somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খুনটা আজকে রাতেই করতে হবে। হ্যা, আজকে রাতেই।

১২ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোর হলেই পুলিশ আসবে। ওমা, খুব বেশিতো দেরি নেই। বারোটা বেজে গেছে ? এত কখন বাজলো! একটু আগেই না বাসায় ঢুকে দেখলাম এগারোটার মতো বাজে।

নাদিয়া গোসল করে বের হলো মাত্র। কি ভয়ংকর সুন্দর লাগছে ! ভেজা চুলে নাদিয়াকে এর আগে এত সুন্দর লেগেছিল কখনো ? এতদিন এত গুলো একসাথে এক ছাদের নিচে থাকা, এমন তো লাগেনি কখনো। হ্যা, বিয়ের রাতে লেগেছিল। বিয়ের রাতেও আজকের মতো বৃষ্টি ছিল। কি নির্বিকারভাবে নাদিয়া জিজ্ঞেস করল। "তোমার কি আজকেই কোন আবদার টাবদার আছে? থাকলে মেটাও! নাহলে বলো, ঘুমিয়ে পড়ি। প্রচন্ড ঘুম আসছে। পালিয়ে তো এর আগে বিয়ে করিনি, এত ধকল তাতো জানতাম না" ! আমি তখন এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ঠিক এভাবেই হয়তো। কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল।

নাদিয়ার মাথায় জড়ানো তোয়ালে টা মুকুটের মতো লাগছে। কি অসম্ভব সুন্দর।

নাদিয়া হাসিমুখে তাকালো আমার দিকে। কি মায়াবী হাসি ! এই মেয়েটা কি সব মায়া আজকে রাতের জন্যই তুলে রেখেছিল ?."খাবে না ? খেতে বসো। শরীর খারাপ লাগছিল, তেমন কিছু করতে পারিনি, একটু বসো, ডিম ভেজে দিচ্ছি।"

আমি টেবিলে বসে রান্নাঘরের দিকে তাকিয়ে আছি। নাদিয়া পেয়াজ কাটছে। লাল শাড়ি পরেছে নাকি ? খেয়াল করিনি তো এতক্ষণ। বিয়ের রাতেও লাল শাড়িই ছিল। কে বলবে এই মেয়েটাই সকালে গিয়ে পুলিশের কাছে তার স্বামীর সব তথ্য দিয়ে এসেছে ? বস আগেই বলেছিল এইসব কাগজপত্র ঘরে না রাখতে। রাখলেও ড্রয়ার ভালোমত তালা দিয়ে রাখতে। কে জানতো নাদিয়া কোনদিন ওইসব কাগজ ঘেটে দেখবে ! পুলিশকে দিয়ে আসবে তাতো ভাবার প্রশ্নই ওঠে না। ভাবনার অতীত ও কত ঘটনা ঘটে যায়।

নাদিয়াও খেতে বসেছে। ভাগ্যিস একটু সময় করে ডিম টা ভেজেছে, করল্লার তরকারিতে বিষ মেশানোর জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া গেছে। ইস, মেয়েটা কিভাবে বাচ্চাদের মতো খাচ্ছে ! খুব খিদা লেগেছিল হয়তো। আমার অপেক্ষায় এতক্ষণ খায়ওনি।

আর আমি কি সুন্দর আজ রাতেও নির্বিকার, চুপচাপ খেয়ে গেলাম। শুধু দু একবার মনে মনে বললাম, "নাদিয়া, আমাকে ক্ষমা কোরো। তোমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। কখনো বলা হয়নি। আর কখনো হবেওনা। বিয়ের রাতে তুমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর আমি সারারাত তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম, এটাও আর কখনো বলা হবেনা। আমি আজ তোমাকে না মারলে তোমাকে ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মারবে। আমাকেও মারবে, কাউকে ছাড়বে না। আমাকে ক্ষমা করো নাদিয়া, ক্ষমা করো..."

নাদিয়া আজ খুব ধীরেসুস্থে খাচ্ছে। অন্যদিনের চেয়ে অনেক ধীরে। যতক্ষণ খাওয়া হবে ততক্ষণই শুধু সময়, কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো সবকিছু অন্ধকার হয়ে যাবে। থাক না, আরো কিছুক্ষণ চোখের সামনে থাক প্রিয় মুখটা। বোকাটা টেনশনে খেতেও পারছে না ঠিকমতো। গাধাই থেকে গেল সারাজীবন। করল্লা যে খাই না এটাও তার মনে নেই, বিষ মিশিয়েছে করল্লায়। একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারেনা, এই লোক এত বিশ্রী সব ক্রাইম করে কিভাবে ? এত সময় নিয়ে ডিম ভাজি করা হলো, তাও বিষ মেশাতে হিমশিম খাচ্ছিল। একটু বোঝেওনা সামান্য ডিম ভাজি করতে কি এত দেরি হয় ! লাল শাড়ি কেন পরেছি আজকে তাও বোঝেনি।

কিছু বুঝতই বা কবে! বিয়ের রাতে বললাম ঘুমিয়ে পড়বো, তার মানে কি এই যে ঘুমিয়ে পড়ছি ! সারারাত মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল, একটু ছুয়ে দেখবে না সত্যিই ঘুমিয়েছি কিনা। ঠোঁটে নাহয় কপালে একটা চুমু খেয়েই দেখতো চোখ মেলে তাকাই কিনা ! গাধাটা এখন চোখের পানিও লুকানোর চেষ্টা করছে। বুঝতেও পারছে না তার দিকে না তাকিয়ে পানি লুকানোর সুযোগ করে দিচ্ছি। যদিও তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করছে। খুব ইচ্ছা করছে। অবশ্য তাতে খুব লাভ নেই। এর মধ্যেই সব অন্ধকার হয়ে আসছে। গাধাটা কি বুঝতে পারছে ? না বুঝুক, কিছু বুঝেছে কবে ! গাধা কোথাকার !
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×