১৯৭১ খৃঃ সালে এ্যবোটাবাদ পাবলিক স্কুলে আমি অধ্যয়নরত। ক্লাশ হবে নবম নিশ্চয়ই। ২৫ শে মার্চ ইয়াহইয়া খানের ভাষন শোনার জন্য এই বোর্ডিং স্কুলে সময় দেয়া হয়েছিল, আমার যাওয়া হয়নি রুমেই সম্ভবত পড়ছিলাম। সাদা কালো টিভি হলের কমনরুমে থাকত। শীত কালে রাতে আমাদের "প্রেপ টাইম" ছিল রাত সাতটা থেকে ন টা আর গৃষ্ম(গ্রীষ্ম) কালে ঐ "প্রেপ টাইম" রাত আটটা থেকে ন টা। আমার সিনিয়র রুমমেট ও রুম"পৃফেক্ট" (ভাল কৃকেট খেলোয়ার, শেখ ইউনুস ভাষন শুনে এসে উর্দুতেই (যদিও ইংরেজিতেই কথোপকোথনের আমাদের নিয়ম) আমাকেই বললো, " দেখ্ না আব সব্ কুছ্ ঠিক হো জায়েগা, দো চার গোলি চলেগি, উস্সে সব্ ঠিক হোতা হ্যয়।" আমি আমার ঘরোয়া কথাবার্তার রিয়েকশান অনুযায়ী বললাম, " গোলি সে সব্ কুছ্ ঠিক নেহি হোতা হ্যয়।" বোর্ডিং স্কুলের পরিবেশের কারনে কথোপকোথন এর বেশি এগোয়নি।
ঐ সময়ে প্রায় সব বাঙ্গালী মনে প্রানে আওয়ামী লীগ করতেন। আর আমার মা ও মেজ বোন তো শেখ মুজিবের একনিষ্ঠ সমর্থক। বাবা যেহেতু সরকারী চাকুরে সবসময়ই বলতেন তাদের কোন পক্ষ নেই। মুজাফ্ফরাবাদের সামরিক হাসপাতালে বাবার চাকুরী ছিল। (এই মুজাফ্ফরাবাদ শুনেছি ভুমিকম্পের কারনে গুড়িয়ে গেছে।) মেঝ বোনতো আওয়ামী লীগ জেতার পর তাদের প্রকাশিতব্য পত্রিকা "স্বরাজ" এর গ্রাহক হওয়ার জন্য ডাক যোগে পত্রিকার অর্থ পাঠিয়েই দিলেন। ওটা হয়তো আর প্রকাশিত হয় নি।
জুন ১৯৭১; ঐ মাসে বাসে করে মুজাফ্ফরাবাদ আসি গৃষ্মের চুটি কাটানোর জন্য। লম্বা ছুটি। মনে পরে দেড় মাসের ছুটি। হিমালয়ের পাহাড়ের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা খাড়া পাহাড়ি সড়ক। পাচশ কি হাজার ফিট নিচে কোথাও খরস্রোতা নিলাম ও ঝেলাম নদি আর কোথাও গভীর খাদ। দূর্ঘটনা ক্রমে পতিত হলে কোন রক্ষা নেই, একে বারে সৃষ্টিকর্তার নিকট। ছুটিতে আমার এক অর্ধ বৃটিশ কাজিন ও তার ছুটি কাটাতে আসল। ওর বাবা ড্যভিড পাওয়ার এবং মা জহরত আরা ("মুখ ও মুখোশের" অভিনেত্রী)। মুজাফ্ফরাবাদে মাঝে মাঝে আমরা দুজন বাইরে খেলতে যেতাম। তখন মাঝে মধ্যে শুনতাম "গাদ্দার, গাদ্দার" করে কিছু ছোট ছোট ছেলেরা আমাদের উদ্দেশ্য করেই ডাকছে। প্রথম ঐ উর্দু শব্দটির মানে আমার জানা ছিল না। পরে যখন জানলাম, ঐ শুনলে গা জ্বলতে থাকলেও কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারতাম না। বাবার বারন ছিল তাদেরকে বলতে দাও, তোমরা চুপ করে থাকবে।
যেহেতু আজাদ কাশ্মিরে আমরা ছিলাম, পাঞ্জাবীদের সরাসরি রোষানলে পরতে হয়নি। অধিকাংশ কাশ্মিরি ও পাঠানরা আমাদের প্রতি এবং আমাদের সংগ্রামের প্রতি বেশ সহানুভুতিশীল ছিলেন। এক পাঠান সামরিক অফিসার আমার বাবার প্রতি পাকিস্তান ত্যাগ করার দিন পর্যন্ত সাহায্য করে গেছেন।
ইউটিউবে মুজাফ্ফরাবাদ
১৯৭০ থেকে ১৯৯০; আরও উপস্থাপন করার ইচ্ছা রইল।
ছবিগুলো ইন্টারনেটের
সাল ১৯৭১ খৃঃ এ্যবোটাবাদ থেকে মুজাফ্ফরাবাদ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।
ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।