somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাড়ি ও অপ্সরা

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডিবেটে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বড় কথা নয়, এই যে এত এত মানুষ আমায় সম্মান করে কংগ্রাট্‌স করছে এটাই আমার জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল । ওটা ছিল একটা ইংলিশ ডিবেট প্রতিযোগিতা তাই অমন সমাদর জুটেছিল কপালে । কয়েকজন মেয়েও আমাকে বলেছিল, ভাইয়া, আপনার পারফরম্যান্স বেশ দেখার মত ছিল । এর মধ্যে অনেক বড় আপুও ছিল । অনেকের শিক্ষক প্লাস সহপাঠীও হয়ে গেলাম নিমিষেই । একদিন সন্ধ্যায়, আঁধার নেমেছে, রাস্তায় গাড়ির হর্ণগুলো উল্লাস শুরু করে দিয়েছে নীড়ে ফেরা যাত্রীগুলোকে টানতে টানতে টানতে । কোচিং এর ক্লাস থেকে বের হব এমন সময় একজন সমবয়সী অপরুপা মানবী সামনা সামনি দাঁড়িয়ে বলল, কেমন আছেন ভাইয়া ? কিছুটা সংকোচের সাথেই বললাম ভালো আছি । এবার সে আরেকটু আগালো, সেদিন আপনার ডিবেট শুনলাম, অনেক ভালো বলেছেন কিন্তু । অনেক থ্যাংক্‌স ! এরপর কথা চালাচালি এবং সেও একসময় আবদার করলো যে তাকে ইংরেজী স্পোকেন শেখাতে হবে এবং কিছু মনে না করলে শুধু এই কারণেই আমার মোবাইল নাম্বারটি তার মোবাইলে ঠাই পাওয়া দরকার । দিলাম, কৃপণতা নাইবা করলাম এমন একটা রুচিশীলা আধুনিকতা সম্পন্ন মেয়ের সঙ্গে । প্রায় সপ্তাহ খানেক তার কোন যোগাযোগ নেই ; আর আমিও প্রায় ভুলতে বসেছি তার কথা এমন একদিন সন্ধ্যারাতে তার ফোন আসলো । শুরু হল স্পোকেন কোর্স ।
যা কিছু হল তা ধীরে ধীরে ইংরেজি ভাষার গণ্ডি পেরিয়ে বাংলা ভাষায় দিনকে দিন মধুর থেকে মধুরতর হতে লাগলো । কেননা, প্রথম প্রথম দু এক লাইন ইংলিশ বললেও কিছুক্ষণ পরে বলত, চলেন না অন্য কিছু গল্প করি । আমি এপাশ থেকে তখন উদ্ভ্রান্তের মত মাথা চুলকাই আর বলি, হুম । সারাদিন কী কী করেন ? ক্লাস করি, টিউশনি, সন্ধ্যায় আইইএল্টিএসে কোচিং... ইত্যাদি । কী কী করতে ভালোবাসেন ? আমি ক্রমাগত ভালো ভালো কথা সাজিয়ে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি । একদিন দুম করে বলে ফেলল, কোন মেয়েকে কি ভালোবাসেন ? তাতেই আমার প্রথম নেতিবাচক উত্তর এল – না, বাসিনা । আমিও পাল্টা প্রশ্ন করলাম, আপনি ? ওরে বাবা, আমি ? যদি কোনদিন কিছু করি আমার ভাইয়া আমাকে মেরেই ফেলবে । আমাদের পরিবার একটু বেশী রক্ষণশীল । উত্তরটা আমার কেমন জানি একটু গরমিল লাগলো । যে মেয়েটা চুল খোলা রেখে, জিন্স পরে, টপ্‌স গায়ে দিয়ে রোজ ছেলেদের সাথে ক্লাস করে, বাইরে ঘোরাফিরা করে তার পরিবার রক্ষণশীল – ধান্ধা লাগে আমার । কিন্তু মাঝে মাঝে আবার সালোয়ার কামিজে চমৎকার সুন্দরী সেজেও আসতো । কী অপূর্ব লাগতো তখন । একটা শুভ্র কোমল কাশফুল যেন সে তখন । তার কথার মত তার চাহনিতেও তখন রাজ্যের যাদু ভর করতো । একটু আহ্লাদি, আবার সময় সচেতন এবং দায়িত্বপরায়ন । দেখতাম , কোচিং এর অন্য ছেলেরা তার কাছে ভিড়ার চেষ্টা করতো, মোবাইল নাম্বার চাইতো । কৌশলে এড়িয়ে যেত । সকল ভালোর মধ্যেও এক্সট্রা আধুনিকতা আনার কাছে অসহ্যই লাগতো । সে কারণেই সে যখন বলল, আমরা কি ভালো বন্ধু হতে পারিনা ? আমি যেন একটু সাহস পেলাম । রুপসী কন্যা বন্ধু হয়ে থাকলেই ভালো, অন্য কিছু নয় ।

