somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাপ্তাই, এলাম, দেখলাম এবং আরো দেখার অতৃপ্তি নিয়েই ফিরলাম !

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কাপ্তাই ! এলাম, দেখলাম, আরো দেখার অতৃপ্তি নিয়ে ফিরলাম !
================================================
ফেরদৌস আলম
++
পাতার ফাঁক দিয়ে আসা আলসে রৌদ্রের ফালি ফালি তীক্ষ্ণ আলো যখন এবড়ো থেবড়ো পিচঢালা পথের উপর এসে পরমানন্দে গা এলিয়ে দিচ্ছে, ঠিক তখনই ডান পা বাড়িয়ে আমি ‘মায়ের দোয়া’ নামের লক্কর ঝক্কর বাসে উঠে পড়লাম । সমস্যা নেই, মায়ের দোয়া আছে তো, ঝাক্কি ঝামেলা যতই হোক সামলে উঠতে পারব ইনশাআল্লাহ ! আমার ‘সাইফুল’ নামের কলিগকে খুঁজে পেতে সময় লাগলো প্রায় মিনিট খানেক । তবে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দেখেছি শুরুতেই, একদম বাসের গেটের কাছে, অনেকটা আন্দাজ বা অনুমানের উপর ভিত্তি করেই । উদ্দেশ্য, আকাশের নীলিমা আর জল-সূর্যের লালিমার সন্ধিস্থল অপরুপ, স্তব্ধ মুগ্ধতা মেশানো ‘কাপ্তাই’ ঘুরে দেখা । ইছামতী নদীর তীরে গড়ে উঠা ইছাখালী থেকে কাপ্তাইয়ের দূরত্ব গুগল ম্যাপের হিসাবে ২৩ কি.মি. বরাবর । ইছামতীকে ডিঙ্গানোর পরে টিনের চালে পড়া রোদের ঝলকানি দেখে সামনে পড়লো মরিয়মনগর । দু পাশের ছুটে চলা মাঠ আর ক্ষেত জুড়ে আঁধা আঁধা করে কাটা ধানগাছের গোড়ালিগুলো সামরিক সেনাদের মত সারি সারি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেখে অল্পবিস্তর মায়া জাগল আমার ! শুষ্ক, বিবর্ণ আর মলিন হয়ে যাওয়া যে কোনকিছুই ব্যথাতুর আর কষ্টদায়ক, সে প্রায় সবার কাছে সমানভাবেই !
হাতের ডানে রাঙ্গুনীয়া কলেজ পেরিয়ে চন্দ্রঘোনা এসে তেলের পাম্পে বাস দাড়াল তার রাক্ষুসে ক্ষুধাটা মেটানোর ধান্ধায় । কিছু যাত্রী নেমে গেল । আর আমরা যারা উপবিষ্ট তারা আড়মোরা ভাঙলাম লম্বা হাই তুলার পর । এখানকার মোড়ে এসে দেখলাম, ছুটির দিনেও বাস, সিএনজি, হাইস, কার আর রিকশার সম্মিলিত প্যা পু’র হুড়োহুড়ি । পাশের ছিটের মুরুব্বি বলে উঠলো, “ উয়া, তুয়ারা ফুয়ারে ফুয়ারে যাইন্ন ফারো?” অর্থাৎ ওরে, তাড়াতাড়ি যেতে পারনা বাপু তোমরা । মনে মনে হাসলাম, চাটগাঁইয়া মজার চাইনিজ টাইপের ভাষা শুনে । সত্যি পৃথিবীর অন্যতম রসের আর মজার ভাষা এটা । কইন্ন ফারি, খাইন্ন ফারি, যাইন্ন ফারি.... হা হা হা হা ...... !

মোড়টা ঘুরিয়ে সোজা দক্ষিণে দু তিনশো গজ সামনে গেলে পাবেন নদী পারাপারের ফেরী ।এখান থেকে খানিকটা পূর্বদিকে চন্দ্রঘোনা কর্ণফূলী কাগজ মিল । উপরের দিকে তাকালে দেখা যাবে দৈত্যের মত ঠাঁই হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সবুজাভ কৃষ্ণকায় খাড়া পাহাড় । এক দুর্ণিবার মোহ আপনাকে আকৃষ্ট করবে ঐ দৃশ্যটা দেখে যে, কানে ফুলপরা কর্ণফূলী নদীটা মনে হয় ঐ পাহাড়ের কত ঘনিষ্ট প্রতিবেশী । কলতান-মুখর ছন্দময় এই ঢেউগুলোর বয়ে যাওয়া দেখে নিজের সন্ন্যাস জীবন নিয়ে নেবার ইচ্ছা জাগবে, মনে হবে, নাহয় হলাম একটুখানি সময়ের জন্য উন্মাদ কোন ব্রহ্মাচার্য ! পড়ে থাকলাম এই কর্ণফুলীর বালুময় দুকূল আকড়ে ধরে ।

