাদন কিংবা কর্মসংস্থানের নতুন যোগ। এতে শুধু বাড়বে কিছু লোকের ভোগের যোগ।
আমলাতান্ত্রিক দুর্বিত্তায়ন নিপাত যাক।
রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়ন নিপাত যাক।
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার প্রাণ ফিরে পাক।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:২৭