মাস খানেক পরে কোচিং এ ক্লাস শেষ করে দু জনে বাইরের একটা বেঞ্চিতে বসে গল্পে মত্ত । সে হঠাৎ মোবাইলটা বের করে বলল, আসুন, আমার গতবছরের জন্মদিনে ওঠানো কিছু ছবি আপনাকে দেখাই ।
দেখান না !
টাচ স্ক্রীনে প্রথম যে ছবিটা এল তা আমার হৃদয় , মন আর সত্তা সব ওলট-পালট করে দিল পলকের মধ্যেই । মুখটা সাদা গোলাপের মত, ঠোটে একটা লুকোচুরি স্বভাবের মন-জুড়ানো মুচকি হাসি তার । কয়েক গোছা চুল দু কানের পাশে এসে লম্বা লম্বা কানের দুলের সাথে আরো অন্যমাত্রার আলংকারিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে যেন । চিকন পাড়ের হালকা রঙের কারুকার্য-খচিত শাড়ি তার গায়ে জড়ানো । হাতে সোনালী, ম্যাজেন্ডা আর ছাই রঙা চুড়ি পরা, হাতের মুঠোয় দু চারটা রজনীগন্ধা আর চারটি লাল গোলাপ শোভা পাচ্ছে তার । যেন মনে হচ্ছে, গোলাপের হাতে শোভা পাচ্ছে আরও কিছু গোলাপ । পাশে রয়েছে সবুজ ধানক্ষেত । খোলা চুলে, শাড়িতে, চুড়িতে আর ভুবনজয়ী হাসিতে কোন বাঙালি মেয়ে এত অপরুপা হয়ে উঠতে পারে আমার কল্পনার একেবারেই বাইরে ছিল । যেন পরী, বেহেশত থেকে নেমে আসা হুরপরী । আমি হেঁয়ালিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ, এরপরে আরো কিছুদিন । এরপর হঠাৎ একদিন ফোনে বললাম, তোমার সাথে আমার আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয় !
- কেন ?
- আমি আর তোমাকে বন্ধু ভাবতে পারছি না ! আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।
- কেন, কী দোষ করলাম আমি ?
- মাথাটাই যে নষ্ট করেছো আমার !
- কীভাবে ?
- ঐ যে শাড়ি পরে তোলা তোমার ঐ ছবি দেখিয়ে । আমি তোমাকে শাড়ি পরে জীবনভরই দেখতে চাই । এরপরে দুদিন অন্যরকম নাটক হয়েছিল । শেষমেশ উনি হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে আর বলে, জ্বলজ্যান্ত মানুষটা সামনে থেকেও তুমি কিছুই বলোনি, আর শাড়ি পরা একটা ছবি দেখেই তুমি পুরা উথাল পাতাল ! আমি বলি হুম , তুমি অপ্সরা ! তবে সেটা সবচেয়ে বেশী শাড়িতে , খোলা চুলে আর চুড়িতে । আজও আমার ইচ্ছে হলেই বলি, এই, আজ শাড়ি পরো না ? কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় – সেই হুরপরী আমার সামনে রহস্যময়ী হাসি নিয়ে হাজির ! তারপর ? দুজনে বেহেশতে চলে যাই কিছু সময়ের জন্য !

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:০৭
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×