দু পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেষে উঁচু উঁচু নারিকেল গাছের মত স্থির আর বিস্ময়াবিষ্ট দর্শকদের পেছনে ফেলে মেহগনি, জারুল,গামার আর সেগুনবনের দিকে তাকালে কিছু সময় হয়তো আবেগী হয়ে থাকবেন নাহয় হা হয়ে যাবেন । গভীর অরণ্যে এ যেন অপূর্ব স্বর্গীয় আরণ্যক প্রেম ! এবার বামে পড়লো ‘চন্দ্রঘোনা ইকোপার্ক’ । হাতে সময়ের অভাব আর কাপ্তাইকে দেখার লোভে পার্ক দেখার সুযোগ আপাতত ঘটল না । মাঝে মাঝে অল্প-বিস্তর প্রসারিত, বিছানো, মোলায়েম সবুজ চাদরের মত ফসলের মাঠও উঁকি মারে পাহাড়ের আড়াল থেকে। হয়তো ভেবেছিলাম, অনেক কিছু পাব, কিন্তু এত এত এতকিছু পাব তা যে আমার ভাবনার বাইরেই ছিল ! পাহাড়ের গাঁয়ে জড়িয়ে থাকা বুনো লতাগুলো দেখে মনেহয় এরাই বুঝি ওদের গায়ে বহুদামের সৌন্দর্যবর্ধনকারী অলঙ্কার ।
দেখতে দেখতে বাস এল পার্বত্য চট্টগ্রাম বন বিভাগের সীমানায় । উঁচু নিচু রাস্তা দেখে মনে হয় এই বুঝি পাহাড় বেয়ে উপরে উঠছি আবার এইবুঝি গিরিখাতে নামছি । প্রথমবার খানিকটা ভয় লেগেছিল এই ভেবে যে, নিচে নামার সময় সত্যি সত্যি যদি গিরিখাতে পড়ে যাই ! উচুতে উঠার সময় বাসের অতিপুরাতন ইঞ্জিনটি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে যেন- ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি’র অবস্থা । সর্পিল রাস্তা থেকে গভীর নিচের কর্ণফুলী নদীটাকে আরো কত যে অনুভাব্য লাগছে তা কল্পসীমার বাইরে । পাহাড় যেন মমতাময়ী মায়ের মত আগলে আছে নদীটাকে আর দু কূলের ঘন পল্লবিত বৃক্ষরাজি সেই মমতাময়ীর দুটো হাত । গাছের ডালে ডালে পাখিদের আনাগোনা যে অনুরণনের উদয় ঘটাচ্ছে তাতে কানে মিউজিক শোনার জন্য হেডফোন না থাকলেই বা কী আসে যায় ! কিন্তু এত কিছুর মাঝেই আবার দারিদ্রক্লিষ্ট আদিবাসীদের খুপরি ঘরগুলোর ছাউনি দেখলেই বিষম অনুভূতি জেঁকে বসে বেখেয়ালি মনের কোণে ।

কাপ্তাই ‘নেভিক্যাম্পে’ যখন পা ফেললাম বেলা তখন একটা পনেরো । মধ্য দুপুরের তেজও নেই মাথার উপর গ্রীষ্মকালের মতন । দূরে যতদূর দেখি, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জোকের মত কুয়াশার কুণ্ডলী তখনও এটে আছে ঝোপ-ঝাড়ের গায়ে । যেন এ এক নতুন সৌন্দর্য, নতুন হাতছানি, নতুন উন্মাদনা ! চক্ষু স্থির হয়ে গেল দিগন্ত-জোড়া লেকের পানির শান্ত কিন্তু মায়াবী মায়াবী নৈসর্গিক প্রতিবিম্ব অবলোকন করে ! ডিঙ্গি নৌকার মাঝির বৈঠা চালানো দেখে নৌকায় উঠার লোভ সামলানো কঠিন হয়ে যাবে ভ্রমণ-রসিক পর্যটক মনের । হেটে হেটে যতক্ষণ দেখলাম আমার শুধু মনে হল, এলাম , দেখলাম , আরো দেখার অতৃপ্তি নিয়ে ফিরলাম !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×