somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরুনাচল প্রদেশ নিয়ে চীন - ভারত স্নায়ুযুদ্ধ!! পর্ব – ৮

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চীন-ভারত স্নায়ুযুদ্ধ!!! পর্ব - ৭

চীন-ভারত রাজনীতি
১৯৫৫ সালে যে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়; তার নেতৃত্বে ছিলেন চীনের মাও সেতুং, চৌ এন লাই ও ভারতের জওহরলাল নেহেরু। যার কারনে এই দুই বৃহৎ দেশের সম্পর্ক আান্তরিক হবার পথেই ছিল।
ঐতিহাসিকভাবেই চীন-ভারত সুসম্পর্ক বানিজ্যের কারনে বহু শত বছরের ক্রমবিস্তার বলে সকলেই মনে করবেন।

প্রধানতঃ শীতের চাদরে আবৃত পাহাড়ের অঞ্চলের জনগন কেন পাহাড়ে থাকতে পছন্দ করেন, আর সমতল ভূমিতে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ অঞ্চলের জনগন কেনই বা সমতলে বাস করেন, সেটা ভিন্ন বিষয়। একে অন্যের চাহিদার কারনেই ব্যবসা - বানিজ্য শুরু হয়ে বিস্তার ঘটে।

কিন্তু চীন-ভারত সুসম্পর্কে চিড় ধরা শুরু করে যখন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় গুরু দালাইলামাকে আশ্রয় দেয় ভারত। চীন অনুরোধ করে দালাইলামাকে ফেরত পাঠাতে। ভারত সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা চীন ক্ষুব্ধ হয়।

ঠিক এই কারনেই ১৯৬২ সালের চীন ভারত যুদ্ধ হয়েছে বলে আমার মনে হয় না, আাগেই উল্লেখ করেছি। কিন্তু যে পরিমান এলাকা চীন দখল করে নেয় (লাদাখ ও অরুনাচলে) হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের তেতাল্লিশ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা; অরুনাচল ও হিমালয় পর্বতমালার অংশ বলে অভিহিত করা হয়।

১৯৬৭ সালে দেখা দেয়া সিকিম দ্বন্দ্ব চীন ভাল চোখে দেখেনি বলে মনে করা হচ্ছে, সেই একই কারনে সিকিমকে ভারতের অংগ রাজ্যে পরিনত করাকেও চীন ভাল ভাবে নেয় নি বলেই অনুমিত।

অরুনাচল প্রদেশ ১৯৮৭ এবং অতঃপর
দুই দেশের সম্পর্কের আরও উন্নতি এবং অবনতি প্রায় দুটোই চলতে থাকে সমান তালে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেংগে যাবার পর ও দুই জার্মানী একিভুত হবার কারনে মিডিয়া সকল স্নায়ুযুদ্ধ শেষ হবার মানসিকতা নিয়ে রিপোর্ট করছিল। সেই কারনে অরনাচল প্রদেশের সীমান্তে উভয় দেশের সামরিক স্থাপনা ক্রমাগত ভাবে বেড়ে চললেও তা বিষদভাবে খবরের কাগজে আসেনি। নিচের সাইটে গেলে তা অনুধাবন করা যাবে।
চীন-ভারত সীমান্ত সংঘাত

এই সাইটের প্রতিবেদনটির কিছু অংশ অনুবাদ করা হল---

“এটি ১৯৮৭ সালের প্রথম দিকে লক্ষ করা যায়, সীমান্ত এলাকায় উভয় পক্ষের বড় মাপের সেনাদল প্রসারনের রিপোর্ট বা খবার এবং সীমান্ত এলাকা উপর একটি সম্ভাব্য সামরিক সংঘর্ষ সম্পর্কে গভীর উদ্বেগের আলোকে অনুসরণ করা হয়েছে।

