১৯৭১ সালের সম্ভবত মাঝামাঝি হবে। মুজাফফরাবাদ থেকে রাওয়ালপিন্ডি যাবার পথে কিছুটা পথ বাসে যেতে হয়েছিল। প্রাথমিক পথ মুজাফফরাবাদ থেকে মারী, পরের পথ মারী থেকে রাওয়ালপিন্ডি। মুজাফফরাবাদ যেমন পাহাড়ী শহর, তেমনি মারীও পাহাড়ী শহর। পার্থক্য মারী রাওয়ালপিন্ডি তথা পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাদের সন্নিকটে (৩০ মাইল হওয়ার কথা) এবং রাওয়ালপিন্ডি থেকে ৪০ মাইল।
অন্যদিকে মুজাফফরাবাদ মারী থেকে আরও ৩০/৩৫ মাইল দূরে, পাকিস্তানের কাশ্মীর অংশে। যেটাকে আযাদ কাশ্মীরের রাজধানী বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে, কিন্তু প্রায় সব কিছুর জন্য কাশ্মীরের এই অংশ পাকিস্তানের মূল ভূখন্ড তথা পাঞ্জাবের ওপর নির্ভরশীল। মুজাফ্ফরাবাদ সমুদ্র পীঠ থেকে গড়ে ৪,৫০০ ফিট উচ্চতায়। আর মারী গড়ে ৭০০০ ফিট উচ্চতায়।
মুজাফ্ফরাবাদ থেকে গাড়ী মারীতে আসার পথে মাইল দশেক পর থেকে আঁকা বাঁকা পাহাড়ী পথে শুধু ওপরের দিকে উঠতে থাকে। গাড়ী যন্ত্র যদি ভাল থাকে, তা'লে এই চড়াই সে অতিক্রম করতে পারলেও খুব কম সময়ের জন্য ফোর্থ গিয়ারে চলতে পারত। অধিকাংশ সময়ে জীপ হোক বা কার হোক ঐ বাহনকে দ্বিতীয় বা তৃতীয় গিয়ারের আশ্রয়েই থাকতে হোত।
এই আঁকা বাঁকা পাহাড়ী পথে ডাউন হিল ড্রাইভ তথা নামতে চলার সময়ও ফোর্থ গিয়ার দিয়ে গাড়ী চালানো নিরাপদ নয় বিধায় পাহাড়ী পথে নামতে ও দ্বিতীয় বা তৃতীয় গিয়ারকেই ভরসা করতে হোত।
১৯৭১ সালের এই গৃষ্ম(গ্রীষ্ম) কালে বদলীকৃত এক সেকেন্ড লেফটেনান্টকে মারীতে ছাড়ার জন্য বাবা আমাকে তার সাথে যেতে অনুমতি দিলেন। ঐ সেকেন্ড লেফটেনান্ট ভদ্রলোকের নাম আমার এই মূহুর্তে মনে নেই। সংগে একজন বাংগালী সেকেন্ড লেফটেনান্ট ও সংগে এসেছিলেন। নিয়েছিলেন রাশান জীপ ও তার মধ্যে বদলীকৃত সেকেন্ড লেফটেনান্ট তার মটর সাইকেলটি নিলেন। ওটাকে সবুজ তারপলিন দিয়ে ঢেকে রাখলেন। প্রতমে মটর সাইকেল ঢেকে রাখলেন কেন না বুঝলে ও মিলিটারী এম পি গেটে সহজেই বুঝতে পারলাম। পরিচয় পর্ব শেষে যখন জিজ্ঞেস করলো তারপল দিয়ে কি ঢাকা। নিঃসংকোচে ঐ সেকেন্ড লেফটেনান্ট বললো মেশিন গান। এম পি আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না। পরে দুই সেকেন্ড লেফটেনান্টদ্বয়ের কথোপকোথনের মাধ্যমে জানতে পারলাম, মটর সাইকেল যেহেতু তার নিজস্ব ওটার কথা বললে মিলিটারী বাহনে ওটা হয়তো নেয়া যেত না।
যেহেতু ১৯৭১ সাল, যতদূর মনে পরে দুই সেকেন্ড লেফটেনান্টই রাজনৈতিক আলাপ থেকে বিরত থাকছিলেন। কোর্সমেটদের নিয়েই তাদের আলোচনা যতটুকু সম্ভব চলছিল। দু ঘন্টা পরে মারীর গৃষ্মকালীন শীতল আবহাওয়ায় আমরা প্রবেশ করি। আর্মি মেসে খাওয়া দাওয়ার পর আমাকে রাওয়ালপিন্ডি গামী বাসে তুলে দেয়া হোল। একদিন রাওয়ালপিন্ডিতে বাবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন পাঞ্জাবী বন্ধুর বাসায় থেকে আবার মুজাফফরাবাদে ফেরত যাব।
এই যাত্রা পথেই আমাকে আবার সহযাত্রীর কাছ থেকে "বাঙ্গালী লোক সব গাদ্দার হ্যয়", "পাকিস্তান কো তোড়না চাহতে হ্যঁয়", " যো লীডার পাকিস্তানকো তোড় না চাহতে হ্যঁয়, "উসকি সাজা মউত হোনা চাহিয়ে"। আমার চেহারা তার কাছে বাঙ্গালী মনে হয়েছিল কি না, জানি না। গা জ্বলতে থাকলেও, বাবার উপদেশ অনুসারে পুরো সময়ে চুপ করে ছিলাম। সুতরাং সহযাত্রীটি আর বেশিক্ষন কথা বলে নি।
ছবিগুলো মারীর(রাজধানী শহরের গৃষ্মকালীন অবকাশ শহর) ইন্টারনেট থেকে নেয়া।
আলোচিত ব্লগ
চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।
ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন
=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।
আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।