রমজানের ভোরে সেহরির আগের ঘুম ভাঙা পাখীদের ডাক ইসলামী সংস্কৃতির একটি পালক। সমবেত দরদী কন্ঠে হামদ নাত গেয়ে ভোরের রমজানীয় আবহকে আধো ঘুম আধো জ্রাগ্রত আলসতার এক মধুর ঈমানী খোয়াবে ভরে তোলে। ঘুমের ঘোর আলস্য জড়ানো শেষ রাতের ইবাদতের ডাক মুত্তাকীর প্রত্যয়কেই শানিত করে।
আর রোজার শেষে, সেলামি নিতে এসে কিছু বেশি নিবার কাঁচুমাচুও আমার বেশ লাগে!
কথা হচ্ছে, কলিকালে এই মধুরতা মাইকের উচ্চ কর্কশ ধ্বনিতে বিলুপ্ত প্রায়। উচ্চ ভলিউমে সেট করা আনটিউন্ড নিন্ম মান মাইক্রোফোনে বহু লোকের গলা ফাটানো ওয়াজ, মনগড়া ডাক মনকে টানে না, বরং মাঝে মাঝে বেশ বিরক্তির উদ্রেক করে।
মধুর মুখর যে ধ্বনি,
মলিন শ্রুতিময় অর্থবহ যে আহ্বান!
তাকে কেন এত কর্কশ ভাবে উপস্থাপন করা?
মসজিদ ব্যবস্থাপনার ব্যক্তিরা মাইক্রো ফোন ও সাউন্ড সিস্টেমের শ্রুতি মধুর দিক গুলো জানেন না। ফলে এর অতি ব্যবহার দৃষ্টি কটু হয়ে আবির্ভুত হয়। ভলিউম টিউনার বারের "মধ্য থেকে সর্বোচ্চ" এই অর্ধেকে সেটা করা প্রায় সব সাধারণ মাইক্রোফোনই নয়েস তৈরি করে। তাই মসজিদের সাউন্ড সিস্টেমের ভলিউম ২৫% থেকে সর্বোচ্চ ৫০% এর মধ্যে সীমিত রাখা উচিৎ। প্রায় সব খানেই ভলিউম বার ১০০% এ সেটা করা থাকে।
মাসজিদে মাইকের অতি ব্যবহার আমাকে মাঝে মাঝে ভাবায়। বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির সর্বত্র স্বল্প জ্ঞানীকে মাইক ধরিয়ে দিবার বিপদ নগণ্য নয়। মসজিদে কিংবা বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে একে টেনে আনার বিপদ আরো বেশি। আল্লাহ্ ভীরুতা, মেধা ও আমলের বাইরেও ইমাম নিয়োগে একটা স্টান্ডার্ড চেক লিস্ট থাকা চাই যা মুড অফ কমিউনিকেশন এর যথার্থতা নিশ্চিত করবে। ইমামের এর পূর্ব শর্ত হওয়া উচিৎ এলেম এর গভীরতা, তাকওয়া ও আমল, কমিউনিকেশন ট্রেনিং ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে আসতে পারে। ইমামের বক্তব্য দেয়ার পদ্ধতি হোক লিখিত, বিষয়ভিত্তিক, অপরাধ প্রবণ সমাজের সমস্যা কেন্দ্রিক। সুমধুর হলে সেটা শুধু একটা প্লাস! ধীমান ও জ্ঞানী লোকে অপ্রাসঙ্গিক আলতু ফালতু কথা বলেন না, বরং নিন্ম স্বরে কাজের কথা বলেন।
গলা ফাটানোর যে ঝোঁক তা কাউকে টানছে না আসলে, জুমার খুৎবা এবং নামাজ শেষে মাইকে এর ওর নাম হাকানো দোয়ার (পশ্চাৎ এ হাদিয়া আয়ের বাণিজ্য) যে কালচার তৈরি হয়েছে, তার অবসান দরকার। কিছু কিছু ঈমাম দোয়ার সময় এমন চিৎকার চেঁচামিচি শুরু করেন যেন তিনি যুদ্ধ জয় করবেন। অথচ এটা দোয়ার আদবই নয়। আমরা বোধ করি এটা নিজেকে জাহির করে পশ্চাৎ এ অর্থ হাদিয়া পাওয়ার কুকৌশল।
খুৎবায় বিষয় ভিত্তিক লিখিত বক্তব্য দিবার দাবী তোলা দরকার সব মসজিদে, তাইলে গলাবাজি, অনির্ধারিত ও অপ্রাসঙ্গিক গল্প ভিত্তিক ওয়াজের লাগাম ও ট্রেন্ড বন্ধ হবে। এগুলা ইসলামী সংস্কৃতিকে ভুল দিকে নিচ্ছে, আর ক্ষতি করছে মসজিদে নামাজের পরিবেশকে। কিছু মসজিদ ফরজ নামাজের আগে ও পরে স্রেফ টাকা তোলার স্থান হয়ে উঠে।
"'আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর, তোমার আওয়াজ নীচু কর; নিশ্চয়ই স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা শ্রুতিকটু।" সুরা লুকমান, আয়াত-৩১। ৩১-১৯। আল কুর'আন।
সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৮ রাত ১:০৮