somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রেফতারের পর নিজামী - পর্ব ৩

২১ শে মে, ২০০৮ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ এই গল্পের কাহিনী ও চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। পাঠকের বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে সাদৃশ্য থাকলে তা নিতান্ত কাকতালীয়। কেউ মাইনাস দিলে দয়া করে বলে যাবেন গল্পের কোন ব্যাপারটা খারাপ লেগেছে। নিজের নিকে বলতে লজ্জা পেলে অতিথি হিসেবে বলে যাবেন। ]

পর্ব ১ | পর্ব ২

অপরিচিত কোন জায়গায় এসেই যদি নিজের নামের সাথে অপমানজনক প্রত্যয়যুক্ত কোন সম্বোধন পেতে হয়, তাতে কার না খারাপ লাগে! নিজামীরও লাগল। শুধু তাই না, বেশ বিরক্তও হল। নাহ! দেশের মানুষগুলো আর মানুষ হল না। গুণীজনকে, সম্মানিত লোককে কিভাবে সম্মান দিতে হয়, তার সাথে ব্যবহার কিভাবে করতে হয়, এসব এখনো এদেশের কুশিক্ষিত লোকের শেখা হয় নাই। রবীন্দ্রনাথ মানুষ করার ব্যাপারে কি যেন বলেছিলেন? ধুর! ওই হিন্দু বুইড়াটার কথা মনে পড়ল এই সময়!

মনসুর কাকার দিকে শীতল দৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল নিজামী। চোখের ভাষায় সমবয়সী এই লোকটাকে বুঝিয়ে দেয়া – খবরদার! বুঝে শুনে কথা বলো! মনসুর কাকার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি বড়ো বড়ো চোখে তাকিয়ে আছেন নিজামীর দিকে।

রুমের অপর সদস্য সবুজ মজা পাচ্ছে এদের দুজনের কান্ড দেখে। দুই বুড়া এখনি আবার ঝগড়া লাগিয়ে না দেয়। নিজামীর টুপিটা সবুজের পছন্দ হয়েছে। একটু ভিন্ন ধরনের টুপি। আগেও দেখেছে অবশ্য। এই টুপিগুলোর একটা বিশেষ নাম আছে। কি যেন নামটা? মনে আসছে না।

নাহ! শেষ পর্যন্ত খারাপ কিছু হয় নি। নিজামী নিজের বেড এ বসে পড়ে। বড্ড ক্লান্ত। গত রাতে থানায় ছিল। ঠিকমত ঘুম হয়নি। শেষ বয়সে রাত জাগা শরীরে সহ্য হয় না।

রুমের নতুন বাসিন্দাকে অবশ্য সবুজের চেনাচেনা লাগছে। “চেনা চেনা লাগে, তবু অচেনা। ভালবাসো যদি, কাছে এসো না।” বুড়া মানুষ কাছে এসে কি লাভ? যে আসার কথা ছিল, সেই তো আসলো না। উফ! পুরনো প্রেমিকার কথা আবার মনে পড়ে গেল। প্রায়ই তো দুজন মিলে গানটা গাইতো। সবুজ তো কাছেই এসেছিলো, কিন্তু ততদিনে প্রেমিকা যে আরো দূরে সরে গেছে! সবুজের আবার মনখারাপ হয়ে যায়। সে মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

হঠাৎ বোট্‌কা দুর্গন্ধে সবুজের হুঁশ ফিরে আসে। ব্যাপার কি? আশেপাশে তাকিয়ে আবিষ্কার করে, পাশের বেডে নিজামী গায়ের পাঞ্জাবী খুলে বসে আছে। ঘামের দুর্গন্ধের উৎস ওইখানেই। সবুজ বিরক্ত হয়। তারপরও মুখে কিছু বলে না। বুঝতে পারে গত ২৪ ঘন্টায় নানান ঝামেলায় বেচারার গোসল হয়নি। এই দাড়িওয়ালা সূফি চেহারার মানুষটার ঘটনা কি? কৌতূহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলে,
- আপনার নাম কি?
- নিজামী। তোমার নাম কি?
- আমার নাম সবুজ। আমি খানিকটা অবুঝ। হেহেহেহে। আপনি কি করেন?
- আমি একজন ইসলামী রাজনীতিবিদ। নিজামী ক্ষীণ কন্ঠে জবাব দেয়। নাম নিয়ে যুবকের চটুল রসিকতায় খানিকটা বিরক্ত।
- ও আচ্ছা।

নিজামীর জবাবে সবুজের মনে নতুন প্রশ্নের জন্ম হয় যা তাকে পুরনো প্রেমিকার ভাবনা থেকে কিছু সময়ের জন্য হলেও দূরে সরিয়ে রাখে। সে ভাবতে থাকে রাজনীতিবিদের শ্রেণীবিভাগে ইসলামী রাজনীতিবিদদের স্থান আসলে কোথায়? কিন্তু আমাদের গল্পের সহজ সরল ভোদাই ছেলে ভেবে কোন কূল পায় না। অবশেষে জিজ্ঞেস করে ইসলামী রাজনীতিবিদ নিজামীকে,
- আচ্ছা, আপনি হইলেন ইসলামী রাজনীতিবিদ। তাইলে অন্য যারা রাজনীতিবিদ আছেন, তারা কি অনৈসলামিক রাজনীতিবিদ?
- জানি না!

নিজামী যারপরনাই বিরক্ত! অসহ্য! কখন যে তাকে ডিভিশন দেওয়া হবে? একটু আরামে থাকা হবে! এই উঠতি বয়সের পোলাপানের উৎপাত এই শেষ বয়সে সহ্য করতে হচ্ছে!

অন্যদিকে আমাদের মনসুর কাকার ঘোর তখনো কাটে নি। তিনি তার সমস্ত বিস্ময় নিয়ে একটা মানুষের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। বিস্ময়-বিহীন বিগত বছরগুলোর নিস্তরঙ্গ জীবন বুঝি শেষ! তাঁর মাথায় এখন রীতিমত ঝড়! একি ব্যাপার! একি অবাক করা ব্যাপার!

রুমে নীরবতার তুমুল উৎসব। হঠাৎ সেই উৎসবে মনসুর কাকার উত্তেজিত কন্ঠ বড্ড বেসুরো হয়ে বেজে উঠে, “মইত্যা !!! তোরে আমি পাইছি!”

পর্ব ৪
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০০৮ রাত ৮:১৬
১৮টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×