ফেব্রুয়ারী ১৯৮৭ সালে, ভারত দক্ষিণ ম্যাকমাহন রেখা, যা চীন " অবৈধভাবে " ভারত দখল করে রেখেছে মনে করে। চীন জানাতে থাকে "তথাকথিত" অরুণাচল প্রদেশ স্বীকার করে না এবং এই অঞ্চলটি চীনের তা নিয়ে চীনা মিডিয়াতে অনেক অনুষ্ঠান, জাঁকজমকপূর্ণ বিবৃতি প্রকাশ করে। আর অন্য দিকে ভারত চীনের এই দাবি স্বীকার করেনা, সেই কারনে দুই দেশে মাঝে উত্তেজনা ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে।
যার কারনে চীন সবসময় তিব্বতে একটি বৃহৎ সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখে বৃদ্ধি করে চলেছে। ভারী কামান ও হেলিকপ্টার সহ প্রথম দিকে ১৯৮৭ সালে Lanzhou ও চেংদুর মধ্যে চীন "53rd আর্মি কোর এবং 13 আর্মি" থেকে ২০,০০০ সৈন্য মধ্যে সরিয়ে এই এলাকায় পদস্থাপন করে। ভারতও কয়েক ব্যটালিয়ন সৈন্য অরুনাচল অঞ্চলে এয়ালিফ্ট করে ১৯৮৭ সালে অর্থাৎ প্রায় একই সময়ে। ভারত বিশাল বিমান বাহিনীর কয়েক স্কয়াড্রন ও এখানে মোতায়েন করে। ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা এই এলাকায়া না থাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী শুধুমাত্র বিমান এর দ্বারা এই স্থানান্তর কাজটি করতে বাধ্য হয়। দুই দেশের সামরিক মোতায়েন এই এলাকায় প্রায় ৪,০০,০০০ সৈন্যের কাছাকছি চলে গিয়েছিল বলে ধারনা করা হয়।

এই বার ভারত তার প্রস্তুতি অনেক ব্যপকভাবে করেছিল বলে অনুমান করা হয়। কারন তার স্থলবাহিনী পুরোপুরি উড়োবাহিনীর দ্বারা সমর্থিত হতে পুরোটাই প্রস্তুত ছিল। এতদ সত্যেও ১৯৮৬ সাল থেকে কোনো প্রধান বিঘ্ন ঐ এলাকায় হয় নি, বরং চীন-ভারতীয় সীমান্ত ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক একটি উদাহরণ তৈরি সৃষ্টি করতে পরেছে বলে মনে করা হোত।

ডিসেম্বর ১৯৮৮ সালে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী চীন সফর করেন। দু 'দেশের প্রধানমন্ত্রীর "পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সমঝোতা " এর পথনির্দেশক নীতি মাধ্যমে সীমানা প্রশ্ন স্থায়ীভাবে আলোচলনা করতে উভয় পক্ষে সম্মত হয়।

চুক্তি এছাড়াও সীমানা প্রশ্নের পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান জন্য সচেষ্ট , যখন দু 'দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে তাদের সম্পর্কের বিকাশ ও বায়ুমণ্ডল এবং সীমানা প্রশ্নের নিষ্পত্তির সহায়ক শর্ত তৈরি করার প্রচেষ্টা করা উচিত পৌঁছেছেন। দুই পক্ষের উপ পররাষ্ট্র মন্ত্রী পর্যায়ের পর্যায়ে সীমা প্রশ্নের একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্ল্যুজি) গঠনের স্থাপন করতে সম্মত হয়।

ভারত - চীন সীমান্ত এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর শান্তি এবং শান্তি রক্ষণাবেক্ষণ নেভিগেশন একটি চুক্তি ৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ নেভিগেশন স্বাক্ষরিত হয়। সীমান্তে উত্তেজনা ও অচলাবস্থা অধিক ত্রিশ বছর পরে, উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ভারত এবং চীন এর প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪ সালে নয়া দিল্লি " আস্থা প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা " লালনপালন শুরু করে এবং ভাল সম্পর্ক একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়। নভেম্বর ১৯৯৫ সালে, দুই পক্ষই সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি আরো স্থিতিশীল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখে, যার ফলে Wangdong এলাকায় সীমান্তরেখা বরাবর একে অপরের কাছাকাছি গার্ড পোস্টের ইতি টানে। নভেম্বর ১৯৯৬ সালের শেষে ভারতে চীনা প্রেসিডেন্ট Jiang Zemin এর সফরকালে, চীন ও ভারত সরকারের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও পদক্ষেপ রচিত হয়। চীন ও ভারত সীমান্ত এলাকায় “কনফিডেন্স বিল্ডিং ব্যবস্থা” বাস্তবায়নে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর মাঠ পর্যায়ে সামরিক অধিনায়ক বা কর্মকর্তা পর্যায়ে সীমান্ত বিষয়ক সমস্যা সমাধা করনে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন দু 'দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসের বপনের জন্য। এই চুক্তি সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি এবং শান্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ভিত্তি গড়ে তোলে।
কিন্তু দুই পক্ষেই নানা আলাপ ও অঘোষিত আলোচনার মাঝে তাদের আগের অবস্থান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেছেন।
…................................................................................... (চলবে, শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×